ঢাকা   শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৬ আশ্বিন ১৪৩১

দুর্নীতির বিরুদ্ধে হঠাৎ সক্রিয় কেন দুদক?

Daily Inqilab ইনকিলাব

০৩ জুন ২০২৪, ১২:০১ এএম | আপডেট: ০৩ জুন ২০২৪, ১২:০১ এএম

দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) গণহয়রানিমূলক প্রতিষ্ঠান হিসাবে অনেকের কাছে পরিচিতি লাভ করেছে। অথচ, গণকল্যাণে কার্যকর ভূমিকা রাখাই তার অন্যতম কর্মলক্ষ্য হওয়া উচিত। দুর্নীতি নিরোধের একমাত্র সরকারি প্রতিষ্ঠান হলেও তার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির ব্যাপক অভিযোগ রয়েছে। সরকার ও প্রভাবশালীদের হাতিয়ার হিসেবে দুদকের ব্যবহৃত হওয়ার অভিযোগও রয়েছে। ‘শক্তের ভক্ত, নরমের যম’ বলে যে প্রবাদ আছে, দুদকের ব্যাপারে সেটা বিশেষভাবে প্রযোজ্য। অনেক নিরিহ-নিরপরাধ মানুষ দুদকের দ্বারা হয়রানির শিকার হয়েছে। সাদা কাগজে দেয়া অভিযোগের ভিত্তিতেও অনেককে হয়রানি করা হয়েছে। দুদক সম্পর্কে আরো অনেক অভিযোগ রয়েছে। দুদক দুর্নীতির অভিযোগে কেরানীকে গ্রেফতার করে, অফিসের বড়কর্তাকে স্পর্শ করে না। দুদক চুনোপুঁটি ধরে রাঘব-বোয়াল ছেড়ে দেয়। ছোট দুর্নীতিবাজ বা ঘুষখোরের ব্যাপারে দুদক খড়গহস্ত, পক্ষান্তরে যারা কোটি কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছে, তাদের ব্যাপারে নিশ্চুপ। দুদক দায়মুক্তি দেয়ার প্রতিষ্ঠান। অনেককে দুর্নীতির দায় থেকে মুক্তি দিয়েছে দুদক, যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল। এমনও বলা হয়ে থাকে, দুদক দুর্নীতিমুক্তির সার্টিফিকেট প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। এহেন দুদক হঠাৎ দুর্নীতির বিরুদ্ধে সক্রিয় ও তৎপর হয়ে উঠেছে কেন? সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে দুদকের অনুসন্ধান এ প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। ২৪ এপ্রিল দুদক বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অনুসন্ধান শুরু করেছে একজন আইনজীবির আবেদনের প্রেক্ষিতে। ইতোমধ্যে তার বিপুল সম্পদ, জমিজমা ও টাকা-পয়সার সন্ধান মিলেছে। জানা গেছে, সাবেক সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদের দুর্নীতির অনুসন্ধানও শুরু করতে যাচ্ছে দুদক। তারা দু’জন দেশের দুই বাহিনীর সাবেক প্রধান এবং সরকারের প্রিয়ভাজন ব্যক্তি হিসেবে চিহ্নিত। প্রশ্ন উঠতে পারে, তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির যেসব অভিযোগ তা কি তারা অবসরের পর করেছেন, না আগে? নিশ্চয় আগে। সে সময় দুদক কী করেছে? সরকারই বা কী করেছে? বলা হচ্ছে, তাদের দুর্নীতির খোঁজ দুদক ও সরকারের অজানা ছিল না। কিন্তু তাদের স্বপদে বহাল রেখেই দুর্নীতি সংঘটিত হতে সহায়তা করা হয়েছে। এর দায় দুদক বা সরকার কেউই এড়াতে পারে না।

