প্রতিক্রিয়া নয়, স্বাধীন কর্ম-২
১২ আগস্ট ২০২৪, ১২:০৪ এএম | আপডেট: ১২ আগস্ট ২০২৪, ১২:০৪ এএম
অসদাচার তাঁর সহনশীলতাই শুধু বৃদ্ধি করে। হাদীস ও সীরাতের কিতাবসমূহে নির্ভরযোগ্য সনদে এই ঘটনা বর্ণিত হয়েছে। মদীনায় যায়েদ ইবনে ছা’না নামক একজন ইহুদী ধর্ম-গুরু ছিলেন। নবী (সা.)কে তিনি চিনতে পেরেছিলেন যে, ইনিই শেষ নবী এবং পরে ইসলামগ্রহণ করেছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কীভাবে তিনি ইসলাম গ্রহণ করলেন তার বৃত্তান্ত তার নিজের ভাষায় এই রকম : নবুওতের সবগুলো চিহ্নই আমি মুহাম্মাদ (সা.) এর মুখমণ্ডল দেখতে পেয়েছি। দুইটি বিষয় বাকি ছিল।
আর তা হচ্ছে : ‘তার সহনশীলতা মূর্খতার চেয়ে অগ্রগামী আর তাঁর সাথে অসৎ ব্যবহার তার সহনশীলতাই শুধু বৃদ্ধি করবে।’ তো আমি অগ্রিম মূল্য পরিশোধ করে তার কাছ থেকে কিছু খেজুর কিনলাম, যা পরে নির্দিষ্ট সময়ে সরবরাহ করা হবে। এরপর নির্ধারিত সময় আসার আগেই তাঁর কাছে উপস্থিত হলাম এবং তাঁর চাদর ও জামা বুকের কাছে খামচে ধরে তাঁর দিকে ক্রুদ্ধ দৃষ্টি হানলাম এবং বললাম, হে মুহাম্মাদ! আমার পাওনা কি সরবরাহ করবে না? আল্লাহর কসম! হে বনী আব্দুল মুত্তালিব! তোমরা তো এক টালবাহানাকারী গোত্র। আমার আগে থেকেই জানা আছে, তোমাদের এই টালবাহানার স্বভাব! এ দৃশ্য দেখে ওমর (রা.) উঠে দাঁড়ালেন এবং আক্রমণ করতে উদ্যত হলেন।
নবী (সা.) তাকে থামিয়ে দিয়ে বললেন : ওমর! তোমার কাছে আমার এবং এই ব্যক্তির বেশি প্রয়োজন ছিল অন্যরূপ আচরণের। তুমি আমাকে আদেশ করতে সুন্দরভাবে পরিশোধ করার আর তাকে সুন্দরভাবে তাগাদা করার। (সুনানে কুবরা বায়হাকী : ১১২৮৪)। এরপর তিনি শুধু প্রাপ্য পরিশোধেরই আদেশ করলেন না, ওমর (রা.)-এর ওইটুকু আচরণের কারণে আরো বিশ সা খেজুর অতিরিক্ত দিতে বললেন।
আল্লাহর রাসূল (সা.)-এর এই আচরণদৃষ্টে যায়েদ ইসলাম কবুল করেন এবং পাকা মুসলমান হয়ে যান। (আলমুজামুল কাবীর তবারানী : ৫১৪৭)। আমরা ভেবে দেখতে পারি, এই ঘটনায় মেযাজ হারানোর কতগুলো ব্যাপার ছিল। একে তো প্রাপ্য সরবরাহের নির্ধারিত সময়ের আগেই তাগাদা, দ্বিতীয়ত তাগাদাই শুধু নয় চরম অভদ্র-অশালীন আচরণ।
এরপর শুধু ব্যক্তিগত অপমানই নয়, বংশের অপমান, বংশের উপর কালিমা লেপন! অন্যদিকে আল্লাহর রাসূল (সা.) তো দুর্বল-অসহায় অবস্থায় ছিলেন না, ইচ্ছে করলেই প্রতিশোধ নিতে পারতেন, কিন্তু এরপরও এই সকল উসকানীর মুখেও তিনি স্বমহিমায় ভাস্বর রইলেন। এইসব হীন আচরণ তাঁকে তাঁর অবস্থান থেকে এক চুলও টলাতে পারল না। তিনি কী করলেন? তিনি সময় না হওয়া সত্ত্বেও ওই ইহুদীর প্রাপ্য পরিশোধ করে দিলেন, শুধু পরিশোধই করলেন না, প্রাপ্যের চেয়েও বেশি প্রদান করলেন।
এ ছিল তাঁর স্বাধীন কর্ম। তিনি তা-ই করেছেন, যা নিজের বিবেচনায় করতে চেয়েছেন। ঐ ইহুদী ধর্মগুরুর আচরণ তাঁর কর্মকে কিছুমাত্রও প্রভাবিত করতে পারেনি; বরং তাঁর শান্ত-স্বাধীন আচরণই ঐ ইহুদীকে প্রভাবিত করেছে। তিনি মুসলিম হয়ে আল্লাহর রাসূল (সা.)-এর একনিষ্ঠ অনুসারীতে পরিণত হয়েছেন। বলুন, কে এখানে বিজয়ী?
