প্রকল্পের কাজ যথাসময়ে সম্পন্ন করতে হবে

Daily Inqilab ইনকিলাব

১১ আগস্ট ২০২৩, ০৮:১০ পিএম | আপডেট: ১২ আগস্ট ২০২৩, ১২:০৩ এএম

সারাদেশে স্থানীয় সরকার বিভাগের অধীনে যেসব উন্নয়ন কাজ হচ্ছে, সেগুলোর ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান যথোপযুক্ত কারণ ছাড়া মাঝপথে কাজ বন্ধ রেখেছে। এসব প্রতিষ্ঠানের কার্যাদেশ বাতিলের সুপারিশ করেছে জাতীয় সংসদের স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নযন ও সমবায় মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি। একই সঙ্গে অভিযুক্ত ঠিকাদারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ ও পুনরায় টেন্ডার আহ্বানের সুপারিশ করা হয়েছে। গতকাল দৈনিক ইনকিলাবে এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। দেশে উন্নয়ন কাজে বিলম্ব, গাফিলতি, দুর্নীতি, অর্থের অপচয়, কাজ মানসম্মত না হওয়া নতুন কিছু নয়। বছরের পর বছর ধরে এ অপসংস্কৃতি চলে আসছে। এ নিয়ে লেখালেখি হলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে খুব একটা আমলে নিতে দেখা যায় না। এতে ছোট কিংবা বড় প্রকল্পের সব কাজের মান নিয়ে সব সময়ই প্রশ্ন ওঠে।

যেকোনো প্রকল্পের কাজ শুরুর আগে তার ফিজিবিলিটি স্টাডি থেকে শুরু করে পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হয়। কত সময়ে এবং কি পরিমাণ অর্থ ব্যয় হবে, তা নির্ধারণ করে প্রকল্পের কাজ শুরু করা হয়। দেখা যায়, অনেক প্রকল্পের কাজ শুরু করেও কম-বেশি পরিবর্তন করতে হয়। এতে সময় ও অর্থের পরিমাণ বেড়ে যায়। অনেক সময়, প্রকল্প শেষ হলেও তার স্থায়িত্ব ও মান নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। কখনো এগুলো সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টিগোচর হয়, কখনো হয় না। ফলে যে উদ্দেশ্যে প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা হয়, তা জনগণের কল্যাণে খুব একটা কাজ করে না। আমরা যদি সড়কের ক্ষেত্রে দেখি তাহলে দেখব, অনেক সড়কে যেসব ঠিকাদার কাজ করে, তাদের কাজ মানসম্মত হয় না। সড়ক নির্মাণ বা মেরামতের কিছুদিনের মধ্যেই তা নষ্ট হয়ে যায়। সাধারণভাবে এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার ও সড়ক বিভাগের গাফিলতির বিষয়টি জড়িয়ে থাকে। এখানে ঠিকাদার কিংবা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের জবাবদিহির অভাব থাকে। কাজটি কেন ও কি কারণে মানসম্মত হলো না, তা নিয়ে তাদের জবাবদিহি করতে হয় না। এর কারণ বুঝতে অসুবিধা হয় না। সড়ক বা কোনো প্রকল্প বাস্তবায়নের পর যত দ্রুত নষ্ট হয়, তত দ্রুতই মেরামতের জন্য অর্থ ও সময় বরাদ্দের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার ও একশ্রেণীর কর্মকর্তা লাভবান হয়। এ ধরনের প্রবণতা প্রায় প্রকল্পেই দেখা যায়। সংসদীয় স্থায়ী কমিটির এটা একটা ভালো উদ্যোগ যে, তারা সারাদেশের উন্নয়ন কাজগুলো রিভিউ করে মাঝপথে বন্ধ হয়ে যাওয়া প্রকল্পের সাথে জড়িত ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কার্যাদেশ বাতিলের সুপারিশ করেছে। তবে এক্ষেত্রে দেখার বিষয় হচ্ছে, কেন ও কি কারণে এগুলো মাঝপথে বন্ধ হয়েছে। অনেক সময় দেখা যায়, যে সময়ে প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে, সে সময় প্রকল্পের বিভিন্ন উপকরণের দাম ও শ্রমিকের মজুরি কম ছিল। দিন যাওয়ার সাথে সাথে সেসব উপকরণের দাম ও শ্রমিকের মজুরী বৃদ্ধি পেয়েছে। এমতাবস্থায়, বরাদ্দকৃত অর্থে কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব নয়। ফলে ঠিকাদারকে বাধ্য হয়ে কাজ বন্ধ রাখতে হয়। আবার এটাও দেখা যায়, প্রকল্পের টেন্ডারের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক বিবেচনা প্রাধান্য দেয়া হয়। আমাদের দেশে এ প্রবণতা বেশি। ক্ষমতাসীন দলের লোকজনই অধিকাংশ প্রকল্পের টেন্ডার পেয়ে থাকেন। পেশাদার ঠিকাদাররা অনেক ক্ষেত্রে বঞ্চিত হয়। অভিজ্ঞতা নেই কিংবা অদক্ষ লোকজন ক্ষমতাসীন দলের হওয়ায় তারাই কাজ পেয়ে থাকেন। এতে ঐ প্রকল্পের কাজ কোনোভাবেই নির্ধারিত মান ও সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করা সম্ভব হয় না। অনেক ক্ষেত্রে এটাও দেখা যায়, ক্ষমতাসীন দলের অনভিজ্ঞ লোকজন টেন্ডার বাগিয়ে নিয়ে তা অন্যজনের কাছে নির্দিষ্ট লাভের বিনিময়ে হস্তান্তর করেন। এতে সংশ্লিষ্ট প্রকল্পের কাজে ব্যাঘাত ঘটে। যিনি কাজ পান, তার দায়বদ্ধতাও কম থাকে। এ ধরনের কাজ সময়মতো এবং মানসম্পন্ন হওয়ার কারণ নেই।

