আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির যুগে বিশ্বে এবং মহাবিশ্বে রোবটের ভূমিকা
২৯ মে ২০২৪, ১২:০২ এএম | আপডেট: ২৯ মে ২০২৪, ১২:০২ এএম
রোবট হচ্ছে এক ধরণের ইলেকট্রো-মেকানিক্যাল যান্ত্রিক ব্যবস্থা। এটি এমন একটি অটোমেটিক যন্ত্র, যাকে এমনভাবে তৈরি করা হয়ে থাকে যা, কোন একটি বিশেষ কাজ বা একাধিক কাজ নিজ থেকে সঠিক গতিতে এবং নির্ভুলভাবে করতে পারে। এটি মানুষের দ্বারা প্রেরণ করা নির্দেশ পালন করে। এমনভাবে প্রোগ্রাম করে থাকে যেন, জটিল কাজগুলোকে খুব সহজে, স্বল্প সময়ে এবং নিপুণভাবে সম্পন্ন করতে পারে। রোবট মানুষের কাছ থেকে এক বা একাধিক তথ্য ইনপুট নিয়ে সেই তথ্য বিশ্লেষণ করে একটি আউটপুট দেয়। অন্যদিকে রোবটিক্স হচ্ছে, একটি টেকনোলজি শাখা যার মূল বিষয়বস্তু হচ্ছে রোবট। রোবট স্বয়ংক্রিয়ভাবেও কাজ করতে পারে, আবার এটিকে রিমোটের মাধ্যমেও নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে। রোবট দেখতে মানুষের মতো হতে পারে, আবার অন্য যেকোন আকৃতির হতে পারে। রোবটের কাজ করার পেছনে মূলত তিনটি জিনিস কাজ করে। এগুলো হচ্ছে, হার্ডওয়্যার, সফটওয়্যার এবং আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স অর্থাৎ এআই। হার্ডওয়্যার হচ্ছে, রোবটের সেই অংশ যার মাধ্যমে একটি রোবট বাস্তব জগতের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করতে পারে। এ অংশের মধ্যে ইলেকট্রিক্যাল মোটর, সেন্সর, পাওয়ার সাপ্লাই, কন্ট্রোলার, ইলেকট্রিক্যাল সার্কিট, প্রসেসর ইত্যাদিসহ আরোও অনেক কিছু থাকে। এসব মিলেই একটি রোবটের ফিজিক্যাল অংশ তৈরি হয়। এদিকে সফটওয়্যার অনেকটা ব্রিজের মতো কাজ করে। এর মূল কাজ হচ্ছে, রোবটের ব্রেইন আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এবং দেহের হার্ডওয়্যারের মাঝে সংযোগ স্থাপন করা। রোবটের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হচ্ছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স। আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স রোবটের ব্রেইন। যার মাধ্যমে রোবট নিজেকে যেকোনো নির্দেশ বা তথ্য দিতে পারে। পরবর্তীতে এই নির্দেশ বা তথ্য বিশ্লেষণ করে সিদ্ধান্ত দিতে পারে বা কোন কাজ করতে পারে। এই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সাধারণত কোন এক প্রোগ্রামার বা ডেভেলপার ডেভেলাপ করে থাকে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা যত শক্তিশালী এবং কার্যকরী হবে রোবটও ততো বেশি শক্তিশালী এবং কার্যকরী হবে। প্রত্যেক রোবটের নির্দিষ্ট কিছু গুণাবলী থাকে। যেমন হিউম্যানয়েডস রোবট এমন, যা দেখতে অবিকল মানুষের মতো। উদাহরণ স্বরূপ রোবট সোফিয়া একটি হিউম্যানয়েডস রোবট। শিল্প-কারখানায় যেই রোবটগুলো মানুষের পাশাপাশি কাজ করে থাকে সেগুলোকে সাধারণত ইন্ডাস্ট্রিয়াল রোবট বলা হয়ে। স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে যেগুলো ব্যবহৃত হয়, সেগুলোকে হেলথ কেয়ার রোবট বলা হয়। রোগীর অপারেশন, স্বাস্থ্য পরিচর্যা করা, জীবাণুমুক্তকরণ থেকে শুরু করে বিভিন্ন স্বাস্থ্যমূলক কাজে হেলথ কেয়ার রোবট ব্যবহৃত হয়। ড্রোনও এক প্রকার রোবট। একে মনুষ্যবিহীন আকাশযানও বলা হয়। আর্মিদের বিভিন্ন কাজে সামরিক ও নিরাপত্তা ব্যবস্থায় রোবট ব্যবহার করা হয়। এছাড়া, গবেষণার জন্য তৈরি রোবট সাধারণত বিশ্ববিদ্যালয়ে বা কোন গবেষণাগারে কাজে লাগানো হয়। এ ধরনের রোবটের মূল কাজ হচ্ছে, গবেষকদের গবেষণা করতে সাহায্য করা। গাড়ির মতো যেই রোবটগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে চলতে পারে সেগুলোকে সেল্ফ-ড্রাইভিং রোবট বলা হয়ে থাকে। আন্ডার ওয়াটার রোবটের মধ্যে ‘অ্যাকোয়ানট’-এর মতো গভীর-সমুদ্রের সাবমার্সিবল, ‘ওশান ওয়ানে’র মতো ডাইভিং হিউম্যানয়েড ইত্যাদি সিস্টেমের বিভিন্ন ধরনের রোবট রয়েছে। রোবট এবং কম্পিউটারের মধ্যে সবচেয়ে বড় পার্থক্য হচ্ছে, একটি কম্পিউটার শুধু কাজকে মনিটর করতে পারবে। বাস্তব জগতে কোন পরিবর্তন কম্পিউটারের পক্ষে করা সম্ভব নয়। অন্যদিকে, রোবট তার চারপাশের পরিবেশকে নেভিগেট করতে সক্ষম। কম্পিউটারের পক্ষে তা সম্ভব নয়। রোবট তৈরী হয়েছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার নীতিতে যেটি কাজ করতে পারে মানুষ কিংবা বিভিন্ন বুদ্ধিমান প্রাণীর মতো।
প্রত্যক রোবটের পাশাপাশি যারা রোবট বা রোবটিক্স নিয়ে কাজ করে, তাদের তিনটি আইন মেনে চলতে হয়। রোবটিক্সের প্রথম আইন হলো একটি রোবট কোনও মানুষকে আঘাত করতে পারবে না বা নিস্ক্রিয়তার মাধ্যমে কোনও মানুষকে ক্ষতি করতে পারবে না। রোবটিক্সের দ্বিতীয় আইন অনুযায়ী, রোবটকে অবশ্যই মানুষের আদেশ মানতে হবে। তৃতীয় আইন অনুযায়ী, রোবটকে অবশ্যই তার নিজের অস্তিত্ব রক্ষা করতে হবে যতক্ষণ না এই ধরনের সুরক্ষা প্রথম বা দ্বিতীয় আইনের সাথে সাংঘর্ষিক না হয়। একজন প্রোগ্রামার চাইলে একটি রোবটকে এমনভাবে ডেভেলাপ করতে পারবে, যাতে রোবটটি মানুষের ন্যায় বিভিন্ন আবেগ প্রকাশ করতে পারে। তবে তা সত্যিকার অর্থে হবে না। রোবটের পক্ষে রাগ, খুশি, মায়া এমন আবেগ অনুভব করা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। যদি এমন হয়, একটি রোবট মানুষের মতো আবেগ প্রকাশ করতে পারছে, তবে এর কারণ হচ্ছে, একজন প্রোগ্রামার এমনভাবেই রোবটটিকে ডেভেলাপ করেছে। রোবট যেমন আমাদের সহযোগিতা করছে তেমনি এটি হয়তোবা এক সময় আমাদের বিপদেরও কারণ হতে পারে। হয়তোবা আমরা নিজেই নিজেদের ক্ষতি ডেকে আনছি। তাই রোবটের তৈরি এবং ব্যবহারের ক্ষেত্রে আমাদের যথেষ্ট সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। বর্তমান আধুনিক তথ্য প্রযুক্তির যুগে ইন্টারনেট ক্রমেই তার কর্মবিস্তৃতি ছড়াতে শুরু করেছে। এখন ভুপৃষ্ঠ থেকে মহাকাশে অবস্থানরত রোবটকে নিয়ন্ত্রণেও ইন্টারনেটের গুরুত্ব বাড়ছে। ভূপৃষ্ঠ থেকে ইন্টারনেটের মাধ্যমে রোবট নিয়ন্ত্রণের এ পদ্ধতিকে ডিসরাপশন টলারেন্ট নেটওয়ার্কিং (ডিটিএন) প্রোটোকল বলা হয়। ভবিষ্যতের মহাকাশ গবেষণা এবং দূরবর্তী তারহীন নেটওয়ার্ক ব্যবস্থাপনায় ডিটিএন ব্যবহৃত হবে। ভুপৃষ্টের ব্যবহৃত ইন্টারনেট প্রযুক্তির সঙ্গে ডিটিএন পদ্ধতির তেমন কোনো পার্থক্য নেই। তবে এটি কোটি মাইল দূরের বস্তুর ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠায় খুব বেশি সময় ব্যয় করে না। স্যাটেলাইট, মহকাশযান, মহাকাশ স্টেশন এবং পৃথিবীর মধ্যে তারহীন দূরবর্তী সংযোগ প্রতিষ্ঠায় ডিটিএন অত্যাধুনিক প্রযুক্তি কৌশল হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। সৌরজগতের নানা ধরনের ঝড় এবং বৈরী আবহাওয়ার কারণে এ ধরনের সংযোগ স্থাপনে অনেক সময় লাগে। এ সময় আর দূরত্বে তথ্যকে আরও গতিশীল করতে ডিটিএন বেশ কার্যকর ভূমিকা রাখবে। এছাড়া রোবটের মধ্যে ইন্টারনেট ব্যবস্থা সংযুক্ত করার জন্য নির্মিত