ঢাকা   শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৬ আশ্বিন ১৪৩১

ইনকিলাব দায়বদ্ধ দেশ ও জনগণের কাছে

Daily Inqilab কামরুল হাসান দর্পণ

০৭ জুন ২০২৪, ১২:১৩ এএম | আপডেট: ০৭ জুন ২০২৪, ১২:১৩ এএম

গত ২৯ মে প্রখ্যাত অভিনেতা হুমায়ূন ফরীদির জন্মদিন ছিল। চ্যানেল আই কর্তৃপক্ষ তাঁর জন্মদিন পালন ও তাকে নিয়ে সংস্কৃতি অঙ্গণের বিভিন্ন গুণী মানুষের লেখা সমৃদ্ধ ‘হুমায়ূন ফরীদি, সাধারণ এক অসাধারণ’ গ্রন্থের প্রকাশনা উৎসবের আয়োজন করে। সেখানে আমিও আমন্ত্রিত ছিলাম। সংস্কৃতি অঙ্গণের অনেক জ্ঞানী-গুণীজন এসেছিলেন। তাদের অনেকের সাথে দীর্ঘদিন পর দেখা হয়। কেউ কেউ জিজ্ঞেস করেন, আমি এখনো ইনকিলাবে আছি কিনা? জবাবে বললাম, আছি। প্রায় ২৮ বছর হলো। আলাপচারিতায় তাদের বললাম, আলহাজ মাওলানা এম. এ. মান্নান (রহ.) ইনকিলাব প্রতিষ্ঠা না করলে এবং তাঁর সুযোগ্য সন্তান আলহাজ এ এম এম বাহাউদ্দীন সম্পাদক না হলে, হয়ত আমার সাংবাদিক হওয়া হতো না। অন্য পেশায় থাকতাম। আপনাদের সাথেও পরিচয় হতো না। শুধু আমি নই, অনেকেরই হয়ত সাংবাদিক হওয়া হতো না। এ হিসেবে আমার সাংবাদিকতার জন্মদাতা ইনকিলাব। পেশাদার সাংবাদিকরা অন্য পত্রিকায় ভাল সুযোগ-সুবিধা পেলে চলে যায়। এটাই স্বাভাবিক। ইনকিলাব থেকে জন্ম নেওয়া অনেক সাংবাদিকও ইনকিলাব ছেড়ে গেছেন এবং তারা প্রতিষ্ঠিত নামকরা পত্রিকায় কর্মরত। কেউ কেউ সম্পাদকও হয়েছেন। ইনকিলাব প্রতিষ্ঠান হিসেবে রয়ে গেছে। এ হিসেবে ইনকিলাব সংবাদিক তৈরির কারিগরও বটে। এখন বাংলাদেশে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক অবস্থান নিয়ে যে কয়টি পত্রিকা প্রকাশিত হচ্ছে, তার মধ্যে অন্যতম প্রাচীন পত্রিকা ইনকিলাব। ৩৮ বছর পূর্ণ করে ৩৯ বছরে পা দিয়েছে। ইনকিলাবের চেয়ে প্রাচীন পত্রিকার মধ্যে সংবাদ ও ইত্তেফাক এখনও নিয়মিত প্রকাশিত হচ্ছে। ইনকিলাবে আছি এ কারণে যে, এর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ব্যবসা-বাণিজ্য নয় কিংবা কর্তৃপক্ষ নিজ স্বার্থ হাসিলের জন্য প্রতিষ্ঠা করেননি। পত্রিকাটি নিখাদ দেশপ্রেম, দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব, জনগণ, দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমান এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির স্বার্থ রক্ষায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। একচোখা বা আপসকামী নীতি নয়, ভালোকে ভাল বলা, খারাপকে খারাপ বলার দৃঢ়তা নিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এ নীতিতেই এর সংবাদ প্রকাশিত হয়। বিষয়টি অনেকে বুঝতে ব্যর্থ হন। একটি উদাহরণ দেই, এই যে হুমায়ূন ফরীদি, তিনি প্রগতিশীল মানুষ ছিলেন। ওনার সাথে সামনা-সামনি কথা বলার সুযোগ খুব কম হয়েছে। ফোনে বেশি কথা হতো। তিনি ইনকিলাবের সহযোগী বা অঙ্গপ্রতিষ্ঠান সাপ্তাহিক ‘পূর্ণিমা’র একসময়ের নির্বাহী সম্পাদক মুক্তিযোদ্ধা ও কবি আতাহার খানের ঘনিষ্ট বন্ধু ছিলেন। ফরীদি ভাইয়ের সাথে সংবাদ সংক্রান্ত কথা বলার জন্য একদিন ফোন করেছিলাম। ২০০২ সালের বিশ্বকাপ ফুটবল শুরুর আগে। তিনি অত্যন্ত ফুটবল অনুরাগী ছিলেন। বিশ্বকাপে কোনদল চ্যাম্পিয়ন হতে পারে, কোন ফুটবলার আলো ছড়াবে, ইত্যাদি বিষয় নিয়ে গভীর বিশ্লেষণ করতে পারতেন। এ নিয়ে ওনাকে ফোন করেছিলাম। ইনকিলাব থেকে ফোন করেছি, এতে তিনি বিস্মিত ও অবাক হয়েছিলেন। কোনো কথা বলবেন না বলে সরাসরি না করে দিয়েছিলেন। বললেন, ইনকিলাবের সাথে আমি ও সুবর্ণা (অভিনেত্রী সুবর্ণা মুস্তাফা) কোনো কথা বলব না বলে ঠিক করেছি। বললাম, আপনারা কথা না বললেও তো ইনকিলাবে আপনাদের নিউজ প্রকাশিত হয়। বললেন, হোক, আমাদের বরাত দিয়ে তো আর হয় না। বললাম, আপনারা কথা বলেন আর না বলেন, সংবাদ তো ছাপা হয়। এতে পার্থক্য কি? তখন তিনি চুপ মেরে গেলেন। তারপর পাল্টা প্রশ্ন করলেন, তুমি কেন ইনকিলাবে কাজ করো? জবাবে বললাম, আপনি যদি এমন একটি পত্রিকা প্রকাশ করে আমাকে ডাকেন, একজন প্রফেশনাল সাংবাদিক হিসেবে আমি আপনার ডাকে সাড়া দেব। তখন তিনি বললেন, তা ঠিক। এখন বলো কি জানতে চাও? জিজ্ঞেস করলাম, বিশ্বকাপ ফুটবল নিয়ে আপনার চিন্তা-ভাবনা কি? আপনার দৃষ্টিতে এবার কোন দলের চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে এবং কোন ফুটবলার সেরা হতে পারে। তিনি বিশ্লেষণ করে বললেন। তারপর বললেন, লেখা ছাপা হওয়ার পর আমাকে বলবে। আমি দেখব। বললাম, নিশ্চয়ই। এরপর থেকে ফরীদি ভাইয়ের সাথে ইনকিলাবের একটি ভাল সম্পর্ক গড়ে উঠে। মনে আছে, যখন সুবর্ণা মুস্তাফার সঙ্গে তার বিচ্ছেদ ঘটে, তার আগে তিনি নিজ থেকে আমাকে ফোন করে জানিয়েছিলেন। অর্থাৎ হুমায়ূন ফরীদির মতো প্রগতিশীল মানুষরাও ইনকিলাবের প্রয়োজনীয়তা অস্বীকার করতে পারেননি। প্রখ্যাত ঔপন্যাসিক ও নির্মাতা হুমায়ূন আহমেদের সাথেও ইনকিলাবের গভীর সম্পর্ক ছিল। বিশেষ করে সাপ্তাহিক পূর্ণিমার ঈদ সংখ্যায় তার উপন্যাস থাকতই। এছাড়া, তাঁকে নিয়ে পূর্ণিমার একাধিক প্রচ্ছদ প্রতিবেদন করা হয়েছে। তিনি বিভিন্ন পত্রিকায় সমসাময়িক বিষয় নিয়ে কলাম লিখতেন। একবার ওনাকে ইনকিলাবে লেখার জন্য বলেছিলাম। তিনি রাজী হয়েছিলেন। বললেন, লিখব। তারপর অসুস্থ হয়ে গেলেন এবং শেষ পর্যন্ত ইন্তেকাল করেন। শুধু আমাদের দেশের প্রখ্যাত সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, অর্থনীতিবিদ, রাজনীতিবিদ, রাষ্ট্রবিজ্ঞানী থেকে শুরু করে বিভিন্ন ক্ষেত্রের ব্যক্তিত্ব ইনকিলাবে লিখতেন না, কলকাতার প্রখ্যাত সাহিত্যিক সমরেশ, সুনীল থেকে শুরু করে সেখানকার জনপ্রিয় সাহিত্যিকরা পূর্ণিমায় (ঈদ সংখ্যা) লিখতেন। তারাও ইনকিলাবের প্রয়োজনীয়তা, গুরুত্ব এবং ইনকিলাবের প্রতি বাংলাদেশের জনগণের অপরিসীম আগ্রহ অস্বীকার করতে পারেননি।

