এসব দুর্ঘটনার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিচার নিশ্চিত করতে হবে

Daily Inqilab ইনকিলাব

০৮ মার্চ ২০২৩, ০৯:১৫ পিএম | আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২৩, ১০:৫৩ পিএম

গত কয়েক সপ্তাহে ঢাকা-চট্টগ্রামে একের পর দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছে বেশ কিছু মানুষ। গত ৭দিনে চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডের কদমরসুলে অবস্থিত সীমা অক্সিজেন প্লান্টে ভয়াবহ বিস্ফোরণে অন্তত ৬ জনের মৃত্যু এবং ২৫জনের বেশি মানুষ আহত হয়েছে। বিস্ফোরণে ভবনসহ অক্সিজেন প্লান্ট পুরোটা তছনছ হয়ে গেছে। এ নিয়ে শোকের রেশ কাটতে না কাটতেই রাজধানীর মিরপুর রোডে সাইন্স ল্যাবরেটরি এলাকার একটি বাণিজ্যিক ভবনে কথিত গ্যাস চেম্বার বিস্ফোরণে সৃষ্ট অগ্নিকান্ডে অন্তত ৩ জনের মৃত্যু ও অর্ধশতাধিক মানুষ গুরুতর আহত হন। এর দুইদিনের মাথায় মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সবচেয়ে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনাটি ঘটেছে ঢাকার ব্যস্ততম বাণিজ্যিক এলাকা গুলিস্তানের সিদ্দিক বাজারে। বিস্ফোরণে বহুতল বাণিজ্যিক ভবনটির বেইজমেন্টসহ অবকাঠামো অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা। বুধবার সকাল পর্যন্ত ১৯ জনের মৃত্যু এবং দুই শতাধিক মানুষ আহত হওয়ার তথ্য জানা গেছে। আহতদের অনেকেই আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। গত কয়েকদিনে এ ছাড়াও আরো কয়েকটি বিস্ফোরণ ও অগ্নিকান্ডে হতাহতের ঘটনার সংবাদ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। একের পর এক বিষ্ফোরণে শহরের জনজীবনে এক প্রকার ভীতি, অস্থিরতা ও নিরাপত্তাহীন অবস্থা দেখা দিয়েছে। পরপর সংঘটিত এসব বিস্ফোরণের পেছনে অনেকেই নাশকতার আশঙ্কা করছেন। তবে অন্তত তিনটি ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির কোনোটিই তাদের তদন্ত রিপোর্ট দাখিল করেনি। প্রাথমিক তদন্তে কেউই ঘটনার কারণ সম্পর্কে স্বচ্ছ কোনো ধারণা দিতে পারেনি।

এমনিতেই দেশে একটি ক্রান্তিকাল চলছে। সাধারণ মানুষ একদিকে অস্বাভাবিক মূল্যস্ফীতির ধকল পোহাচ্ছে, অন্যদিকে রাজনৈতিক আন্দোলন ও অচলায়তন নিয়ে এক ধরণের অনিশ্চয়তা বিরাজ করছে। এহেন বাস্তবতায় শিল্পকারখানা ও বাণিজ্যিক ভবনে একের পর বিস্ফোরণ মানুষের মধ্যে নতুন আতঙ্ক হয়ে দেখা দিয়েছে। ফেব্রæয়ারিতে তুরস্ক ও সিরিয়ার বেশ কয়েকটি শহর ভ’মিকম্পে ধ্বংস্তুপে পরিনত হওয়ার পর আঞ্চলিক ভ’মিকম্প জোনে অবস্থিত হওয়ায় বাংলাদেশেও এ নিয়ে এক ধরণের ভীতি কাজ করছে। তবে প্রাকৃতিক ভ’মিকম্প না হলেও নাশকতা অথবা অব্যবস্থাপনাজণিত দুর্ঘটনায় এ দেশে প্রাণ ও সম্পদ হারাচ্ছে মানুষ। স্বাধীনতাত্তোর বাংলাদেশে রাজনৈতিক ক্রান্তিকালে একের পর এক পাটের গুদাম ও পাটকলের অগ্নিকান্ডে পুরো পাট সেক্টর প্রায় ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। এরপর এ দেশের পাটখাত আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। পাটের বাজার ও বিশ্ববাণিজ্যের নেতৃত্ব বাংলাদেশ থেকে ভারতের হাতে চলে যায়। আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের অর্থনীতি যখন একটি নাজুক পরিস্থিতির সম্মুখীন, তখন শিল্পকারখানা ও রাজধানীর বাণিজ্যিক এলাকায় একের এক বিষ্ফোরণের ঘটনা ও ভীতি ও অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের সম্ভাবনাকে আরো জটিল করে তুলতে পারে।

