ঢাকা   শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৬ আশ্বিন ১৪৩১

উচ্চ মূল্যস্ফীতিতে জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়ছে

Daily Inqilab আর কে চৌধুরী

০৭ জুন ২০২৪, ১২:১৩ এএম | আপডেট: ০৭ জুন ২০২৪, ১২:১৩ এএম

সরকারের প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত মানুষের জীবনযাত্রা সহজ করে দেওয়া। জীবনযাত্রার ব্যয় কমিয়ে মান বৃদ্ধি করতে পারলে সমাজে তার ইতিবাচক প্রভাব পড়ে। দিন যত যাচ্ছে, জীবনযাত্রার ব্যয় তত বাড়ছে। কিন্তু ব্যয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে আয় বাড়ছে না। ফলে সংকট দেখা দিচ্ছে মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত পরিবারে। সবচেয়ে বেশি অসুবিধায় পড়েছে স্থির আয়ের মানুষ।

নতুন অর্থবছরে জীবনযাত্রার ব্যয় আরো বাড়বে। কারণ নতুন অর্থবছরের বাজেটে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে রাজস্ব আদায়ের উচ্চাভিলাষী লক্ষ্য নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। সেই লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বাজেটে বিভিন্ন ক্ষেত্রে করহার ব্যাপকভাবে বাড়ানো হচ্ছে। অন্যদিকে ডলারের মূল্যবৃদ্ধির জেরে মানুষের প্রকৃত আয় কমে গেলেও বাড়ানো হচ্ছে না করমুক্ত আয়সীমা। বর্তমানে ৩৭ লাখ ব্যক্তি শ্রেণির করদাতা আয়কর রিটার্ন জমা দিয়ে থাকে। এর মধ্যে বড় অংশ মধ্যবিত্ত শ্রেণির করদাতা। এই শ্রেণির করদাতাদের জন্য বাজেটে আয়কর খাতে ছাড় নেই। মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বগতি সত্ত্বেও আয়কর আদায়ের কথা চিন্তা করে বাজেটে করমুক্ত আয়ের সীমা বাড়ানো হচ্ছে না। তবে করদাতার হয়রানি কমাতে আয়কর রিটার্ন অ্যাসেসমেন্টের বিধান বাতিল করা হচ্ছে।

অনেক পণ্যে ভ্যাটহার ১৫ শতাংশ করায় এর প্রভাব পড়বে বাজারে। অন্যদিকে চাল, গম, ভুট্টা, সরিষাবীজ, পরিশোধিত সয়াবিন, পাম অয়েল, সানফ্লাওয়ার বীজ, তেলবীজ, বিভিন্ন শাক-সবজির বীজ, ক্রুড অয়েল, সার, প্রাকৃতিক গ্যাস, বিটুমিন, কয়লা, জিপসাম, ভিটামিন, ইনসুলিন, ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন রোগের অত্যাবশ্যক ওষুধ এবং ভ্যাকসিন ও ওষুধের কাঁচামাল, বিভিন্ন ধরনের দরকারি রাসায়নিক ইত্যাদির ওপর বসতে যাচ্ছে বাড়তি শুল্ক। পাশাপাশি জরুরি প্রয়োজনে মোবাইল ফোনে কথা বলতে গেলে বা ইন্টারনেট ব্যবহারে গুণতে হবে বাড়তি অর্থ।

