মেট্রোরেলে শনির দশা
২৮ মে ২০২৪, ১২:০৪ এএম | আপডেট: ২৮ মে ২০২৪, ১২:০৪ এএম
মেট্রোরেলের শনির দশা কাটছেই না। চালু হওয়ার পর থেকে প্রায়ই যান্ত্রিক ত্রুটি, বিদ্যুৎ সরবরাহে ব্যাঘাত, সিগনলিং ব্যবস্থার অকার্যকারিতা, টেলিকম ব্যবস্থায় ঝামেলা, ডিসের তার ও ঘুড়ি বিভ্রাট ইত্যাদি কারণে মেট্রোরেল আধা ঘন্টা থেকে দু’ঘণ্টা পর্যন্ত বন্ধ থাকতে দেখা গেছে। এ সব ঘটনায় যাত্রীদের অপরিসীম দুর্ভোগে পড়তে হয়েছে। মহিলা, শিশু ও বৃদ্ধদের সবচেয়ে বেশি কষ্টের সম্মুখীন হতে হয়েছে। সর্বশেষ গত শনিবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে মেট্রোরেল বন্ধ হয়ে যায়। ইন্টারনাল সার্ভারে ত্রুটির কারণে এমনটি হয় বলে কর্তৃপক্ষের ভাষ্য। ইনকিলাবে প্রকাশিত এ সংক্রান্ত, খবরে উল্লেখ করা হয়েছে, ওই সময় লাইনে থাকা ১০টি ট্রেন বন্ধ হয়ে যায়। যাত্রীসাধারণ উদ্বেগ-উৎকণ্ঠাসহ অবর্ণনীয় দুর্ভোগের শিকার হয়। বারবার একই ধরনের ঘটনা ঘটতে থাকায় মেট্রোরেলের প্রতি মানুষের আস্থা ও নির্ভরতায় চিড় ধরা খুবই স্বাভাবিক। অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, জাপানের উন্নত প্রযুক্তিতে তৈরি মেট্রোরেল এভাবে মাঝে-মধ্যেই বন্ধ হয়ে যাবে কেন? তাহলে কী জাপান এ প্রকল্পের কাজ যথাযথভাবে সম্পাদন করেনি? জাপান বাংলাদেশে মাতারাবাড়ি বিদ্যুৎ কেন্দ্রসহ বিভিন্ন মেগা প্রকল্প বাস্তাবায়ন করছে। তার কাজের প্রতি এক ধরনের আস্থা এখানে গড়ে উঠেছে। মেট্রোরেলের এই অবস্থা ও বন্ধ হয়ে যাওয়া সেই আস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। জাপানের জন্য এটা ভালো কোনো লক্ষণ নয়। জাপানেও মেট্রোরেল রয়েছে। এশিয়ার প্রথম মেট্রোরেল চালু হয়েছে টোকিওতে ১৯২৭ সালে। এর মধ্যেই সেখানে মেট্রোরলের আরো সম্প্রসারণ হয়েছে। কিন্তু মেট্রোরেলে দুঘর্টনা, যান্ত্রিক ত্রুটি, হঠাৎ বন্ধ হয়ে যাওয়া ইত্যাদি বিরল। ১৮৮৩ সালে লন্ডনে প্রথম আন্ডারগ্রাউন্ড মেট্রোরেল চালু হয়। সেই থেকে এখন পর্যন্ত এটি সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য গণপরিবহন। ভারতের কলকাতায় ১৯৮৪ সালে মেট্রোরেল চালু হয়। ইতোমধ্যেই তার আরো সম্প্রসারণ ঘটেছে। কোলকাতা মেট্রোরেলের ওপর যাত্রীসাধারণের আগাধ আস্থা ও নির্ভরতা রয়েছে। ইরানে মেট্রোরেল চালু হয় ১৯৯৯ সালে। তেহরানসহ ৫টি শহরে মেট্রোরেলের সার্ভিস রয়েছে। প্রতিদিন ২৫ লাখ যাত্রী মেট্রোরেলে যাতায়াত করে। সেখানে যাতায়াত ব্যাঘাত সৃষ্টির কোনো খবর পাওয়া যায়নি। সব দেশের মেট্রোরেলই যদি যাত্রীসাধারণের প্রগাঢ় আস্থায় ঋদ্ধ হতে পারে, আমাদের মেট্রোরেল কেন ক্রটি-বিচ্যুতি ও অনির্ভরতার প্রতীকে পরিণত হবে?