তো আল্লাহর রাসূল (সা.)-এর আচরণ ছিল স্বাধীন ও সম্পূর্ণ নিজস্ব আচরণ। প্রতিক্রিয়ামূলক আচরণের কথা যদি বলা হয় তাহলে স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া তো সেটাই ছিল, যা হযরত ওমর (রা.) থেকে প্রকাশিত হচ্ছিল, আর বলাই বাহুল্য তা অন্যায় বা জুলুমও হত না। যে অশিষ্ট আচরণ ঐ ইহুদী ধর্মগুরু করেছেন তার সাজা তার প্রাপ্য ছিল। কিন্তু আল্লাহর রাসূল (সা.) তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া প্রকাশের পরিবর্তে ভদ্রতা ও শালীনতা রক্ষার নির্দেশকেই হযরত ওমর (রা.)-এর করণীয় সাব্যস্ত করেছেন : ‘তোমার কাছে আমার এবং এই ব্যক্তির বেশি প্রয়োজন ছিল অন্যরূপ আচরণের, আর তা হচ্ছে আমাকে তুমি উত্তম পন্থায় পরিশোধের আদেশ করবে আর তাকে আদেশ করবে উত্তম পন্থায় তাগাদার।’
আমাদের সমষ্টিগত জীবনে সীরাতের এই মহান শিক্ষার অনুসরণ অতি প্রয়োজন। যেখানেই দু’জন মানুষের সহাবস্থান সেখানেই ক্রিয়া ও প্রতিক্রিয়ার সম্ভাবনা। কাজেই এ জাতীয় ক্ষেত্রে প্রতিক্রিয়াগ্রস্ত না হয়ে পরিস্থিতি বিবেচনায় স্বাধীন করণীয় সম্পন্ন করাই কাম্য। সমষ্টিগত জীবনের এক ক্ষেত্র আমাদের পারিবারিক জীবন। এই জীবনের শান্তি, শৃঙ্খলা ও সাফল্যের জন্য এই গুণের বড় প্রয়োজন। পারিবারিক জীবনের সুখ শান্তি তো নানা কারণে জরুরি। কাজেই প্রতিক্রিয়াগ্রস্ততার কুফল থেকে আত্মরক্ষার একমাত্র উপায়, নিজের ভেতরের প্রবণতাসমূহের উপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা। এটাই প্রকৃত বীরত্ব ও কর্তৃত্ব এবং সত্যিকারের বিজয় ও সাফল্য।
বিভাগ : শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
এক সপ্তাহে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ল ৬ কোটি ১০ লাখ ডলার
প্রবাসীদের যে জন্য সুখবর দিলো মালয়েশিয়া
জাবি শিক্ষার্থী মৃত্যুর ঘটনায় মামলা, তদন্ত কমিটি গঠন, ফটকে তালা, মশাল মিছিল
মাদকের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থানে থাকবে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল
"নতুন সিনেমা নিয়ে ফিরছেন গ্লোবাল তারকা অ্যাঞ্জেলিনা জোলি"
ড. ইউনূসকে নিয়ে খালেদা জিয়ার পুরোনো যে বক্তব্য ভাইরাল
নতুন নির্বাচন কমিশনের প্রতি ইসলামী আন্দোলনের শুভ কামনা
আলোচনায় ফ্যাসিস্ট হাসিনার ‘টুস করে ফেলে দেয়ার’ হুমকি
দীর্ঘ ১৫ বছর সাংবাদিকরা বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশন করতে পারেনি: খোকন
'ইউটিউব ট্রেন্ডিংয়ে রয়েছে অভিনেতা তারিক আনাম খানের নাটক'
বাংলাদেশ, নেপাল ও ভুটানের মধ্যে আঞ্চলিক সহযোগিতার আহ্বান
ইসলামিক ফাউন্ডেশন এর বোর্ড অব গভর্নর সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সম্বর্ধনা
সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সংবর্ধনা
লালমোহনে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত যুবদল নেতা চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু
চকরিয়ার বিএনপি নেতা আবু তাহের চৌধুরীর মৃত্যুতে সালাহউদ্দিন আহমদ ও হাসিনা আহমদের শোক
উইন্ডিজের বিপক্ষে মাঠে নামছে বাংলাদেশ
বেইজিং সংস্কৃতি ও পর্যটন ব্যুরো ও আটাবের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত
প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানের সাক্ষাৎ
দেশের বাজারে ফের বাড়ল সোনার দাম
সবচেয়ে কম মূল্যে বাংলাদেশকে বিদ্যুৎ দিচ্ছে নেপাল: নেপাল রাষ্ট্রদূত