ঢাকা   শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৬ আশ্বিন ১৪৩১

দেশ কি নিষেধাজ্ঞার রোল মডেল হতে যাচ্ছে?

Daily Inqilab কামরুল হাসান দর্পণ

৩১ মে ২০২৪, ১২:১৪ এএম | আপডেট: ৩১ মে ২০২৪, ১২:১৪ এএম

দেশ একধরনের অস্বস্তিকর ও সংকটজনক পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এ পরিস্থিতি কোনো রাজনৈতিক কর্মকা-ের জন্য নয়। রাজনৈতিক পরিবেশ শান্ত এবং বিরোধীদলগুলোর আন্দোলন-সংগ্রাম নেই। তাদের কর্মকা- সরকারবিরোধী বক্তব্য-বিবৃতি ও সমালোচনার মধ্যে সীমাবদ্ধ। সাধারণত দেশ রাজনৈতিক কর্মকা-ের জন্য অস্থিতিশীল হয়ে উঠে। এটা আমাদের দেশের প্রথাগত একটা বিষয়। অনেকে একে রাজনৈতিক অপসংস্কৃতি বলে। বিরোধীদলগুলো সরকার হটাতে আন্দোলন করতে গিয়ে পরিস্থিতি উত্তপ্ত করে তোলে। ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে যেমনটি দেখা গিয়েছিল। নির্বাচনের পর থেকে রাজনৈতিক অঙ্গণ শান্ত পুকুরের মতো। তারপরও দেশে একটা অস্বস্তিকর পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এর মূল কারণ হচ্ছে, অর্থনৈতিক সংকট। সাধারণ মানুষের কাছে চলার মতো অর্থ নেই, তারা কষ্টে আছে, সরকারের কাছেও অর্থ নেই। ডলার সংকট, রিজার্ভের তলানিতে গিয়ে ঠেকা, আমদানি-রফতানি বাণিজ্যে স্থবিরতা, অর্থনৈতিক বিভিন্ন সূচকের অবনতির কারণে সরকারের চলা দায় হয়ে পড়েছে। সরকার অবশ্য সব ঠিক আছে বলছে এবং বলাই স্বাভাবিক। দেশের শোচনীয় পরিস্থিতি কোনো সরকারই স্বীকার করে না। স্বীকার করলে সরকারের ব্যর্থতা হিসেবে গণ্য হয়। সরকার অস্তিত্ব সংকটে পড়ে। যেমনটি ঘটেছিল শ্রীলঙ্কায়। সরকার দেশটিকে দেউলিয়া করে ফেলায় জনরোষে পড়ে তাকে পালিয়ে যেতে হয়েছিল। আমাদের দেশে এখনো সেরকম পরিস্থিতি হয়নি। তবে কেউ কেউ বলেন এবং জনগুঞ্জণ রয়েছে, দেশের অবস্থা ভাল না। ক্রান্তিকাল চলছে। ঋণ করেও সরকার পরিস্থিতি সামাল দিতে পারছে না। এ পরিস্থিতি থেকে বের হয়ে আসা সরকারের পক্ষে ক্রমেই কঠিন হয়ে পড়ছে।

