রেলের দুর্নীতি দূর করে সক্ষমতা নিশ্চিত করতে হবে
০৭ জুন ২০২৪, ১২:১৩ এএম | আপডেট: ০৭ জুন ২০২৪, ১২:১৩ এএম
বলা হয়, রাষ্ট্রের উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি রেলে চড়ে আসে। এটি ঔপনিবেশিক আমলের কথা হলেও আমাদের দেশে তা এ সময়েও প্রাসঙ্গিক। স্থল ও বিমান যোগাযোগের যতই বহুমাত্রিক উন্নয়ন ঘটুক, শিল্পায়ন ও বাণিজ্য বৃদ্ধির সাথে সাথে রেলের উপযোগিতা বেড়েই চলেছে। বিশেষত সড়ক পথের যানজট, দুর্ঘটনাজনিত নিরাপত্তাহীনতা এবং পরিবহনে ব্যয়বাহুল্যের কারণে স্বাভাবিকভাবেই রেলওয়ের উপর সাধারণ মানুষের নির্ভরতা বেড়েছে। কিন্তু মানুষের আকর্ষণ ও চাহিদার সাথে সঙ্গতি রেখে রেলের উন্নয়ন ও সুবিধাদি নিশ্চিত করতে পারছে না রেল কর্তৃপক্ষ। এর পেছনের মূল কারণ দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা ও অস্বচ্ছতা। বিগত সময়ে সরকারের এক মন্ত্রী রেলের কালোবিড়াল ধরতে গিয়ে নিজেই দুর্নীতির দায়ে ফেঁসে গিয়েছিলেন। এরপর রেলমন্ত্রী ও রেলকর্তৃপক্ষ দুর্নীতি-অব্যবস্থাপনার কথা স্বীকার করে তা দূর করার প্রতিশ্রুতি দিলেও আদতে কাজের কাজ কিছুই হয়নি। রেলওয়ের কেনাকাটায় দুর্নীতির মাত্রাকে ‘পুকুর চুরি’ বললেও কম বলা হবে। বিভিন্ন মেগা প্রকল্পে এমন পুকুর-সাগর চুরির ঘটনা প্রায়শ গণমাধ্যমে উঠে আসছে। গত বছর পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে রেলওয়ের জন্য ১৯ হাজার টাকার লিফটিং জ্যাক কেনা হয়েছে ৩ লাখ টাকায়। আর ৬৫ হাজার টাকা মূল্যের ড্রিলিং মেশিন কেনা হয়েছে ৯ লাখ ৬৫হাজার টাকায়। এভাবেই সম্ভাবনাময় লাভজনক রেলখাত লোকসানের ভারে ডুবে যেতে বসেছে।
ঈদকে সামনে রেখে শহরের কোটি কোটি মানুষ ঘরমুখী হয়ে ওঠে। এই বিপুল সংখ্যক মানুষের যাতায়াত নির্বিঘœ করতে সড়ক ও রেলপথের বিদ্যমান ব্যবস্থায় বাড়তি চাপ পড়ে। গণমাধ্যমের বাড়তি মনোযোগের কারনে সরকারিভাবে নিয়ন্ত্রিত রেলবিভাগের নানা অসঙ্গতি, অব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতির চিত্র বেরিয়ে আসতে দেখা যায়। ঈদে ঘরে ফেরা মানুষের বাড়তি চাপ সামলাতে রেলের বিশেষ উদ্যোগ নিতে গিয়ে প্রতিবছরই লেজে গোবরে অবস্থা সৃষ্টি হতে দেখা যায়। শত শত অকেজো কোচ ও লোকোমোটিভ মেরামতের অভাবে কারখানায় পড়ে থাকলেও এসব মেরামত না করে ভারতসহ বিভিন্ন দেশ থেকে বহুগুণ বেশি দামে কেনার পেছনে কর্মকর্তাদের কমিশন, বাণিজ্য ও দুর্নীতির চিত্রই বেরিয়ে আসছে। দেশে তিনটি বৃহদাকার রেল মেরামত কারখানায় লোকোমোটিভ, কোচ-বগি নির্মাণসহ সব রকমের মেরামতি কাজের সুবিধা থাকলেও অনেকটা পরিকল্পিতভাবেই এসব কারখানার সক্ষমতাকে কাজে না লাগিয়ে রেলওয়েকে আমদানি নির্ভর করে রেখে ১০-২০গুণ বেশি দামে যন্ত্রাংশ কেনার মাধ্যমে সংস্থাটিকে লোকসান ও দেউলিয়াত্বের দ্বারপ্রান্তে ঠেলে দেয়া হয়েছে। বিদেশ থেকে বগি ও ইঞ্জিন কিনতে যে পরিমান অর্থ ব্যয় করা হয়, কারখানার উন্নয়ন, জনবল ও দক্ষতা বৃদ্ধির পেছনে তা ব্যয় করে বাংলাদেশ রেলওয়েকে স্বয়ংসম্পুর্ণ করে গড়ে তোলা অসম্ভব নয়।
