গোনাহের প্রতিকার ও প্রভাব-২

Daily Inqilab মাওলানা মুহাম্মাদ তাওহীদুল ইসলাম তায়্যিব

০১ জুলাই ২০২৪, ১২:০০ এএম | আপডেট: ০১ জুলাই ২০২৪, ১২:০০ এএম

গত আলোচনায় আলোচ্য আয়াতসমূহে বর্ণিত বিষয়গুলো অবশ্যই মানুষকে আনন্দিত করে। হৃদয় ও মনে উদ্যম ও উদ্দীপনা সৃষ্টি করে। ভাব ও ভাবনায় আশ্বাস ও সান্ত¡নার বার্তা ছড়িয়ে দেয়। ফলে যে কারো কল্পনায় বিষয়গুলো জাগরূক থাকলে গোনাহ হওয়া মাত্রই সে অবনত হবে। তাওবা ও ইস্তিগফার করবে। আল্লাহ তাআলাও তাঁর দয়া ও ক্ষমাগুণে তাকে মাফ করে দেবেন। কিন্তু এর বিপরীতে আরেকটি বিষয় আছে, যা খেয়াল রাখা খুব জরুরি। কুরআন মাজীদের বেশ কয়েকটি আয়াতে খুব স্পষ্টভাবে উঠে এসেছে সে বিষয়। আল্লাহ তাআলা বলেন : মানুষ নিজ হাতে যা কামাই করেছে, তার কারণে জলে-স্থলে ছড়িয়ে পড়েছে বিপর্যয়, যাতে আল্লাহ তাদেরকে তাদের কৃতকর্মের কিছুটা শাস্তি আস্বাদন করান, যেন তারা (সৎপথে) ফিরে আসে। (সূরা রূম : ৪১)।

অর্থাৎ মানুষের জীবনে যেসব বিপদ ও মুসিবত এবং দুর্যোগ ও দুর্দশা আসে সেগুলো তারই কৃতকর্মের ফল; গোনাহ ও পাপাচারের পরিণতি। অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে : তোমাদের ওপর যে মুসিবত আসে, তা তোমাদেরই হাতের কর্মের ফলে। আর তিনি তোমাদের অনেক কিছুই (অপরাধ) ক্ষমা করে দেন। (সূরা শূরা : ৩০)। বোঝা গেল, অনেক গোনাহ ক্ষমা করে দেওয়ার পর আরো যা কিছু রয়ে যায় সেগুলোর কারণেও বিভিন্ন ধরনের বিপদ-মুসিবত আসে। অর্থাৎ কৃত গোনাহ ও অপরাধের সবগুলোর জন্য বান্দা হয়তো তাওবা-ইস্তিগফার করেনি; অথবা করেছে, কিন্তু তার সব তাওবা কবুল হয়নি।

এ বিষয়ে ‘তাফসিরে তাওযীহুল কুরআন’ থেকে একটি টিকা তুলে ধরছি। হযরত শাইখুল ইসলাম লিখেন : দুনিয়ায় যে ব্যাপক বালা-মুসিবত দেখা দেয়, যেমন দুর্ভিক্ষ, মহামারি, ভূমিকম্প, শত্রুর আগ্রাসন, জালিমের আধিপত্য ইত্যাদি, এসবের প্রকৃত কারণ ব্যাপকভাবে আল্লাহ তাআলার হুকুম অমান্য করা ও পাপাচারে লিপ্ত হওয়া। এভাবেই এসব বিপদাপদ মানুষের আপন হাতের কামাই হয়ে থাকে। আল্লাহ তাআলা মানুষের ওপর এসব বিপদাপদ চাপান এজন্য, যাতে মানুষের মন কিছুটা নরম হয় এবং দুষ্কর্ম থেকে নিবৃত্ত হয়।