যেকোনো প্রকল্প গ্রহণের আগে তার যথাযথ পরিকল্পনা, অর্থবরাদ্দ এবং সময়মতো তা শেষ হবে কিনা, এসব বিষয় পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে যাচাই করে গ্রহণ করাই কাম্য। উন্নত বিশ্বে এমন দেখা যায়, প্রকল্প গ্রহণের সময় এমনভাবে নির্ধারণ করা হয় যে, তা নির্ধারিত সময়ের আগে কিংবা নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই শেষ হয়ে যায়। এক্ষেত্রে উক্ত প্রকল্পের কাজও মানসম্মত হয় এবং অর্থের অপচয় হয় না। আমাদের দেশে প্রকল্প গ্রহণের ক্ষেত্রে এ ধরনের নজির খুব কম দেখা যায়। ছোট-বড় প্রায় সব প্রকল্পই নির্ধারিত সময়ে শেষ হতে দেখা যায় না। এর অন্যতম কারণ, প্রকল্প গ্রহণে দূরদর্শিতা ও অভিজ্ঞতার অভাব। দেখা যায়, কোনো কোনো প্রকল্প বারবার রিভাইস করতে হয়, বাড়তি অর্থ বরাদ্দ করতে হয়। এতে জনগণের অর্থের অপচয় যেমন হয়, তেমনি তা থেকে তারা যথাসময়ে উপকৃতও হয় না। কোনো কোনো প্রকল্প বাস্তবায়ন হতে এক প্রজন্ম চলে যায়। সংসদীয় স্থায়ী কমিটি সারাদেশে প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে যে সমস্যা চিহ্নিত করেছে, তা আমরা স্বাগত জানাই। বলা বাহুল্য, শুধু স্থানীয় সরকার বিভাগ নয়, অন্যান্য বিভাগের ক্ষেত্রেও একই ধরনের বাস্তবতা বিদ্যমান। সে প্রেক্ষিতে, সরকারের সর্বত্র কেন ও কী কারণে প্রকল্প বন্ধ কিংবা যথাসময়ে সম্পন্ন হচ্ছে না, তা বিশেষভাবে খতিয়ে দেখতে হবে। প্রকল্পগুলো যাতে বন্ধ হয়ে না থাকে এবং যথাসময়ে শেষ হয়, তা নিশ্চিত করতে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে।


বিভাগ : সম্পাদকীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

স্মার্টফোনের দাসত্ব থেকে মুক্তির উপায়
দারিদ্র্য বিমোচনে যাকাত : প্রেক্ষিত বাংলাদেশ
চালের মূল্য কমাতে হবে
মেট্রোরেলের নিচের জায়গা অবৈধ দখলমুক্ত করতে হবে
পানির নিচে ডাটা সেন্টার
আরও

