মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধ ও শান্তি
০২ জুন ২০২৪, ১২:০৪ এএম | আপডেট: ০২ জুন ২০২৪, ১২:০৪ এএম
শান্তি প্রক্রিয়ার পথে এবং সংঘাত চিরতরে বন্ধ করার লক্ষ্যে সৌদি আরব একটি উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। একটি রূপরেখা তুলে ধরেছে। সেখানে ইসরাইলকে ১৯৬৭ সালের সীমানায় ফেরার অপরিহার্যতা নির্ধারণ করে দেয়াসহ পশ্চিমতীর এবং গাজা উপত্যকা নিয়ে একটি ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে প্রস্তাব তুলে ধরা হয়েছে। অধিকন্তু এটি শরণার্থী সমস্যার সমাধানে ‘ন্যায়ভিত্তিক সমাধান’ হিসেবে পরিগণিত হবে বলে মনে করা হচ্ছে। বিনিময়ে আরব দেশগুলো ইসরাইলের অস্তিত্বের অধিকারকে স্বীকৃতি দেবে। এই সুযোগ ইসরাইলের সামনে ছিল এবং এখনও রয়েছে, যা আজ দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের পথ হিসেবে এখন আন্তর্জাতিক মহলে গুরুত্ব পাচ্ছে।
মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সংঘাতের শিরোনাম হলো ফিলিস্তিন ইস্যু, যার রাজনৈতিক সঙ্কট এখন অষ্টম দশকে পৌঁছার কাছাকাছি। আর এর সূচনা হয়েছিল যখন থেকে ইসরাইল ফিলিস্তিনি ভূমিতে ইহুদি রাষ্ট্র গঠনের ঘোষণা দেয়। তখন থেকে আজ পর্যন্ত এই অঞ্চলে ইসরাইলি আচরণের ভবিষ্যদ্বাণী করা একটি জটিল বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর এই অবস্থা এমন একটি বিশ্বে রয়েছে, যেখানে ফিলিস্তিনি ইস্যু এবং আরব ও মধ্যপ্রাচ্যের সাথে ইসরাইলের সংঘাতের বিষয়ে আন্তর্জাতিকভাবে কেন্দ্রীয় কোনো কর্তৃপক্ষ রয়েছে কিংবা এমন কোনো বাস্তবধর্মী মূল্যায়নের পথ রয়েছে যার উপর নির্ভর করা যায়। তাই ওই দৃষ্টিকোণ থেকে এই সংঘাতকে ব্যাখ্যা করার জন্য মধ্যপ্রাচ্যে একটি তত্ত্বের প্রয়োগ করা হয়েছিল, যা আরব-ইসরাইল-মধ্যপ্রাচ্য শান্তি প্রকল্প বা অসম্ভব তত্ত্ব বলে পরিচিত। অর্থাৎ এ সংকট কখনো শেষ হবার নয় বলে ধরে নেয়া হয়।
বিগত আশি বছরে, ইসরাইল তার আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে ফিলিস্তিনিদের অধিকারের দাবি কিংবা ফিলিস্তিনিদের অধিকারের পক্ষে আরবদের দাবির ফলে উদ্ভূত সমস্যার সমাধানে যুদ্ধকেই একটি স্থায়ী ও সুনির্দিষ্ট পন্থা হিসেবে বেছে নিয়েছে। এর ফলে ১৯৪৮ সাল থেকে ১৯৮২ সালের মধ্যে ইসরাইল আরববিশ্বের সাথে পাঁচ পাঁচটি আনুষ্ঠানিক যুদ্ধে লিপ্ত হয়, যার বিনিময়ে শান্তি প্রক্রিয়ার অধ্যায় শুরু হয় ১৯৬৭ সাল থেকে। এর মধ্যে রয়েছে জাতিসংঘের রেজুলেশন ২৪২, ১৯৭৯ সালের ক্যাম্প ডেভিড চুক্তি, ১৯৯১ সালের মাদ্রিদ সম্মেলন, ১৯৯৩ সালের অসলো চুক্তি এবং প্রায় চৌদ্দটি শান্তি প্রক্রিয়ার আলোচনা, যার কোনটিই ইসরাইলি আচরণ পরিবর্তন করতে সক্ষম হয়নি। অধিকন্তু ইসরাইল আরবদের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিককরণ প্রক্রিয়ায় ইতোমধ্যে মিসর, জর্দান, আরব আমিরাত, বাহরাইন, সুদান ও মরক্কো-সহ ৬টি দেশকে যুক্ত করে ফেলেছে।
