ঢাকা   বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারি ২০২৫ | ২ মাঘ ১৪৩১

সড়কে হত্যার দায় কার?

Daily Inqilab ইনকিলাব

০৬ আগস্ট ২০২৩, ০৮:১১ পিএম | আপডেট: ০৭ আগস্ট ২০২৩, ১২:০২ এএম

সড়ক-মহাসড়কে মেয়াদোত্তীর্ণ যানবাহন বিশেষ করে বাস-ট্রাক চলাচল নিষিদ্ধ করা নিয়ে বহু বছর ধরেই বিশেষজ্ঞরা বলে আসছেন। যান্ত্রিক ত্রুটিপূর্ণ ও পরিবেশ দূষণকারী এসব যানবাহন সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে একাধিকবার নিষিদ্ধ করার কথা বলা হলেও তা কার্যকর হয়নি। সর্বশেষ গত ১৭ মে দুর্ঘটনা ও পরিবেশ দূষণ কমানোর লক্ষ্যে সড়ক পরিবহন ও হাইওয়ে বিভাগ ২০ বছরের পুরনো বাস এবং ২৫ বছরের পুরনো ট্রাক চলাচল নিষিদ্ধ ও সেগুলো ধ্বংস করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। সংস্থার ওয়েব সাইটে এ সংক্রান্ত গাইড লাইনে বলা হয়, পুরনো গাড়ি জব্দ ও ধ্বংস করার পাশাপাশি যেসব মালিকের মেয়াদোত্তীর্ণ গাড়ি রয়েছে, তারা নতুন গাড়ি রেজিস্ট্রেশন করতে পারবে না। কর্তৃপক্ষের এ সিদ্ধান্ত সড়ক বিশেষজ্ঞরা স্বাগত জানিয়েছিলেন। দুঃখের বিষয়, এ সিদ্ধান্ত থেকে সড়ক পরিবহন ও হাইওয়ে বিভাগ এবং বিআরটিএ সরে এসেছে। গত বৃহস্পতিবার তারা নতুন সিদ্ধান্ত না দেয়া পর্যন্ত এ সিদ্ধান্ত স্থগিত করেছে। বিআরটিএ’র কর্মকর্তাদের পূর্বের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে যেতে বলা হয়েছে।

জনকল্যাণমূলক একটি সিদ্ধান্ত থেকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষে সরে আসায় পর্যবেক্ষকরা বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। তারা বলেছেন, যতদিন যাবে, এ ধরনের সিদ্ধান্ত সড়ক দুর্ঘটনা ও পরিবেশ দূষণকে আরও মারাত্মক পর্যায়ে নিয়ে যাবে। সড়ক দুর্ঘটনার বেশিরভাগই এসব ত্রুটিপূর্ণ ও মেয়াদোত্তীর্ণ যানবাহনের কারণে হয়ে থাকে। সরকারের হিসাব অনুযায়ী, গত মে মাসে ৭৪ হাজার বাস, ট্রাক এবং অন্যান্য যানবাহন মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে গেছে। নতুন সিদ্ধান্তের ফলে এই বিপুল সংখ্যক যানবাহনের অবাধে চলতে আর কোনো বাধা নেই। এটা আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত ছাড়া কিছু নয়। মানুষের জীবনকে জেনেশুনে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয়ার শামিল। সড়কে লক্কড়-ঝক্কড় যানবাহন চলা নতুন কিছু নয়। মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে গেলেও তা নির্বিঘেœ চলছে। সাধারণত একটি নতুন গাড়ির মেয়াদ গড়ে ২০ বছর ধরা হয়। তারপর এর চলাচলের ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ থাকে। উন্নত বিশ্বে মেয়াদপূর্তির আগেই গাড়ি জব্ধ করে স্ক্র্যাপ বা গুড়িয়ে দেয়া হয়। আমাদের দেশে মেয়াদোত্তীর্ণ গাড়ি জব্দ করে স্ক্র্যাপ করার নজির নেই। এ ধরনের যানবাহন নিষিদ্ধ করার কথা বারবার বলা হলেও স্ক্র্যাপ করার কথা বলা হয়নি। প্রথমবারের মতো এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল। এতে পরিবহন খাতে কিছুটা হলেও শৃঙ্খলা ফিরে আসার আশা জাগলেও তা এখন হারিয়ে গেছে। বুঝতে অসুবিধা হয় না, পরিবহন মালিক সমিতির চাপে এবং রাজনৈতিক কারণে এ সিদ্ধান্ত থেকে সরকার সরে এসেছে। বলা হয়ে থাকে, পরিবহন খাতের সঙ্গে সরকারের প্রভাবশালী এমপি ও নেতারা জড়িত। তাদের উপেক্ষা করা সরকারের পক্ষে সম্ভব হয় না। সরকারের এ সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার পেছনে রাজনৈতিক কারণ চিহ্নিত করেছেন পর্যবেক্ষকরা। সামনে জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে এমনটি করা হয়েছে। সরকার চাচ্ছে না, এ সিদ্ধান্ত নিয়ে পরিবহন খাতের সমর্থন হারাক। অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়, এসব মেয়াদোত্তীর্ণ ও ত্রুটিযুক্ত যানবাহনের কারণে যেখানে প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ দুর্ঘটনার শিকার হয়ে প্রাণ হারাচ্ছে, অসংখ্য আহত হয়ে চিরতরে পঙ্গু হয়ে যাচ্ছে, সেখানে তা উপেক্ষা করা হয়েছে। দিন দিন সড়কে দুর্ঘটনার সংখ্যা বেড়ে চলেছে। যাত্রীকল্যাণ সংস্থার হিসাব অনুযায়ী, গত জুলাই মাসে সারাদেশে ৫০৫টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৫৭৬ জন নিহত হয়েছে এবং অসংখ্য মানুষ আহত হয়েছে। কর্মজীবী মানুষ নিহত ও আহত হওয়ার কারণে তাদের পরিবার দিশাহারা হয়ে পড়েছে। এত বড় ক্ষতি উপেক্ষা করে শুধু পরিবহন মালিকদের দাবীর মুখে একটি কল্যাণকর সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসা অত্যন্ত দুঃখজনক।

