ঢাকা   শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৬ আশ্বিন ১৪৩১

প্রিয়নবী (সা.) : উম্মতের মুক্তিই ছিল যার ভাবনা-২

Daily Inqilab মুহাম্মাদ আশিক বিল্লাহ তানভীর

১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০৪ এএম | আপডেট: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০৪ এএম

উহুদের প্রান্তর। বিভীষিকাময় এক পরিস্থিতি। নবীজীর দেহ মোবারক থেকে অঝোরে খুন প্রবাহিত হচ্ছে। তাঁর দান্দান মোবারক শহীদ হয়েছে! তাঁর মাথা মোবারক ক্ষত-বিক্ষত হয়েছে! তাঁর চোখের সামনে ঝরে যাচ্ছে প্রিয় সাহাবীদের তাজা প্রাণগুলো। আপন প্রিয় চাচা হামযা (রা.)-ও শাহাদাতের পেয়ালায় চুমুক বসিয়েছেন। ‘গাসীলুল মালা-ইকা’ (ফিরিশতাগণ যার লাশের গোসল দিয়েছেন) হযরত হানযালাও নেই। জান্নাতের সুগন্ধিপ্রাপ্ত আনাস ইবনু নযর (রা.)-ও নিজেকে বিলীন করে দিয়েছেন।

অবশেষে যার লাশ শনাক্ত হয়েছে তার আঙ্গুলের কর দেখে। নবীজীকে ঘিরে রেখেছেন তাঁর জানবায সঙ্গীরা। আনসার ও মুহাজির সাহাবীদের একটি জামাত। প্রিয় নবীকে রক্ষা করতে তারা নিজেদেরকে ঢাল হিসেবে এগিয়ে দিচ্ছেন আর একে একে শাহাদাতের সুধা পান করে যাচ্ছেন। এগুলো সব ঘটে যাচ্ছে নবীজীর চোখের সামনে। নবীজী নিজ সম্প্রদায়ের এহেন আচরণে আক্ষেপ করে বলছেন : হায়, সে জাতি সফল হবে কী করে যারা স্বীয় নবীকে ক্ষত-বিক্ষত করে?! নবীর দাঁত ভেঙ্গে দেয়?! অথচ নবী তো তাদেরকে কেবল আল্লাহর দিকেই ডাকছেন!
আল্লাহ তাআলা আয়াত নাযিল করে নবীজীকে সান্ত্বনা দিয়ে বলছেন : আল্লাহ তাদের প্রতি ক্ষমাশীল হবেন, নাকি তাদেরকে শাস্তি দেবেন- এ বিষয়ে আপনার কিছু করার নেই। কারণ তারা জালিম। (সূরা আলে ইমরান : ১২৮)। এই মর্মান্তিক মুহূর্তেও নবীজীর আহাজারী ছিল : ওগো রব, আমার কওমকে ক্ষমা করো। তারা তো বোঝে না। (সহীহ মুসলিম : ১৭৯১, ১৭৯২)।

জী, রহমতের নবী এ কঠিন মুহূর্তেও নিজ কওমের মাগফিরাত ও হেদায়েতের চিন্তায় ব্যতিব্যস্ত! উম্মতের জন্য নবীজীর দিলের দরদ ও ব্যাকুলতার এমন অসংখ্য দৃষ্টান্ত রয়েছে হাদিস ও সীরাতের কিতাবগুলোতে। সাহাবী হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আস (রা.)-এর রেওয়ায়েতটি লক্ষ্য করুন, আল্লাহর নবী হযরত ইবরাহীম (আ.) অত্যন্ত দয়ার্দ্র ও কোমল হৃদয়ের অধিকারী ছিলেন। কুরআন মাজীদে তাঁর অনেক দুআ উল্লেখ করা হয়েছে।
এর একটি হচ্ছে : হে আমার প্রতিপালক! ওইসব প্রতিমা বিপুলসংখ্যক মানুষকে পথভ্রষ্ট করেছে। সুতরাং যে-ই আমার অনুসরণ করবে, সে তো আমার দলভুক্ত হলোই। আর কেউ আমাকে অমান্য করলে (তার বিষয়টা আমি আপনার উপর ছেড়ে দিচ্ছি), আপনি অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। (সূরা ইবরাহীম : ৩৬)।

