ঢাকা   বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারি ২০২৫ | ২ মাঘ ১৪৩১

হজ ব্যবস্থাপনা-২০২৩ : সউদী কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ-১

Daily Inqilab ড. মুহাম্মদ ঈসা শাহেদী

০৫ আগস্ট ২০২৩, ১১:১৩ পিএম | আপডেট: ০৬ আগস্ট ২০২৩, ১২:০০ এএম

সউদী আরবের পবিত্র মক্কা নগরীতে সমগ্র বিশ^ থেকে সমবেত প্রায় ত্রিশ লাখ হজযাত্রীর অংশগ্রহণে এ বছর পবিত্র হজ পালিত হয় গত ২৭ জুন। নানা দেশ, অঞ্চল ও ভাষা বর্ণের অসংখ্য অগণিত মানুষ আত্মপরিচয় ভুলে আল্লাহর ভয় ও ভালোবাসায় একাকার হয়েছিল বিশ^ মিলনমেলায় মসজিদুল হারামে, মিনা, মুযদালিফা ও আরাফাত ময়দানে। পুরুষরা সেলাইবিহীন দুই টুকরা সাদা কাপড় জড়িয়ে, মহিলারা ইহরামের ওড়না মাথায় একাত্ম হয়েছিলেন ইসলামের বিশ^ভ্রাতৃত্বের ঐক্যের বন্ধনে। আল্লাহর দরবারে হাজিরা দেয়ার চেতনায় নিজস্ব ভাষা ভুলে লাব্বাইকা আল্লাহুম্মা লাব্বাইকা... প্রভু হে আমি হাজির, তোমার সমীপে আমি উপস্থিত... ধ্বনিতে লক্ষ-অযুত কণ্ঠে মুখরিত হয়েছিল হজযাত্রীগণ।

সাধারণত বিশ^ সম্মেলন হয় রাষ্ট্রপ্রধান বা মন্ত্রী পর্যায়ে অথবা নানা সংস্থা সংগঠনের প্রতিনিধি কিংবা সমাজের বিশেষ শ্রেণি-পেশার লোকদের অংশগ্রহণে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বদ্ধঘরে। কিন্তু হজে সমগ্র বিশে^র নানা দেশ জাতি ও শ্রেণি পেশার মানুষের প্রতিনিধিত্ব থাকে। হজের আনুষ্ঠানিকতাও হয় উন্মুক্ত ময়দানে নানা শারীরিক কসরতের মধ্য দিয়ে। যার সাথে কোনো বিশ^ সম্মেলনের তুলনা হতে পারে না।

হজের মূল পর্ব থাকে পাঁচ দিনব্যাপী। ইসলামী বর্ষপঞ্জীর দ্বাদশ মাস জিলহজের ৯, ১০, ১১ ও ১২ তারিখ। এই পাঁচদিনের আনুষ্ঠানিকতার ব্যাপকতা, আধ্যাত্মিকতা ও ভাব ঐশ^র্য বর্ণনার ভাষা কোনো কলমের নেই। হজে আল্লাহর তওহীদি চেতনার মহাসাগরের উত্তাল তরঙ্গমালায় দোল খাওয়া আর হারিয়ে যাওয়ার মাঝে কি তৃপ্তি তা এবারে ৪৬ ডিগ্রি তাপদাহের নিচে আরাফাতে, মীনা মুযদালিফায় হাজীরা দেওয়া আল্লাহর পাগলরা ছাড়া আর কেউ উপলব্ধি করতে পারবে না।

লোহা কামারের ভাতিতে পোড়ার পর জংমুক্ত শুদ্ধ হয়। হাজী সাহেবানও মিনা, মুযদালিফা, আরাফাতে হাজিরার কষ্টের নিগড়ে পিষ্ট হওয়ার পর নিখাঁদ হয়ে যান। এত কষ্টের পরীক্ষায় সবার মুখে ছিল ‘আল্লাহ সহজ করে দাও, আল্লাহ কবুল কর’। শারীরিক ও আর্থিক এমন ত্যাগের সাধনা হজ নিশ্চয়ই দয়াময় আল্লাহ কবুল করেছেন। আলহামদু লিল্লাহ।