দুই.
ইনকিলাব প্রকাশের প্রস্তুতিকালে এবং যখন প্রকাশিত হয়, তখন দেশের পত্রিকা জগতে বেশ আলোড়ন ও তোলপাড় শুরু হয়েছিল। এর কারণ হচ্ছে, তখন এটা সংবাদপত্রের জগতে অনেকেই ভাবেননি, অত্যাধুনিক ছাপার মেশিন, কম্পিউটার সেটআপ নিয়ে নতুন একটি হাউস থেকে একইসঙ্গে বাংলা ও ইংরেজি দৈনিক (দ্য টেলিগ্রাফ) এবং সাপ্তাহিক প্রকাশ করা হচ্ছে। অথচ তাই হয়েছে। দেশের সংবাদপত্র জগতে আধুনিকতার সূচনা করে ইনকিলাব বিপ্লব ঘটিয়ে দিয়েছিল। ইনকিলাবই দেশের প্রথম পত্রিকা, যেখানে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি, মেশিন ব্যবহৃত হয়। শুধু আধুনিক প্রযুক্তিই নয়, ইনকিলাবে যোগ দিয়েছিলেন সে সময়ের প্রখ্যাত সাংবাদিকরা। প্রযুক্তি, দক্ষ ও অভিজ্ঞ সাংবাদিকদের সমন্বয়ে একটি আধুনিক সংবাদপত্র হিসেবে ইনকিলাব পত্রিকা জগতে উজ্জ্বল নক্ষত্রের মতো আবির্ভূত হয়। প্রকাশের প্রথমদিন থেকেই স্থায়ীভাবে পাঠকের মন জয় করে নেয়। এখন প্রযুক্তির উৎকর্ষ নিয়ে অনেক পত্রিকাই প্রকাশিত হয়, তবে ইনকিলাব যেভাবে শুরু করেছিল, তা এখনও পাঠকের মনে দাগ কেটে আছে এবং এখনও সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে চলছে। ইনকিলাব শুধু প্রথাগত আট পৃষ্ঠা পত্রিকার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না। নতুন নতুন আইডিয়া যুক্ত করে পাঠকদের একের পর এক চমক দিতে থাকে। মূল পত্রিকার সাথে যে, আলাদাভাবে বিষয়ভিত্তিক সাপ্লিমেন্ট থাকতে পারে, এই ধারণা ইনকিলাবই প্রথম সূচনা করেছিল। যেমন রাজনীতি, অর্থনীতি, মতামত, ধর্ম-দর্শণ, ইসলামী জীবন, তারুণ্য, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, ক্রীড়া, সংস্কৃতি, সাহিত্য, আভ্যন্তরীণ, মহিলাবিষয়ক, স্যাটেয়ার, পাঁচমিশালী ইত্যাদি বিষয়ভিত্তিক আলাদা সাপ্লিমেন্ট মূল পত্রিকার সাথে যুক্ত করা হয়, যা ছিল দেশের সংবাদপত্র জগতে যুগান্তকারি পদক্ষেপ। এতে পাঠকরা মূল পত্রিকার পাশাপাশি বিভিন্ন তথ্য ও জ্ঞানের জগতকে বিস্তৃত করার খোরাক পায়। পত্রিকা সম্পর্কে পাঠকদের ধারণা বদলে দেয়। পরবর্তীতে অন্যান্য পত্রিকাগুলোও ইনকিলাবের দেখানো এই পথে হাঁটে। ইনকিলাবের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, পাঠকদের সামনে সবচেয়ে বেশি সংবাদ তুলে ধরা। সঠিক তথ্য প্রদান এবং তাদের চাহিদা ও ভাবনার জগতকে সম্প্রসারিত করা। চিন্তাশীল, এমনকি সাধারণ পাঠকদের অন্যতম আগ্রহের বিষয় ছিল, ইনকিলাবের সম্পাদকীয় বিভাগ। এ বিভাগে যারা উপসম্পাদকীয় লিখতেন, তাদের লেখা পড়ার জন্য তারা উদগ্রীব হয়ে থাকতেন। গত সপ্তাহে একজন কবি ও লেখকের সাথে কথা হয়। কথা প্রসঙ্গে তিনি বললেন, ইনকিলাবে যত নিউজ পাওয়া যায়, অন্য পত্রিকায় এত নিউজ পাওয়া যায় না। এ সময়ের যেসব পত্রিকা রয়েছে, সেগুলোর ফ্রন্ট ও ব্যাক