নরসিংদী জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ও নরসিংদী-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য সরদার সাখাওয়াত হোসেন বকুলের বিরুদ্ধে বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করেছিলেন বলে অভিযোগ করেছেন নরসিংদী জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক তোফাজ্জল হোসেন মাস্টার।
তিনি বলেন, যখন ওয়াল ইলেভেন হয়,ওয়ান ইলেভেন হওয়ার পর তখন মান্নান ভূঁইয়া সাব দলে নাই, মান্নান ভূঁইয়া সাবকে দল বহিষ্কার করেছে। বকুল সাব নাই, বকুল সাহেব দলে নাই, বকুল সাহেব বলছে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে নষ্ট মায়ের নষ্ট ছেলে। শামসু (শামসুদ্দিন আহমেদ এছাক) ভাই তখন মারা গেছে, শামসু ভাই নাই। শামসু ভাইয়ের ছেলেপেলেরাও তখন মান্নান ভূঁইয়ার সাথে সাথে ছিল, তখন খোকন (নরসিংদী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব) নরসিংদীর রাজনীতিতে আসে নাই। শামসু ভাই মারা যাওয়ার পরে ওয়ান ইলেভেনের পরে নরসিংদীর বিএনপি আমি ধরে রেখেছি। আমাকে বেগম খালেদা জিয়া ডেকে নিয়েছেন ঢাকাতে। শিবপুর তথা নরসিংদীর পরিস্থিতি জানার জন্য। আমি আমার সাধ্যানুযায়ী বলেছি, উনি বলেছেন আপনি প্রস্তুত হোন নির্বাচনের জন্য। আমি বলেছি ম্যাডাম আমি নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত নয়, আমি মান্নান ভূঁইয়া সাবের সাথে রাজনীতি করেছি, আমি মনে করেছি মান্নান ভূঁইয়া সাহেবের পরে তিনি আমারে বলবেন এবার তোফাজ্জল করবে।গত শনিবার (১২ এপ্রিল) শিবপুর বাসস্ট্যান্ডে পৌরসভা বিএনপির ঈদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।
এ মন্তব্যের পরে দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে বিষয়টি নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা যায়। বিষয়টি নিয়ে নরসিংদীর রাজনৈতিক অঙ্গনে তোলপাড় শুরু হয়েছে। বক্তব্যের ভিডিও ক্লিপের একটি অংশও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ছড়িয়েছে। দলীয় নেতাকর্মীদের একাংশ বলছেন এমন আপত্তিকর বিষয় এতোদিন পর আলোচনায় নিয়ে আসা দুঃখজনক। দলের অপর একটি অংশ বলছেন যারা বিএনপির রাজনীতিতে ভাঙন সৃষ্টি করেছেন তাদের পুনরায় দলে পুনর্বাসন আমরা চাই না।
জেলার উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের একাধিক নেতাকর্মী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সরদার সাখাওয়াত হোসেন বকুল বিএনপি থেকে তিনবার সংসদ সদস্য হয়েছেন তার পরও এই দলটির প্রতি তার কোনো মায়া নেই। তিনি ১৬ বছর আওয়ামী লীগের লোকজনের সাথে কাজ করেছেন। গত ৫ আগস্টের পর হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর আবার আওয়ামী লীগের লোকজনকে সুরক্ষা দেয়ার কাজ নিয়েছেন। আওয়ামী লীগের লোকজনের সাথেই উনার যোগাযোগ বেশি। এজন্যই তিনি দলের চেয়ারপারসন ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে কথা বলতে পারেন। আগেও আমরা তার মুখে অনেক বেফাস কথা শুনেছি। আর তোফাজ্জল হোসেন মাস্টার সাহেব মনে হয় বুঝে শুনেই কথা বলেছেন।
তারা আরো বলেন, বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকার প্রার্থীর পক্ষে সরাসরি উনার আদর্শের নেতাকর্মীদের দিয়ে নৌকা মার্কায় ভোট চাওয়া যেহেতু উনার আপন ফুফাতো ভাই ছিলেন প্রার্থী সেই হিসেবে উনি বিভিন্নভাবে সুযোগ-সুবিধা নিয়েছেন। এমনকি গত ৫ আগস্টের পরে আওয়ামী লীগের লোকদেরকে পুনর্বাসন করানো হচ্ছে উনার সবচেয়ে বড় ব্যবসা। উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় বালু দখল, টেন্ডারবাজি, সিএনজিস্ট্যান্ড দখল, অটোস্ট্যান্ড দখল, বাজার দখল, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে চাঁদা আদায়, থানার দালালি এককভাবে নিয়ন্ত্রণ করাসহ এমন কোন অপকর্ম নেই যেখানে উনার নাম নেই। এমনকি উনার বিপক্ষে যে দুজন প্রার্থী আছে তাদের লোকজনদের বিভিন্ন জায়গায় মারধর করা। বিশেষ করে উনার লোকজন সরাসরি বিপক্ষ প্রার্থী জয়নাল আবেদীন সাহেবের গাড়িতে ভাঙচুর করা অথচ উনি তখন নিজে গাড়িতে ছিলেন। উনার কারণে নরসিংদীতে বিএনপির ভাব মর্যাদা নষ্ট হচ্ছে।
উল্লেখিত বক্তব্যের বিষয়ে সরদার সাখাওয়াত হোসেন বকুল বলেন, আমার লিডারকে নিয়ে এ ধরনের মন্তব্য আমি কখনোই করি নি। উনি কোন প্রেক্ষাপটে কি মন্তব্য করেছেন, সেটাও আমি জানি না। আমি উনাকে আপনি কল দেয়ার পর জিজ্ঞাসা করেছিলাম, উনি (তোফাজ্জল হোসেন মাস্টার) এ কথা অস্বীকার করেছেন। তাই, উনার সাথে কথা না বলে সংবাদ না লিখাই ভালো হবে।
গতকাল রোববার বিকেলে নরসিংদী জেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক তোফাজ্জল হোসেন মাস্টারকে বিষয়টি নিয়ে কল দেয়া হলে তিনি বলেন, ১/১১ এর সময় নরসিংদী-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য সামসুদ্দিন আহমেদ এছাক সাহেব মারা গিয়েছিলেন, বিএনপির মহাসচিব আব্দুল মান্নান ভূইয়াকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল, সাবেক সংসদ সদস্য সরদার সাখাওয়াত হোসেন বকুলও দলে ছিলেন না, তখন আমি একা দলের হাল ধরেছি। তখনকার প্রসঙ্গ নিয়ে বকুলের বিষয়ে বলেছি। বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে কিভাবে সেটা জানা নেই। কিন্তু কি বলতে গিয়ে কি বলেছি, এটা নিয়ে লেখার দরকার নেই। এসব নিয়ে লিখলে নিজেদের মধ্যে দূরত্ব বাড়বে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক (ঢাকা বিভাগ) সাইয়েদুল আলম বাবুল বলেন, সরদার সাখাওয়াত হোসেন বকুল কথাটি এভাবে বলেছেন কি-না বা কবে বলেছেন সেটা আমার জানা নাই। তোফাজ্জল হোসেন মাস্টার কি বলেছেন সেটাও আমি জানিনা। কোনকিছু না জেনে বিষয়টির উপর আমি মন্তব্য করতে চাই না।