মেট্রোরেল আমাদের জন্য একটা স্বপ্ন। এই স্বপ্ন বাস্তাবায়নে মানুষ শুধু সন্তুষ্টই হয়নি, যারপরনেই আনন্দিত ও উল্লসিত হয়েছে। মেট্রোরেল চালুর পর থেকে তাদের আনন্দ উচ্ছ্বাস যেন থামছে না। মেট্রোরেল এখনো তাদের কাছে আনন্দ ভ্রমণ। বলা বাহুল্য, রাজধানীর যানজট নিরসনে মেট্রোরেল ইতোমধ্যেই অত্যন্ত কার্যকর বলে প্রতীয়মান হয়েছে। যেখানে ১০ মিনিটের পথ দুই ঘণ্টায় যাওয়া সম্ভব হতো না, সেখানে দিয়াবাড়ি থেকে মতিঝিল পর্যন্ত দীর্ঘ পথ আধা ঘণ্টায় আসা সম্ভব হচ্ছে। আমাদের দেশ দরিদ্র বিশ্বের অন্তর্গত। ধীরে ধীরে এর উন্নতি হচ্ছে। মেট্রোরেল এখনো আমাদের জন্য বিলাস বটে। অথচ, তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়েছে। মেট্রোরেল ক্রমাগ্রগতির পরিচায়ক বটে। এর চালাচল ও সেবা নির্বিঘ্ন ও মসৃণ হওয়া আবশ্যক। জাপান মেট্রোরেল প্রকল্প বাস্তবায়ন করলেও জানা যায়, প্রকল্পের অন্তর্গত বেশ কিছু কাজ অন্যান্য দেশের, বিশেষ করে ভারতের বিভিন্ন কোম্পানি করছে। দেখা যাচ্ছে, বিদ্যুৎ সরবরাহে ত্রুটি মেট্রোরেল বন্ধ হয়ে যাওয়ার প্রধান কারণ। মেট্রোরেল বিদ্যুতেই চলে। কাজেই বিদ্যুৎ ব্যবস্থাপনা ত্রুটিমুক্ত হওয়া অত্যাশ্যক। বিষয়টি খতিয়ে দেখতে হবে। মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষকে দেখতে হবে, মেট্রোরেলকে অজনপ্রিয় ও অকার্যকর করার চক্রান্ত এর পেছনে কাজ করছে কিনা।
মেট্রোরেলের নির্বাধ যাতায়াত নিশ্চিত করার দায়িত্ব মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষের। যেহেতু এই প্রকল্পে অর্থায়নসহ সবকিছুই করেছে জাপান, সুতরাং জাপানের সংশ্লিষ্ট কোম্পানিরও এ ব্যাপারে দায়িত্ব রয়েছে। মেট্রোরেলের মাত্র একটি লাইন চালু হয়েছে। আরো কায়েকটি লাইনের কাজ চলছে। সে কাজে যাতে কোনো ত্রুটি-বিচ্যুতি না ঘটে তা দেখতে হবে। মেট্রোরেল ও জাপানি কর্তৃপক্ষকে সর্বক্ষেত্রে জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে। মেট্রোরেলের পরবর্তী লাইনগুলোর নির্মাণ ক্রটিমুক্ত হতে হবে। এর যন্ত্রাপাতি, ইলেট্রিক সামগ্রী, সিস্টেম, বিদ্যুৎ-ব্যবস্থাপনা সব কিছু মান সম্পন্ন ও উপযোগী হতে হবে। মনে রাখতে হবে, মেট্রোরেল প্রকল্প বিপুল ব্যয়সাপেক্ষ একটি প্রকল্প। ঋণের অর্থে মেট্রোরেল প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। ঋণের বোঝা দেশের মানুষের ঘাড়েই চাপছে। তাদেরই তা পরিশোধ করতে হবে। সে ক্ষেত্রে মেট্রোরেলের সেবা ও সুবিধা যাতে তারা ষোল আনা লাভ করতে পারে, তা নিশ্চিত করার বিকল্প নেই।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিহত করার আহ্বান উপদেষ্টা নাহিদের
মালয়েশিয়া আন্তর্জাতিক হালাল শোকেসের ২০তম আসরে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের জেলা প্রতিনিধি সম্মেলন অনুষ্ঠিত দেশকে অস্থিতিশীল করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে পরাজিত শক্তি
শ্রীলঙ্কায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন কাল
‘মব জাস্টিস’ বন্ধের আহ্বান বাংলাদেশ তরুণ কলাম লেখক ফোরামের
সাত দফা দাবিতে মানববন্ধন ও সমাবেশ
গৌরনদীর দই, একবার খাইলেও আর একবার খাই
নোয়াখালীতে জীবাশ্ম জ্বালানিতে বিনিয়োগ বন্ধের দাবি
স্বর্ণের দাম বেড়ে রেকর্ড ২,৬০৯ ডলার ছাড়িয়েছে
বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধ ও বিচার দাবিতে খুলনায় মানববন্ধন
গাজায় অব্যাহত ইসরাইলি গণহত্যা ওআইসির নেতারা চেয়ে চেয়ে দেখছেন
চাঁদপুর শহরে সড়ক সংস্কার কাজে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ
সেনা কর্মকর্তাদের ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেয়া প্রসঙ্গে
নোয়াখালীতে ৪৪ দিন পর লাশ উত্তোলন
ভারতের দোসর ও হাসিনামিডিয়ার প্রশ্নবিদ্ধ ভূমিকা
আশাশুনিতে হাজরাখালির নেটপাটায় পানিবন্দি ২শ’ পরিবার
জামায়াত ক্ষমতায় গেলে নারীদের অধিকার খর্ব হবে না: সেলিম উদ্দিন
গাছে গাছে আফ্রিকান জায়ান্ট শামুক
ঈশ্বরগঞ্জে মহাসড়কে কাঁচাবাজার
উখিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অস্ত্রসহ আরসা সন্ত্রাসী গ্রেফতার