প্রকাশ থাকে যে, দুনিয়ায় যেসব বিপদাপদ দেখা দেয়, অনেক সময় তার বাহ্যিক কারণও থাকে, যা প্রাকৃতিক নিয়ম অনুযায়ী আপন কার্য প্রকাশ করে। কিন্তু এটা তো বলার অপেক্ষা রাখে না যে, সেই কারণও আল্লাহ তাআলারই সৃষ্টি এবং বিশেষ সময় ও বিশেষ স্থানে তার সক্রিয় হওয়াটাও আল্লাহ তাআলার ইচ্ছার ওপর নির্ভরশীল। তিনি নিজের সে ইচ্ছা সাধারণত মানুষের পাপাচারের ফলেই কার্যকর করেন। এভাবে এ আয়াত শিক্ষা দিচ্ছে, সাধারণ বালা-মুসিবতের সময় নিজেদের গোনাহের কথা স্মরণ করে আল্লাহ তাআলার কাছে তাওবা ও ইস্তিগফারে লিপ্ত হওয়া চাই, যদিও আপাতদৃষ্টিতে মনে হয় তা বাহ্যিক কোনো কারণঘটিত বিষয় (তাওযীহুল কুরআন, সূরা রূম : ৪১)।

উল্লিখিত একটি আয়াতে যেমন ছোট-বড় গোনাহের প্রসঙ্গ এসেছে, অন্য একটি আয়াতে এসেছে প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য গোনাহের কথা। আল্লাহ তাআলা বলেন : তোমরা প্রকাশ্য ও গোপন সকল গোনাহ ছেড়ে দাও। যারা গোনাহ করে, শীঘ্রই তাদের তাদের কৃত গোনাহের কারণে শাস্তি দেওয়া হবে। (সূরা আনআম : ১২০)। প্রকাশ্য গোনাহ হলো সেই সব গোনাহ, যা মানুষ তার বাহ্যিক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দ্বারা করে। যেমনÑ মিথ্যা বলা, গীবত করা, ধোঁকা দেওয়া ইত্যাদি। আর গোপন গোনাহ হলো সেইগুলো, যা অন্তরের সাথে সম্পৃক্ত। যেমন হিংসা, বিদ্বেষ, রিয়া, অহঙ্কার ইত্যাদি।

আরেকটি আয়াতে ভয়ানক সতর্কবার্তা উল্লেখিত হয়েছে। পূর্ববর্তী বিভিন্ন জাতি-গোষ্ঠীকে তাদের কৃত অন্যায় ও অপরাধের কারণে যেভাবে পাকড়াও করা হয়েছে, তাদের বর্তমান উত্তরসূরিকেও সেটা স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়েছে এবং তাদের সাথেও এমনটি ঘটতে পারে বলে সতর্ক করা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে : যারা কোনো ভূখ-ের বাসিন্দাদের (ধ্বংসপ্রাপ্তির) পর তার উত্তরাধিকারী হয়, তাদের কি এই শিক্ষা লাভ হয়নি যে, আমি চাইলে তাদেরও তাদের গোনাহের কারণে পাকড়াও করতে পারি? এবং (হঠকারিতাবশত এ শিক্ষা গ্রহণ না করার কারণে) আমি তাদের অন্তরে মোহর করে দিতে পারি, ফলে তারা (কোনো কথা) শুনতে পাবে না? (সূরা আরাফ : ১০০)।

কোনো গোনাহ করার সময় কি মনে থাকে একথা? উপলব্ধির সাথে একথা মনে রাখতে পারলে বাস্তবেই গোনাহ করা অনেক কঠিন হয়ে যাবে। এখানে গোনাহের শাস্তির কথা তো আছেই, আরও আছে হঠকারিতাবশত এ শিক্ষা গ্রহণ না করার কারণে অন্তর মোহরাঙ্কিত হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা। হে আল্লাহ! আপনি আমাদের সবাইকে এমন বিষয় থেকে রক্ষা করুন।