তবে ভোক্তাদের স্বস্তিতে রাখতে দেশীয় উৎপাদন বাড়ানোর পাশাপাশি ভোগ্য পণ্য আমদানিতে শুল্ক কমানোর পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। কারণ, বর্তমান পরিস্থিতিতে শুধু নিম্নবিত্ত কিংবা নিম্নমধ্যবিত্তই নয়, উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে নাকাল মধ্যবিত্ত ও উচ্চমধ্যবিত্তরাও। বাজারে সব ধরনের নিত্যপণ্য উচ্চমূল্যে বিক্রি হচ্ছে। প্রতিদিনই বাড়ছে কোনো না কোনো পণ্যের দাম। অন্যদিকে চলমান উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমছে। আয়ের চেয়ে ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় চাহিদায় কাটছাঁট করেও সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছে সাধারণ মানুষ। বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) সর্বশেষ তথ্য মতে, খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১৫ শতাংশ, যা এক বছর আগেও এর অর্ধেক ছিল।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বাজেটে মূল্যস্ফীতি কমিয়ে আনা এবং ডলারের সঙ্গে টাকার অবমূল্যায়নের বিষয়টিতে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। ডলারের মূল্যবৃদ্ধির কারণে ট্যাক্সের পরিমাণও বেড়ে যায়। এতেও মূল্যস্ফীতির ওপর প্রভাব পড়ে। ফলে অতি প্রয়োজনীয় পণ্য, যেগুলো সাধারণ মানুষ ব্যবহার করে, সেগুলোতে করের বোঝা শূন্য কিংবা সহনীয় পর্যায়ে রাখা উচিত।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মানুষের যাতে ক্রয়ক্ষমতা ও আয়-রোজগার বাড়ে, সেটার ওপর জোর দিতে হবে। একই সঙ্গে কর্মসংস্থান বাড়ানোর বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে। সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির পরিধি আরো বাড়ানোর বিষয়টা নিশ্চিত করতে হবে। তাঁদের পরামর্শ, সরকারের বিবেচনায় থাকতে হবে। মূল্যস্ফীতির কারণে বিপাকে পড়া মানুষকে সুরক্ষা দিতে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে পর্যাপ্ত বরাদ্দ নিশ্চিত করার বিষয়ে জোর দিচ্ছেন তারা।

জানা গেছে, স্বল্প আয়ের মানুষকে স্বস্তি দিতে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় উপকারভোগীর সংখ্যা অন্তত সাড়ে পাঁচ লাখ বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে। এ ছাড়া খোলা ট্রাকে খাদ্যশস্য বিক্রি কার্যক্রম বাড়ানো হবে। টিসিবির মাধ্যমে বর্তমানে এক কোটি পরিবার কম মূল্যে খাদ্যপণ্য পাচ্ছে। ভবিষ্যতে পরিবারের সংখ্যা এবং পণ্যের পরিমাণ বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে। চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে সামাজিক সুরক্ষার আওতায় ১১৫টি কর্মসূচিতে মোট এক লাখ ২৬ হাজার ২৭২ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়। এ বরাদ্দ মোট চলতি বাজেটের ১৬.৫৮ শতাংশ এবং মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ২.৫২ শতাংশ। এর মধ্যে অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মী ও তাঁদের পরিবারের পেনশন বাবদ বরাদ্দ রাখা হয় ২৭ হাজার ৪১৪ কোটি টাকা। এ ছাড়া সঞ্চয়পত্রের সুদের হারে সামাজিক নিরাপত্তা প্রিমিয়াম এবং কৃষিসহ বেশ কিছু ভর্তুকি সামাজিক সুরক্ষার অন্তর্ভুক্ত থাকা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে।

বর্তমানে বিশ্ববাজারে সারের দাম অর্ধেক পর্যন্ত কমেছে। কিন্তু তার কোনো প্রভাব বাংলাদেশের বাজারে পড়েনি। এর আগে বিশ্ববাজারে যখন দাম বেড়েছিল, সেই অজুহাত দেখিয়ে দেশের বাজারে কয়েক দফা সারের দাম বাড়ানো হয়েছিল। আবার ডিজেল ও বিদ্যুতের দাম বাড়ার কারণে পানি সেচ কাজের ব্যয় বেড়েছে। মূলত এসব কারণে পণ্যের দাম কমছে না। আমাদের নিজেদের উৎপাদন বাড়াতে জোর দিতে হবে। উৎপাদন বাড়াতে না পারলে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হবে।

চারদিক দিয়েই লাগামহীনভাবে ব্যয় বাড়ছে। কিন্তু সেই তুলনায় আয় না বাড়ায় বর্তমানে সংসার চালাতে মানুষের খুব কষ্ট হচ্ছে। দুই বছর আগে বাজারে সোনালি মুরগির দাম ছিল কেজি ২৫০ টাকা, সেই মুরগির দাম বেড়ে বর্তমানে হয়েছে ৩৮০ টাকা। একইভাবে গত কয়েক বছরের তুলনায় বর্তমানে সব ধরনের পণ্যের দাম অনেক বেশি। ফলে বাচ্চাদের মুখে পুষ্টিকর খাবার তুলে দেওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। এসব কারণে সরকারকে বাজার নিয়ন্ত্রণে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া উচিত। না হলে আগামী দিনে নিম্ন ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত মানুষের টিকে থাকা কঠিন হবে।