দুই.
দেশের এই অস্বস্তিকর পরিস্থিতির মধ্যে পরপর তিনটি ঘটনা সরকারকে বেশ বিব্রতকর অবস্থার মধ্যে ফেলেছে। ঘটনা তিনটি হচ্ছে, দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগে পরিবারসহ সাবেক সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদের উপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা, কলকাতায় ঝিনাইদহ-৪ আসনের এমপি আনোয়ারুল আজিম আনারের হত্যাকা- এবং আদালত কর্তৃক স্ত্রী-কন্যাসহ সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদের স্থাবর সম্পতি জব্দ ও ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করার নির্দেশ। এসব ঘটনায় সরকার যে, বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছে, তা প্রকাশ্যে স্বীকার না করলেও দলের অনেক নেতাকর্মী অপ্রকাশ্যে তা অস্বীকার করতে পারছে না। এর কারণ হচ্ছে, দুই বাহিনীর দুই সাবেক প্রধান আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় রাখতে সহযোগিতা করেছেন বলে প্রচলিত রয়েছে। অন্যদিকে, এমপি আনোয়ারুল আজিম আনার বর্তমান সংসদ সদস্য এবং তার বিরুদ্ধে চরমপন্থীদের সাথে সংশ্লিষ্টতা, সন্ত্রাস ও চোরাচালানসহ নানা দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। এই তিনজনই কোনো না কোনোভাবে সরকারের সাথে সংশ্লিষ্ট। যদিও ক্ষমতাসীনদল তাদের অপকর্মের দায় নিতে নারাজ। সরকারের মতিগতি দেখে মনে হওয়া স্বাভাবিক, এসব ঘটনায় সে বালুতে উট পাখির মতো মুখ গুঁজে ঝড় উপেক্ষার নীতি অবলম্বন করছে। অথচ পর্যবেক্ষকরা স্পষ্ট করেই বলেছেন, তাদের তিনজনের দায় সরকার কোনোভাবেই এড়াতে পারে না। তাদের যুক্তি, দুই বাহিনীর দুই প্রধান ২০১৪ ও ২০১৮ সালের বহুল বিতর্কিত ও প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। ২০১৪ সালে বেনজীর আহমেদ ঢাকা মহানগর পুলিশের কমিশনার ছিলেন এবং আজিজ আহমেদ বিজিবি’র মহাপরিচালক। তখন বিরোধীদলের আন্দোলন-সংগ্রাম কঠোর হস্তে দমন করার জন্য তারা ভূমিকা রেখেছিলেন। বিরোধীদলের নেতাকর্মীদের উপর সাঁড়াশি আক্রমণ, গ্রেফতার, নির্যাতন এমনকি দেখা মাত্র গুলি করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। সে সময় বিজিবি’র মহাপরিচালক থাকাকালে বিরোধীদলের আন্দোলন দমাতে আজিজ আহমেদের একটি কথা বেশ সমালোচিত হয়েছিল। তিনি বলেছিলেন, পাঁচজন সাধারণ মানুষকে বাঁচাতে হলে আন্দোলনকারিদের গুলি করতে হবে। ব্যাপক সমালোচনার মুখে তিনি এর ব্যাখ্যায় বলেছিলেন, পাঁচজন সাধারণ মানুষকে বাঁচাতে একজন আন্দোলনকারিকে গুলি করতে হবে। তার এ ব্যাখ্যা মানবাধিকার সংগঠন ও সচেতন মহল মেনে নিতে পারেননি। তারা তার তীব্র সমালোচনা করেছিলেন। মূল কথা হচ্ছে, বেনজীর আহমেদ পুলিশ ও আজিজ আহমেদ বিজিবিকে অনেকটা ঘোষণা দিয়ে বিরোধীদলের আন্দোলন দমিয়েছিলেন এবং সরকারকে বিতর্কিত নির্বাচন করতে সহায়তা করেছিলেন। তাদের আচরণ এমন ছিল যেন, তারা রাষ্ট্রের কোনো বাহিনীর দায়িত্ব পালন করছেন না, ক্ষমতাসীনদলের নেতার