পেজে সাত-আটটার বেশি নিউজ পাওয়া যায় না। বেশিরভাগ নিউজের ধরন দেখলে বোঝা যায়, এর পেছনে কোনো পারপাস রয়েছে। তাছাড়া, মেকআপ-গেটআপে অন্য পত্রিকার অনুকরণ লক্ষ্যণীয়। ইনকিলাবের প্রথম ও ব্যাক পেজে অনেক নিউজ থাকে এবং স্বতন্ত্র। এটা খুবই ভাল লাগে। অন্য পত্রিকা থেকে এখানেই ইনকিলাব আলাদা। ইনকিলাবের নিউজ পড়লে বোঝা যায়, এটা কোনো পারপাস সার্ভ করার জন্য নয়। যা ঘটছে এবং যা সত্য, তাই প্রকাশ করছে। এমন নিউজও প্রকাশ করে, যা এ সময়ে কল্পনা করা যায় না। অর্থাৎ ইনকিলাবকে অসত্যের সাথে আপস করতে দেখা যায় না। কিংবা সত্য জেনেও তা প্রকাশ না করে এড়িয়ে যায় না। এ সময়ে আমাদের দেশে ভারতের যে আধিপত্যবাদী আচরণ, সীমান্তে পাখির মতো বাংলাদেশীদের হত্যা, আমাদের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব নিয়ে ভারতের লোকজনের তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করাসহ তার সব দাবী আদায় করে নেয়ার মতো ঘটনাগুলোর প্রতিবাদ ইনকিলাবের মতো আর কোনো পত্রিকাকে করতে দেখা যায় না। অথচ দেশের মিডিয়াগুলোর এ ব্যাপারে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখা জরুরি ছিল। এদিক থেকে ইনকিলাব ব্যতিক্রম। যেখানে অন্য পত্রিকাগুলো চুপ, ভারতের পারপাস সার্ভ করার ক্ষেত্রে বা ভারতকে দাসখত দিয়ে রেখেছে, কিংবা সাহস দেখাতে পারে না, সেখানে ইনকিলাব সরব হয়ে ভারতের আধিপত্যবাদের প্রতিবাদ করে যাচ্ছে। শুধু ভারতের আধিপত্যবাদই নয়, বিশ্বের যেখানেই আধিপত্যবাদীদের অত্যাচার, নিপীড়ন, নির্যাতন চলছে, সে ব্যাপারেও ইনকিলাব সোচ্চার ভূমিকা রাখছে। ইরাক, সিরিয়া, আফগানিস্তান, লিবিয়া, ফিলিস্তিনে পশ্চিমা আধিপত্যবাদীদের হামলায় যে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে এবং চালাচ্ছে, তার প্রতিবাদ ইনকিলাব নিয়মিত করে যাচ্ছে। যেখানে মুসলমানরা হত্যা, নিপীড়ন, নির্যাতনের শিকার হচ্ছে, তার বিরুদ্ধে ইনকিলাব রুখে দাঁড়াচ্ছে। মুসলমানদের স্বার্থ রক্ষায় ইনকিলাব যেভাবে ভূমিকা পালন করছে, অন্যপত্রিকাগুলো তা থেকে যেন মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। তাদের ভূমিকা দেখে মনে হয়, মুসলমান হত্যা ও নির্যাতন নিয়ে তাদের কোনো উদ্বেগ এবং দায় নেই। ইসলাম ও মুসলমানদের বিপরীতে দাঁড়ানোই যেন তাদের কাছে প্রগতিশীলতা। অথচ তারা তথাকথিত সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির কথা বলে মুখে ফেনা তুলে ফেলে। আমাদের দেশে হিন্দুদের বেলায় পান থেকে চুন খসলেই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট হয়ে গেল বলে আহাজারি শুরু করে। ভারতে যে মুসলমানদের হত্যা, নির্যাতন ও উচ্ছেদ করছে, এ ব্যাপারে তাদের কোনো টুঁ শব্দ নেই। এটা কোনো প্রকৃত সংবাদপত্রের বৈশিষ্ট্য হতে পারে না।

