সন্তানের শিক্ষা-দীক্ষা : পিতা-মাতার আকুলতা ও ব্যাকুলতা-২
০২ আগস্ট ২০২৪, ১২:১৯ এএম | আপডেট: ০২ আগস্ট ২০২৪, ১২:১৯ এএম
সন্তানের তালীম-তারবিয়াতও একটি পুণ্যকর্ম। সন্তান-সন্ততি কেবল পার্থিব অবলম্বনই নয়; পরকালের সম্বলও বটে। পিতা-মাতা তাদের সৎ, যোগ্য ও নেককাররূপে গড়ে তুললে দুনিয়া-আখেরাত সর্বত্র উপকৃত হবেন। মৃত্যুর পরও তারা এর সাওয়াব পেতে থাকবেন। হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে, মানুষের মৃত্যুর পর তিনটি ছাড়া আর সব আমল বন্ধ হয়ে যায়। সদকা জারিয়া। এমন ইলম, যা দ্বারা উপকৃত হওয়া যায় এবং নেককার সন্তান, যে তার জন্য দুআ করে। (সহীহ মুসলিম : ৪৩১০)।
ইসলাম মমত্ববোধ, দায়িত্ববোধ ও পরকাল অবলম্বন- তিনভাবে পিতা-মাতাকে সন্তানের সহীহ তালীম-তারবিয়াতের প্রতি উদ্বুদ্ধ করেছে, যাতে কোনো একটি যদি তাদের জাগিয়ে তুলতে না পারে অন্যটি যেন পারে। এবং এই মানবসম্পদ কোনো অবস্থাতেই যেন সঠিক শিক্ষা থেকে বঞ্চিত না হয়। আর পিতা-মাতার মনে যদি এ তিন চিন্তার সম্মিলন ঘটে তাহলে তো সন্তানের জীবন হবে অতুলনীয়- শারীরিক, মানসিক, চারিত্র্যিক ও ঈমানিক সবদিক থেকে।
মানবজাতির হেদায়েতের জন্য আল্লাহ তা’আলা কুরআন নাযিল করেছেন। তাতে সন্তানের তালীম-তারবিয়াত বিষয়েও পর্যাপ্ত নির্দেশনা রয়েছে। সেই সঙ্গে রয়েছে আল্লাহর কিছু বিশিষ্ট বান্দার সন্তান-তারবিয়াতের বিস্ময়কর উদাহরণ। আল্লাহ তা’আলা অনুগ্রহপূর্বক এগুলো বর্ণনা করেছেন, যাতে সন্তানের ঈমান ও চরিত্রের ব্যাপারে তাঁদের মনে যে ব্যাকুলতা ও দায়িত্ব সচেতনতা ছিল, সবাই তা উপলব্ধি করতে পারে এবং কলিজার টুকরার জন্য নিজেদের মনেও সেটা ধারণ করতে পারে।
কয়েকটি উদাহরণ দেখুন : এক. হযরত লুকমান অত্যন্ত জ্ঞানী লোক ছিলেন। তিনি তাঁর ছেলেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কিছু উপদেশ দিয়েছিলেন। কুরআন মাজীদের সূরা লুকমানে সেই উপদেশগুলো বর্ণিত হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে : এবং (সেই সময়কে) স্মরণ কর, যখন লুকমান তার পুত্রকে উপদেশচ্ছলে বলেছিল, ওহে আমার পুত্র! আল্লাহর সাথে শিরক কর না। নিশ্চিত জেন, শিরক চরম যুলুম। হে বাছা! কোনো কিছু যদি সরিষার দানা বরাবরও হয় এবং তা থাকে কোনো পাথরের ভেতর কিংবা আকাশমÐলীতে বা ভূমিতে, তবু আল্লাহ তা উপস্থিত করবেন। নিশ্চয় আল্লাহ অতি সূ²দর্শী, সব কিছুর খবর রাখেন।
বাছা! নামায কায়েম কর, মানুষকে সৎকাজের আদেশ কর, মন্দ কাজে বাধা দাও এবং তোমার যে কষ্ট দেখা দেয়, তাতে সবর কর। নিশ্চয় এ অত্যন্ত হিম্মতের কাজ। এবং মানুষের সামনে নিজ গাল ফুলিও না এবং ভ‚মিতে দর্পভরে চলো না। নিশ্চয় আল্লাহ দর্পিত অহংকারীকে পছন্দ করেন না। নিজ পদচারণায় মধ্যপন্থা অবলম্বন কর এবং কণ্ঠস্বর সংযত রাখ। নিশ্চয়ই সর্বাপেক্ষা নিকৃষ্ট স্বর গাধাদেরই স্বর। (সূরা লুকমান : ১৩, ১৬-১৯)।
দুই. হযরত নূহ (আ.) প্রায় এক হাজার বছর পর্যন্ত তাঁর কওমকে দ্বীনের দাওয়াত দিয়েছেন। আস্তে-জোরে, প্রকাশ্যে-গোপনে, জনতায়-নির্জনতায়- বিভিন্নভাবে তাদের বুঝিয়েছেন। তবু অল্পসংখ্যক ছাড়া কেউ ঈমান আনেনি। তখন আল্লাহর পক্ষ থেকে তাদের উপর কঠিন শাস্তি নেমে আসে- মহাপ্লাবন। আল্লাহর হুকুমে ঈমানদার সঙ্গীদের নিয়ে তিনি নৌকায় আরোহণ করলেন। ‘সে নৌকা পর্বত-প্রমাণ তরঙ্গরাশির মধ্যে তাদের নিয়ে বয়ে চলছিল। নূহ তার ছেলেকে, যে সকলের চেয়ে পৃথক ছিল, বলল, বাছা! তুমি আমাদের সঙ্গে আরোহণ কর এবং কাফেরদের সঙ্গে থেক না। সে বলল, আমি এখনই এমন এক পাহাড়ে আশ্রয় নেব, যা আমাকে পানি থেকে রক্ষা করবে। নূহ বলল, আজ আল্লাহর হুকুম থেকে কাউকে রক্ষা করার কেউ নেই, কেবল সেই ছাড়া যার প্রতি আল্লাহ দয়া করেন। অতঃপর ঢেউ তাদেরকে বিচ্ছিন্ন করে দিল এবং সেও নিমজ্জিতদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেল।’ (সূরা হুদ : ৪১-৪২)।