দায়িত্ব পালন করেছেন। পর্যবেক্ষকদের মতে, এর পুরস্কার স্বরূপ তারা দুজনই দুই বাহিনীর প্রধান হয়েছিলেন। অথচ বেনজীর আহমেদ র‌্যাবের ডিজি থাকাকালে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে ২০২১ সালের ১০ ডিসেম্বর তিনিসহ সাত কর্মকর্তার উপর যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল। তারপরও পরবর্তীতে তাকে সরকার পুলিশ প্রধান (আইজিপি) হিসেবে নিয়োগ দেয়। ক্ষমতায় থাকতে সহায়তা করার পুরস্কার হিসেবেই নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে তাকে এ নিয়োগ দেয় বলে পর্যবেক্ষকরা মনে করেন। এ দুজন এখন অবসরপ্রাপ্ত। এ সময়েই তাদের বিরুদ্ধে দেশে-বিদেশে দুর্নীতিসহ ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ আনা হয়েছে। দুজনই যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্ত। এখন এ দুজনের দায় ক্ষমতাসীনদল নিতে চাচ্ছে না। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ব্যক্তি অপরাধ-অপকর্ম করতে পারেন। প্রশ্ন হচ্ছে, সরকার তাকে সুরক্ষা দিচ্ছে কিনা। অপরাধ করে কেউ পার পাবেন না। তিনি সাবেক আইজিপি হোন, আর সাবেক সেনাপ্রধান হোন। অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার প্রতিক্রিয়ায় আজিজ আহমেদ বলেছেন, এর দায় সরকারের উপরও পড়ে। তার এ কথার প্রেক্ষিতে বলা যায়, তিনি বাহিনী প্রধান থাকাকালে তার বিরুদ্ধে আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে যেসব দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ তোলা হয় এবং ‘সরকারের লোক’ বলে উল্লেখ করা হয়, তাতে সরকার তা এড়িয়ে যেতে পারে না। সরকার সেই প্রতিবেদন আমলে নেয়নি। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেদাজ্ঞার দায় সরকারের উপরও পড়ে। বিষয়টি এমন হয়ে দাঁড়িয়েছে, সরকার তাকে প্রয়োজনের সময় ব্যবহার করে এখন ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছে। এখন প্রয়োজন নেই, তাই তার উপর নিষেধাজ্ঞার দায় নিতে নারাজ। বেনজীর আহমেদের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। অথচ দুইটি বিতর্কিত নির্বাচন করতে কী প্রতাপের সাথেই না এই দুইজন সরকারকে সহযোগিতা করেছে। বিনিময়ে দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে অঢেল সম্পদ ও সুযোগ-সুবিধা পেয়েছেন। প্রশ্ন হচ্ছে, এতে তাদের কি লাভ হয়েছে? কোনোই লাভ হয়নি। একদিকে, বিররোধীদলগুলোর গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে দমন করে প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন করতে সহায়তা করে দেশের গণতন্ত্রকে সংকুচিত করতে সহায়তা করেছেন, অন্যদিকে অবসরে গিয়ে দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের কারণে সর্বস্ব হারাতে বসেছেন। ক্ষমতা যে চিরদিন থাকে না, ক্ষমতা হারালে অপকর্মের জন্য খেসারত দিতে হয় এবং মানসম্মান বলে কিছু থাকেনা, তা নিশ্চয়ই এখন তাদের চেয়ে বেশি কেউ জানে না।