বেনজীর আহমেদের দুর্নীতি তদন্তের প্রেক্ষাপটে পুলিশের দুর্নীতিবাজ সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তারা উদ্বিগ্ন ও বিচলিত হয়ে পড়েছেন বলে জানা গেছে। ইনকিলাবে প্রকাশিত এক খবরে দুদক সূত্রে উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়েছে, পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগের ভিত্তিতে দুদক দু’শতাধিক কর্মকতার একটি শর্ট লিস্ট করেছে, যাদের দুর্নীতি অনুসন্ধান করা হবে। তাদের মধ্যে ডিআইজি, পুলিশ সুপার, ওসি, ট্রাফিক ইন্সপেক্টর, সাব ইন্সপেক্টর, পুলিশ প্রশাসনে কর্মরত কর্মকর্তা ইত্যাদি রয়েছেন। এছাড়া ইতোপূর্বে দুদক থেকে দায়মুক্তি পাওয়া একজন ডিআইজি, একজন অতিরিক্ত ডিআইজিসহ ১৭ পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ পুনঃ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে দেশ-বিদেশে সম্পদের পাহাড় গড়ার অভিযোগ ছিল। বলা বাহুল্য পুলিশের দুর্নীতি, দুষ্কৃতি, অপকর্ম, অপরাধের শেষ নেই। ডাকাতি, ছিনতাই, রাহাজানি, গুম, হত্যা, অপহরণ, ধর্ষণ, ঘুষ, চাঁদাবাজি, বিনা অপরাধে গ্রেফতার, নির্যাতন, মাদক কারবার, মাদক ও চোরাইপণ্য ঢুকিয়ে মিথ্যা মামলা, বিরোধী রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা বা গায়েবী মামলা দায়ের করে গ্রেফতার, নির্যাতন, অর্থআদায়সহ আরো নানা অভিযোগ রয়েছে পুলিশের বিরুদ্ধে। গত দেড় দশকে পুলিশের দৌরাত্ম্য এতটাই বেড়েছে যে, ‘দেশের রাজা পুলিশ’ এমন একটি প্রবাদও তৈরি হয়েছে। দেশে যে ‘ভয়ের রাজত্ব’ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, তার মূলে রয়েছে দলীয় স্বার্থে পুলিশের নির্বিচার ব্যবহার। পুলিশের এক শ্রেণীর সদস্যের মধ্যে এমন ধারণা গড়ে উঠেছে যে, পুলিশই সরকারের ক্ষমতায় বসাতে ও ক্ষমতায় রাখতে নিয়ামক ভূমিকা পালন করছে। সুতরাং, যাচ্ছে তাই করার অধিকার তাদের আছে।

প্রতিষ্ঠান হিসাবে পুলিশের ভাবমর্যাদা একেবারে তলানিতে এসে ঠেকেছে। যদিও পুলিশে ভালো মানুষের সংখ্যাই বেশি। দলবাজ, দুর্নীতিবাজদের সংখ্যা কম। এই স্বল্পসংখ্যকের জন্য পুলিশের প্রতি মানুষের আস্থা-নির্ভরতা শূন্যে নেমে এসেছে। এখন পরিবারের কেউ যদি পুলিশে চাকরি করে, সেটা সম্মানের নয়, অসম্মানের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। পুলিশের পরিবারে সম্বন্ধ করার ক্ষেত্রে অনেকেরই অনীহা লক্ষ করা যায়। প্রতিষ্ঠান হিসাবে পুলিশ লোকবান্ধব ও লোকহিতৈষী হিসাবে গণ্য। আইন-শৃংখলা রক্ষা, মানুষের নিরাপত্তা, আইনী সুরক্ষা ও সুবিচার নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে পুলিশের প্রয়োজনীয়তা ও ভূমিকা অপরিসীম, অপরিহার্য। পুলিশকে যারা অখ্যাতি ও অপযশের শেষ প্রান্তে নিক্ষেপ করেছে, তারা কোনোভাবেই এর দায় এড়িয়ে যেতে পারবে না। আজ পুলিশের দুর্নীতি অনুসন্ধানে দুদকের বড় রকমের দায়িত্বশীলতা লক্ষ করা যাচ্ছে। সরকারও সেটা সমর্থন করছে। অথচ, পুলিশের দুর্নীতির বিষয় দুদক বা সরকারের অজানা নয়। যুক্তরাষ্ট্র-আইএমএফ ইত্যাদির চাপ কিংবা সরকারকে দুর্নীতিবিরোধী প্রমাণ করার জন্যই কী দুদককে মাঠে নামানো হয়েছে, এমন প্রশ্ন পর্যবেক্ষকদের অনেকেরই। কারণ, যাই হোক, দুর্নীতির লাগাম টেনে ধরা যে অতি জরুরি, তাতে সন্দেহ নেই। দুর্নীতি দেশকে খেয়ে ফেলতে বসেছে। দেশ রক্ষায় দুর্নীতি দমনের বিকল্প নেই। দুদকে হোক, পুলিশে হোক, প্রশাসনে হোক বা অন্য কোনো খানে হোক, দুর্নীতি দূর করতে হবে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স দেখাতে হবে। দুদকের উদ্যোগ যেন লোক দেখানো বা আইওয়াশ না হয়, এটাই আমরা প্রত্যাশা করব।