এখানে প্রশ্ন আসে, আরববিশ্ব এবং সমগ্র মধ্যপ্রাচ্যের দেওয়া এতসব সুযোগ দেয়া সত্ত্বেও কেন ইসরাইল শান্তি প্রক্রিয়ায় আসতে চায় না? প্রকৃতপক্ষে, পুরো আন্তর্জাতিক সমাজ ব্যবস্থায় স্পষ্ট ধারণা ছাড়া এই অঞ্চলে ইসরাইলি আচরণের দিকে তাকানো ন্যায়সঙ্গত হবে না। রাষ্ট্র বা সংস্থার আকারে আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা থেকে ইসরাইলের পক্ষে স্পষ্ট এবং জোরালো সমর্থন রয়েছে। ফলে ফিলিস্তিনিদের অধিকারের জন্য ইসরাইল অন্য কিছু বিবেচনায় আনতে পারে না এবং মনে হচ্ছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের এসব অকাতর সমর্থনের ফলে ইসরাইল স্বপ্ন দেখা শুরু করছে যে, আরববিশ্ব এবং মধ্যপ্রাচ্য ফিলিস্তিনি জনগণের আমূল সমাধান নিশ্চিত করা ছাড়াই তারাও একসময় ইসরাইলের সমর্থনে এগিয়ে আসবে।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এমন একটি ইসরাইল রাষ্ট্র সৃষ্টিতে সরাসরি দায়ী, যে শান্তির প্রস্তাব গ্রহণে উপযুক্ত নয়। বিপরীতে এমন একটি ধারণা অর্জন হলেও, যা শান্তির দিকে পরিচালিত করতে পারে এভাবে আরবরা আট দশক ধরে অনেক ছাড় দিয়ে যাচ্ছে। গাজায় বিরাট সংখ্যায় বেসামরিক নাগরিকদের হত্যা সম্পূর্ণ উপায়ে মানবতার বিরুদ্ধে একটা অন্যায় কাজ এবং যা ঘটছে তা নিঃসন্দেহে আরব জনগণের মধ্যে এমন একটি ধারণাকে দৃঢ় করে যে, ইসরাইলের বিপরীতে আরবদের অনুভূতিগুলো তাকে শান্তির দরজায় প্রবেশ করানোর প্রচেষ্টা হিসেবে যথেষ্ট হয়নি বরং তা ইসরাইলের কয়েক দশক ধরে বেছে নেওয়া যুদ্ধের কণ্ঠ দ্বারা অন্য রূপে রূপান্তরিত হয়েছে। এ সময়ে ইসরাইল প্রমাণ করেছে যে, তারা ওই দেশের মধ্যে নয়, যে শান্তি অন্বেষণ করে এবং প্রতিবেশী দেশগুলোর সাথে সমস্ত স্বচ্ছতার সাথে বন্ধুত্ব স্থাপন করে চলতে পারে।
ইসরাইলের যে বার্তাটি বুঝা দরকার, শান্তি প্রাকৃতিক উপায়ে অবশ্যই মাটিতে বাস্তবায়িত হতে হবে এবং যখন তারা মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলে স্থায়ীভাবে ইহুদিবাদী একটি রাষ্ট্র গঠনে মরিয়া, তখন জায়নবাদী এবং তাদের রাজনৈতিক কর্ণধারদের মগজে এটি স্পষ্টভাবে গ্রহণ করা উচিত যে, জমির মালিকদের অধিকারকে স্বীকৃতি দেওয়া এবং তাদেরকে স্বাধীন রাষ্ট্র প্রদান করা ছাড়া তাদের তা অর্জন করা হবে না। ইসরাইলের ফিলিস্তিনিদের বেঁচে থাকার অধিকারে বিশ্বাস রাখতে হবে ও তারা কোনো শরণার্থীও নয় এটা মানতে হবে এবং তারা নিজ ভূমিতে অপরিচিত মুখ নয়Ñ এটা বুঝতে হবে। তারা শান্তিকে হুমকির মুখে ফেলে দিয়েছে এবং ইসরাইলের ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে তাদের বর্বর কর্মকা-কে ন্যায্যতা দেওয়ার জন্য জনগণের সামনে নানানভাবে উপস্থাপন করছে। অন্যদিকে, একটি ঐতিহাসিক তত্ত্ব রয়েছে, ক্ষমতাধররা তাদের পথে যতই শক্তি প্রয়োগ করুক তা দীর্ঘস্থায়ী হয় না। এমনকি শক্তি প্রয়োগে যদি বিজয়ও অর্জিত হয় তথাপি প্রতিরোধের বীজ রোপণ করে দেয়।
সৌদি আরবের নেতৃত্বে আরববিশ্ব যে শান্তি প্রস্তাবনা পেশ করেছে সেটিই মধ্যপ্রাচ্য ব্যবস্থায় দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে কাজ করবে। আর এটাই চূড়ান্ত ও একমাত্র সুযোগ, যা এখনো ইসরাইলের সামনে বিদ্যমান রয়েছে। আর তাই ইসরাইলের জন্য এ উদ্যোগকে এড়িয়ে যাওয়া কঠিন হবে। যেহেতু এটিই শেষ সুযোগ। কারণ, ইসরাইল জানে, ভবিষ্যতে এ অঞ্চলে রাজনৈতিক অবস্থা কেমন হবে তার পূর্বাভাস বলা অসম্ভব। তেমনি অসম্ভব হবে এ অঞ্চলে আগামীতে প্রদত্ত পরিবর্তিত সুযোগ-সুবিধা কেমন হবে তার ভবিষ্যতবাণী করা।
(২৭ মে প্রকাশিত, জারিদাতুর বিয়াদের নিবন্ধ)।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিহত করার আহ্বান উপদেষ্টা নাহিদের
মালয়েশিয়া আন্তর্জাতিক হালাল শোকেসের ২০তম আসরে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের জেলা প্রতিনিধি সম্মেলন অনুষ্ঠিত দেশকে অস্থিতিশীল করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে পরাজিত শক্তি
শ্রীলঙ্কায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন কাল
‘মব জাস্টিস’ বন্ধের আহ্বান বাংলাদেশ তরুণ কলাম লেখক ফোরামের
সাত দফা দাবিতে মানববন্ধন ও সমাবেশ
গৌরনদীর দই, একবার খাইলেও আর একবার খাই
নোয়াখালীতে জীবাশ্ম জ্বালানিতে বিনিয়োগ বন্ধের দাবি
স্বর্ণের দাম বেড়ে রেকর্ড ২,৬০৯ ডলার ছাড়িয়েছে
বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধ ও বিচার দাবিতে খুলনায় মানববন্ধন
গাজায় অব্যাহত ইসরাইলি গণহত্যা ওআইসির নেতারা চেয়ে চেয়ে দেখছেন
চাঁদপুর শহরে সড়ক সংস্কার কাজে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ
সেনা কর্মকর্তাদের ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেয়া প্রসঙ্গে
নোয়াখালীতে ৪৪ দিন পর লাশ উত্তোলন
ভারতের দোসর ও হাসিনামিডিয়ার প্রশ্নবিদ্ধ ভূমিকা
আশাশুনিতে হাজরাখালির নেটপাটায় পানিবন্দি ২শ’ পরিবার
জামায়াত ক্ষমতায় গেলে নারীদের অধিকার খর্ব হবে না: সেলিম উদ্দিন
গাছে গাছে আফ্রিকান জায়ান্ট শামুক
ঈশ্বরগঞ্জে মহাসড়কে কাঁচাবাজার
উখিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অস্ত্রসহ আরসা সন্ত্রাসী গ্রেফতার