তিন.
ইনকিলাব যে অন্য পত্রিকা থেকে আলাদা, তার মূলে রয়েছে এর সম্পাদক এ এম এম বাহাউদ্দীনের প্রাজ্ঞতা, দক্ষতা ও চিন্তাশীলতা। ইনকিলাবের নীতি ও আদর্শ এবং নির্ভিকতার নিউক্লিয়াস হয়ে আছেন তিনি। সুদীর্ঘ ৩৮ বছর ধরে তিনি নিরলসভাবে এবং সাহসিকতার সাথে কাজটি করে যাচ্ছেন। সত্য প্রকাশে তাঁর আপসহীনতার কারণে ইনকিলাব বিভিন্ন সময়ে সরকার ও প্রভাবশালীদের রোষাণলে পড়েছে। বেশ কয়েকবার বন্ধের শিকার হয়েছে। ইনকিলাব যতবার বন্ধ করা হয়েছে এবং সম্পাদক সাহেবের বিরুদ্ধে যত মামলা হয়েছে, বাংলাদেশের ইতিহাসে তার অন্য নজির নেই। তারপরও ইনকিলাব সম্পাদককে মাথা নোয়াতে দেখা যায়নি। কোনো চাপের কাছে তিনি নতিস্বীকার করেননি ও করেন না। যারা বন্ধ করেছে, এক সময় তারাই স্বেচ্ছায় খুলে দিয়ে গেছে। এর কারণ হচ্ছে, সম্পাদক সাহেবের নির্ভিকতা ও সত্যের প্রতি অটল অবস্থান। সর্বশেষ ইনকিলাব যখন বন্ধ করা হয়, তখন সম্পাদক সাহেব দৃঢ়তার সাথে আমাদের বলেছিলেন, ‘আমরা কোনো অন্যায় করিনি। সত্য সংবাদ প্রকাশ করেছি বলেই বন্ধের শিকার হয়েছি।’ তাঁর এই নির্ভিকচিত্ততায় আমরা উজ্জীবিত হয়েছি। তিনি ইনকিলাবকে আরও শানিত করেছেন। সত্য প্রকাশে আরও নিঃসংকোচ হয়েছেন। সংবাদপত্রের স্বাধীনতা সংকোচন এবং সেল্ফ সেন্সরশিপের কালেও ইনকিলাব বস্তুনিষ্ঠ ও প্রকৃত সংবাদ প্রকাশ করে যাচ্ছে। এতে সরকারের একশ্রেণীর আমলা নিয়ম অনুযায়ী ইনকিলাবের প্রাপ্য সরকারি বিজ্ঞাপন কমিয়ে দিয়েছে। এর অর্থ হচ্ছে, ইনকিলাবকে নতি স্বীকার করানো। তবে ইনকিলাব সম্পাদক তার কোনো তোয়াক্কা না করে, ইনকিলাবের জন্মের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের প্রতি অবিচল-অটল রয়েছেন। অথচ নামকাওয়াস্তে প্রকাশিত হয়, যা পাঠক জানেই না, এমন পত্রিকা ইনকিলাবের চেয়ে বেশি বিজ্ঞাপন ও বিশেষ ক্রোড়পত্র দিয়ে যাচ্ছে। এমনও পত্রিকা আছে যা, যেদিন ক্রোড়পত্র প্রকাশ করা হবে, সেদিনই প্রকাশ করে থাকে। ইনকিলাবকে বঞ্চিত করা হয়। এতে অবশ্য ইনকিলাব সম্পাদক পরোয়া করেন না। ইনকিলাব সব রকম অপকৌশল ও ষড়যন্ত্র উপেক্ষা করেই এগিয়ে চলেছে। মজার বিষয় হচ্ছে, যারা ইনকিলাবের সত্য ও ন্যায়নিষ্ঠতা পছন্দ করে না এবং যাদের স্বার্থের পরিপন্থী, তারাই সবার আগে ইনকিলাবে কী লেখা হয়েছে তা পড়ে। ইনকিলাবের এখানেই স্বার্থকতা। ইনকিলাবের বড় বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, এটি আজ যা ভাবে, অন্যপত্রিকা তা পরে ভাবে। বর্তমান প্রযুক্তি ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কল্যাণে সংবাদ তাৎক্ষণিকভাবে পাঠকের কাছে পৌঁছে যায়। এর ফলে প্রিন্ট মিডিয়া এমনকি স্যাটেলাইট চ্যানেলগুলোর সংবাদের জন্য পাঠক ও দর্শকদের অপেক্ষা করতে হয় না। তবে পাঠকদের এই তাৎক্ষণিক সংবাদপ্রাপ্তির বিষয়টির বাইরে সেই সংবাদের বিস্তারিত এবং নেপথ্যের সংবাদ ইনকিলাব প্রকাশ করে প্রিন্ট মিডিয়ার প্রতি পাঠকদের তৃষ্ণাকে ধরে রেখেছে। সময় এবং পাঠকদের চাহিদার সাথে তাল মিলিয়ে সম্পাদক সাহেব ইনকিলাবকে আরও এগিয়ে রেখেছেন। এমনও দেখা গেছে, বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ অনেক ঘটনা দেশের অনেক পত্রিকা মিস করে গেলেও ইনকিলাব মিস করে না। আজ যে ঘটনা ইনকিলাব প্রকাশ করে, তার পরে অন্য পত্রিকাগুলো প্রকাশ করে। এমনকি, বিশ্ব রাজনৈতিক পরিবর্তন এবং নয়ামেরুকরণ নিয়ে একমাত্র ইনকিলাবই সম্পাদকীয় ও বিশ্লেষণমূলক লেখা প্রকাশ করে। ইনকিলাব চলমান ঘটনা যেমন সংরক্ষণ করে, তেমনি ঘটনাকে কেন্দ্র করে পাঠকদের উদ্দেশ্যে সত্য ও ন্যায়নিষ্ঠ কথা বলে যায়। তাদের মন ও মননে ভাবনা জাগায়। অনলাইন ও প্রযুক্তির উৎকর্ষের সাথে সাথে একসময় ভাবা হয়েছিল, প্রিন্ট মিডিয়ার দিন শেষ হয়ে আসছে। তবে ইনকিলাব সম্পাদক সুদীর্ঘকালের দায়িত্ব পালন ও অভিজ্ঞতা দিয়ে কীভাবে প্রিন্ট মিডিয়াকে প্রযুক্তির সাথে তাল মিলিয়ে এগিয়ে রাখা যায়, তা ইনকিলাবের মাধ্যমে বুঝিয়ে দিচ্ছেন। বহু বছর আগে ইনকিলাব প্রতিষ্ঠাতা আলহাজ মাওলানা এম এ মান্নান ইনকিলাবের এক প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীতে বলেছিলেন, ‘ইনকিলাব কেয়ামত পর্যন্ত টিকে থাকবে, ইনশাআল্লাহ।’ তাঁর কথার ভাষায় আমরাও বলবো: ইনকিলাব কেয়ামত পর্যন্ত টিকে থাকবে ইনশাআল্লাহ।