আরও পড়ুন

খুশদীলের অলরাউন্ড নৈপুণ্যে রংপুরের আটে আট

খুশদীলের অলরাউন্ড নৈপুণ্যে রংপুরের আটে আট

বন্ধ হয়ে যাচ্ছে অনেক দেশের ভিসা

বন্ধ হয়ে যাচ্ছে অনেক দেশের ভিসা

মেডিকেল কলেজে শিক্ষক বাড়ানোর কথা ভাবছে সরকার

মেডিকেল কলেজে শিক্ষক বাড়ানোর কথা ভাবছে সরকার

ছাত্রদলের ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ কর্মসূচি আজ

ছাত্রদলের ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ কর্মসূচি আজ

গাজার স্বাস্থ্য ব্যবস্থা পুনর্গঠনে ১০ বিলিয়ন ডলার প্রয়োজন

গাজার স্বাস্থ্য ব্যবস্থা পুনর্গঠনে ১০ বিলিয়ন ডলার প্রয়োজন

অন্তর্বর্তী সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোর দিকে তাকিয়ে ইইউ

অন্তর্বর্তী সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোর দিকে তাকিয়ে ইইউ

ভারতের উদ্বেগের মধ্যে হাসিনা পরবর্তী বাংলাদেশের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হচ্ছে পাকিস্তান

ভারতের উদ্বেগের মধ্যে হাসিনা পরবর্তী বাংলাদেশের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হচ্ছে পাকিস্তান

সান্ত¡না খুঁজে পাচ্ছেন না, দুই দেশে কলঙ্কিত টিউলিপ

সান্ত¡না খুঁজে পাচ্ছেন না, দুই দেশে কলঙ্কিত টিউলিপ

দুর্নীতির মামলায় ইমরান খান ও বুশরা বিবির কারাদণ্ড

দুর্নীতির মামলায় ইমরান খান ও বুশরা বিবির কারাদণ্ড

বিদেশে টাকা পাচারের রাজনীতি মানুষ চায় না : পীর সাহেব চরমোনাই

বিদেশে টাকা পাচারের রাজনীতি মানুষ চায় না : পীর সাহেব চরমোনাই

শেখ পরিবারের রক্তের জন্যই দুর্নীতিতে জড়িয়েছেন টিউলিপ -রিজভী

শেখ পরিবারের রক্তের জন্যই দুর্নীতিতে জড়িয়েছেন টিউলিপ -রিজভী

নামাজ মু’মিনের জন্য মেরাজস্বরূপ

নামাজ মু’মিনের জন্য মেরাজস্বরূপ

ক্রেডিট কার্ডে বিদেশে বাংলাদেশিদের লেনদেন কমেছে

ক্রেডিট কার্ডে বিদেশে বাংলাদেশিদের লেনদেন কমেছে

স্বনির্ভর অর্থনীতির পথে দেশ

স্বনির্ভর অর্থনীতির পথে দেশ

বগুড়ার বিমানবন্দর দ্রুত চালুর দাবি

বগুড়ার বিমানবন্দর দ্রুত চালুর দাবি

আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে বাংলাদেশকে মানবাধিকার লংঘন বন্ধ করতে হবে : হিউম্যান রাইটস ওয়াচ

আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে বাংলাদেশকে মানবাধিকার লংঘন বন্ধ করতে হবে : হিউম্যান রাইটস ওয়াচ

হাজারীবাগের ট্যানারির গোডাউনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড

হাজারীবাগের ট্যানারির গোডাউনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড

জুলাই বিপ্লব ঘোষণাপত্র দেওয়া জরুরি : নুরুল হক নুর

জুলাই বিপ্লব ঘোষণাপত্র দেওয়া জরুরি : নুরুল হক নুর

গণঅভ্যুত্থানের ইশতেহারে বিএনপির ভূমিকা লিখতে হবে : জয়নুল আবদিন

গণঅভ্যুত্থানের ইশতেহারে বিএনপির ভূমিকা লিখতে হবে : জয়নুল আবদিন

নির্বাচনে রাজনৈতিক নেতাদের পরিবেশ রক্ষায় প্রতিশ্রুতি দিতে হবে

নির্বাচনে রাজনৈতিক নেতাদের পরিবেশ রক্ষায় প্রতিশ্রুতি দিতে হবে