আত্মপ্রচার : ধ্বংস করে ঈমান ও আমল-১
২৪ জুন ২০২৪, ১২:০০ এএম | আপডেট: ২৪ জুন ২০২৪, ১২:০০ এএম
কিছুদিন আগে এক দস্তরখানে শরীক হয়েছিলাম। দস্তরখানে অন্যান্য মেহমানও ছিলেন। যখন আমাদের সামনে দস্তরখান পেশ করা হয় তখন মেহমানদের একজন পকেট থেকে মোবাইল বের করে সেগুলোর ছবি তুলতে শুরু করেন। উদ্দেশ্য, তিনি সেগুলো অন্যত্র পোস্ট করবেন। তখন আরেক মেহমান এ ভাইকে ছবি তুলতে নিষেধ করেন।
কোথাও মেহমান হলাম। মেহমানদারীতে কী কী পরিবেশন করা হল, এটি ছবিসহ অন্যদের জানানোর মানে কী? আসলে শুধু খাবার-দাবার নয়, স্মার্ট ফোনের ‘কল্যাণে’ ইবাদাত-বন্দেগী, আমল-আখলাক, হজ্ব-ওমরা, দান-উপহার, দ্বীনী মেহনত, কোনো অনুষ্ঠানে কিছু বলা বা তাতে শরীক হওয়াসহ যাবতীয় কাজকে আমরা আত্মপ্রচারের বাহন বানিয়ে ফেলছি। হজ্বে বা ওমরায় যাচ্ছি, তো প্রথমে ইহরাম পরেই নিজের ছবি পোস্ট করে দিচ্ছি। মীনা আরাফার ছবি পোস্ট করছি। এমনকি বাইতুল্লাহ ধরে বা তার সামনে দাঁড়িয়ে, নবীজী (সা.) এর রওযার সামনে দাঁড়িয়ে ছবি তুলছি এবং পোস্ট করছি।
আহ! এত হতভাগা হলাম- যে বাইতুল্লাহ সকল শিরকের মূলোৎপাটনকারী ও তাওহীদ-ইখলাসের নিদর্শন, যাকে আল্লাহ ‘আমার ঘর’ বলেছেন, সেটিকে আমি নিজের প্রচারের জন্য ব্যবহার করছি! এত বড় দুঃসাহস আমার যে, নবীজীর সামনে দাঁড়িয়ে ছবি তুলছি এবং নবীজী (সা.) এর রওযাকে আত্মপ্রচারের জন্য ব্যবহার করছি! ইহরাম এত পবিত্র ও মহিমান্বিত, যা দিয়ে আমার পাপ মোচন করে আমি নিষ্পাপ শিশুর মতো পবিত্র হব, সেটিকেও আমি আত্মপ্রচারের জন্য ব্যবহার করছি! দ্বীনী বা দুনিয়াবী বড় কোনো ব্যক্তির সাথে বসলাম, সাথে বসার একটি ছবিও তুলে নিলাম, এরপর তা পোস্ট করছি।
এটা জরুরি নয় যে, এসব ক্ষেত্রে সবারই আত্মপ্রচারের নিয়ত থাকে। কেউ হয়তো কোনো মাকসাদ ছাড়াই শুধু রেওয়াযের তালে করে। কারো হয়তো শুধু বিষয়টার ব্যাপারে নিজের লোকদেরকে অবগত করাই উদ্দেশ্য থাকে। যদিও তরীকা ভুল অবলম্বন করা হয়েছে। কিন্তু এটা তো হল অন্যের ব্যাপারে সুধারণা পোষণ করে একটি ব্যাখ্যা দাঁড় করানো, যা উচিতও বটে। আমার বলার উদ্দেশ্য আমরা প্রত্যেকে কি আত্মসমালোচনা করব না, নিজ নিয়তের যাচাই করব না? নিজের সন্দেহযুক্ত কাজগুলোর ভালো ব্যাখ্যা দাঁড় না করিয়ে তার মধ্যে কী খারাবি লুকিয়ে থাকতে পারে, সেদিকে নজর রাখাই তো মুমিনের কাজ।
যেসব লোক দুনিয়াবী বিষয় দিয়ে আত্মপ্রচার ও প্রসিদ্ধির নেশায় মত্ত; ফলোয়ার, ভিওয়ার বাড়ানোই নিজের জীবনের অন্যতম উদ্দেশ্য, তারা তো ধোঁকার মধ্যেই আছে- জানা কথা। কিন্তু আমরা তো দ্বীন, ঈমান, আখেরাত বুঝি, আখেরাতকে আমাদের মাকসাদ বলি এবং সে হিসেবে দ্বীন ঈমান পালনে ব্রত হই। কিন্তু দ্বীন পালন করতে গিয়ে দ্বীন-আমল দিয়ে ফেমাস-প্রসিদ্ধি কামাই- এটা যে আমার জন্য বরবাদির কারণ- সেটি আমার বুঝে আসে না কেন?
