ঢাকা   বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪ | ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

শান্তি ও নিরাপত্তা-২

Daily Inqilab মাওলানা মুহাম্মাদ আব্দুল মালেক

০৬ আগস্ট ২০২৪, ১২:২৯ এএম | আপডেট: ০৬ আগস্ট ২০২৪, ১২:২৯ এএম

আল্লাহ তা’আলার সকল নেয়ামতের মতো শান্তি ও নিরাপত্তার মূল্যও তখনই উপলব্ধি করা যায়, যখন কিছু সময়ের জন্য জীবনের কিছু ক্ষেত্রে এই নেয়ামতের সংকট দেখা দেয়। বিবাদ, বিসম্বাদ ও হানাহানিতে যখন জীবন দুর্বিষহ হয়ে পড়ে তখন শান্তি ও নিরাপত্তার মূল্য বুঝে আসে। এই ভীতি ও অশান্তির সময়গুলো অন্তত দুটো বিষয়ের দিকে আমাদের মনোযোগ আকর্ষণ করে। এক. মুহাসাবা ও আত্মপর্যালোচনা। ভালো-মন্দ সকল অবস্থার অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে মানুষের নিজের কর্ম। এ কারণে সর্বাবস্থায় মুহাসাবা ও আত্মপর্যালোচনা অতি গুরুত্বপূর্ণ।

ইরশাদ হয়েছে : মানুষের কৃতকর্মের কারণে স্থলে ও সমুদ্রে বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়ে; যার ফলে তাদেরকে তাদের কোনো কোনো কর্মের শাস্তি তিনি আস্বাদন করান; যেন তারা ফিরে আসে। (সূরা রূম : ৪১)। এ অশান্তির শাস্তি যেমনিভাবে ফাসাদ সৃষ্টিকারী ব্যক্তি ও সমাজ তাদের অপকর্মের জন্য ভোগ করে থাকে, তেমনি অনেক ক্ষেত্রে তার আগ্রাসনে পড়ে যায় জালিমদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয়া, তাদের প্রতিবাদ ও সাধ্যানুযায়ী প্রতিরোধ না করা সমাজ ও গোষ্ঠীর লোকজনও। তাই নিজেদেরকে পরিশুদ্ধ করার পাশাপাশি অসত্য, অন্যায়, প্রকাশ্য গুনাহ ও খোদাদ্রোহিতার বিরুদ্ধে যার যার সাধ্যানুযায়ী শান্তিপূর্ণ পন্থায় উদ্যোগ গ্রহণ করাও অপরিহার্য।

দুই. দুনিয়ার ছোট ছোট ভীতি ও শঙ্কা আখিরাতের চরম ভীতি ও শঙ্কার নিদর্শন। এগুলো আখিরাতের কঠিন মুহূর্তে শান্তি ও নিরাপত্তার মূল্য মুমিনের চিন্তায় উপস্থিত করে। কুরআন মাজীদে বারবার কিয়ামত ও আখিরাতের সেই চরম ভীতির পরিস্থিতি সম্পর্কে সাবধান করা হয়েছে। জাহান্নামীদের অবর্ণনীয় সন্ত্রস্ততার যে চিত্র আল্লাহ তা’আলা কুরআন মজীদে তুলে ধরেছেন তা মুমিনের অন্তরাত্মাকে প্রকম্পিত করে তোলে।

আরো ইরশাদ হয়েছে : তুমি কখনো মনে করো না যে, জালিমরা যা করে সে বিষয়ে আল্লাহ বে-খবর, তবে তিনি তাদেরকে সেই দিন পর্যন্ত অবকাশ দেন যেদিন তাদের চক্ষু হবে স্থির। ভীতবিহ্বল চিত্তে আকাশের দিকে তাকিয়ে তারা ছুটাছুটি করবে। নিজের প্রতি তাদের দৃষ্টি ফিরবে না এবং তাদের অন্তর হবে উদাস। যেদিন তাদের শাস্তি আসবে সেদিন সম্পর্কে তুমি মানুষকে সতর্ক কর, যখন জালিমরা বলবে, হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদেরকে কিছুকালের জন্য অবকাশ দাও আমরা তোমার ডাকে সাড়া দিব এবং রাসূলগণের অনুসরণ করব।