নবী কারীম (সা.) একবার এই আয়াত তিলাওয়াত করেন। এরপর তিলাওয়াত করেন হযরত ঈসা (আ.) স্বীয় উম্মতের ক্ষেত্রে যে দুআ করেছেন সে আয়াত : (আয় আল্লাহ!) যদি আপনি তাদেরকে শাস্তি দেন, তবে তো তারা আপনারই বান্দা। আর যদি তাদেরকে ক্ষমা করেন, তবে নিশ্চয়ই আপনিই মহা ক্ষমতাবান, প্রজ্ঞাময়। (সূরা মায়িদা : ১১৮)।

এই দুই আয়াত তিলাওয়াত করে নবীজী আপ্লুত হয়ে পড়েন। দু’হাত তুলে আল্লাহর দরবারে বলতে থাকেন : আয় আল্লাহ! আমার উম্মত!! আয় আল্লাহ! আমার উম্মত!! তাদের কী দশা হবে! এভাবে ‘উম্মতী উম্মতী’ বলে নবীজী দুআ করছেন আর অঝোরে কাঁদছেন। আল্লাহ তাআলা তো সবকিছুই দেখছেন। তবুও হযরত জিবরীল (আ.)-কে ডেকে পাঠালেন- জিবরীল দেখো তো আমার হাবীবের কী হয়েছে! সে এভাবে কাঁদছে কেন?

জিবরীল আমীন এসে জিজ্ঞাসা করলেন- ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি কাঁদছেন কেন? নবীজী (সা.) দিলের হালত পেশ করলেন- আমার উম্মতের কী হবে? আমার উম্মতের কী হবে? আল্লাহ তাআলা হযরত জিবরীল (আ.)-কে বললেন : জিবরীল! তুমি মুহাম্মাদকে গিয়ে বলো, আমি অবশ্যই আপনার উম্মতের ব্যাপারে আপনাকে সন্তুষ্ট করে দেব। আমি আপনাকে লজ্জিত করব না। (সহীহ মুসলিম : ৩৪৬)।

আল্লাহ তাআলা সূরা দুহায় যে বলেছেন : অচিরেই তোমার প্রতিপালক তোমাকে এত দেবেন যে, তুমি খুশি হয়ে যাবে। (সূরা দুহা : ৫)। এর একটি মর্ম এ-ও যে, আল্লাহ তাআলা কিয়ামতের ময়দানে নবীজীর শাফাআত কবুল করবেন। তাঁর শাফাআতের মাধ্যমে বহু জাহান্নামীকে মুক্ত করে জান্নাত দান করবেন। এতে নবী কারীম (সা.) অত্যন্ত আনন্দিত হবেন।

আল্লাহু আকবার, ইনি হলেন আমাদের নবীজী, যিনি কিয়ামতের সেই দুর্দিনেও উম্মত কীভাবে নিষ্কৃতি লাভ করবে সেই চিন্তায় অস্থির থাকবেন। কিয়ামতের সেই কঠিন দুর্যোগে যখন সবাই শুধু নিজের চিন্তায় ব্যতিব্যস্ত থাকবে। ভাই তার ভাই থেকে পলায়ন করবে। মা সন্তানকে ভুলে থাকবে। স্বামী-স্ত্রী থেকে পালিয়ে বেড়াবে। বিপদের সেই কঠিন মুহূর্তে উম্মতের জন্য একমাত্র যিনি ব্যাকুল থাকবেন তিনি রাহমাতুল্লিল আলামীন (সা.)।


বিভাগ : শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

ফিরেই গোলের দেখা পেলেন রোনালদো,নাসেরের সহজ জয়

ফিরেই গোলের দেখা পেলেন রোনালদো,নাসেরের সহজ জয়

কোহলি রিভিউ না নেওয়ার যে কারণ জানালেন সঞ্জয় মাঞ্জরেকার

কোহলি রিভিউ না নেওয়ার যে কারণ জানালেন সঞ্জয় মাঞ্জরেকার

মাঠের বাইরে নতুন পরিচয়ে মেসি

মাঠের বাইরে নতুন পরিচয়ে মেসি

দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিহত করার আহ্বান উপদেষ্টা নাহিদের

দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিহত করার আহ্বান উপদেষ্টা নাহিদের

মালয়েশিয়া আন্তর্জাতিক হালাল শোকেসের ২০তম আসরে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ

মালয়েশিয়া আন্তর্জাতিক হালাল শোকেসের ২০তম আসরে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের জেলা প্রতিনিধি সম্মেলন অনুষ্ঠিত দেশকে অস্থিতিশীল করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে পরাজিত শক্তি

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের জেলা প্রতিনিধি সম্মেলন অনুষ্ঠিত দেশকে অস্থিতিশীল করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে পরাজিত শক্তি

শ্রীলঙ্কায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন কাল

শ্রীলঙ্কায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন কাল

‘মব জাস্টিস’ বন্ধের আহ্বান বাংলাদেশ তরুণ কলাম লেখক ফোরামের

‘মব জাস্টিস’ বন্ধের আহ্বান বাংলাদেশ তরুণ কলাম লেখক ফোরামের

সাত দফা দাবিতে মানববন্ধন ও সমাবেশ

সাত দফা দাবিতে মানববন্ধন ও সমাবেশ

গৌরনদীর দই, একবার খাইলেও আর একবার খাই

গৌরনদীর দই, একবার খাইলেও আর একবার খাই

নোয়াখালীতে জীবাশ্ম জ্বালানিতে বিনিয়োগ বন্ধের দাবি

নোয়াখালীতে জীবাশ্ম জ্বালানিতে বিনিয়োগ বন্ধের দাবি

স্বর্ণের দাম বেড়ে রেকর্ড ২,৬০৯ ডলার ছাড়িয়েছে

স্বর্ণের দাম বেড়ে রেকর্ড ২,৬০৯ ডলার ছাড়িয়েছে

বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধ ও বিচার দাবিতে খুলনায় মানববন্ধন

বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধ ও বিচার দাবিতে খুলনায় মানববন্ধন

গাজায় অব্যাহত ইসরাইলি গণহত্যা ওআইসির নেতারা চেয়ে চেয়ে দেখছেন

গাজায় অব্যাহত ইসরাইলি গণহত্যা ওআইসির নেতারা চেয়ে চেয়ে দেখছেন

চাঁদপুর শহরে সড়ক সংস্কার কাজে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ

চাঁদপুর শহরে সড়ক সংস্কার কাজে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ

সেনা কর্মকর্তাদের ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেয়া প্রসঙ্গে

সেনা কর্মকর্তাদের ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেয়া প্রসঙ্গে

নোয়াখালীতে ৪৪ দিন পর লাশ উত্তোলন

নোয়াখালীতে ৪৪ দিন পর লাশ উত্তোলন

ভারতের দোসর ও হাসিনামিডিয়ার প্রশ্নবিদ্ধ ভূমিকা

ভারতের দোসর ও হাসিনামিডিয়ার প্রশ্নবিদ্ধ ভূমিকা

আশাশুনিতে হাজরাখালির নেটপাটায় পানিবন্দি ২শ’ পরিবার

আশাশুনিতে হাজরাখালির নেটপাটায় পানিবন্দি ২শ’ পরিবার

জামায়াত ক্ষমতায় গেলে নারীদের অধিকার খর্ব হবে না: সেলিম উদ্দিন

জামায়াত ক্ষমতায় গেলে নারীদের অধিকার খর্ব হবে না: সেলিম উদ্দিন