লেখক: মুক্তিযোদ্ধা ও শিক্ষাবিদ, সাবেক চেয়ারম্যান রাজউক, উপদেষ্টা, সেক্টর কমান্ডার্স ফোরাম, সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট এফবিসিসিআই এবং মহান মুক্তিযুদ্ধে ২ ও ৩ নং সেক্টরের রাজনৈতিক উপদেষ্টা।


বিভাগ : সম্পাদকীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিহত করার আহ্বান উপদেষ্টা নাহিদের

দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিহত করার আহ্বান উপদেষ্টা নাহিদের

মালয়েশিয়া আন্তর্জাতিক হালাল শোকেসের ২০তম আসরে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ

মালয়েশিয়া আন্তর্জাতিক হালাল শোকেসের ২০তম আসরে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের জেলা প্রতিনিধি সম্মেলন অনুষ্ঠিত দেশকে অস্থিতিশীল করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে পরাজিত শক্তি

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের জেলা প্রতিনিধি সম্মেলন অনুষ্ঠিত দেশকে অস্থিতিশীল করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে পরাজিত শক্তি

শ্রীলঙ্কায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন কাল

শ্রীলঙ্কায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন কাল

‘মব জাস্টিস’ বন্ধের আহ্বান বাংলাদেশ তরুণ কলাম লেখক ফোরামের

‘মব জাস্টিস’ বন্ধের আহ্বান বাংলাদেশ তরুণ কলাম লেখক ফোরামের

সাত দফা দাবিতে মানববন্ধন ও সমাবেশ

সাত দফা দাবিতে মানববন্ধন ও সমাবেশ

গৌরনদীর দই, একবার খাইলেও আর একবার খাই

গৌরনদীর দই, একবার খাইলেও আর একবার খাই

নোয়াখালীতে জীবাশ্ম জ্বালানিতে বিনিয়োগ বন্ধের দাবি

নোয়াখালীতে জীবাশ্ম জ্বালানিতে বিনিয়োগ বন্ধের দাবি

স্বর্ণের দাম বেড়ে রেকর্ড ২,৬০৯ ডলার ছাড়িয়েছে

স্বর্ণের দাম বেড়ে রেকর্ড ২,৬০৯ ডলার ছাড়িয়েছে

বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধ ও বিচার দাবিতে খুলনায় মানববন্ধন

বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধ ও বিচার দাবিতে খুলনায় মানববন্ধন

গাজায় অব্যাহত ইসরাইলি গণহত্যা ওআইসির নেতারা চেয়ে চেয়ে দেখছেন

গাজায় অব্যাহত ইসরাইলি গণহত্যা ওআইসির নেতারা চেয়ে চেয়ে দেখছেন

চাঁদপুর শহরে সড়ক সংস্কার কাজে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ

চাঁদপুর শহরে সড়ক সংস্কার কাজে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ

সেনা কর্মকর্তাদের ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেয়া প্রসঙ্গে

সেনা কর্মকর্তাদের ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেয়া প্রসঙ্গে

নোয়াখালীতে ৪৪ দিন পর লাশ উত্তোলন

নোয়াখালীতে ৪৪ দিন পর লাশ উত্তোলন

ভারতের দোসর ও হাসিনামিডিয়ার প্রশ্নবিদ্ধ ভূমিকা

ভারতের দোসর ও হাসিনামিডিয়ার প্রশ্নবিদ্ধ ভূমিকা

আশাশুনিতে হাজরাখালির নেটপাটায় পানিবন্দি ২শ’ পরিবার

আশাশুনিতে হাজরাখালির নেটপাটায় পানিবন্দি ২শ’ পরিবার

জামায়াত ক্ষমতায় গেলে নারীদের অধিকার খর্ব হবে না: সেলিম উদ্দিন

জামায়াত ক্ষমতায় গেলে নারীদের অধিকার খর্ব হবে না: সেলিম উদ্দিন

গাছে গাছে আফ্রিকান জায়ান্ট শামুক

গাছে গাছে আফ্রিকান জায়ান্ট শামুক

ঈশ্বরগঞ্জে মহাসড়কে কাঁচাবাজার

ঈশ্বরগঞ্জে মহাসড়কে কাঁচাবাজার

উখিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অস্ত্রসহ আরসা সন্ত্রাসী গ্রেফতার

উখিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অস্ত্রসহ আরসা সন্ত্রাসী গ্রেফতার