তিন. ইরশাদ হয়েছে : যখন তার (ইবরাহীম আ.-এর) প্রতিপালক তাকে বললেন, আনুগত্যে নতশীর হও। তখন সে বলল, আমি রাব্বুল আলামীনের সামনে মাথা নত করলাম। ইবরাহীম তার সন্তানদেরকে একথারই অসিয়ত করল এবং ইয়াকুবও (তার সন্তানদেরকে) যে, হে আমার পুত্রগণ! আল্লাহ তোমাদের জন্য এ দ্বীন মনোনীত করেছেন। সুতরাং তোমাদের মৃত্যু যেন এ অবস্থায় আসে যে, তোমরা মুসলিম। তোমরা কি সেসময় উপস্থিত ছিলে যখন ইয়াকুবের মৃত্যুক্ষণ এসে গিয়েছিল। যখন সে তার পুত্রদেরকে বলেছিল, আমার পর তোমরা কার ইবাদত করবে? তারা সকলে বলেছিল, আমরা সেই এক আল্লাহরই ইবাদত করব, যিনি আপনার মাবুদ এবং আপনার বাপ-দাদা ইবরাহীম, ইসমাইল ও ইসহাকেরও মাবুদ। আমরা সকলে কেবল তাঁরই অনুগত। (সূরা বাকারা : ১৩১-১৩৩)।
ইয়াকুব (আ.)-এর মনকে সবচেয়ে বেশি নাড়া দিয়েছিল কোন প্রেরণাটি; দায়িত্ববোধ না মমত্ববোধ? নিঃসন্দেহে দুটোই। কারণ, নবীর মমত্ববোধ ও দায়িত্ববোধ আলাদা ধারায় প্রবাহিত হয় না। সুতরাং পিতা-মাতার মনে সন্তানের শারীরিক প্রতিপালনের জন্য যে মমত্ব জাগে, চারিত্র্যিক ও ঈমানিক প্রতিপালনের জন্যও সেরকম মমত্ব জাগুক। সন্তানকে আগুন থেকে বাঁচাতে তারা যেমন ব্যাকুল হন, অন্যায় ও গোনাহ থেকে বিরত রাখতেও তেমনি ব্যাকুল হোক।
বিভাগ : শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
ডিসেম্বরে বাংলাদেশ ও ভারতের পররাষ্ট্র বৈঠক, হাসিনাকে ফেরানো নিয়ে আলোচনা থাকবে
রামু সেনানিবাসে সশস্ত্র বাহিনী দিবস পালিত
এক সপ্তাহে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ল ৬ কোটি ১০ লাখ ডলার
প্রবাসীদের যে জন্য সুখবর দিলো মালয়েশিয়া
জাবি শিক্ষার্থী মৃত্যুর ঘটনায় মামলা, তদন্ত কমিটি গঠন, ফটকে তালা, মশাল মিছিল
মাদকের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থানে থাকবে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল
"নতুন সিনেমা নিয়ে ফিরছেন গ্লোবাল তারকা অ্যাঞ্জেলিনা জোলি"
ড. ইউনূসকে নিয়ে খালেদা জিয়ার পুরোনো যে বক্তব্য ভাইরাল
নতুন নির্বাচন কমিশনের প্রতি ইসলামী আন্দোলনের শুভ কামনা
আলোচনায় ফ্যাসিস্ট হাসিনার ‘টুস করে ফেলে দেয়ার’ হুমকি
দীর্ঘ ১৫ বছর সাংবাদিকরা বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশন করতে পারেনি: খোকন
'ইউটিউব ট্রেন্ডিংয়ে রয়েছে অভিনেতা তারিক আনাম খানের নাটক'
বাংলাদেশ, নেপাল ও ভুটানের মধ্যে আঞ্চলিক সহযোগিতার আহ্বান
ইসলামিক ফাউন্ডেশন এর বোর্ড অব গভর্নর সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সম্বর্ধনা
সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সংবর্ধনা
লালমোহনে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত যুবদল নেতা চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু
চকরিয়ার বিএনপি নেতা আবু তাহের চৌধুরীর মৃত্যুতে সালাহউদ্দিন আহমদ ও হাসিনা আহমদের শোক
উইন্ডিজের বিপক্ষে মাঠে নামছে বাংলাদেশ
বেইজিং সংস্কৃতি ও পর্যটন ব্যুরো ও আটাবের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত
প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানের সাক্ষাৎ