চার.
নানা প্রতিকূল পরিস্থিতি এবং সীমাবদ্ধতার মধ্যেও ইনকিলাব সময়কে ধারণ এবং পাঠকদের পরিবর্তনশীল চাহিদা পূরণে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। প্রকৃত সংবাদপত্রের যে লক্ষ্য ও বৈশিষ্ট্য, তাতে অবিচল, আপসহীন। শাসক ও শোষক শ্রেণীর রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে মাথা উঁচু করে চলা পত্রিকা হচ্ছে ইনকিলাব। চলমান ঘটনাকে ইতিহাস হওয়া নয়, বরং ঘটনা ও এর ভেতরের অন্তর্নিহিত তাৎপার্য্যকে ইতিহাসে পরিণত করে ইনকিলাব। এমন অসংখ্য ঘটনা রয়েছে, যা দেশে-বিদেশে ইনকিলাব ইতিহাসে পরিণত করেছে। এটা সম্ভব হয়েছে, ইনকিলাব সম্পাদকের দূরদর্শী চিন্তা, মননশীলতা এবং সত্য প্রকাশে দ্বিধাহীন চিত্তের কারণে। ইনকিলাব পাঠক সৃষ্টি করে, পাঠকের দায় মিটায়, দেশ, জাতি ও জনগণের পক্ষে দাঁড়িয়ে ন্যায্য কথা বলে। এটি দেশ ও জনগণের স্বার্থের পত্রিকা।