হয়েছে ‘রোবোআর্থ’ ওয়েবসাইট। বিশেষ এ ইন্টারনেট ব্যবস্থার মাধ্যমে রোবটরা নিজেদের মধ্যে তথ্য বিনিময় করতে পারবে। অত্যাধুনিক এই প্রযুক্তির মাধ্যমে রোবটে যুক্ত হবে নিজস্ব ইন্টারনেট ব্যবস্থা এবং রোবট মস্তিষ্কে থাকবে উইকিপিডিয়ার মত বিশাল তথ্যভা-ার। রোবটের মেমোরিতে নিত্যনতুন জমা হওয়া এসব তথ্য শেয়ার করা এবং নতুন তথ্য জমা রাখার ব্যবস্থাও থাকবে। তারা একে অপরের জন্য তথ্য সংগ্রহ করে ক্লাউডভিত্তিক তথ্য ভা-ারে জমা করতে পারবে। প্রযুক্তিবিদরাও বিভিন্ন তথ্য এতে যোগ করতে পারবেন। ফলে স্বাচ্ছন্দ্যে কার্যক্রম চালাতে পারবে রোবটগুলো। রোবোআর্থ রোবটদের জন্য একটি ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব, নেটওয়ার্ক জায়ান্ট এবং সমৃদ্ধ ডাটাবেজ। এখান থেকে রোবটরা তথ্যবিনিময়ের মাধ্যমে একে অপরের কাছ থেকে অনেক কিছু জানতে পারবে। অপরদিকে, বর্তমানে বিশ্বে মোবাইল ফোন চালিত রোবটকে বলা হয় ‘সেলবট’। যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে মোবাইল ফোনের এজ/জিপিআরএস ইন্টারনেট ব্যবহার করা হয়। পাশাপাশি রোবটে ব্লুটুথ বা অন্যকোনো ইন্টারনেট এনাবল্ড ডিভাইস ব্যবহার করা হয়। ইন্টারনেটকে যোগাযোগ মাধ্যম হিসেবে রাখায় রোবটকে বাইরের কোনো তারের সংস্পর্শ ছাড়াই তারহীনভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। মোবাইল ফোনের জিপিএস ব্যবহার করে রোবট সেই মুহূর্তে কোথায় অবস্থান করছে তা গুগল ম্যাপে দেখা যায়। মোবাইল ও রোবট ইন্টারনেটের মাধ্যমে তারহীনভাবে যোগাযোগ করে বলে এধরনের অর্থাৎ ‘সেলবট’ রোবটকে মোবাইলের সাহায্যে বিশ্বের যেকোনো প্রান্ত থেকে চালানো যাবে। এরকম আরও নানা ধরনের রোবট তৈরি হচ্ছে, যেগুলো মানুষের জীবনমান উন্নয়নে নানাভাবে ভূমিকা রেখে চলেছে।
লেখক: নেটওয়ার্ক টেকনিশিয়ান (আইসিটি সেল), জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিহত করার আহ্বান উপদেষ্টা নাহিদের
মালয়েশিয়া আন্তর্জাতিক হালাল শোকেসের ২০তম আসরে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের জেলা প্রতিনিধি সম্মেলন অনুষ্ঠিত দেশকে অস্থিতিশীল করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে পরাজিত শক্তি
শ্রীলঙ্কায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন কাল
‘মব জাস্টিস’ বন্ধের আহ্বান বাংলাদেশ তরুণ কলাম লেখক ফোরামের
সাত দফা দাবিতে মানববন্ধন ও সমাবেশ
গৌরনদীর দই, একবার খাইলেও আর একবার খাই
নোয়াখালীতে জীবাশ্ম জ্বালানিতে বিনিয়োগ বন্ধের দাবি
স্বর্ণের দাম বেড়ে রেকর্ড ২,৬০৯ ডলার ছাড়িয়েছে
বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধ ও বিচার দাবিতে খুলনায় মানববন্ধন
গাজায় অব্যাহত ইসরাইলি গণহত্যা ওআইসির নেতারা চেয়ে চেয়ে দেখছেন
চাঁদপুর শহরে সড়ক সংস্কার কাজে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ
সেনা কর্মকর্তাদের ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেয়া প্রসঙ্গে
নোয়াখালীতে ৪৪ দিন পর লাশ উত্তোলন
ভারতের দোসর ও হাসিনামিডিয়ার প্রশ্নবিদ্ধ ভূমিকা
আশাশুনিতে হাজরাখালির নেটপাটায় পানিবন্দি ২শ’ পরিবার
জামায়াত ক্ষমতায় গেলে নারীদের অধিকার খর্ব হবে না: সেলিম উদ্দিন
গাছে গাছে আফ্রিকান জায়ান্ট শামুক
ঈশ্বরগঞ্জে মহাসড়কে কাঁচাবাজার
উখিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অস্ত্রসহ আরসা সন্ত্রাসী গ্রেফতার