সড়ক-মহাসড়কে অরাজকতা নিয়ন্ত্রণে যেন কেউ নেই। পুরো পরিবহন খাতে চলছে যথেচ্চার। এ ধরনের পরিবহন ব্যবস্থা বিশ্বে আর কোথাও আছে কিনা, আমাদের জানা নেই। সড়ক দুর্ঘটনা রোধে বহু পদক্ষেপের কথা শোনা যায়। এ খাতের সংস্কার নিয়ে বিভিন্ন সংস্থা প্রতিনিয়ত পরামর্শ দিলেও তা সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয় থেকে শুরু করে বিআরটিএ আমলে নিচ্ছে না। এর কারণ যে রাজনৈতিক, তা বুঝতে অসুবিধা হয় না। পরিবহন মালিক-শ্রমিক সমিতিগুলোর কাছে সবাই যেন আত্মসমর্পণ করে আছে। ত্রুটিপূর্ণ ও মেয়াদোত্তীর্ণ যানবাহন দুর্ঘটনায় মানুষের মৃত্যু হলেও তাতে যেন তাদের কিছু যায় আসে না। এর দায়ও কাউকে নিতে দেখা যায় না। নিহত ও আহতদের পরিবারের পাশে কাউকে দাঁড়াতে দেখা যায় না। শুধুমাত্র সরকারের কঠোর সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে শৈথিল্যের কারণে সড়কে বেঘোরে মানুষের প্রাণ যাচ্ছে। এখন নির্বাচনকে সামনে রেখে শুধু রাজনৈতিক কারণে একটি ভাল সিদ্ধান্ত থেকে সরকারকে সরে আসতে হয়েছে। পর্যবেক্ষকদের মতে, এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন না করা হলে মেয়াদোত্তীর্ণ ও ত্রুটিপূর্ণ যানবাহনের কারণে যত দুর্ঘটনা ঘটবে এবং মানুষ আহত-নিহত হবে, তার দায় সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকেই নিতে হবে।


বিভাগ : সম্পাদকীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

ধূমপানকে না বলুন
জালিমের পরিণতি ভালো হয় না
অখণ্ড ভারতের নীলনকশা এবং মুখোশপরা গণশত্রুদের দাস্যবৃত্তি
মাজারে হামলা ও উগ্রপন্থা কাম্য নয়
সমতাভিত্তিক স্বাস্থ্যসেবার বিকেন্দ্রীকরণ সময়ের দাবি
আরও