পাঁচদিনের মূল আনুষ্ঠানিকতার জন্য মক্কা ও মদীনায় অবস্থান করতে হয়েছে ১০ থেকে নিয়ে ৪৫ দিন পর্যন্ত। মক্কা ও মদীনায় দীর্ঘ অবস্থানের সময়কালের প্রথম আমল ছিল ওমরা পালন। অর্থাৎ বাইরে থেকে এহরামের কাপড় পরে মক্কায় প্রবেশের পর আল্লাহর ঘরকে ৭ বার প্রদক্ষিণ বা তওয়াফ করা, তারপর সাফা ও মারওয়া পাহাড়ের মাঝখানে ৭ বার সায়ী করা (হাঁটা)। একই সঙ্গে প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাযে হারাম শরীফে শরিক হওয়া।

নামাযের অপেক্ষায় বসে আছি, এমন সময় এক তরুণের সঙ্গে পরিচয় হল। দেশের ছেলে সেনাবাহিনীর সাথে কাজ করেন। হজে এসেছেন। বললেন, কম করে হলেও প্রতিদিন ২০ লাখ মানুষ পাঁচবেলা শান্তি ও শৃঙ্খলার সাথে নামাযের আনুষ্ঠানিকতায় উপস্থিত হচ্ছেন আবার নিজ বাসস্থানে ফিরে যাচ্ছেন। অথচ এই লোকেরা পরষ্পরের ভাষা বুঝে না, কালচার ভিন্ন, অঞ্চল, দেশ ও জাতিসত্ত্বার পরিচয়ও বিচিত্র। তার কথা শুনে চিন্তার নতুন ডাইমেনশন পেলাম। সত্যিই যারা সমাজ, সংগঠন, প্রশাসন নিয়ে কাজ করেন তারা হজের ও নামাযের এই সৌন্দর্যে বিমোহিত না হয়ে পারেন না। হজের এই সৌন্দর্য দেখে জনৈক খ্রিষ্টান সংগঠক ইসলাম গ্রহণ করার গল্পও শোনালেন আরেক বন্ধু।

সারা বিশ^ থেকে এত বিশাল জনগোষ্ঠির স্রোত সউদী আরবের বিমান বন্দরে বরণ করা, অভ্যন্তরীণ যানবাহন, মালপত্র পরিবহণ, নামাযে তাওয়াফে যেয়ারতে শৃঙ্খলা বিধান, থাকা ও খাওয়ার ব্যবস্থাপনা প্রভৃতি বিশাল বিচিত্র কর্মযজ্ঞের জন্য সউদী আরব সরকারকে সঙ্গত কারণেই ধন্যবাদ দিতে হয়।

মক্কা মোকাররমা ও মদীনা মুনাওয়ারা তাওহীদ ও রেসালাতের অনন্ত সাগর। সেই সাগরে অবগাহন করে নিজেকে হারিয়ে ফেলা, উপলব্ধির গভীরতায় গিয়ে আত্মিক প্রশান্তিতে ঋদ্ধ হওয়াই প্রত্যেক হজযাত্রীর প্রত্যাশা। এ কারণে কোনো অপূর্ণতা, ত্রুটি বিচ্যুতি বা দুঃখ কষ্টের প্রতি তাদের মনোযোগ থাকে না। এরপরও এ বারের হজের ব্যবস্থাপনায় এমন কিছু ত্রুটি বিচ্যুতি ও অপূর্ণতা নজর কেড়েছে, যা সচেতন লোকদের ভাবতে বাধ্য করে। এই ভাবনা থেকেই কিছু কথা তুলে ধরতে চাই।


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

এক মাসের মধ্যে সংস্কারের রোডম্যাপ দিবে সরকার: পরিবেশ উপদেষ্টা
রাষ্ট্রের কল্যাণে উপসচিব পদে কাকে প্রয়োজন: নীতি ও ন্যায্যতা কী
দেশের সাংবিধানিক নাম ‘জনগণতন্ত্রী বাংলাদেশ’ করার সুপারিশ
সাবেক প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ ও শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মামলা
দেশে ফিরেই ছিনতাইয়ের শিকার মালয়েশিয়া প্রবাসী ডালিম
আরও

আরও পড়ুন

বগুড়ায় কলেজ শিক্ষার্থী হত্যা মামলায় গ্রেফতার ৪

বগুড়ায় কলেজ শিক্ষার্থী হত্যা মামলায় গ্রেফতার ৪

মতিঝিলে শিক্ষার্থীদের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত ১৫

মতিঝিলে শিক্ষার্থীদের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত ১৫

সাভারে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে ২৫ লাখ টাকার তেলসহ পিকআপ ছিনতাই

সাভারে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে ২৫ লাখ টাকার তেলসহ পিকআপ ছিনতাই

ডাকসু নিয়ে ৩৭৭ সংস্কার প্রস্তাব ঢাবি ছাত্রদলের

ডাকসু নিয়ে ৩৭৭ সংস্কার প্রস্তাব ঢাবি ছাত্রদলের

গাজীপুরে থানায় ব্যবসায়ীকে আটক করে ২ লাখ টাকা ঘুষ নিলো ওসি

গাজীপুরে থানায় ব্যবসায়ীকে আটক করে ২ লাখ টাকা ঘুষ নিলো ওসি

রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র অফিস অবরোধের ঘোষণা চাকরি বঞ্চিতদের

রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র অফিস অবরোধের ঘোষণা চাকরি বঞ্চিতদের

শামীম ওসমান-নানক পরিবারের বিরুদ্ধে দুই মামলা

শামীম ওসমান-নানক পরিবারের বিরুদ্ধে দুই মামলা

বায়ু দূষণে আবারও শীর্ষে ঢাকা

বায়ু দূষণে আবারও শীর্ষে ঢাকা

এক মাসের মধ্যে সংস্কারের রোডম্যাপ দিবে সরকার: পরিবেশ উপদেষ্টা

এক মাসের মধ্যে সংস্কারের রোডম্যাপ দিবে সরকার: পরিবেশ উপদেষ্টা

দেশে ফিরেই ছিনতাইয়ের শিকার মালয়েশিয়া প্রবাসী ডালিম

দেশে ফিরেই ছিনতাইয়ের শিকার মালয়েশিয়া প্রবাসী ডালিম

বিপিএল শেষ কর্নওয়ালের

বিপিএল শেষ কর্নওয়ালের

ওয়াটসাপ, টেলিগ্রাম বা বিভিন্ন সোশ্যাল মাধ্যমে মেসেজ দিয়ে দেওয়া সালামের জওয়াব দেওয়া প্রসঙ্গে?

ওয়াটসাপ, টেলিগ্রাম বা বিভিন্ন সোশ্যাল মাধ্যমে মেসেজ দিয়ে দেওয়া সালামের জওয়াব দেওয়া প্রসঙ্গে?

আরচ্যারী ফেডারেশনের তারুণ্যের উৎসব কর্মসূচি শুরু

আরচ্যারী ফেডারেশনের তারুণ্যের উৎসব কর্মসূচি শুরু

বেনাপোলে আড়াই বছর পর কবর থেকে তোলা হলো বিএনপি নেতা আলিমের লাশ

বেনাপোলে আড়াই বছর পর কবর থেকে তোলা হলো বিএনপি নেতা আলিমের লাশ

রাষ্ট্রের কল্যাণে উপসচিব পদে কাকে প্রয়োজন: নীতি ও ন্যায্যতা কী

রাষ্ট্রের কল্যাণে উপসচিব পদে কাকে প্রয়োজন: নীতি ও ন্যায্যতা কী

ধূমপানকে না বলুন

ধূমপানকে না বলুন

জালিমের পরিণতি ভালো হয় না

জালিমের পরিণতি ভালো হয় না

অখণ্ড ভারতের নীলনকশা এবং মুখোশপরা গণশত্রুদের দাস্যবৃত্তি

অখণ্ড ভারতের নীলনকশা এবং মুখোশপরা গণশত্রুদের দাস্যবৃত্তি

মাজারে হামলা ও উগ্রপন্থা কাম্য নয়

মাজারে হামলা ও উগ্রপন্থা কাম্য নয়

১২ কোটি জনসংখ্যার ৭ কোটি আক্রান্ত

১২ কোটি জনসংখ্যার ৭ কোটি আক্রান্ত