ঢাকা   বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারি ২০২৫ | ২ মাঘ ১৪৩১
কৃষিতে নিরব বিল্পব সৃষ্টি হতে চলেছে

বাগান ও পতিত জমিতে বস্তায় আদা ও সবজি চাষ

Daily Inqilab মাহফুজুল হক আনার, দিনাজপুর থেকে

০৫ আগস্ট ২০২৩, ১০:৫৬ পিএম | আপডেট: ০৬ আগস্ট ২০২৩, ১২:০০ এএম

জনসংখ্যার বৃদ্ধির বিপরীতে কমছে আবাদি জমি। কমছে ফসলের উৎপাদন বাড়ছে চাহিদা। এর উপর যোগ হয়েছে নিত্যপণ্যের লাগামহীন ঊর্র্ধ্বগতি। সাধারণ মানুষের পাশাপাশি মাথার ঘাম পায়ে ফসল উৎপাদনকারী কৃষকের নাকাল অবস্থা। অর্থনৈতিক সঙ্কট মধ্য ও নিম্ন স্তরের মানুষদের নিষ্পেষিত করে তুলেছে। দু-বেলা খেয়ে পড়ে চলার লক্ষ্যে খেটে খাওয়া মানুষেরা মরিয়া হয়ে উঠেছে। কৃষকদের অবস্থা অত্যন্ত করুন। অর্থনৈতিক সঙ্কট দূর করতে কৃষকদের সামনে অল্প জমিতে অধিক উৎপাদন ছাড়া আর কোনো পথ খোলা নেই।

শহরাঞ্চলে ছাদ বাগান জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। পাকা বাড়ীর অভাবে গ্রামাঞ্চলে ছাদ বাগানের সুযোগ নেই। রয়েছে অব্যবহৃত ও পতিত জমি। শহরের ছাদ বাগানের মতোই দিনাজপুরের গ্রামাঞ্চলে বাগানে গাছের ফাঁকে ফাঁকে এবং বাড়ীর আশেপাশের পতিত জমিতে বস্তা চাষ পদ্ধতি জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। দিনাজপুরের চিরিরবন্দরে বস্তায় আদা চাষে ব্যাপক সফলতা এসেছে। কৃষি বিভাগ বস্তায় আদা চাষে কৃষকদের উৎসাহিত করছে।

দিনাজপুর রংপুর মহাসড়কের পার্শ্বে ভূষিরবন্দর এলাকার বৈকুন্ঠপুর গ্রাম ও আশপাশ এলাকায় এখন বস্তায় আদা চাষ পদ্ধতি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। লিচুর জন্য বিখ্যাত দিনাজপুরে হাজার হাজার লিচু আম বাগান রয়েছে। এমনি এক লিচু বাগানে গাছের ফাঁকে ফাঁকে প্লাস্টিকের বস্তায় ফসল উপযোগী মাটি ভরে আবাদ করা হচ্ছে আদা। মসলার অন্যতম উপদান আদা অনেক মুল্যবান। ৫ টাকার একটি পুরাতন প্লাস্টিকের বস্তাকে দুই ভাগ করে মাটি ভর্তি করে বীজ বোপন। মাঝে মাঝে পরিচর্য়া আর বেশী রৌদ্রতাপ হলে একটু পানি দেয়া ছাড়া আর কোনো কাজ নেই। ফলে খরচ নাই বললেই চলে বস্তায় আদা চাষ পদ্ধতি। প্রতিটি বস্তায় তিনি এক থেকে দেড় কেজি করে আদা পান। যেখানে মাটিতে একটি গাছ থেকে এক পোয়া আদা পাওয়া যায়। আর বস্তায় আবাদে খরচ যেমন কম। তেমনি বাড়ীর আশেপাশে, বাগানে গাছের গাছের ফাঁকে ফাঁকে এমনকি রাস্তার ধারেও বস্তায় আদা চাষ করা যাচ্ছে। এর জন্য আলাদা কোনো আবাদি জমির প্রয়োজন হয় না।

অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কলেজের অধ্যাপক মান্নান সরকার চাকরিকালীন সময়ে দেখেছেন শহরের ছাদ বাগান। গ্রামে তার মতো আর দশ জনের বাড়ীও পাকা কিন্তু টিনের ছাদ। তাই ছাদ বাগানের সুযোগ নেই। ইউটিউবে বস্তায় আদা চাষ পদ্ধতি দেখে তিনি বাড়ীর উঠোনে মাত্র ১২টি বস্তায় আদা চাষ করেন। এবার তিনি ১২শ’ বস্তায় আদা চাষ করেছেন। আগামীবছর ১০ হাজার বস্তায় আদা চাষের পরিকল্পনা রয়েছে। তার দেখাদেখি আশপাশের শতশত বাড়ি ও বাগানে বস্তায় আদা চাষ শুরু হয়েছে।

বস্তায় আদা চাষের উদ্যেক্তা অধ্যাপক মান্নান সরকার জানান, যে গ্রামে বাড়ি জমি ও বাগান থাকলেও মূলত চাকরিকালীন সময়ে এসব দেখাশোনা করতো মুজুরেরা। অবসরের পর গ্রামে আসলে দেখি জমির বাজার মুল্যের তুলনায় উৎপাদিত ফসলের প্রাপ্ত মূল্য প্রকৃত অর্থে অলাভজনক। শহরে ছাদের উপর ড্রাম ও প্লাস্টিক বস্তায় বিভিন্ন ফলের আবাদ করে কিছুটা অর্থের সাশ্রয় হতো। গ্রামে সেমি পাকা বাড়িতে ছাদ নেই। ফলে ফল ও মসলা জাতীয় ফসল ক্রয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে। পাওয়া যাচ্ছে না অতিরিক্ত কোনো অর্থ। ইউটিউবে বস্তায় আদা চাষের পদ্ধতি দেখে উদ্যোগ নেই আমার বাড়ির আঙ্গিনা ও লিচু বাগানের নিচে পতিত পড়ে থাকা জায়গায় প্লাস্টিকের বস্তায় আদা চাষের। প্রথমে ৫ টাকা করে ৬টি পুরাতন প্লাস্টিক বস্তা কিনে তা কেটে দু-ভাগ করে ১২টি বস্তায় মাটি ভর্তি করে আদার বীজ বোপন করি। প্রতিটি বস্তা থেকে ১ থেকে দেড় কেজি করে আদা পাই। যার বাজার মূল্য ৪ থেকে সাড়ে ৪শ’ টাকা। পরের বছর ১২ বস্তায় আদা আবাদ করি। আমার দেখাদেখি আশপাশের কৃষক এমনকি অন্যান্য এলাকার লোকজনও বস্তায় আদা আবাদ শুরু করেছে।

খবর পেয়ে ছুটে আসেন চিরিরবন্দর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জোহরা সুলতানা। তিনি বস্তায় আদা চাষের পদ্ধতি দেখে কিছুটা আশ্চর্য হোন। উপজেলা কার্যালয়ের সামনে বস্তায় আদা আবাদ শুরু করেন এবং কৃষকদের উৎসাহিত করেন। তিনি ইনকিলাব বলেন, সংবেদনশীল ফসল হওয়ায় আদা মুলত ছায়া ও দোআঁশ জাতীয় মাটিতে আবাদ করতে হয়। বস্তায় দোআঁশ মাটি ভর্তি করে আবাদ করলে দেখা যাচ্ছে এর ফলন ভাল হচ্ছে। মাটিতে একটি বীজ থেকে ১ পোয়া আর বস্তায় ১টি বীজ থেকে এক কেজি আদা পাওয়া যাচ্ছে। যা অধ্যাপক মান্নান সাহেব পেয়েছেন। এছাড়া পরিচর্য়া খরচ নাই বললেই চলে। তিনি বলেন, শুধু আদা নয় মসলা জাতীয় ফসল ও ফল উৎপাদন ভাল হবে।

কৃষি বিভাগের স্থানীয় সুপারভাইজার ও কর্মীরা বস্তায় আদা চাষের বিষয়টি তাদের কাছে খুব ভাল হয়েছে। তারা গ্রামে পড়ে থাকা বাগান, পুকুরপাড়, রাস্তার ধারে বস্তায় চাষাবাদের বিষয়টিকে কৃষি ক্ষেত্রে একটি নিরব বিল্পব সৃষ্টি হবে বলে মত প্রকাশ করেছে।


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

এক মাসের মধ্যে সংস্কারের রোডম্যাপ দিবে সরকার: পরিবেশ উপদেষ্টা
রাষ্ট্রের কল্যাণে উপসচিব পদে কাকে প্রয়োজন: নীতি ও ন্যায্যতা কী
দেশের সাংবিধানিক নাম ‘জনগণতন্ত্রী বাংলাদেশ’ করার সুপারিশ
সাবেক প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ ও শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মামলা
দেশে ফিরেই ছিনতাইয়ের শিকার মালয়েশিয়া প্রবাসী ডালিম
আরও