তিন.
দুই বাহিনীর সাবেক দুই প্রধান বেনজীর আহমেদ ও আজিজ আহমেদের উপর মানবাধিকার লঙ্ঘন, দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবাহরের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা দেশের ভাবমর্যাদা যে ক্ষুণœ করেছে, তাতে সন্দেহ নেই। শুধু তাই নয়, নির্বাচনের আগে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাপকভিত্তিক ভিসানীতিও বিশ্বে দেশের ভাবমর্যাদা ক্ষুণœ করেছে। বিষয়টি এমন, বিশ্বে বাংলাদেশ যেন নিষেধাজ্ঞার ‘রোল মডেল’ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অথচ এই বছর কয়েক আগেও সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে মন্ত্রী-এমপি, ক্ষমতাসীনদলের নেতাকর্মীরা বাংলাদেশকে বিশ্বে ‘উন্নয়নের রোল মডেল’ বলতে বলতে মুখে ফেনা তুলে ফেলেছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ নাকি, বাংলাদেশের উন্নয়নকে রোল মডেল হিসেবে নিয়েছে। ধনী দেশগুলোও বাংলাদেশের উন্নয়নে বিস্মিত। এমন কথাও বলতে শোনা গেছে, দেশ সিঙ্গাপুরকে ছাড়িয়ে ইউরোপের দেশে পরিণত হচ্ছে। অস্বীকার করার উপায় নেই, দেশে উন্নয়ন হয়েছে। তবে সেই উন্নয়ন হয়েছে লুটেপুটে খাওয়ার জন্য। বাস্তবেও তাই দেখা যাচ্ছে। সরকারঘনিষ্ট লোকজন ও প্রভাবশালীরা উন্নয়ন খেয়ে দেশকে ফোকলা বানিয়ে দিয়েছে। উন্নয়নের কাঠামো ছাড়া এখন কিছু নেই। থাকলে, দেশ আজ চরম অর্থনৈতিক সংকটে পড়ত না। সাধারণ মানুষ কোন কষ্টে থাকত না। তাদের নুন আনতে পান্তা ফুরায় অবস্থার মধ্য দিয়ে চলতে হতো না। অর্থসংকটে পড়ে সরকারকে ঋণ করতে হতো না। এর জন্য সরকারই দায়ী। যে উন্নয়ন করেছে, সে উন্নয়ন ধরে রাখতে পারেনি। তার আশপাশের অলিগার্ক শ্রেণী ও প্রভাবশালীরা লাখ লাখ কোটি টাকা বিদেশে পাচার করে দিলেও তা প্রতিরোধ করতে পারেনি এবং পারছে না। ফলশ্রুতিতে দেশে টাকার চরম সংকট চলছে। ব্যাংকগুলোতে চলার মতো টাকা নেই। রিজার্ভ তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। তিন মাসের আমদানি ব্যয় মিটানোর মতো রিজার্ভ নেই। ঋণের জন্য বিদেশে হাত পাততে হচ্ছে। তাতেও পরিস্থিতির অবনমন ঠেকানো যাচ্ছে না। সচেতন মহল তো বটেই, সাধারণ মানুষেরও বুঝতে অসুবিধা হচ্ছে না, দেশের অর্থনীতি ভেঙ্গে পড়েছে। সরকার বিপাকে রয়েছে। এখন আর আগের মতো সরকারকে জিডিপি’র উলম্ফণ, মাথাপিছু আয় নিয়ে কেন বড় বড় কথা বলতে দেখা যায় না। বরং জিডিপি ৫-এর সামান্য উপরে ধরে হিসাব করতে হচ্ছে। হালনাগাদ মাথাপিছু আয়েরও হিসাব দেয়া হচ্ছে না। এসব সূচকের অবনমন দিয়েই তো বোঝা যায়, সরকারের উন্নয়নের ফানুস ফুটো হয়ে গেছে। অর্থনৈতিক সংকটময় পরিস্থিতি সমাল দিতে পারছে না। এর মধ্যে দুই বাহিনীর সাবেক দুই প্রধানের অপকর্ম এবং যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা দেশের ভাবমর্যাদা ভুলুণ্ঠিত করে দিয়েছে। সম্প্রতি জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী মিশনে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে অভিযুক্তদের পাঠানো হচ্ছে বলে জার্মানভিত্তিক ডয়েচ ভেলে’র প্রতিবেদন অসম্মানের আরেকটি পালক যুক্ত করেছে। এ নিয়ে জাতিসংঘও নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে। এমপি আনোয়ারুল আজিমের হত্যাকা-ের পর তার নানা অপকর্মের ফিরিস্তি প্রকাশিত হচ্ছে। তার এলাকার মানুষের অনেকে শোকের পরিবর্তে শুকরিয়া আদায় করছে। এর ফলে দেশের জনপ্রতিনিধিদের সম্পর্কে দেশে-বিদেশে বিরূপ ধারণা জন্মেছে। প্রশ্ন উঠেছে, ক্ষমতাসীনদল কাদের নমিনেশন দিচ্ছে? যদিও আনোয়ারুল আজিমের নমিনেশন নিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেছেন, তিনি জনপ্রিয় বলেই নমিনেশন দেয়া হয়েছিল। তার এ কথার জবাবে বলা যায়, তিনি যদি এতই জনপ্রিয় হতেন, তাহলে তার এলাকার মানুষ কেন তার মৃত্যুতে খুশি হবে? মানুষ তো শত্রুর মৃত্যুতেও ব্যথিত হয়। খুশি না হয়ে তার জন্য দোয়া করে। আনোয়ারুল আজিমের বেলায় কেন উল্টো ঘটনা ঘটল? শুধু এই এমপিই নন, বিগত বছরগুলোতে এমন আরও অনেক এমপি’র বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী বাহিনী গঠন, মাদক চোরাচালানসহ নানা অপকর্মের কথা আলোচিত-সমালোচিত হয়েছে। এখনও এলাকায় তাদের অপকর্ম বজায় রয়েছে। তাহলে, আমরা কিসের ‘রোল মডেল’-এ পরিণত হয়েছি? দুর্নীতি, সন্ত্রাস, ক্ষমতার অপব্যবহার ও অপশাসনের? বলার অপেক্ষা রাখে না, যুক্তরাষ্ট্র দুই বাহিনীর সাবেক দুই প্রধানের ওপর যে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে, পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, এটা ‘টিপস অফ আইসবার্গ’ বা হিমশৈলীর চূড়া। এরকম আরও নিষেধাজ্ঞা যুক্তরাষ্ট্র দিয়ে পুরো হিমশৈলী দেখিয়ে দিলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। কারণ, এরকম নিষেধাজ্ঞা দেয়ার মতো কর্মকা- শুধু সাবেক নয়, বর্তমানেরও অনেকের রয়েছে। তার উপর ভিসা নিষেধাজ্ঞার খড়গ তো ঝুলছেই। যদি তাই হয়, তাহলে দেশের ভাবমর্যাদা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে?

