অশালীনতা ও অশ্লীলতা ছড়ানোর পরিণাম খুবই ভয়াবহ
২৬ জুন ২০২৪, ১২:০১ এএম | আপডেট: ২৬ জুন ২০২৪, ১২:০১ এএম
মন্দ ও অশালীন বিষয় প্রচার এবং তাতে সহযোগিতা করা কবীরা গুনাহ। যারা মন্দ ও অশ্লীল বিষয় প্রচার করে- এমন লোকদের ব্যাপারে আল্লাহ তা‘আলা কুরআন কারীমে বলেন : স্মরণ রেখ, যারা মুমিনদের মধ্যে অশ্লীল বিষয়ের প্রসার হোক- এটা কামনা করে, তাদের জন্য দুনিয়া ও আখেরাতে আছে যন্ত্রণাময় শাস্তি এবং আল্লাহ জানেন, তোমরা জান না। (সূরা নূর : ১৯)। আয়াতটি যদিও একটি বিশেষ প্রেক্ষাপটে নাযিল হয়েছে, কিন্তু এর বার্তা-বলয় অনেক ব্যাপক। সব ধরনের অন্যায় ও গর্হিত কথা ও কাজের প্রচার এ আয়াতের নিষেধাজ্ঞার অন্তর্ভুক্ত। প্রযুক্তির উৎকর্ষ ও সহজ লভ্যতার এই যুগে কোনো কিছু প্রচার করা বা ছড়িয়ে দেয়া খুবই সহজ। চাইলে মুহূর্তেই একটা বিষয় পৃথিবীময় ছড়িয়ে দেয়া যায়। নিত্যদিনই নতুন নতুন বিষয় বিভিন্ন প্রচারমাধ্যমে মানুষের মাঝে ছড়িয়েও পড়ছে; এরমধ্যে ভালোর চেয়ে মন্দের পরিমাণই বেশি। চিত্তাকর্ষক পুঁতিগন্ধময় হাজারো বিষয়ের সয়লাব ঘটছে।
মুসলিম সমাজ ও পরিবারগুলোতেও এর মাত্রা বেড়ে চলেছে। অনেকে জেনেবুঝেই অনাচার ও পাপাচারের দিকে ধাবিত হচ্ছে এবং তা ছড়িয়ে দিচ্ছে; অনেকে আবার অসতর্কতা ও অসচেতনতায় এসবে জড়িয়ে পড়ছে। শয়তান গুনাহের কাজগুলোকে লোভনীয় রূপে মানুষের কাছে উপস্থাপন করে; এর মোহে পড়ে বহু মুসলমান নিজেদের দ্বীন-ঈমান ও আখেরাতকে বরবাদ করছে। আল্লাহ তা‘আলা উক্ত আয়াতে যারা মন্দ কথা ও কাজের প্রচার-প্রসার ঘটায় এবং তাতে ইন্ধন জোগায় তাদের ব্যাপারে বলেছেন, তাদের জন্য দুনিয়া ও আখেরাতে আছে যন্ত্রণাময় শাস্তি।
কুরআনের এ বার্তায় পাপ ও গুনাহ ছড়ানোর সবধরনের মাধ্যমই অন্তর্ভুক্ত। কথায়, লেখায় কিংবা ছবি বা ভিডিও বানিয়ে ইত্যাদি সকল প্রকারেই অশালীনতা ও অশ্লীলতা ছড়ানো নিষেধ। গালিগালাজ করা, মিথ্যা কথা বলা, কাউকে অপবাদ দেয়া বা কারো গীবত করা- এর সবগুলোই মুখের কথায় অশ্লীলতা ছড়ানোর প্রকার। আর সংবাদপত্র ও বই-পুস্তকে মন্দ বা অন্যায় কথা লেখা, চিঠি বা দেয়ালে লেখা কিংবা পোস্টার ও বিলবোর্ডে লেখা অথবা চিত্র আঁকা ইত্যাদির মাধ্যমে অশ্লীলতা ছড়ানোর প্রকার। এসব কিছুই আয়াতের নিষেধাজ্ঞায় শামিল।