আরও পড়ুন

বগুড়ায় কলেজ শিক্ষার্থী হত্যা মামলায় গ্রেফতার ৪

বগুড়ায় কলেজ শিক্ষার্থী হত্যা মামলায় গ্রেফতার ৪

মতিঝিলে শিক্ষার্থীদের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত ১৫

মতিঝিলে শিক্ষার্থীদের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত ১৫

সাভারে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে ২৫ লাখ টাকার তেলসহ পিকআপ ছিনতাই

সাভারে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে ২৫ লাখ টাকার তেলসহ পিকআপ ছিনতাই

ডাকসু নিয়ে ৩৭৭ সংস্কার প্রস্তাব ঢাবি ছাত্রদলের

ডাকসু নিয়ে ৩৭৭ সংস্কার প্রস্তাব ঢাবি ছাত্রদলের

গাজীপুরে থানায় ব্যবসায়ীকে আটক করে ২ লাখ টাকা ঘুষ নিলো ওসি

গাজীপুরে থানায় ব্যবসায়ীকে আটক করে ২ লাখ টাকা ঘুষ নিলো ওসি

রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র অফিস অবরোধের ঘোষণা চাকরি বঞ্চিতদের

রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র অফিস অবরোধের ঘোষণা চাকরি বঞ্চিতদের

শামীম ওসমান-নানক পরিবারের বিরুদ্ধে দুই মামলা

শামীম ওসমান-নানক পরিবারের বিরুদ্ধে দুই মামলা

বায়ু দূষণে আবারও শীর্ষে ঢাকা

বায়ু দূষণে আবারও শীর্ষে ঢাকা

এক মাসের মধ্যে সংস্কারের রোডম্যাপ দিবে সরকার: পরিবেশ উপদেষ্টা

এক মাসের মধ্যে সংস্কারের রোডম্যাপ দিবে সরকার: পরিবেশ উপদেষ্টা

দেশে ফিরেই ছিনতাইয়ের শিকার মালয়েশিয়া প্রবাসী ডালিম

দেশে ফিরেই ছিনতাইয়ের শিকার মালয়েশিয়া প্রবাসী ডালিম

বিপিএল শেষ কর্নওয়ালের

বিপিএল শেষ কর্নওয়ালের

ওয়াটসাপ, টেলিগ্রাম বা বিভিন্ন সোশ্যাল মাধ্যমে মেসেজ দিয়ে দেওয়া সালামের জওয়াব দেওয়া প্রসঙ্গে?

ওয়াটসাপ, টেলিগ্রাম বা বিভিন্ন সোশ্যাল মাধ্যমে মেসেজ দিয়ে দেওয়া সালামের জওয়াব দেওয়া প্রসঙ্গে?

আরচ্যারী ফেডারেশনের তারুণ্যের উৎসব কর্মসূচি শুরু

আরচ্যারী ফেডারেশনের তারুণ্যের উৎসব কর্মসূচি শুরু

বেনাপোলে আড়াই বছর পর কবর থেকে তোলা হলো বিএনপি নেতা আলিমের লাশ

বেনাপোলে আড়াই বছর পর কবর থেকে তোলা হলো বিএনপি নেতা আলিমের লাশ

রাষ্ট্রের কল্যাণে উপসচিব পদে কাকে প্রয়োজন: নীতি ও ন্যায্যতা কী

রাষ্ট্রের কল্যাণে উপসচিব পদে কাকে প্রয়োজন: নীতি ও ন্যায্যতা কী

ধূমপানকে না বলুন

ধূমপানকে না বলুন

জালিমের পরিণতি ভালো হয় না

জালিমের পরিণতি ভালো হয় না

অখণ্ড ভারতের নীলনকশা এবং মুখোশপরা গণশত্রুদের দাস্যবৃত্তি

অখণ্ড ভারতের নীলনকশা এবং মুখোশপরা গণশত্রুদের দাস্যবৃত্তি

মাজারে হামলা ও উগ্রপন্থা কাম্য নয়

মাজারে হামলা ও উগ্রপন্থা কাম্য নয়

১২ কোটি জনসংখ্যার ৭ কোটি আক্রান্ত

১২ কোটি জনসংখ্যার ৭ কোটি আক্রান্ত