[email protected]


বিভাগ : সম্পাদকীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিহত করার আহ্বান উপদেষ্টা নাহিদের

দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিহত করার আহ্বান উপদেষ্টা নাহিদের

মালয়েশিয়া আন্তর্জাতিক হালাল শোকেসের ২০তম আসরে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ

মালয়েশিয়া আন্তর্জাতিক হালাল শোকেসের ২০তম আসরে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের জেলা প্রতিনিধি সম্মেলন অনুষ্ঠিত দেশকে অস্থিতিশীল করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে পরাজিত শক্তি

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের জেলা প্রতিনিধি সম্মেলন অনুষ্ঠিত দেশকে অস্থিতিশীল করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে পরাজিত শক্তি

শ্রীলঙ্কায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন কাল

শ্রীলঙ্কায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন কাল

‘মব জাস্টিস’ বন্ধের আহ্বান বাংলাদেশ তরুণ কলাম লেখক ফোরামের

‘মব জাস্টিস’ বন্ধের আহ্বান বাংলাদেশ তরুণ কলাম লেখক ফোরামের

সাত দফা দাবিতে মানববন্ধন ও সমাবেশ

সাত দফা দাবিতে মানববন্ধন ও সমাবেশ

গৌরনদীর দই, একবার খাইলেও আর একবার খাই

গৌরনদীর দই, একবার খাইলেও আর একবার খাই

নোয়াখালীতে জীবাশ্ম জ্বালানিতে বিনিয়োগ বন্ধের দাবি

নোয়াখালীতে জীবাশ্ম জ্বালানিতে বিনিয়োগ বন্ধের দাবি

স্বর্ণের দাম বেড়ে রেকর্ড ২,৬০৯ ডলার ছাড়িয়েছে

স্বর্ণের দাম বেড়ে রেকর্ড ২,৬০৯ ডলার ছাড়িয়েছে

বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধ ও বিচার দাবিতে খুলনায় মানববন্ধন

বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধ ও বিচার দাবিতে খুলনায় মানববন্ধন

গাজায় অব্যাহত ইসরাইলি গণহত্যা ওআইসির নেতারা চেয়ে চেয়ে দেখছেন

গাজায় অব্যাহত ইসরাইলি গণহত্যা ওআইসির নেতারা চেয়ে চেয়ে দেখছেন

চাঁদপুর শহরে সড়ক সংস্কার কাজে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ

চাঁদপুর শহরে সড়ক সংস্কার কাজে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ

সেনা কর্মকর্তাদের ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেয়া প্রসঙ্গে

সেনা কর্মকর্তাদের ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেয়া প্রসঙ্গে

নোয়াখালীতে ৪৪ দিন পর লাশ উত্তোলন

নোয়াখালীতে ৪৪ দিন পর লাশ উত্তোলন

ভারতের দোসর ও হাসিনামিডিয়ার প্রশ্নবিদ্ধ ভূমিকা

ভারতের দোসর ও হাসিনামিডিয়ার প্রশ্নবিদ্ধ ভূমিকা

আশাশুনিতে হাজরাখালির নেটপাটায় পানিবন্দি ২শ’ পরিবার

আশাশুনিতে হাজরাখালির নেটপাটায় পানিবন্দি ২শ’ পরিবার

জামায়াত ক্ষমতায় গেলে নারীদের অধিকার খর্ব হবে না: সেলিম উদ্দিন

জামায়াত ক্ষমতায় গেলে নারীদের অধিকার খর্ব হবে না: সেলিম উদ্দিন

গাছে গাছে আফ্রিকান জায়ান্ট শামুক

গাছে গাছে আফ্রিকান জায়ান্ট শামুক

ঈশ্বরগঞ্জে মহাসড়কে কাঁচাবাজার

ঈশ্বরগঞ্জে মহাসড়কে কাঁচাবাজার

উখিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অস্ত্রসহ আরসা সন্ত্রাসী গ্রেফতার

উখিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অস্ত্রসহ আরসা সন্ত্রাসী গ্রেফতার