নতুন সরকারের মন্ত্রীসভায় রেল মন্ত্রনালয়ের দায়িত্ব গ্রহণের পর গত জানুয়ারিতে রেলমন্ত্রী জিল্লুল হাকিম বলেছিলেন, রেলওয়েকে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিনত করতে হলে এর দুর্নীতির মূলোৎপাটন করতে হবে। এরপর সরকারের প্রায় ৬ মাস অতিবাহিত হলেও রেলের দুর্নীতি-অনিয়মের কোনো পরিবর্তন হয়নি। বিশেষত রেলের জন্য বিদেশ থেকে বহুগুণ বেশি দামে বগি, ইঞ্জিন ও যন্ত্রপাতি কেনা এবং রেলওয়ের পুরনো কারখানাগুলোর সক্ষমতাকে অকার্যকর করে রাখার মধ্যেই কর্তৃপক্ষের দূরভিসন্ধি আন্দাজ করা যায়। প্রায় দেড়শ বছরের ঐতিহ্যবাহী সৈয়দপুরের মেরামত কারখানায় প্রায় ৩ হাজার পদের বিপরীতে মাত্র ৭১৬জন কর্মী কাজ করছে। দুই হাজারের বেশি পদ খালি রেখে মূলত কারখানাটির সক্ষমতাকে খর্ব করে রাখা হয়েছে। অথচ পরিবর্তিত বাস্তবতায় পদ্মাসেতু, ঢাকা-কক্সবাজারসহ মেগা প্রকল্পের আওতায় রেলওয়ের জন্য নতুন রুট ও রেলপথ নির্মাণের সাথে সাথে রেল মেরামত কারখানাগুলোর আধুনিকায়ন, ইঞ্জিনিয়ার ও দক্ষ জনবল বৃদ্ধির কার্যকর উদ্যোগ নেয়ার কথা। দেশের অর্থনীতিতে সংকট চলছে। ডলার সংকটের কারণে আমদানির উপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করতে বাধ্য হচ্ছে সরকার। এহেন বাস্তবতায় দেশের রেল খাতের উন্নয়নে দেশীয় মেরামত কারখানাগুলোর সক্ষমতা ও দক্ষ জনবল বৃদ্ধির কোনো বিকল্প নেই। সৈয়দপুর, পার্বতীপুর ও চট্টগ্রামের পাহাড়তলী রেল কারখানায় হাজার হাজার শুন্য পদের বিপরীতে জরুরি ভিত্তিতে লোক নিয়োগের উদ্যোগ নিতে হবে। আমাদের প্রতিবেশীরা যখন মহাকাশ গবেষণা ও স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণে উন্নত বিশ্বের সাথে তাল মেলানোর চেষ্টা করছে, তখন আমরা রেলওয়ের শত বছর আগের সক্ষমতাকেও ধরে রাখতে পারছি না কেন, তার মূল্যায়ন করতে হবে। শুধু কোচ মেরামত কেন! রেলের জন্য লোকোমোটিভ ও কোচ তৈরীর সক্ষমতা অর্জন করা অসম্ভব নয়। বিদেশ থেকে আমদানির সাথে শত শত কোটি টাকার কমিশন বাণিজ্যের রাস্তা বন্ধ না হলে দেশীয় কারখানা ও জনশক্তির সক্ষমতা কাজে লাগানো সম্ভব নয়। প্রয়োজনে অবসর প্রাপ্ত ও অভিজ্ঞদের পুন:নিয়োগ দিয়ে রেলের আমদানি নির্ভরতা বন্ধ করতে হবে। রেলের দুর্নীতি, অনিয়ম-অব্যবস্থাপনা বন্ধ করতে হলে সংশ্লিষ্ট সকলের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিহত করার আহ্বান উপদেষ্টা নাহিদের
মালয়েশিয়া আন্তর্জাতিক হালাল শোকেসের ২০তম আসরে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের জেলা প্রতিনিধি সম্মেলন অনুষ্ঠিত দেশকে অস্থিতিশীল করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে পরাজিত শক্তি
শ্রীলঙ্কায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন কাল
‘মব জাস্টিস’ বন্ধের আহ্বান বাংলাদেশ তরুণ কলাম লেখক ফোরামের
সাত দফা দাবিতে মানববন্ধন ও সমাবেশ
গৌরনদীর দই, একবার খাইলেও আর একবার খাই
নোয়াখালীতে জীবাশ্ম জ্বালানিতে বিনিয়োগ বন্ধের দাবি
স্বর্ণের দাম বেড়ে রেকর্ড ২,৬০৯ ডলার ছাড়িয়েছে
বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধ ও বিচার দাবিতে খুলনায় মানববন্ধন
গাজায় অব্যাহত ইসরাইলি গণহত্যা ওআইসির নেতারা চেয়ে চেয়ে দেখছেন
চাঁদপুর শহরে সড়ক সংস্কার কাজে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ
সেনা কর্মকর্তাদের ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেয়া প্রসঙ্গে
নোয়াখালীতে ৪৪ দিন পর লাশ উত্তোলন
ভারতের দোসর ও হাসিনামিডিয়ার প্রশ্নবিদ্ধ ভূমিকা
আশাশুনিতে হাজরাখালির নেটপাটায় পানিবন্দি ২শ’ পরিবার
জামায়াত ক্ষমতায় গেলে নারীদের অধিকার খর্ব হবে না: সেলিম উদ্দিন
গাছে গাছে আফ্রিকান জায়ান্ট শামুক
ঈশ্বরগঞ্জে মহাসড়কে কাঁচাবাজার
উখিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অস্ত্রসহ আরসা সন্ত্রাসী গ্রেফতার