আরসার ব্যাপারে শূন্য সহিষ্ণুতা প্রদর্শন করতে হবে
২০ মার্চ ২০২৫, ১২:২৫ এএম | আপডেট: ২০ মার্চ ২০২৫, ১২:২৫ এএম

মিয়ানমারের রোহিঙ্গা সশস্ত্র গ্রুপ আরাকান রোহিঙ্গা সালভেশন আর্মি(আরসা)র শীর্ষ নেতা আতাউল্লা ওরফে আবু আম্বার জুনুনীসহ অন্তত ১০ জন নারায়নগঞ্জে র্যাবের হাতে গ্রেফতার হয়েছে। খবরে প্রকাশ, নাশকতামূলক কর্মকান্ড পরিচালনার লক্ষ্যে একটি গোপন বৈঠকের সময় র্যাব ১১ সদস্যরা গোপন সংবাদের ভিত্তিতে নারায়নগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ থেকে তাদের আটক করে আদালতে পাঠায়। পুলিশের আবেদনের প্রেক্ষিতে নারায়নগঞ্জের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ১০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে তাদেরকে জেল হাজতে পাঠিয়েছে। তারা নারায়নগঞ্জ ও ময়মনসিংহসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নাশকতামূলক কর্মকান্ড পরিচালনার উদ্দেশ্যে একটি বহুতল ভবনে গোপন বৈঠক করছিল বলে পুলিশের প্রাথমিক তথ্যে জানা যায়। এমন এক সময় আরসা কমান্ডারের গ্রেফতারের ঘটনা ঘটল, যখন বাংলাদেশের অর্ন্তবর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড.ইউনূস রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন এবং রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ নিচ্ছেন। জাতিসংঘ মহাসচিব এন্তোনিও গুতেরেসের সাম্প্রতিক বাংলাদেশ সফর ছিল সে উদ্যোগের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। ১০ লক্ষাধিক রোহিঙ্গার দীর্ঘমেয়াদে অবস্থান নি:সন্দেহে বাংলাদেশের জন্য গুরুতর সংকট ও বহুমাত্রিক চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশের অভ্যন্তরে আরসার সন্ত্রাসী কর্মকান্ড এ চ্যালেঞ্জকে আরো জটিল করে তুলেছে। কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে প্রভাব বিস্তার, মাদক ও অস্ত্র ব্যবসাসহ বিভিন্ন সময়ে সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের অভিযোগ রয়েছে আরসার বিরুদ্ধে। আরসার মাধ্যমে ছড়িয়ে পরা মাদক ও অস্ত্র সারাদেশে আইনশৃঙ্খলা ও জননিরাপত্তা বিরূপ প্রভাব সৃষ্টি করছে।
এ কথা অস্বীকারের উপায় নেই যে, মিয়ানমারে রোহিঙ্গা মুসলমানরা দীর্ঘদিন ধরে জাতিগত নির্মূল ও সহিংসতার শিকার। মিয়ানমারের জান্তা সরকারের বাহিনী এবং স্থানীয় বৌদ্ধদের হামলা ও আক্রমণের শিকার হয়ে রোহিঙ্গারা দলে দলে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিয়েছে। মানবিক দিক বিবেচনা করে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিতে জাতিসংঘসহ পশ্চিমা বিশ্বের আহ্বানে বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়ে বিপদে পড়েছে বাংলাদেশ। ভারতসহ অন্য প্রতিবেশীরা রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশের উপর কড়াকড়ি আরোপ করলেও শেখ হাসিনা এ ব্যাপারে কোনো কৌশলগত নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠায় ব্যর্থ হয়েছিল। কেউ কেউ বলেন, মানবিকতা ও উদারতা দেখিয়ে শেখ হাসিনা নিজের একটা মানবিক ইমেজ প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিল। কিন্তু রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়া আর রোহিঙ্গা সংকটের কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক সমাধানের পথ সুগম করা এক কথা নয়। সে ক্ষেত্রে বিগত সরকারের অবদান শুন্যের কোঠায়। ভারত ও চীনের সাথে ভারসাম্যহীন সদ্ভাব ও ভারসাম্যহীন অর্থনৈতিক সম্পর্ক বজায় রেখে ক্ষমতার মসনদ টিকিয়ে রাখতে সচেষ্ট থাকলেও রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে এই দুই প্রতিবেশির প্রভাবকে কাজে লাগাতে বিগত সরকার চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছিল। নিজের স্বৈরাচারি শাসন টিকিয়ে রাখতে গুম-খুন, ধারাবাহিক মানবাধিকার লঙ্ঘণ ও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ধ্বংসের মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনা রোহিঙ্গা সংকটের মত গুরুতর বিষয়ে পশ্চিমা বিশ্বের উদ্যোগের সাথেও তাল মেলাতে পারেননি। অর্ন্তবর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড.ইউনূস এ ক্ষেত্রে নতুন সম্ভাবনার পথ দেখাচ্ছেন।
জাতিসংঘ মহাসচিবকে সাথে নিয়ে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের লাখো মানুষের সমাবেশ করা ও তাদের সাথে ইফতারে মিলিত হওয়ার মধ্য দিয়ে এন্তোনিও গুতেরেস ও ড.ইউনূস রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে নতুন সম্ভাবনার বার্তা দিয়েছেন। আগামি সপ্তাহে প্রধান উপদেষ্টার সম্ভাব্য চীন সফরের মধ্য দিয়ে অন্য অনেক বিষয়ের সাথে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রশ্নেও নতুন প্রত্যাশার জন্ম দিয়েছে। আরসার মত সশস্ত্র সংগঠন রোহিঙ্গাদের সমস্যা সমাধানে কোনো রকম ইতিবাচক প্রভাব সৃষ্টি করতে পারেনি। ২০১৩ সালে মূলত সৌদি প্রবাসি রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুদের দ্বারা আরসা গঠিত হলেও এর মূল কর্মকান্ড পরিচালিত হচ্ছে বাংলাদেশ সীমান্তে। ২০১৬ সালে মিয়ানমারের সীমান্ত পুলিশের উপর হামলা চালিয়ে বেশকিছু হতাহতের ঘটনার পর ২০১৭ সালে রাখাইনে জান্তা বাহিনীর রোহিঙ্গা নির্যাতন এথনিক ক্লিনজিংয়ে পরিনত হয়। প্রাণ বাঁচাতে লাখ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। আরসার মত সশস্ত্র গ্রুপ রোহিঙ্গাদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় জান্তা সরকারের উপর তেমন কোনো চাপ সৃষ্টি করতে না পারলেও তারা কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে সংঘবদ্ধভাবে নানাবিধ অপরাধমূলক কর্মকান্ড সংঘটিত করছে। মাদক ব্যবসা, অবৈধ অস্ত্র ব্যবসা ও প্রভাব বিস্তারকে কেন্দ্র করে প্রায়শ খুন-খারাবির ঘটনা ঘটছে। রাখাইনে বিদ্রোহীদের হাতে জান্তা সরকার বাহিনীর পতনের পর সেখানে এক নতুন ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবতা সৃষ্টি হয়েছে। এ সময়ে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন-পুর্নবাসন ও রোহিঙ্গা সংকটের রাজনৈতিক সমাধানের সুযোগকে কাজে লাগাতে হবে। এ ক্ষেত্রে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠির প্রতিনিধিত্বশীল অংশগ্রহণ থাকতে হবে। সীমান্তে এবং কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে আরসার বিচ্ছিন্ন অস্ত্রবাজি ও অপরাধমূলক কর্মকান্ড আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে তাদের সম্পর্কে ভিন্ন বার্তা দিচ্ছে। তাদের সন্ত্রাসী কর্মকান্ড একদিকে বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা ও জননিরাপত্তায় বিরূপ প্রভাব সৃষ্টি করছে অন্যদিকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের পথেও প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়াতে পারে। শীর্ষ নেতাসহ আরসা সদস্যরা নারায়নগঞ্জে ধরা পড়ার অর্থ হচ্ছে, তারা অবাধে সারাদেশে ছড়িয়ে পড়তে পারে। আরসাসহ রোহিঙ্গা সশস্ত্র গ্রুপগুলোর উপর নজরদারি বাড়াতে হবে। তাদেরকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয়ার কোনো সুযোগ নেই। এ ব্যাপারে শুন্য সহিষ্ণুতা প্রদর্শন করতে হবে।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন

সিরাজগঞ্জে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়, যৌথ বাহিনীর অভিযানে জরিমানা

বেফাক পরীক্ষায় জামিয়া গাফুরিয়া ইসলামপুর মাদরাসার সাফল্য

ঘৃণার বিষ

উল্লাপাড়ায় ১২ টি টিয়ারশেল উদ্ধার

গাজা ইস্যুতে কুষ্টিয়ায় ছাত্রদলের বিক্ষোভ মিছিল

মদ ও মাদক সহ গ্রেফতার পাকিস্তান সেনার একাধিক উচ্চপদস্থের পুত্র-কন্যা

মেয়াদ উত্তীর্ণ ভিসায় আটক, মার্কিন অভিবাসন কেন্দ্রে আত্মঘাতী চীনা মহিলা

এবছর একাধিক উপগ্রহ উৎক্ষেপণ করবে ইরান

গাজায় গণহত্যা: পাকুন্দিয়ায় শিক্ষক-কর্মচারীদের বিক্ষোভ, ইসরায়েলি পণ্য বয়কটের আহবান

ফটিকছড়িতে বিল্ডিং থেকে পড়ে গ্ৰামীণ ব্যাংক ম্যানেজার নিহত

বৈষম্যবিরোধী কর্মচারী ঐক্য ফোরামের নতুন ৫ দফা

রাজধানীতে পৃথক স্থানে ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে আহত ৩

রিদপুরে যাত্রীবাহী বাস উল্টে যাওয়ার ঘটনায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ালো ৭, পরিচয় মিলছে সকলের

ঘাটাইলে কৃষি জমির টপসয়েল কাটার অপরাধে ২ জনের জেল

আওয়ামীলীগের ধূসররা লুটপাট ও ভাংচুর করছে : টুকু

দুই সচিব ও ডিসি প্রত্যাহার

মঠবাড়িয়ায় ট্রাক চাপায় ইজিবাইকের নারী যাত্রী নিহত

শিক্ষার্থীদের সৎ ও ভালো মানুষ হওয়ার পরামর্শ দিলেন হাসনাত

রায়পুরে আধিপত্য বিস্তারে খুনের জেরে তিন বাড়িতে অগ্নিসংযোগ, এলাকায় আতঙ্ক

উন্নয়ন সভা শেষে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী