আদর্শ ও সাম্প্রদায়িকতার সংঘাত : আমাদের অদ্ভুত বিচার-রীতি-২
২২ আগস্ট ২০২৪, ১২:০৪ এএম | আপডেট: ২২ আগস্ট ২০২৪, ১২:০৪ এএম
আখেরী নবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.) হলেন নবুওতের ধারাবাহিকতার সর্বশেষ রাসূল এবং সর্বশ্রেষ্ঠ রাসূল। তাঁর শিক্ষা হলো আসমানী শিক্ষা, যা আল্লাহ বিভিন্ন যুগে বিভিন্ন নবীর মাধ্যমে মানবজাতিকে প্রদান করেছেন। এই শিক্ষাকে অনুসরণের মাধ্যমেই পূর্ববর্তী সকল নবীর আদর্শের অনুসারী হওয়া সম্ভব। কিন্তু এই সহজ বিষয়টি বোঝার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধক হলো সাম্প্রদায়িক সংকীর্ণতা। এ প্রসঙ্গে মদীনার ইহুদ-নাসারার কথা উল্লেখ করা যায়। তারা নবী (সা.)-এর আবির্ভাবের পূর্বে তাঁর কথা বলেই ইয়াছরিবের অধিবাসীদের শাস্তির ভয় দেখাত, কিন্তু যখন তাঁর আবির্ভাব হলো তখন তারা তাঁকে এ জন্য অস্বীকার করে বসল যে, তিনি ইসরাইলী বংশ থেকে আবির্ভূত হননি! তিনি এসেছেন আরবের কুরাইশ বংশ থেকে!
তবে আহলে কিতাবের মধ্যেও কিছু সাম্প্রদায়িক সংকীর্ণতামুক্ত আদর্শ প্রিয় মানুষ নবীজী (সা.)-এর প্রতি ঈমান এনেছেন। এ প্রসঙ্গে বিখ্যাত ইহুদি আলিম আবদুল্লাহ ইবনে সালাম (রা.)-এর নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। কিন্তু তারা সংখ্যায় খুব বেশি ছিলেন না। বরাবরের মতো সাম্প্রদায়িক মনোবৃত্তির অধিকারী মানুষেরই সংখ্যাধিক্য ছিল। আসমানী ধর্মের পরিচয়দানকারীরা এবং মূর্তিপুজা ইত্যাদিতে নিমজ্জিত আরবের কাফের সম্প্রদায় এই সাম্প্রদায়িক চেতনা থেকেই ইসলামের বিরুদ্ধে দণ্ডায়মান হয়েছিল। তখন থেকেই ইসলামের সঙ্গে সাম্প্রদায়িকতার সংঘাত আরম্ভ হলো। এই সংঘাত ছিল আদর্শ ও সাম্প্রদায়িকতার সংঘাত।
বর্তমান সময়ে সবকিছুকে এক কাতারে দাঁড় করানোর একটা অন্যায় প্রবণতা প্রচলিত আছে। সত্য-মিথ্যা, ন্যায়-অন্যায়, আদর্শ ও সাম্প্রদায়িকতা সবকিছুকে এক শ্রেণিভুক্ত করে তাদের মধ্যে সমতা বিধানকে ঔদার্য্য, মহত্ত্ব এবং অসাম্প্রদায়িকতা নামে আখ্যায়িত করা হয়। এটা খুব অদ্ভুত বিচার-রীতি। একটি দৃষ্টান্তের মাধ্যমে বিষয়টি আরও পরিষ্কার করা যেতে পারে। ধরুন, পরীক্ষার খাতায় একজন সঠিক উত্তর দিল, অন্যজন দিল ভুল উত্তর। এখন কোনো পরীক্ষক যদি উভয়কে সমান নম্বর দেন তবে কি একে ‘নিরপেক্ষতা’ বলা যাবে?
অথচ ইসলামের ব্যাপারে অনেকেই উপরোক্ত ধরনের নিরপেক্ষতায় আগ্রহী। বরং অনেক মানুষ আরও এক কাঠি বেড়ে ইসলামের খাতায় শূন্য এবং অন্যদের খাতায় পূর্ণ নম্বর দিয়ে অবিচারকে কানায় কানায় সম্পূর্ণ করতেই তৎপর। এই বিচাররীতি সম্পর্কে সচেতন হওয়া প্রয়োজন। ইসলামের দাওয়াত হলো আদর্শের দাওয়াত। ইসলামের সংগ্রাম অন্যায়-অনাচারকে প্রতিহত করার সংগ্রাম। তাই ইসলামের এসব পদক্ষেপকে কখনো ‘সাম্প্রদায়িকতা’ নামে আখ্যায়িত করা যায় না। ইসলামের অনুসারীরা যখন সোচ্চার হন, সংগ্রামে-প্রতিবাদে অগ্রসর হন তখন তা উৎসারিত হয় একটি আদর্শিক প্রেরণা থেকে, সাম্প্রদায়িক ভেদ-বুদ্ধি থেকে নয়।
প্রশ্ন হতে পারে, এ দাবি তো সবাই করে থাকে। এর উত্তরের জন্য আমাদের আবার পূর্বের আলোচনায় ফিরে যেতে হবে। আমরা আগেই বলেছি, ইসলামী আদর্শের সূত্রগুলো অবিকৃতরূপে বিদ্যমানতার কথা। এ বৈশিষ্ট্য কি অন্য কোনো জাতি তাদের নিজেদের সম্পর্কে প্রমাণ করতে পারবে? তারা যদি আসমানী আদর্শের ধারক হওয়ার দাবি করেন এবং তাদের ধর্মীয় প্রচার-প্রচারণাকে আদর্শিক সংগ্রাম বলতে আগ্রহী হন তবে তাদের প্রথমেই প্রমাণ করতে হবে যে, তাদের আক্বীদা-বিশ্বাস এবং জীবনের অন্যান্য ক্ষেত্রের বিধি-বিধানগুলো আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে প্রদত্ত। কিন্তু এ প্রমাণ পেশ করা কি কোনো জাতির পক্ষে আদৌ সম্ভব?