চার.
দেশে রাজনৈতিক পরিস্থিতি এখন স্থিতিশীল। সরকারকে বিরোধীদলের আন্দোলন-সংগ্রাম মোকাবেলা করতে হচ্ছে না। এটা সরকারের জন্য স্বস্তির হলেও, অর্থনৈতিক সংকটসহ ও নানা অস্বাভাবিক ঘটনায় ভেতরে ভেতরে যে অস্বস্তিতে রয়েছে তা বুঝতে অসুবিধা হয় না। বলা যায়, সরকার এখন তার নিজের সাথেই যুদ্ধ করছে। জাতীয় নির্বাচন থেকে এ যুদ্ধের সূচনা হয়েছে। সে নির্বাচনে নিজের প্রার্থীর সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছে। উপজেলা নির্বাচনেও তাই হয়েছে। এ নির্বাচনে সরকার ভোটার উপস্থিতি বাড়াতে এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতা দেখাতে দলীয় প্রতীকে প্রার্থী দেয়নি। তারপরও ভোটারদের আশানুরূপ সাড়া পায়নি। এর মাধ্যমে তিনটি বিষয় স্পষ্ট হয়েছে। প্রথমত কার্যকর বিরোধীদল ভোট বর্জন করায় ভোটারদের ভোট দেয়ার আগ্রহ হারিয়ে গেছে। দ্বিতীয়ত ক্ষমতাসীনদলের গ্রহণযোগ্যতা কমা। তৃতীয়ত নীরব রাজনৈতিক সংকট। মুখে স্বীকার না করলেও সরকারের জন্য অবশ্যই এই সংকট অস্বস্তির। এর মধ্যে একেক সময় একেক অস্বাভাবিক ঘটনা সংকটকে আরও গভীর করে তুলছে। ফলে সচেতন মহল ও সাধারণ মানুষের মধ্যে এ শঙ্কা ও চিন্তা আসা স্বাভাবিক, দেশে কী হচ্ছে, কোন দিকে যাচ্ছে।