আত্মপ্রচার যে কত ভয়ংকর, ধ্বংসাত্মক- মনে হয় আমরা আজ এর অনুভূতিটুকুও হারিয়ে ফেলেছি। বরং আত্মপ্রচার আজ আমাদের কাছে এত মোহনীয় ও চাকচিক্যময় হয়ে উঠেছে যে, এটি আজ প্রায় সবার নিকট ‘ফ্যাশন’-এ পরিণত হয়েছে। এটির মধ্যে যে খারাবী আছে- তাও আমাদের অনেকের বোধগম্য নয়। তাই যে যা দিয়ে আত্মপ্রচারের সুযোগ পাই, নির্দ্বিধায়, বরং মনের লোভ, স্বাদ ও আনন্দ নিয়ে প্রচার করছি। অথচ আত্মপ্রচার ভয়ংকর গুনাহ ও মারাত্মক ধোঁকা।
আল্লাহ ও তাঁর রাসূল আত্মপ্রচারকে শিরক বলেছেন। আত্মপ্রচার যে কত ভয়ংকর গুনাহ তা বোঝার জন্য এটুকু যথেষ্ঠ যে, তা আল্লাহর জন্য না-করে আত্মপ্রচারের জন্য করা, অথবা আল্লাহর জন্য করল, সাথে আত্মপ্রচারও থাকল, তাহলে আত্মপ্রচারকে আল্লাহর সমকক্ষ ও শরীক বানিয়ে নিল। যেমন মুশরিকরা দেবদেবীকে শরীক বানায়। ইবাদত হতে হবে একমাত্র আল্লাহর জন্য; কিন্তু মুশরিকরা তাতে আল্লাহর পরিবর্তে অথবা আল্লাহর সাথে সাথে দেবদেবীকেও শরীক বানায়। তেমনিভাবে দ্বীন দ্বারা আত্মপ্রচারকারীও তার আমল দিয়ে আল্লাহর পরিবর্তে অথবা আল্লাহর সাথে আত্মপ্রচারকেও শরীক বানায়।
আল্লাহ তাআলা সূরা কাহ্ফের শেষে বলেন : সুতরাং যে-কেউ নিজ রবের সাথে মিলিত হওয়ার আশা রাখে, সে যেন সৎকর্ম করে এবং নিজ রবের ইবাদতে অন্য কাউকে শরীক না করে। (সূরা কাহফ : ১১০)। ‘রবের ইবাদতে কাউকে শরীক না করা’র কথা বললে তো সবার সামনে এ অর্থ ভেসে ওঠে যে, আল্লাহর ইবাদতে কোনো দেবদেবীকে শরীক না করা। এ অর্থ তো আপন স্থানে ঠিক আছে। কিন্তু সাহাবা তাবেয়ীন ও পরবর্তী মুফাসসিরীন কুরআন ও হাদীসের আলোকে এ আয়াতের ব্যাখ্যায় আরো একটি শিরকের কথা বলেন। তারা এ আয়াতের ব্যাখ্যায় রিয়ার কথাও বলেন। ইমাম তাবারী রাহ. বলেন : সে যেন তার ইবাদতে আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক না করে। আর শরীককারী তখনই হবে, যখন সে বাহ্যত দেখাবে যে, আমল সে একমাত্র আল্লাহর জন্য করছে, অথচ তার নিয়ত ভিন্ন। (তাফসীরে তাবারী : ১৫/৪৪০)।
বিভাগ : শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
ডিসেম্বরে বাংলাদেশ ও ভারতের পররাষ্ট্র বৈঠক, হাসিনাকে ফেরানো নিয়ে আলোচনা থাকবে
রামু সেনানিবাসে সশস্ত্র বাহিনী দিবস পালিত
এক সপ্তাহে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ল ৬ কোটি ১০ লাখ ডলার
প্রবাসীদের যে জন্য সুখবর দিলো মালয়েশিয়া
জাবি শিক্ষার্থী মৃত্যুর ঘটনায় মামলা, তদন্ত কমিটি গঠন, ফটকে তালা, মশাল মিছিল
মাদকের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থানে থাকবে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল
"নতুন সিনেমা নিয়ে ফিরছেন গ্লোবাল তারকা অ্যাঞ্জেলিনা জোলি"
ড. ইউনূসকে নিয়ে খালেদা জিয়ার পুরোনো যে বক্তব্য ভাইরাল
নতুন নির্বাচন কমিশনের প্রতি ইসলামী আন্দোলনের শুভ কামনা
আলোচনায় ফ্যাসিস্ট হাসিনার ‘টুস করে ফেলে দেয়ার’ হুমকি
দীর্ঘ ১৫ বছর সাংবাদিকরা বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশন করতে পারেনি: খোকন
'ইউটিউব ট্রেন্ডিংয়ে রয়েছে অভিনেতা তারিক আনাম খানের নাটক'
বাংলাদেশ, নেপাল ও ভুটানের মধ্যে আঞ্চলিক সহযোগিতার আহ্বান
ইসলামিক ফাউন্ডেশন এর বোর্ড অব গভর্নর সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সম্বর্ধনা
সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সংবর্ধনা
লালমোহনে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত যুবদল নেতা চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু
চকরিয়ার বিএনপি নেতা আবু তাহের চৌধুরীর মৃত্যুতে সালাহউদ্দিন আহমদ ও হাসিনা আহমদের শোক
উইন্ডিজের বিপক্ষে মাঠে নামছে বাংলাদেশ
বেইজিং সংস্কৃতি ও পর্যটন ব্যুরো ও আটাবের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত
প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানের সাক্ষাৎ