এ প্রসঙ্গে উল্লেখ্য, ইদানীং বাছবিচার ছাড়া সবকিছুই ছড়িয়ে দেয়ার অসুস্থ মানসিকতা ব্যাপক হয়ে উঠছে। এক্ষেত্রে প্রচলিত শব্দ হচ্ছে ‘ভাইরাল করা’। এটা মহামারির মতো ছড়িয়ে পড়েছে। অনেকে যা মনে চায় তাই বিভিন্ন যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দিচ্ছে। মন্দ-ঘৃণিত-অশালীন কতো বিষয় কুপ্রবৃত্তির তাড়নায় অবলীলায় প্রচার করছে। ইসলামে গুনাহের কাজ পরিহার করার নির্দেশনা তো আছেই, অন্যের দোষ-ত্রুটির ক্ষেত্রেও ইসলামের শিক্ষা হলো, অন্যের দোষ-ত্রুটি গোপন রাখা।
রাসূলুল্লাহ (সা.) অন্যের দোষ গোপন রাখতে বলেছেন। কোন্ দোষ কতটুকু প্রকাশ করা হবে, সে ব্যাপারেও কুরআন-হাদিসে বিস্তারিত নির্দেশনা রয়েছে। ইসলামের এ মহান শিক্ষা ভুলে আমাদের অনেক যুবক ভাইয়েরা এখন ‘ভাইরাল’-এর রোগে আক্রান্ত হচ্ছে, অশ্লীলতা ছড়িয়ে দিতে একে অন্যের সহযোগী হচ্ছে। অথচ আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন : তোমরা নেক কাজ ও তাকওয়া অবলম্বনের ক্ষেত্রে একে অন্যের সহযোগিতা করবে, গুনাহ ও জুলুমের কাজে একে অন্যের সহযোগিতা করবে না। আল্লাহ্কে ভয় করে চলো। নিশ্চয়ই আল্লাহর শাস্তি অতি কঠিন। (সূরা মায়েদা : ০২)।
আল্লাহ তা‘আলা অন্যত্র ইরশাদ করেন : কিছু মানুষ এমন, যারা অজ্ঞতাবশত আল্লাহর পথ থেকে মানুষকে বিচ্যুত করার জন্য এমন সব ‘অবান্তর কথা’ ক্রয় করে, যা আল্লাহ সম্পর্কে উদাসীন করে দেয় এবং তারা আল্লাহর পথ নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রƒপ করে। তাদের জন্য আছে লাঞ্চনাকর শাস্তি। (সূরা লুকমান : ০৬)। একে তো উক্ত আয়াতের ব্যাপকতা অনুযায়ী আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুতকারী কোনো কিছুই কেনা যাবে না। সেইসঙ্গে এ জাতীয় কিছু কেনার দ্বারা প্রথমোক্ত আয়াতে বর্ণিত মন্দ ও অশালীনতা প্রচারের নিষেধাজ্ঞাও লঙ্ঘন করা হয়। যার পরিণামে আয়াতে ভয়াবহ শাস্তির কথা ঘোষিত হয়েছে।
আজকাল অনেকে প্রগতি-উৎকর্ষ-স্বাধীনতা-অধিকার-সৃজনশীলতা ইত্যাদি শব্দের ছাতা মেলে তার ছায়ায় যাচ্ছেতাই করার প্রয়াস পাচ্ছে। তারা প্রগতির নামে অশালীন ও কুরুচিপূর্ণ গল্প-উপন্যাস, চিত্রাঙ্কন ও ভিডিও এবং অশিষ্ট ভাষণ-বক্তব্য ও মতবাদ ইত্যাদিকে বিচার বিশ্লেষণ ও দোষ-ত্রুটির ঊর্ধ্বে বলতে চাচ্ছে। এ সকল মাধ্যমে মুসলিম সমাজের শিরা-উপশিরায়ও অনাচার-পাপাচার ছড়িয়ে পড়ছে এবং তা জীবননাশী রোগের মতো জেঁকে বসছে।
এ সকল পাপাচারে লিপ্ত হওয়া এবং অন্যদের মধ্যে অশালীনতা ছড়িয়ে দেয়ার গুনাহের কারণে দুনিয়ার জীবন থেকেও আল্লাহর রহমত-বরকত চলে যায়; জীবন হয়ে ওঠে দুর্বিষহ যন্ত্রণাক্লিষ্ট। অথচ মুমিনের জীবনের প্রতিটি অঙ্গনে তার চলন-বলনের ধরন এবং যাপিত জীবনের আদর্শিক রূপরেখা আল্লাহ তা‘আলা কুরআন কারীমে এবং রাসূলুল্লাহ (সা.) সহস্রাধিক হাদিসে সবিস্তারে বলে দিয়েছেন।