আরও পড়ুন

আখাউড়ায় মর্টার সেল উদ্ধার

আখাউড়ায় মর্টার সেল উদ্ধার

বায়ুদূষণে আজ সবার শীর্ষে ঢাকা

বায়ুদূষণে আজ সবার শীর্ষে ঢাকা

শৈলকুপায় মোটরসাইকেলের ধাক্কায় বৃদ্ধ নিহত

শৈলকুপায় মোটরসাইকেলের ধাক্কায় বৃদ্ধ নিহত

বাবরের মুক্তির অপেক্ষায় কারাগারের সামনে নেতাকর্মীদের ভিড়

বাবরের মুক্তির অপেক্ষায় কারাগারের সামনে নেতাকর্মীদের ভিড়

ব্যাংক খাত নিপুন কারিগরের মতো যেভাবে ধ্বংস করেন এসকে সুর

ব্যাংক খাত নিপুন কারিগরের মতো যেভাবে ধ্বংস করেন এসকে সুর

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে আজকের বৈঠক বর্জন করবে লেবার পার্টি

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে আজকের বৈঠক বর্জন করবে লেবার পার্টি

দেশে ফিরতে চান মডেল তিন্নি হত্যা মামলায় খালাস পাওয়া অভি

দেশে ফিরতে চান মডেল তিন্নি হত্যা মামলায় খালাস পাওয়া অভি

দুর্নীতির মাধ্যমে পুতুলের ডব্লিউএইচও'র পদ পাওয়ার অভিযোগ:  দুদকের অনুসন্ধান শুরু

দুর্নীতির মাধ্যমে পুতুলের ডব্লিউএইচও'র পদ পাওয়ার অভিযোগ: দুদকের অনুসন্ধান শুরু

বাড়িতে ঢুকে সাইফ আলিকে ৬ বার ছুরিকাঘাত, হাসপাতালে ভর্তি

বাড়িতে ঢুকে সাইফ আলিকে ৬ বার ছুরিকাঘাত, হাসপাতালে ভর্তি

রাজশাহী জেলা ছাত্রদল নেতার পিতা বাচ্চু সরকারের দাফন সম্পন্ন

রাজশাহী জেলা ছাত্রদল নেতার পিতা বাচ্চু সরকারের দাফন সম্পন্ন

মোংলায় সড়কের ওপর রাখা পাথরের ধাক্কায় যাত্রীবাহী ভটভটিতে থাকা দুই যাত্রীর মৃত্যু, আহত ৪

মোংলায় সড়কের ওপর রাখা পাথরের ধাক্কায় যাত্রীবাহী ভটভটিতে থাকা দুই যাত্রীর মৃত্যু, আহত ৪

গাজায় ঐতিহাসিক পরাজয় ইসরাইলের

গাজায় ঐতিহাসিক পরাজয় ইসরাইলের

১৭ বছর পর আজ দুপুরে কারামুক্ত হচ্ছেন বাবর

১৭ বছর পর আজ দুপুরে কারামুক্ত হচ্ছেন বাবর

দীর্ঘ এক যুগ পর কারামুক্ত হলেন ডেসটিনির চেয়ারম্যান

দীর্ঘ এক যুগ পর কারামুক্ত হলেন ডেসটিনির চেয়ারম্যান

আজ কুড়িগ্রামে মার্চ ফর ফেলানী, নেতৃত্বে সারজিস আলম

আজ কুড়িগ্রামে মার্চ ফর ফেলানী, নেতৃত্বে সারজিস আলম

বাংলাদেশে আসছেন পাকিস্তানের জয়েন্ট চিফস অব স্টাফ জেনারেল সাহির শমসদ

বাংলাদেশে আসছেন পাকিস্তানের জয়েন্ট চিফস অব স্টাফ জেনারেল সাহির শমসদ

গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি ইসরাইলের ‘ঐতিহাসিক পরাজয়’: হামাস

গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি ইসরাইলের ‘ঐতিহাসিক পরাজয়’: হামাস

যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হওয়ার পরও গাজায় হামলা ইসরাইলের, নিহত অন্তত ৩০

যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হওয়ার পরও গাজায় হামলা ইসরাইলের, নিহত অন্তত ৩০

জুলাই ঘোষণা : কারা যাচ্ছেন আজকের বৈঠকে

জুলাই ঘোষণা : কারা যাচ্ছেন আজকের বৈঠকে

গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে সম্মত হামাস-ইসরাইল

গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে সম্মত হামাস-ইসরাইল