বিভাগ : শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

বিজিএমইএ দফতরে চীনা ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদল

বিজিএমইএ দফতরে চীনা ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদল

রূপায়ণের উপহারে হাসি ফুটল সিলেটে বন্যার্ত কয়েক হাজার পরিবারে

রূপায়ণের উপহারে হাসি ফুটল সিলেটে বন্যার্ত কয়েক হাজার পরিবারে

সীমান্তে মাইন বিস্ফোরণে এক রোহিঙ্গা নিহত।

সীমান্তে মাইন বিস্ফোরণে এক রোহিঙ্গা নিহত।

প্রধানমন্ত্রীর সাথে ভারতের নৌবাহিনী প্রধানের সাক্ষাৎ

প্রধানমন্ত্রীর সাথে ভারতের নৌবাহিনী প্রধানের সাক্ষাৎ

আবারও সিলেট ও সুনামগঞ্জে বন্যা

আবারও সিলেট ও সুনামগঞ্জে বন্যা

ফের আন্দোলনের সূচনা চট্টগ্রাম থেকেই Ñআমীর খসরু

ফের আন্দোলনের সূচনা চট্টগ্রাম থেকেই Ñআমীর খসরু

দুর্নীতির শাস্তি নিয়ে সাবেক মন্ত্রীর স্ট্যাটাস ভাইরাল

দুর্নীতির শাস্তি নিয়ে সাবেক মন্ত্রীর স্ট্যাটাস ভাইরাল

১৫ জুলাই থেকে ঢাকা-বেইজিং সরাসরি ফ্লাইট চালু

১৫ জুলাই থেকে ঢাকা-বেইজিং সরাসরি ফ্লাইট চালু

রায়গঞ্জে অটোরিকশা চালককে কুপিয়ে হত্যা

রায়গঞ্জে অটোরিকশা চালককে কুপিয়ে হত্যা

বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি ভাতা বৃদ্ধির বিষয়টি বিবেচনাধীন: মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী

বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি ভাতা বৃদ্ধির বিষয়টি বিবেচনাধীন: মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী

আসামের বিপক্ষে হ্যান্ডবল সিরিজ জিতল ঢাকা

আসামের বিপক্ষে হ্যান্ডবল সিরিজ জিতল ঢাকা

প্যারিস অলিম্পিকে বাংলাদেশের ৫ ক্রীড়াবিদ চূড়ান্ত

প্যারিস অলিম্পিকে বাংলাদেশের ৫ ক্রীড়াবিদ চূড়ান্ত

জবরদখলকৃত বনভূমি উদ্ধারে কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে : বনমন্ত্রী

জবরদখলকৃত বনভূমি উদ্ধারে কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে : বনমন্ত্রী

বড় জয়ে শুরু আরামবাগ ক্রীড়া সংঘের

বড় জয়ে শুরু আরামবাগ ক্রীড়া সংঘের

মধ্যপ্রাচ্যে বাংলাদেশের কর্মীদের কর্মপরিবেশ সৃষ্টির সুপারিশ

মধ্যপ্রাচ্যে বাংলাদেশের কর্মীদের কর্মপরিবেশ সৃষ্টির সুপারিশ

বোয়ালমারীতে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ২

বোয়ালমারীতে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ২

কুমিল্লায় চোরের হাতে গৃহকর্ত্রী খুন

কুমিল্লায় চোরের হাতে গৃহকর্ত্রী খুন

নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে: পরিবেশমন্ত্রী

নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে: পরিবেশমন্ত্রী

আল-শিফা হাসপাতালের পরিচালকের মুক্তি বড় ভুল: নেতানিয়াহু

আল-শিফা হাসপাতালের পরিচালকের মুক্তি বড় ভুল: নেতানিয়াহু

এবার এক নেতার হাড্ডি ভাঙার হুমকি সাবেক এমপি মোস্তাফিজের

এবার এক নেতার হাড্ডি ভাঙার হুমকি সাবেক এমপি মোস্তাফিজের