বিভাগ : সম্পাদকীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিহত করার আহ্বান উপদেষ্টা নাহিদের

দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিহত করার আহ্বান উপদেষ্টা নাহিদের

মালয়েশিয়া আন্তর্জাতিক হালাল শোকেসের ২০তম আসরে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ

মালয়েশিয়া আন্তর্জাতিক হালাল শোকেসের ২০তম আসরে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের জেলা প্রতিনিধি সম্মেলন অনুষ্ঠিত দেশকে অস্থিতিশীল করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে পরাজিত শক্তি

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের জেলা প্রতিনিধি সম্মেলন অনুষ্ঠিত দেশকে অস্থিতিশীল করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে পরাজিত শক্তি

শ্রীলঙ্কায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন কাল

শ্রীলঙ্কায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন কাল

‘মব জাস্টিস’ বন্ধের আহ্বান বাংলাদেশ তরুণ কলাম লেখক ফোরামের

‘মব জাস্টিস’ বন্ধের আহ্বান বাংলাদেশ তরুণ কলাম লেখক ফোরামের

সাত দফা দাবিতে মানববন্ধন ও সমাবেশ

সাত দফা দাবিতে মানববন্ধন ও সমাবেশ

গৌরনদীর দই, একবার খাইলেও আর একবার খাই

গৌরনদীর দই, একবার খাইলেও আর একবার খাই

নোয়াখালীতে জীবাশ্ম জ্বালানিতে বিনিয়োগ বন্ধের দাবি

নোয়াখালীতে জীবাশ্ম জ্বালানিতে বিনিয়োগ বন্ধের দাবি

স্বর্ণের দাম বেড়ে রেকর্ড ২,৬০৯ ডলার ছাড়িয়েছে

স্বর্ণের দাম বেড়ে রেকর্ড ২,৬০৯ ডলার ছাড়িয়েছে

বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধ ও বিচার দাবিতে খুলনায় মানববন্ধন

বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধ ও বিচার দাবিতে খুলনায় মানববন্ধন

গাজায় অব্যাহত ইসরাইলি গণহত্যা ওআইসির নেতারা চেয়ে চেয়ে দেখছেন

গাজায় অব্যাহত ইসরাইলি গণহত্যা ওআইসির নেতারা চেয়ে চেয়ে দেখছেন

চাঁদপুর শহরে সড়ক সংস্কার কাজে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ

চাঁদপুর শহরে সড়ক সংস্কার কাজে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ

সেনা কর্মকর্তাদের ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেয়া প্রসঙ্গে

সেনা কর্মকর্তাদের ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেয়া প্রসঙ্গে

নোয়াখালীতে ৪৪ দিন পর লাশ উত্তোলন

নোয়াখালীতে ৪৪ দিন পর লাশ উত্তোলন

ভারতের দোসর ও হাসিনামিডিয়ার প্রশ্নবিদ্ধ ভূমিকা

ভারতের দোসর ও হাসিনামিডিয়ার প্রশ্নবিদ্ধ ভূমিকা

আশাশুনিতে হাজরাখালির নেটপাটায় পানিবন্দি ২শ’ পরিবার

আশাশুনিতে হাজরাখালির নেটপাটায় পানিবন্দি ২শ’ পরিবার

জামায়াত ক্ষমতায় গেলে নারীদের অধিকার খর্ব হবে না: সেলিম উদ্দিন

জামায়াত ক্ষমতায় গেলে নারীদের অধিকার খর্ব হবে না: সেলিম উদ্দিন

গাছে গাছে আফ্রিকান জায়ান্ট শামুক

গাছে গাছে আফ্রিকান জায়ান্ট শামুক

ঈশ্বরগঞ্জে মহাসড়কে কাঁচাবাজার

ঈশ্বরগঞ্জে মহাসড়কে কাঁচাবাজার

উখিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অস্ত্রসহ আরসা সন্ত্রাসী গ্রেফতার

উখিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অস্ত্রসহ আরসা সন্ত্রাসী গ্রেফতার