মুসলিম উম্মাহ ছাড়া আর কোনো জাতি কি তাঁদের ধর্মীয় গ্রন্থের ব্যাপারে পূর্ণ আস্থার সঙ্গে এ কথা বলতে সক্ষম যে, এ গ্রন্থ আল্লাহ প্রদত্ত এবং এতে কোনো ধরনের পরিবর্তন-পরিবর্ধন, বিকৃতি ও সংযোজন হয়নি? তদ্রƒপ পৃথিবীর আর কোনো জাতির পক্ষে কি তাদের নবী বা পথ-প্রদর্শকের জীবন ও শিক্ষাকে অবিচ্ছিন্ন সনদের সঙ্গে বয়ান করা সম্ভব? যদি সম্ভব না হয় তবে প্রশ্ন হলো, উৎসবিহীন একটি মতবাদকে আঁকড়ে ধরে রাখা এবং তা প্রচার-প্রসারের সকল কর্ম-তৎপরতার পিছনে মূল প্রেরণা তাহলে আর কি হতে পারে সাম্প্রদায়িকতা ছাড়া? প্রচলিত বিচার-রীতিতে অভ্যস্ত চিন্তা হয়ত এসব প্রশ্নে বিচলিতবোধ করতে পারে কিন্তু সঠিক সিদ্ধান্তে উপনীত হতে হলে খুব শান্তভাবেই এই প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজে বের করতে হবে।
সুতরাং ইসলামী আদর্শকে পৃথিবীর অন্য সব মতবাদ বিশেষত অন্যান্য ধর্মীয় মতবাদের সঙ্গে এক সাড়িতে দাঁড় করানো অনুচিত। যে ধর্মের সকল সূত্র পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে সংরক্ষিত রয়েছে এবং যে ধর্মের শিক্ষা ও আদর্শের মাঝে বিশ্বজনীনতা ও আদর্শবাদিতার সব উপকরণই বিদ্যমান, তাকে অন্যসব মতবাদের সঙ্গে এক সাড়িতে দাঁড় করানো অবশ্যই অবিচার। এ অবিচারকে কখনো ঔদার্য্য, অসাম্প্রদায়িকতা নামে আখ্যায়িত করা যায় না। তাই অন্যায় সমতা বিধান নয় আমরা যদি ন্যায়নিষ্ঠ হই তাহলে আমাদেরকে সত্যকে সত্য এবং মিথ্যাকে মিথ্যাই বলতে হবে। আল্লাহ আমাদের তাওফীক দিন। আমীন।
বিভাগ : শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
এক সপ্তাহে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ল ৬ কোটি ১০ লাখ ডলার
প্রবাসীদের যে জন্য সুখবর দিলো মালয়েশিয়া
জাবি শিক্ষার্থী মৃত্যুর ঘটনায় মামলা, তদন্ত কমিটি গঠন, ফটকে তালা, মশাল মিছিল
মাদকের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থানে থাকবে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল
"নতুন সিনেমা নিয়ে ফিরছেন গ্লোবাল তারকা অ্যাঞ্জেলিনা জোলি"
ড. ইউনূসকে নিয়ে খালেদা জিয়ার পুরোনো যে বক্তব্য ভাইরাল
নতুন নির্বাচন কমিশনের প্রতি ইসলামী আন্দোলনের শুভ কামনা
আলোচনায় ফ্যাসিস্ট হাসিনার ‘টুস করে ফেলে দেয়ার’ হুমকি
দীর্ঘ ১৫ বছর সাংবাদিকরা বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশন করতে পারেনি: খোকন
'ইউটিউব ট্রেন্ডিংয়ে রয়েছে অভিনেতা তারিক আনাম খানের নাটক'
বাংলাদেশ, নেপাল ও ভুটানের মধ্যে আঞ্চলিক সহযোগিতার আহ্বান
ইসলামিক ফাউন্ডেশন এর বোর্ড অব গভর্নর সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সম্বর্ধনা
সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সংবর্ধনা
লালমোহনে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত যুবদল নেতা চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু
চকরিয়ার বিএনপি নেতা আবু তাহের চৌধুরীর মৃত্যুতে সালাহউদ্দিন আহমদ ও হাসিনা আহমদের শোক
উইন্ডিজের বিপক্ষে মাঠে নামছে বাংলাদেশ
বেইজিং সংস্কৃতি ও পর্যটন ব্যুরো ও আটাবের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত
প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানের সাক্ষাৎ
দেশের বাজারে ফের বাড়ল সোনার দাম
সবচেয়ে কম মূল্যে বাংলাদেশকে বিদ্যুৎ দিচ্ছে নেপাল: নেপাল রাষ্ট্রদূত