মাজারে হামলা ও উগ্রপন্থা কাম্য নয়
১৬ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০৩ এএম | আপডেট: ১৬ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০৩ এএম
দেশের বিভিন্ন স্থানে অবস্থিত ওলি-আওলিয়াদের মাজারকে ঘিরে এক শ্রেণীর মানুষের মাজার ব্যবসা ও ওরসের নামে চাঁদাবাজি, মাদক ও অসামাজিক কাজের বিস্তার নিয়ে ধর্মপ্রাণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভ ও অসন্তোষ আছে। বাংলাদেশসহ উপমহাদেশে ইসলাম প্রচার এবং প্রসারে ওলি-আওলিয়াদের অসামান্য ত্যাগ ও অবদান রয়েছে। সংগতকারণেই এখানে অনেক পীর-আওলিয়ার মাজার গড়ে উঠেছে। সিলেটের শাহজালালÑশাহপরানের মাজার, ঢাকার মীরপুরে শাহ আলীর মাজার, বাগেরহাটে খানজাহান আলীর মাজার, চট্টগ্রামের মাইজভান্ডারির মাজার শত শত বছরের ঐতিহ্য বহন করছে। এর বাইরে সত্যিকার পীর-দরবেশের মাজারের পাশপাশি অনেক ভুয়া পীর-ফকিরের মাজারও গড়ে উঠেছে। সে সব মাজারে ওরসের নামে চাঁদাবাজি, ভন্ডামি, মাদকের ছড়াছড়ি এবং নারীÑপুরুষের অবাধ মেলামেশা, অসামাজিক-অশ্লীল কর্মকান্ডেরও চর্চা হয়ে থাকে। এক শ্রেণীর মানুষ সে সব অসামাজিক কর্মকান্ডের দোহাই দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে মাজার ও ওরসের বিরোধিতা করে আসছে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে দেশ থেকে আওয়ামী ফ্যাসিবাদী স্বৈরাচার বিদায় নিলেও তার দোসররা এখনো রাষ্ট্রে ও সমাজের সব সেক্টরেই সক্রিয় রয়েছে। তারা সামাজিক-রাজনৈতিকভাবে দেশকে অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে হিন্দুদের মন্দির ও বাড়িঘরে হামলার কথিত ঘটনা ও সংখ্যালঘু নির্যাতনের বানোয়াট তথ্য ছড়িয়ে ভারতীয় মিডিয়ার অতিরঞ্জিত প্রচার-প্রচারনার মূল লক্ষ্য ছিল অর্ন্তবর্তী সরকারকে ব্যতিব্যস্ত করে তোলা। নানা সেক্টরে একের পর এক নানা ইস্যু ও দাবি-দাওয়া নিয়ে শাহবাগ, রাজপথ, সচিবালয়ে গন্ডোগোল পাকানোর পেছনেও ছিল পতিত স্বৈরাচার ও তার দোসরদের ভয়াবহ ষড়যন্ত্র। ছাত্র-জনতা ও সাধারণ মানুষের ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধের মুখে সে সব ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হলেও তারা একদিনের জন্যও থেমে নেই। নতুন নতুন রাজনৈতিক, সামাজিক-সাংস্কৃতিক ইস্যু নিয়ে মাঠ গরম করে ফায়দা হাসিলের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে মাজারে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনাগুলোকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবে দেখার সুযোগ নেই।
গতকাল ইনকিলাবে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জে শাহ সৈয়দ আব্দুল আজিজ বোগদাদির ৭৫৫তম বার্ষিক ওরসের আয়োজন স্থানীয় প্রশাসন বন্ধ করে দিয়েছে বলে জানা যায়। রাজনৈতিক বিশ্লেষক, ইউটিউবার ডা. জাহেদ উর রহমান এ বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। স্থানীয় প্রতিবাদী জনতার চাপের মুখে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কায় স্থানীয় প্রশাসন এবারের ওরস বন্ধ রাখার নির্দেশনা জারি করেছে। বোঝাই যাচ্ছে, সাড়ে ৭শ বছর ধরে চলা একটি ঐতিহ্যবাহী ওরস সেখানে একটি লোকাচারে পরিনত হয়েছে। প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণহীনতার কারণে সেখানে যদি গানবাজনাসহ অসামাজিক কর্মকান্ডের আশঙ্কা থাকে। সে ক্ষেত্রে শত শত বছর ধরে চলা ওরস ও মেলা রক্ষা কিংবা বন্ধ করা প্রশাসনিক দৃষ্টিকোণ থেকে অস্বাভাবিক নয়। আবার এত বছর ধরে চলা ওরস হঠাৎ বন্ধ করে দেয়ার সামাজিক প্রতিক্রিয়া সম্পর্কেও ভাবার প্রয়োজন ছিল। ওরসের নামে শিরক, গুরুতর অসামাজিক-বেআইনী কার্যকলাপ যেমন কাম্য নয়, একইভাবে আইন নিজের হাতে তুলে নেয়ার মাধ্যমে শত শত বছরের ঐতিহ্য ও লোকাচার বন্ধের উদ্যোগও সমাজের জন্য সুফল বয়ে আনে না। পরিবর্তিত রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে দেশের চলমান বাস্তবতায় ধর্মের নামে কোনো পক্ষের অনাচার-অসামাজিক কার্যকলাপ চালানোর সুযোগ আর নেই। তবে সবকিছু হতে হবে আইনগত প্রক্রিয়া ও সামাজিক রীতি-নীতি মেনেই। স্থানীয় আলেম-ওলামা ও সংশ্লিষ্ট মাজারের ওরস বা মেলা আয়োজকদের নিয়ে স্থানীয় প্রশাসন সমন্বিত পদক্ষেপ নিতে পারে।
জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের মধ্য দিয়ে গঠিত অর্ন্তবর্তী সরকার এবং বিপ্লবী ছাত্র-জনতা দেশে ব্যাপক ভিত্তিক সংস্কারের ব্যাপারে বদ্ধপরিকর। দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোরও অন্যতম নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি হচ্ছে রাষ্ট্র সংস্কার। এ দেশে হাজার বছরে গড়ে ওঠা হিন্দু-মুসলমান মেলবন্ধন ও সম্প্রীতি পরস্পরের ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদিতেও প্রভাব সৃষ্টি করেছে। যার কিছু কিছু হয়তো কোরআন-হাদীস দ্বারা সমর্থিত নয়। ওরসের নামে নারী-পুরুষের অবাধ নাচ-গান, মাদক সেবন, নানা রকম মেলার আয়োজন চলতে পারে না। এসব অবশ্যই বন্ধ করতে হবে। তবে সংঘবদ্ধভাবে উত্তেজিত হয়ে মাজার ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেয়া বা দাঙ্গা-হাঙ্গামার মত তৎপরতা কাম্য নয়। এসব তৎপরতার অপব্যাখ্যা ও অপপ্রচার বাংলাদেশের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান ও পরবর্তি রাজনৈতিক কর্মকান্ড ও সংস্কার কর্মসূচিকে বাঁধাগ্রস্ত করতে পারে। এমনিতেই ভারতীয় মিডিয়াসহ ভারত প্রভাবিত কিছু পশ্চিমা মিডিয়া বাংলাদেশের রাজনৈতিক বাস্তবতাকে ধর্মীয় উগ্রবাদ, জঙ্গিবাদী তৎপরতার তকমা দিতে মুখিয়ে থাকে। শত শত বছরের প্রচলিত ঐতিহ্যবাহী মাজার ও ওরসের ওপর হামলা ও ভেঙ্গে দেয়ার মত ঘটনার উপর বাড়তি রং চড়িয়ে বাংলাদেশে উগ্র মুসলিম জঙ্গিবাদের উত্থান হিসেবে দেখানোর সুযোগ নিতে পারে। যারা এ ধরণের কাজ করে অপপ্রচারের অস্ত্র তুলে দিচ্ছে, তারা মূলত: দেশবিরোধী অপশক্তির এজেন্ডাই বাস্তবায়ন করছে। সংস্কার ও গণতান্ত্রিক উত্তরণের মধ্য দিয়ে দেশকে কাঙ্খিত লক্ষ্যে এগিয়ে নিতে হলে সাম্প্রদায়িক, সামাজিক ও রাজনৈতিক সম্প্রীতি জোরদার করতে হবে। মব জাস্টিসের মাধ্যমে সমাজে ও রাষ্ট্রে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়। এ ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও স্থানীয় প্রশাসনের নিস্ক্রিয়তার সুযোগ নেই। তাদেরকে অবশ্যই যথাযথ ভূমিকা পালন করতে হবে। কোরআন-হাদীসের নির্দেশনার আলোকেই শান্তিপূর্ণ উপায়ে অপসংস্কৃতি ও অপবিশ্বাসের বিরুদ্ধে ধর্মপ্রাণ মানুষকে সচেতন করে তোলার বাস্তব উদ্যোগ নিতে হবে।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
বগুড়ায় কলেজ শিক্ষার্থী হত্যা মামলায় গ্রেফতার ৪
মতিঝিলে শিক্ষার্থীদের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত ১৫
সাভারে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে ২৫ লাখ টাকার তেলসহ পিকআপ ছিনতাই
ডাকসু নিয়ে ৩৭৭ সংস্কার প্রস্তাব ঢাবি ছাত্রদলের
গাজীপুরে থানায় ব্যবসায়ীকে আটক করে ২ লাখ টাকা ঘুষ নিলো ওসি
রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র অফিস অবরোধের ঘোষণা চাকরি বঞ্চিতদের
শামীম ওসমান-নানক পরিবারের বিরুদ্ধে দুই মামলা
বায়ু দূষণে আবারও শীর্ষে ঢাকা
এক মাসের মধ্যে সংস্কারের রোডম্যাপ দিবে সরকার: পরিবেশ উপদেষ্টা
দেশে ফিরেই ছিনতাইয়ের শিকার মালয়েশিয়া প্রবাসী ডালিম
বিপিএল শেষ কর্নওয়ালের
ওয়াটসাপ, টেলিগ্রাম বা বিভিন্ন সোশ্যাল মাধ্যমে মেসেজ দিয়ে দেওয়া সালামের জওয়াব দেওয়া প্রসঙ্গে?
আরচ্যারী ফেডারেশনের তারুণ্যের উৎসব কর্মসূচি শুরু
বেনাপোলে আড়াই বছর পর কবর থেকে তোলা হলো বিএনপি নেতা আলিমের লাশ
রাষ্ট্রের কল্যাণে উপসচিব পদে কাকে প্রয়োজন: নীতি ও ন্যায্যতা কী
ধূমপানকে না বলুন
জালিমের পরিণতি ভালো হয় না
অখণ্ড ভারতের নীলনকশা এবং মুখোশপরা গণশত্রুদের দাস্যবৃত্তি
১২ কোটি জনসংখ্যার ৭ কোটি আক্রান্ত
শেষ তিন মাসে রেকর্ড বাজেট ঘাটতি যুক্তরাষ্ট্রের