আদর্শ ও সাম্প্রদায়িকতার সংঘাত : আমাদের অদ্ভুত বিচার-রীতি-১
২১ আগস্ট ২০২৪, ১২:০৩ এএম | আপডেট: ২১ আগস্ট ২০২৪, ১২:০৩ এএম
সাম্প্রদায়িকতা বর্তমান সময়ের একটি বহুল উচ্চারিত শব্দ। তবে শব্দটি মাজলুম। বর্তমান প্রচার-প্রচারণার যুগে যে শব্দগুলো সবচেয়ে বেশি অবিচারের শিকার তার মধ্যে সাম্প্রদায়িকতা একটি। আদর্শ ও আদর্শিক সংগ্রামে রত ব্যক্তিদের দুর্বল করার জন্য সাম্প্রদায়িক চেতনার অনুসারীরাই এই শব্দটি ব্যবহার করে থাকে। একটি বিশেষ ধরনের সংকীর্ণতাকে প্রতিরোধ করার জন্য যে শব্দটি ব্যবহার করা যেত তাকে ব্যবহার করা হয় আদর্শের উদার আহ্বানকে প্রতিহত করার জন্য। এটা যদিও এ শব্দের প্রতি অবিচার, তবে সাম্প্রদায়িক চেতনার অনুসারীরা এ অবিচার করেই যাবেন এতে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই। তাই এ জাতীয় বিভ্রান্তিজনক ক্ষেত্রগুলোতে আমাদের সচেতনতা অপরিহার্য।
পৃথিবীতে ওহীভিত্তিক আদর্শের বাহক হলেন আম্বিয়ায়ে কেরাম। প্রতি যুগে বিভিন্ন ভূখণ্ডে তাঁরা আদর্শের বাণী প্রচার করেছেন। এই আদর্শ প্রচার করতে গিয়ে তাদেরকে বিভিন্ন প্রতিকূলতার মোকাবিলা করতে হয়েছে। যেমন, প্রথা-অন্ধ লোকেরা তাদের বিরুদ্ধে প্রথা-বিরোধিতার শ্লোগান তুলেছে। স্বার্থপর মহল স্বার্থ রক্ষায় সোচ্চার হয়েছে এবং সাম্প্রদায়িক চিন্তা-চেতনার অধিকারীরা শুধু এ কারণে যে, এ নবী আমাদের সম্প্রদায়ের নন, তাকে অস্বীকার করেছে। আম্বিয়ায়ে কেরাম এইসব প্রতিকূলতার বিরুদ্ধ-স্রোতে দাঁড়িয়ে দৃঢ়তার সঙ্গে আসমানী আদর্শের প্রতি তাদের আহ্বান অব্যাহত রেখেছেন।
তাদের এ আহ্বানের মূল প্রেরণা ছিল আল্লাহর আনুগত্য এবং মানব জাতির কল্যাণকামিতা। ফলে যাদের হৃদয়ে ন্যায়-নিষ্ঠা রয়েছে এবং সত্য গ্রহণের যোগ্যতা রয়েছে তারা একসময় তাদের নিঃস্বার্থ আহ্বানকে গ্রহণ করেছেন। নিজেদের জীবনে সে আদর্শের পূর্ণতা প্রতিফলনের সঙ্গে সেই আদর্শের প্রচার-প্রসারে নবীদের অনুগামী হয়েছেন। আম্বিয়ায়ে কেরাম এবং তাদের অনুসারীদের এই নিঃস্বার্থ প্রয়াসই হলো আদর্শের সপক্ষের সংগ্রাম। আল্লাহ বিস্মৃতি বিভিন্ন অমূলক ধ্যান-ধারণা, ভিত্তিহীন রীতি-রেওয়াজ এবং সকল অন্যায় স্বার্থ-চিন্তার বিপরীতে আল্লাহমুখিতা ও আখিরাতের জবাবদিহিতা ভিত্তিক আদর্শ জীবন-যাপনের আহ্বান জানিয়েছেন। কিন্তু এই ওহীভিত্তিক আদর্শ গ্রহণের পক্ষে যে বিষয়গুলো প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে তার অন্যতম হলো সাম্প্রদায়িক সংকীর্ণতা।
নবীগণের ধারাবাহিকতায় সবশেষে প্রেরিত হয়েছেন হযরত মুহাম্মাদ (সা.)। তাঁর দ্বীনের নাম ইসলাম। ইসলামের অনুসারীরা মুসলিম নামে পরিচিত। ইসলাম আরবি শব্দ। এর অর্থ হলো অনুগত হওয়া। আর মুসলিম অর্থ অনুগত। কোনো সাম্প্রদায়িক প্রেরণা নয়; বরং আল্লাহর আনুগত্য কেন্দ্রিক আদর্শিক প্রেরণাই হল এ দ্বীনের মূল বুনিয়াদ। তাই এ ধর্মে ভাষা, বর্ণ গোত্র ও ভূখণ্ডগত কোনো ভেদাভেদ নেই। শুধু আদর্শের পথে অগ্রগামিতার মাধ্যমেই এ ধর্মে সম্মান ও মর্যাদার আসন নির্ধারিত হয়। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন : আল্লাহর কাছে তোমাদের মধ্যে সবচেয়ে মর্যাদাশালী সে যে তোমাদের মধ্যে সবচেয়ে খোদাভীরু।’ (সূরা হুজুরাত : ১৩)। বিদায় হজ্বের ভাষণে নবী (সা.) বলেছেন, ‘খোদাভীতি ছাড়া অন্য কিছুর মাধ্যমে আজমের উপর আরবের, কালোর উপর সাদার শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণিত হবে না।’
সব যুগে সকল নবীর আহ্বানই আদর্শ কেন্দ্রিক ছিল। এটা ঠিক যে, কোনো কোনো নবীকে আল্লাহ শুধু তাঁর বংশ ও জাতির জন্য নবী হিসেবে প্রেরণ করেছিলেন। তাই তাঁর দাওয়াতও তাদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু এর অর্থ এই নয় যে, তারা তাদের জাতিকে সাম্প্রদায়িকতা শিক্ষা দিয়েছেন; বরং তারা আদর্শের দাওয়াতই দিয়েছেন। সকল নবীর শিক্ষাই এই ছিল যে, তোমাদের প্রতি যে নবী প্রেরিত হয়েছেন তাঁর অনুসরণ করবে এবং আল্লাহর সকল নবীর প্রতি ঈমান ও বিশ্বাস এবং ভক্তি ও শ্রদ্ধা পোষণ করবে।
হযরত ঈসা (আ.) ছিলেন হযরত মুহাম্মাদ (সা.)-এর পূর্ববর্তী নবী। তাই ঈসা (আ.)-এর দাওয়াতের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল, আখেরী নবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আগমন-সংবাদ দান করা। কুরআন মজীদের সূরা মুহাম্মাদে এসেছে যে, ঈসা (আ.) তাঁর উম্মতকে বলেছেন, ‘হে বনী ইসরাইল, আমি তোমাদের প্রতি রাসূল হিসেবে প্রেরিত হয়েছি। আমার পূর্বে যে কিতাব অবতীর্ণ হয়েছে অর্থাৎ তাওরাত, আমি তাকে সত্য বলি এবং আমার পরে যে নবী আসবেন, যার নাম হলো আহমদ, আমি তাঁর আগমনের সুসংবাদ প্রদান করি।’ কিন্তু কালের বিবর্তনে যখন নবীদের অনুসারীরা আসমানী আদর্শ থেকে দূরে সরে গেল তখন তাদের মধ্য থেকে আদর্শিক চেতনাও বিলুপ্ত হয়ে সাম্প্রদায়িক চিন্তা-চেতনা জন্ম নিল।
তাদের আদর্শিক দৈন্যের অবস্থা এই দাঁড়াল যে, যে দ্বীন তাদেরকে কুফর, শিরক ও বিভিন্ন ভ্রান্ত আকীদা-বিশ্বাস পরিহার করার শিক্ষা দিয়েছিল তারা তাকে বিকৃত করে কুফর ও শিরককেই ধর্মের অংশ সাব্যস্ত করল। আর সাম্প্রদায়িক সংকীর্ণতার প্রকাশ এভাবে ঘটল যে, যে দ্বীন তাদেরকে সকল নবী রাসূলের প্রতি, বিশেষত শেষ নবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি ঈমান ও বিশ্বাস এবং ভক্তি ও মহব্বতের শিক্ষা দিয়েছিল সে দ্বীনের মহৎ শিক্ষাগুলোকে বিকৃত করে নবী-রাসূলদের অসম্মান ও অমর্যাদা এবং তাদের প্রতি অস্বীকৃতি জ্ঞাপনকেই ধর্মের শিক্ষা বলে প্রচার করা হল। এভাবেই নবীদের শিক্ষা ও আদর্শ তাদের অনুসারী হওয়ার দাবিদার লোকদের মাধ্যমেই নির্মমভাবে বিলুপ্ত হয়ে গেল এবং ধর্মের নামে সাম্প্রদায়িকতার উন্মেষ ঘটল।
বিভাগ : শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
এক সপ্তাহে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ল ৬ কোটি ১০ লাখ ডলার
প্রবাসীদের যে জন্য সুখবর দিলো মালয়েশিয়া
জাবি শিক্ষার্থী মৃত্যুর ঘটনায় মামলা, তদন্ত কমিটি গঠন, ফটকে তালা, মশাল মিছিল
মাদকের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থানে থাকবে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল
"নতুন সিনেমা নিয়ে ফিরছেন গ্লোবাল তারকা অ্যাঞ্জেলিনা জোলি"
ড. ইউনূসকে নিয়ে খালেদা জিয়ার পুরোনো যে বক্তব্য ভাইরাল
নতুন নির্বাচন কমিশনের প্রতি ইসলামী আন্দোলনের শুভ কামনা
আলোচনায় ফ্যাসিস্ট হাসিনার ‘টুস করে ফেলে দেয়ার’ হুমকি
দীর্ঘ ১৫ বছর সাংবাদিকরা বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশন করতে পারেনি: খোকন
'ইউটিউব ট্রেন্ডিংয়ে রয়েছে অভিনেতা তারিক আনাম খানের নাটক'
বাংলাদেশ, নেপাল ও ভুটানের মধ্যে আঞ্চলিক সহযোগিতার আহ্বান
ইসলামিক ফাউন্ডেশন এর বোর্ড অব গভর্নর সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সম্বর্ধনা
সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সংবর্ধনা
লালমোহনে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত যুবদল নেতা চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু
চকরিয়ার বিএনপি নেতা আবু তাহের চৌধুরীর মৃত্যুতে সালাহউদ্দিন আহমদ ও হাসিনা আহমদের শোক
উইন্ডিজের বিপক্ষে মাঠে নামছে বাংলাদেশ
বেইজিং সংস্কৃতি ও পর্যটন ব্যুরো ও আটাবের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত
প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানের সাক্ষাৎ
দেশের বাজারে ফের বাড়ল সোনার দাম
সবচেয়ে কম মূল্যে বাংলাদেশকে বিদ্যুৎ দিচ্ছে নেপাল: নেপাল রাষ্ট্রদূত