রতামরা কি পূর্বে শপথ করে বলতে না যে, তোমাদের পতন নাই? অথচ তোমরা বাস করতে তাদের বাসভূমিতে, যারা নিজেদের প্রতি জুলুম করেছিল এবং তাদের প্রতি আমি কী করেছিলাম তাও তোমাদের জানা ছিল এবং তোমাদের কাছে আমি তাদের দৃষ্টান্তও উপস্থিত করেছিলাম। তারা ভীষণ চক্রান্ত করেছিল, কিন্তু তাদের চক্রান্ত আল্লাহ রহিত করেছেন, যদিও তাদের চক্রান্ত এমন ছিল, যাতে পর্বত টলে যেত। তুমি কখনো মনে করো না যে, আল্লাহ তাঁর রাসূলগণের প্রতি প্রদত্ত প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ পরাক্রমশালী, দণ্ড-বিধায়ক।

যেদিন এই পৃথিবী পরিবর্তিত হয়ে অন্য পৃথিবী হবে এবং আকাশমণ্ডলিও; এবং মানুষ উপস্থিত হবে আল্লাহর সামনে যিনি এক, পরাক্রমশালী। সেইদিন তুমি অপরাধীদেরকে দেখবে শৃঙ্খলিত অবস্থায়, তাদের জামা হবে আলকাতরার এবং আগুন আচ্ছন্ন করবে তাদের মুখমণ্ডল। এটা এজন্য যে, আল্লাহ প্রত্যেকের কৃতকর্মের প্রতিফল দিবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ দ্রুত হিসাব করেন। এটা মানুষের জন্য এক বার্তা, যাতে এর দ্বারা সতর্ক হয় এবং জানতে পারে যে, তিনি একমাত্র ইলাহ এবং যাতে বোধশক্তিসম্পন্নেরা উপদেশ গ্রহণ করে। (সূরা ইবরাহীম : ৪২-৫২)।

ওই চরম ভীতির মুহূর্তে আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের পক্ষ হতে অভয় ও নিরাপত্তাই হবে সবচেয়ে বড় নেয়ামত, যার মোকাবেলায় দুনিয়ার সকল ভোগ-উপভোগ অতি তুচ্ছ মনে হবে। এই পরম নেয়ামত আল্লাহ শুধু দান করবেন তাঁর মুত্তাকী বান্দাদেরকে, যারা দুনিয়াতে আল্লাহকে ভয় করেছেন, কিয়ামত ও আখিরাতের কঠিন অবস্থাকে ভয় করেছেন। মেহেরবান আল্লাহ তাদেরকে ঐ জীবনের ভীতি থেকে নিরাপদ রাখবেন।

আমাদের এই ক্ষুদ্র জীবনের অনুষঙ্গগুলো ঐ চিরস্থায়ী জীবনেরই কিছু নিদর্শন। এই সকল অনুষঙ্গ থেকে যদি আমরা ওই জীবন সম্পর্কে উপলব্ধি গ্রহণ করতে পারি এবং বিস্মৃতি ও উদাসীনতা থেকে মুক্ত হয়ে ওই কঠিন সময়ের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করতে পারি তাহলে সেটিই হবে বিচক্ষণতা ও দূরদর্শিতা। আল্লাহ তা’আলা আমাদের তাওফীক দান করুন। আমীন, ইয়া রাব্বাল আলামীন।


বিভাগ : শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

সন্তানদের কিসের উপর রেখে যাচ্ছি-২
সন্তানদের কিসের উপর রেখে যাচ্ছি-১
কে অন্ধ, কে চক্ষুষ্মান
সে-ই স্বাধীন যে সিজদা করে এক আল্লাহকে
বান্দা জানে না, কিসে তার কল্যাণ-২
আরও

আরও পড়ুন

এক সপ্তাহে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ল ৬ কোটি ১০ লাখ ডলার

এক সপ্তাহে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ল ৬ কোটি ১০ লাখ ডলার