অসংখ্য হাদিসে একথাও বর্ণিত হয়েছে যে, যখন সর্বত্র গুনাহ ও অশালীনতা ছড়িয়ে পড়বে, তখন একের পর এক ফেতনা, বিপদ-দুর্যোগ, মহামারি দেখা দেবে এবং সমাজে অশান্তি-অরাজকতা বিরাজ করবে। কাজেই মুমিনদের এসব বিষয়ে খুব সতর্ক থাকা প্রয়োজন এবং মুসলিম সমাজে ক্রমশ ছড়িয়ে পড়া সব ধরনের অন্যায়-অশালীনতা রোধে চিন্তা-ভাবনা করা ও পদক্ষেপ নেয়া আবশ্যক।
বিভাগ : শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
ডিসেম্বরে বাংলাদেশ ও ভারতের পররাষ্ট্র বৈঠক, হাসিনাকে ফেরানো নিয়ে আলোচনা থাকবে
রামু সেনানিবাসে সশস্ত্র বাহিনী দিবস পালিত
এক সপ্তাহে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ল ৬ কোটি ১০ লাখ ডলার
প্রবাসীদের যে জন্য সুখবর দিলো মালয়েশিয়া
জাবি শিক্ষার্থী মৃত্যুর ঘটনায় মামলা, তদন্ত কমিটি গঠন, ফটকে তালা, মশাল মিছিল
মাদকের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থানে থাকবে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল
"নতুন সিনেমা নিয়ে ফিরছেন গ্লোবাল তারকা অ্যাঞ্জেলিনা জোলি"
ড. ইউনূসকে নিয়ে খালেদা জিয়ার পুরোনো যে বক্তব্য ভাইরাল
নতুন নির্বাচন কমিশনের প্রতি ইসলামী আন্দোলনের শুভ কামনা
আলোচনায় ফ্যাসিস্ট হাসিনার ‘টুস করে ফেলে দেয়ার’ হুমকি
দীর্ঘ ১৫ বছর সাংবাদিকরা বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশন করতে পারেনি: খোকন
'ইউটিউব ট্রেন্ডিংয়ে রয়েছে অভিনেতা তারিক আনাম খানের নাটক'
বাংলাদেশ, নেপাল ও ভুটানের মধ্যে আঞ্চলিক সহযোগিতার আহ্বান
ইসলামিক ফাউন্ডেশন এর বোর্ড অব গভর্নর সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সম্বর্ধনা
সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সংবর্ধনা
লালমোহনে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত যুবদল নেতা চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু
চকরিয়ার বিএনপি নেতা আবু তাহের চৌধুরীর মৃত্যুতে সালাহউদ্দিন আহমদ ও হাসিনা আহমদের শোক
উইন্ডিজের বিপক্ষে মাঠে নামছে বাংলাদেশ
বেইজিং সংস্কৃতি ও পর্যটন ব্যুরো ও আটাবের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত
প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানের সাক্ষাৎ