সন্তানের শিক্ষা-দীক্ষা : পিতা-মাতার আকুলতা ও ব্যাকুলতা-১
০১ আগস্ট ২০২৪, ১২:০৮ এএম | আপডেট: ০১ আগস্ট ২০২৪, ১২:০৮ এএম
শিশুরা মানব সমাজের সম্পদ। দেশ ও জাতির ভবিষ্যত। আজকের শিশু আগামী দিনের পরিচালক। যুগ ও সময়ের পথনির্দেশক। মানব ও মানবতার পথপ্রদর্শক। তাদের সঠিক শিক্ষা-দীক্ষা তাই একান্ত প্রয়োজন। শিক্ষার সবচেয়ে উপযোগী সময় শৈশব। গ্রহণ ও ধারণের সর্বোত্তম সময় শৈশব। শিশুরা যেকোনো জিনিস খুব সহজে ধারণ করতে পারে। তাদের স্মৃতি থেকে তা কখনো মুছে যায় না। গবেষকগণ সত্য বলেছেন, ‘শৈশবের শিক্ষা যেন পাথরে অংকিত নকশা।’
একটি উদাহরণ দেখুন। উমর ইবনে আবু সালামা (রা.) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা.) এর প্রতিপালনে ছিলাম। একবার (বড় পাত্রে) খাবার সময় আমার হাত পাত্রে এদিক-ওদিক ঘুরছিল। তখন তিনি আমাকে বললেন, হে বাছা! খাবার সময় বিসমিল্লাহ্ পড়বে। ডান হাতে খাবে। নিজের দিক থেকে খাবে। রাবী বলেন, ‘এরপর থেকে এটি আমার স্বভাবে পরিণত হয়ে গিয়েছিল।’ (সহীহ বুখারী : ৫৩৭৬)।
কারণ, শিশুদের ধ্যান-ধারণা পাক-পবিত্র। অনুভব-অনুভূতি কোমল ও স্বচ্ছ। তারা যখন দুনিয়াতে আসে, তাদের মধ্যে আল্লাহ ও রাসূলের প্রতি ঈমান আনার এবং ন্যায় ও সত্যের দাওয়াত গ্রহণ করার স্বভাব-যোগ্যতা বিদ্যমান থাকে। হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে, প্রতিটি শিশু ফিতরত (সত্য স্বভাব)-এর উপর জন্মগ্রহণ করে। পরে তার পিতা-মাতা তাকে ইহুদি বানায় কিংবা খ্রিস্টান বানায় কিংবা অগ্নিপূজক বানায়। (সহীহ বুখারী : ১৩৫৮)।
সুতরাং শৈশব থেকেই শিশুর আকীদা-বিশ্বাস ও আখলাক-চরিত্রকে ইসলামের আলোয় আলোকিত করতে হবে। শিশুরা সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত হয় পরিবেশ দ্বারা। পরিবেশ তাদের মনে গভীর রেখাপাত করে। এজন্য তাদেরকে ঘরে ও বাইরে দ্বীনী পরিবেশে রাখতে হবে, যাতে তারা ইসলামী আদর্শে বেড়ে উঠতে পারে এবং এটি তাদের স্বভাবে পরিণত হতে পারে। নতুবা ধীরে ধীরে সে বিজাতির বোধ-বিশ্বাস ও আচার-অনুষ্ঠান গ্রহণ করতে শুরু করবে, বড় হয়ে বিপথগামী হয়ে পড়বে, যা এই নিষ্পাপ শিশুর উপর যেমন অবিচার তেমনি মানবজাতির উপরও।
সন্তানের প্রতি পিতা-মাতার স্নেহ, মমতা প্রশ্নাতীত। এ পরম করুণাময় আল্লাহর দান। তিনিই তাদের মনে মমতার এ অফুরন্ত ঝরণা উৎসারিত করেছেন। পিতা-মাতার মমতা-সিক্ত হৃদয় সন্তানের কল্যাণ-কামনায় অস্থির থাকে। কিন্তু কাকে বলে কল্যাণ? মহান আল্লাহ যে পিতা-মাতাকে ঈমান ও হিকমত দান করেছেন, তারা সন্তানের কেবল শারীরিক প্রতিপালনই নয়; মন-মস্তিষ্ক, বোধ-বিশ্বাস ও আচার-আচরণ নির্মাণেও অস্থির থাকেন। শুধু ইহকালীন সুখ-সমৃদ্ধিই নয়; পরকালীন শান্তি-সাফল্যের জন্যও ব্যাকুল থাকেন। সুতরাং স্বভাবের মমত্ববোধের সাথে যখন আসমানের আলোর সংযোগ ঘটে তখন সন্তানের উভয় জীবন হয় সর্বাঙ্গীণ সুন্দর।
সন্তানের শিক্ষা-দীক্ষা পিতা-মাতার দায়িত্বও। এ স্বয়ং আল্লাহ কর্তৃক প্রদত্ত। ইরশাদ হয়েছে : হে মুমিনগণ! তোমরা নিজেদেরকে এবং তোমাদের পরিবারবর্গকে রক্ষা কর সেই আগুন থেকে, যার ইন্ধন হবে মানুষ ও পাথর। (সূরা তাহরীম : ৬)। এখানে আগুন শব্দটি প্রণিধানযোগ্য। সন্তানের শিক্ষা-দীক্ষায় পিতা-মাতার কী পরিমাণ চেষ্টা করতে হয়? তাদেরকে গোনাহ থেকে বাঁচাতে কেমন ব্যাকুল হতে হয়? আগুন থেকে বাঁচানোর জন্য যেমন ব্যাকুল হন তেমন, আগুন শব্দটি এ ইঙ্গিতই দেয়। ধরা যাক, কোথাও এমন ভয়াবহ আগুন জ্বলছে যে, তাতে কেউ পড়ে গেলে তার জীবিত ফেরা অসম্ভব।
কোনো অবুঝ ছেলে যদি সেদিকে পা বাড়ায়, পিতা-মাতা কি শুধু ‘যেয়ো না’, ‘পুড়ে যাবে’ বলে বসে থাকবেন? শুধু মৌখিক উপদেশ দিয়ে ক্ষান্ত হয়ে যাবেন? আর এ সত্ত্বেও সে যদি দগ্ধ হয়ে যায়, তবে তারা কি একথা বলে দায়মুক্ত হবেন যে, আমরা ওকে নিষেধ করেছি, ও শোনেনি, স্বেচ্ছায় দগ্ধ হয়েছে? পিতা-মাতার তো ছেলেকে আগুনের দিকে যেতে দেখলে ঘুম হারাম হয়ে যাবে। যতক্ষণ পর্যন্ত কোলে তুলে তাকে আগুন থেকে দূরে না নিয়ে যেতে পারবেন ততক্ষণ তারা শান্তি পাবেন না।
সঠিক ও কল্যাণকর শিক্ষা-দীক্ষার ব্যবস্থা করা কেবল পিতা-মাতাই নয়; শিক্ষক, সমাজ, সরকার সবার দায়িত্ব এবং সকলকেই এ বিষয়ে আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করতে হবে।
হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে, তোমাদের প্রত্যেকে দায়িত্বশীল। প্রত্যেকে তার অধীনদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে। ইমাম (রাষ্ট্রপ্রধান) জনগণের দায়িত্বশীল। তাকে তাদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে। পুরুষ পরিবারের দায়িত্বশীল। তাকে তাদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে। মহিলা তার স্বামীর ঘর ও সন্তানের দায়িত্বশীল। তাকে তাদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে। গোলাম তার মনিবের সম্পদের দায়িত্বশীল। তাকে এ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে। সুতরাং তোমরা প্রত্যেকে দায়িত্বশীল এবং প্রত্যেকে তার অধীনদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে। (সহীহ বুখারী : ২৫৫৪)।
বিভাগ : শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
ডিসেম্বরে বাংলাদেশ ও ভারতের পররাষ্ট্র বৈঠক, হাসিনাকে ফেরানো নিয়ে আলোচনা থাকবে
রামু সেনানিবাসে সশস্ত্র বাহিনী দিবস পালিত
এক সপ্তাহে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ল ৬ কোটি ১০ লাখ ডলার
প্রবাসীদের যে জন্য সুখবর দিলো মালয়েশিয়া
জাবি শিক্ষার্থী মৃত্যুর ঘটনায় মামলা, তদন্ত কমিটি গঠন, ফটকে তালা, মশাল মিছিল
মাদকের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থানে থাকবে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল
"নতুন সিনেমা নিয়ে ফিরছেন গ্লোবাল তারকা অ্যাঞ্জেলিনা জোলি"
ড. ইউনূসকে নিয়ে খালেদা জিয়ার পুরোনো যে বক্তব্য ভাইরাল
নতুন নির্বাচন কমিশনের প্রতি ইসলামী আন্দোলনের শুভ কামনা
আলোচনায় ফ্যাসিস্ট হাসিনার ‘টুস করে ফেলে দেয়ার’ হুমকি
দীর্ঘ ১৫ বছর সাংবাদিকরা বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশন করতে পারেনি: খোকন
'ইউটিউব ট্রেন্ডিংয়ে রয়েছে অভিনেতা তারিক আনাম খানের নাটক'
বাংলাদেশ, নেপাল ও ভুটানের মধ্যে আঞ্চলিক সহযোগিতার আহ্বান
ইসলামিক ফাউন্ডেশন এর বোর্ড অব গভর্নর সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সম্বর্ধনা
সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সংবর্ধনা
লালমোহনে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত যুবদল নেতা চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু
চকরিয়ার বিএনপি নেতা আবু তাহের চৌধুরীর মৃত্যুতে সালাহউদ্দিন আহমদ ও হাসিনা আহমদের শোক
উইন্ডিজের বিপক্ষে মাঠে নামছে বাংলাদেশ
বেইজিং সংস্কৃতি ও পর্যটন ব্যুরো ও আটাবের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত
প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানের সাক্ষাৎ