প্রবাসীদের যে জন্য সুখবর দিলো মালয়েশিয়া

প্রবাসীদের যে জন্য সুখবর দিলো মালয়েশিয়া

জাবি শিক্ষার্থী মৃত্যুর ঘটনায় মামলা, তদন্ত কমিটি গঠন, ফটকে তালা, মশাল মিছিল

জাবি শিক্ষার্থী মৃত্যুর ঘটনায় মামলা, তদন্ত কমিটি গঠন, ফটকে তালা, মশাল মিছিল

মাদকের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থানে থাকবে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল

মাদকের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থানে থাকবে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল

"নতুন সিনেমা নিয়ে ফিরছেন গ্লোবাল তারকা অ্যাঞ্জেলিনা জোলি"

"নতুন সিনেমা নিয়ে ফিরছেন গ্লোবাল তারকা অ্যাঞ্জেলিনা জোলি"

ড. ইউনূসকে নিয়ে খালেদা জিয়ার পুরোনো যে বক্তব্য ভাইরাল

ড. ইউনূসকে নিয়ে খালেদা জিয়ার পুরোনো যে বক্তব্য ভাইরাল

নতুন নির্বাচন কমিশনের প্রতি ইসলামী আন্দোলনের শুভ কামনা

নতুন নির্বাচন কমিশনের প্রতি ইসলামী আন্দোলনের শুভ কামনা

আলোচনায় ফ্যাসিস্ট হাসিনার ‘টুস করে ফেলে দেয়ার’ হুমকি

আলোচনায় ফ্যাসিস্ট হাসিনার ‘টুস করে ফেলে দেয়ার’ হুমকি

দীর্ঘ ১৫ বছর সাংবাদিকরা বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশন করতে পারেনি: খোকন

দীর্ঘ ১৫ বছর সাংবাদিকরা বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশন করতে পারেনি: খোকন

'ইউটিউব ট্রেন্ডিংয়ে রয়েছে অভিনেতা তারিক আনাম খানের নাটক'

'ইউটিউব ট্রেন্ডিংয়ে রয়েছে অভিনেতা তারিক আনাম খানের নাটক'

বাংলাদেশ, নেপাল ও ভুটানের মধ্যে আঞ্চলিক সহযোগিতার আহ্বান

বাংলাদেশ, নেপাল ও ভুটানের মধ্যে আঞ্চলিক সহযোগিতার আহ্বান

ইসলামিক ফাউন্ডেশন এর বোর্ড অব গভর্নর সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সম্বর্ধনা

ইসলামিক ফাউন্ডেশন এর বোর্ড অব গভর্নর সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সম্বর্ধনা

সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সংবর্ধনা

সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সংবর্ধনা

লালমোহনে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত যুবদল নেতা চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু

লালমোহনে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত যুবদল নেতা চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু

চকরিয়ার বিএনপি নেতা আবু তাহের চৌধুরীর মৃত্যুতে সালাহউদ্দিন আহমদ ও হাসিনা আহমদের শোক

চকরিয়ার বিএনপি নেতা আবু তাহের চৌধুরীর মৃত্যুতে সালাহউদ্দিন আহমদ ও হাসিনা আহমদের শোক

উইন্ডিজের বিপক্ষে মাঠে নামছে বাংলাদেশ

উইন্ডিজের বিপক্ষে মাঠে নামছে বাংলাদেশ

বেইজিং সংস্কৃতি ও পর্যটন ব্যুরো ও আটাবের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত

বেইজিং সংস্কৃতি ও পর্যটন ব্যুরো ও আটাবের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত

প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানের সাক্ষাৎ

প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানের সাক্ষাৎ

দেশের বাজারে ফের বাড়ল সোনার দাম

দেশের বাজারে ফের বাড়ল সোনার দাম

সবচেয়ে কম মূল্যে বাংলাদেশকে বিদ্যুৎ দিচ্ছে নেপাল: নেপাল রাষ্ট্রদূত

সবচেয়ে কম মূল্যে বাংলাদেশকে বিদ্যুৎ দিচ্ছে নেপাল: নেপাল রাষ্ট্রদূত