বিস্ফোরণ ও দুর্ঘটনা যেভাবেই সংঘটিত হোক, তা জনজীবন ও অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের স্বাভাবিক গতিশীলতাকে ব্যহত করার পাশাপাশি নিরাপত্তাহীনতা বাড়িয়ে তোলে। দেশের সাধারণ মানুষ ও জাতীয় অর্থনীতি যখন বাণিজ্য ঘাটতি, অর্থ পাচার, ডলার সংকট ও মূল্যস্ফীতির যাঁতাকলে নিস্পিষ্ট হয়ে উত্তরণে পথ খুঁজতে মরিয়া হয়ে উঠেছে, তখন একের পর এক এ ধরণের বিস্ফোরণের ঘটনা জনমনে প্রশ্নবোধক হয়ে উঠেছে। প্রায় প্রতিটি দুর্ঘটনার সাথে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অব্যবস্থাপনা ও গাফিলতির অভিযোগ উঠলেও বিষয়গুলো সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা বা তদন্ত রিপোর্ট বা সুপারিশ অনুসারে এ ধরণের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে কার্যকর কোনো পদক্ষেপও দেখা যাচ্ছে না। গুলিস্তানের বিস্ফোরণে সাততলা বাণিজ্যিক ভবনের বেজমেন্ট ধসে যাওয়ার আলামত প্রত্যক্ষ করে র‌্যাবের বিস্ফোরক বিশেষজ্ঞরা এটি কোনো স্বাভাবিক বিষ্ফোরণ নয় বলে জানিয়েছেন। সেই সাথে এসি থেকেও এ ধরণের দুর্ঘটনা ঘটেনি বলে তারা জানিয়েছেন। প্রাথমিক আলামত ও মতামতে যাই বলা হোক না কেন, তদন্ত রিপোর্টে আসল তথ্য উদঘাটিত হওয়ার কথা থাকলেও কোনো তদন্তই সত্যিকার অর্থে আলোর মুখ দেখে না। এ কারণেই নাশকতা, মালিকপক্ষের অব্যবস্থাপনা-গাফিলতি, ওয়াসা কিংবা তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন কর্তৃপক্ষের তদারকির দায়ভার ধামাচাপা পড়ে যায়। পানির টাঙ্কিতে দীর্ঘদিন গ্যাস জমা, তিতাসের গ্যাসলাইনের ত্রæটি, এসির বিস্ফোরণ অথবা ঘনবসতিপূর্ণ বাণিজ্যিক এলাকায় কেমিকেল গুদামের অবস্থান সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট কেউই দায়িত্ব এড়াতে পারেনা। গত বছরের জুনমাসে চট্টগ্রামে বিএম ডিপোতে বিস্ফোরণে অর্ধশতাধিক মানুষের মৃত্যু ঘটেছিল। ইতোমধ্যে ৯ মাস পেরিয়ে গেলেও ঘটনার তদন্ত রিপোর্ট ও বিচারিক কার্যক্রম স্বচ্ছতার আলোয় আসেনি। প্রভাবশালী মালিকপক্ষ এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে। গাফিলতি, অবহেলা বা দায়িত্বহীনতার কারণে মানুষের জীবনহানির দায়ভার সংশ্লিষ্টদের নিতে হবে। তাদের যথোচিত বিচার নিশ্চিত করতে হবে।


বিভাগ : সম্পাদকীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

কাপ্তাই হ্রদের পানি দ্রুত কমানো হোক
সামাজিক অগ্রগতিতে জেন জি কতটা ভূমিকা পালন করবে?
নেতাকর্মীদের বিতর্কিত ভূমিকার বিরুদ্ধে বিএনপিকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে
জরুরি ভিত্তিতে রেল চালু করতে হবে
শবে মিরাজ
আরও

আরও পড়ুন

তৃতীয় দফায় বাড়ছে রিটার্ন জমার সময়

তৃতীয় দফায় বাড়ছে রিটার্ন জমার সময়

গণধিকৃত সংগঠনে পরিণত হয়েছে শিক্ষক সমিতি : ঢাবি সাদা দল

গণধিকৃত সংগঠনে পরিণত হয়েছে শিক্ষক সমিতি : ঢাবি সাদা দল

ধামরাইয়ে কালামপুর সাব-রেজিস্ট্রার অফিস দুদকের অভিযান, ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ

ধামরাইয়ে কালামপুর সাব-রেজিস্ট্রার অফিস দুদকের অভিযান, ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ

আলজেরিয়ায় কুরআন প্রতিযোগিতায় তাওহীদুল ইসলাম ২য়

আলজেরিয়ায় কুরআন প্রতিযোগিতায় তাওহীদুল ইসলাম ২য়

হাইকোর্টের আদেশ গাছ কাটতে লাগবে অনুমতি

হাইকোর্টের আদেশ গাছ কাটতে লাগবে অনুমতি

আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা মেলায় পণ্য প্রদর্শনীতেই সন্তুষ্ট বৃহত্তর ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো

আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা মেলায় পণ্য প্রদর্শনীতেই সন্তুষ্ট বৃহত্তর ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো

প্রমীলা ফুটবল টুর্নামেন্ট বন্ধের দাবীতে জানতার সাথে আয়োজক কমিটির মুখোমুখি সংঘর্ষ আহত ১০

প্রমীলা ফুটবল টুর্নামেন্ট বন্ধের দাবীতে জানতার সাথে আয়োজক কমিটির মুখোমুখি সংঘর্ষ আহত ১০

ষড়যন্ত্রকারীরা এখনও ষড়যন্ত্রের বীজ রোপণ করছে- পরশুরামে রফিকুল আলম মজনু

ষড়যন্ত্রকারীরা এখনও ষড়যন্ত্রের বীজ রোপণ করছে- পরশুরামে রফিকুল আলম মজনু

নতুন ৫ দাবি যোগ করে ফের সাত কলেজ শিক্ষার্থীদের আল্টিমেটাম

নতুন ৫ দাবি যোগ করে ফের সাত কলেজ শিক্ষার্থীদের আল্টিমেটাম

হ্যাকিং অ্যাপসে প্রতারনা, সিলেটে এক  নারীর ৭ লাখ টাকা রক্ষা করলো পুলিশ

হ্যাকিং অ্যাপসে প্রতারনা, সিলেটে এক  নারীর ৭ লাখ টাকা রক্ষা করলো পুলিশ

সাত কলেজ নিয়ে জরুরি সভা ডেকেছেন প্রধান উপদেষ্টা

সাত কলেজ নিয়ে জরুরি সভা ডেকেছেন প্রধান উপদেষ্টা

চকরিয়ায় পুলিশ হেফাজতে নির্যাতন ও চাঁদাদাবীর অভিযোগ ওসিসহ ৪ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা

চকরিয়ায় পুলিশ হেফাজতে নির্যাতন ও চাঁদাদাবীর অভিযোগ ওসিসহ ৪ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা

টেকসই কৃষি নিয়ে ১০ হাজার চর কৃষকের পাশে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ও ফ্রেন্ডশিপ

টেকসই কৃষি নিয়ে ১০ হাজার চর কৃষকের পাশে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ও ফ্রেন্ডশিপ

সংস্কারের নামে অহেতুক সময় বিলম্ব করা হলে সমাজে অস্থিরতা সৃষ্টি হতে পারে- প্রিন্স

সংস্কারের নামে অহেতুক সময় বিলম্ব করা হলে সমাজে অস্থিরতা সৃষ্টি হতে পারে- প্রিন্স

জনগণের বিরুদ্ধে কাজ করলে পরিণতি কী হয়, তা আমরা ৫ আগস্ট দেখেছি: তারেক রহমান

জনগণের বিরুদ্ধে কাজ করলে পরিণতি কী হয়, তা আমরা ৫ আগস্ট দেখেছি: তারেক রহমান

বিটিএমএর নতুন পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার সৈয়দ ইশতিয়াক আহমেদ

বিটিএমএর নতুন পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার সৈয়দ ইশতিয়াক আহমেদ

ফেব্রুয়ারির মধ্যে বেক্সিমকোর সব বকেয়া পরিশোধের সিদ্ধান্ত: শ্রম উপদেষ্টা

ফেব্রুয়ারির মধ্যে বেক্সিমকোর সব বকেয়া পরিশোধের সিদ্ধান্ত: শ্রম উপদেষ্টা

কাপ্তাই হ্রদের পানি দ্রুত কমানো হোক

কাপ্তাই হ্রদের পানি দ্রুত কমানো হোক

সামাজিক অগ্রগতিতে জেন জি কতটা ভূমিকা পালন করবে?

সামাজিক অগ্রগতিতে জেন জি কতটা ভূমিকা পালন করবে?

মির্জাপুরে ছাগল কান্ডে কেটে ফেলা হয়েছে  অর্ধশতাধিক কলাগাছ

মির্জাপুরে ছাগল কান্ডে কেটে ফেলা হয়েছে অর্ধশতাধিক কলাগাছ