[email protected]


বিভাগ : সম্পাদকীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিহত করার আহ্বান উপদেষ্টা নাহিদের

দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিহত করার আহ্বান উপদেষ্টা নাহিদের

মালয়েশিয়া আন্তর্জাতিক হালাল শোকেসের ২০তম আসরে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ

মালয়েশিয়া আন্তর্জাতিক হালাল শোকেসের ২০তম আসরে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের জেলা প্রতিনিধি সম্মেলন অনুষ্ঠিত দেশকে অস্থিতিশীল করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে পরাজিত শক্তি

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের জেলা প্রতিনিধি সম্মেলন অনুষ্ঠিত দেশকে অস্থিতিশীল করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে পরাজিত শক্তি

শ্রীলঙ্কায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন কাল

শ্রীলঙ্কায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন কাল

‘মব জাস্টিস’ বন্ধের আহ্বান বাংলাদেশ তরুণ কলাম লেখক ফোরামের

‘মব জাস্টিস’ বন্ধের আহ্বান বাংলাদেশ তরুণ কলাম লেখক ফোরামের

সাত দফা দাবিতে মানববন্ধন ও সমাবেশ

সাত দফা দাবিতে মানববন্ধন ও সমাবেশ

গৌরনদীর দই, একবার খাইলেও আর একবার খাই

গৌরনদীর দই, একবার খাইলেও আর একবার খাই

নোয়াখালীতে জীবাশ্ম জ্বালানিতে বিনিয়োগ বন্ধের দাবি

নোয়াখালীতে জীবাশ্ম জ্বালানিতে বিনিয়োগ বন্ধের দাবি

স্বর্ণের দাম বেড়ে রেকর্ড ২,৬০৯ ডলার ছাড়িয়েছে

স্বর্ণের দাম বেড়ে রেকর্ড ২,৬০৯ ডলার ছাড়িয়েছে

বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধ ও বিচার দাবিতে খুলনায় মানববন্ধন

বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধ ও বিচার দাবিতে খুলনায় মানববন্ধন

গাজায় অব্যাহত ইসরাইলি গণহত্যা ওআইসির নেতারা চেয়ে চেয়ে দেখছেন

গাজায় অব্যাহত ইসরাইলি গণহত্যা ওআইসির নেতারা চেয়ে চেয়ে দেখছেন

চাঁদপুর শহরে সড়ক সংস্কার কাজে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ

চাঁদপুর শহরে সড়ক সংস্কার কাজে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ

সেনা কর্মকর্তাদের ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেয়া প্রসঙ্গে

সেনা কর্মকর্তাদের ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেয়া প্রসঙ্গে

নোয়াখালীতে ৪৪ দিন পর লাশ উত্তোলন

নোয়াখালীতে ৪৪ দিন পর লাশ উত্তোলন

ভারতের দোসর ও হাসিনামিডিয়ার প্রশ্নবিদ্ধ ভূমিকা

ভারতের দোসর ও হাসিনামিডিয়ার প্রশ্নবিদ্ধ ভূমিকা

আশাশুনিতে হাজরাখালির নেটপাটায় পানিবন্দি ২শ’ পরিবার

আশাশুনিতে হাজরাখালির নেটপাটায় পানিবন্দি ২শ’ পরিবার

জামায়াত ক্ষমতায় গেলে নারীদের অধিকার খর্ব হবে না: সেলিম উদ্দিন

জামায়াত ক্ষমতায় গেলে নারীদের অধিকার খর্ব হবে না: সেলিম উদ্দিন

গাছে গাছে আফ্রিকান জায়ান্ট শামুক

গাছে গাছে আফ্রিকান জায়ান্ট শামুক

ঈশ্বরগঞ্জে মহাসড়কে কাঁচাবাজার

ঈশ্বরগঞ্জে মহাসড়কে কাঁচাবাজার

উখিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অস্ত্রসহ আরসা সন্ত্রাসী গ্রেফতার

উখিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অস্ত্রসহ আরসা সন্ত্রাসী গ্রেফতার