ঢাকা   বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারি ২০২৫ | ২ মাঘ ১৪৩১
দুই সিটি করপোরেশনের মানুষের ভোগান্তি

ডিজিটাল জন্ম নিবন্ধন বন্ধ

Daily Inqilab একলাছ হক

১২ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:০৩ এএম | আপডেট: ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:০৩ এএম

রাজধানীর শাহজাহানপুর এলাকার বাসিন্দা আবুল হোসেন মৃত্যুবরণ করেন গত ২৮ আগস্ট। মৃত্যুর পর তার ছেলে আরিফ হোসেন বাবার মৃত্যু নিবন্ধন সনদ নিতে যান ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার কাছে। কিন্তু সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে তাকে জানানো হয় এখন জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। তাই করা যাচ্ছে না মৃত্যু নিবন্ধন সনদ। এমন হাজারো নাগরিকের সমস্যা থাকলেও দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষের টনক নড়ছে না। মাসের পর মাস জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন বন্ধ থাকার কারণে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ মানুষ।

সিটি করপোরেশন থেকে জানানো হয় রেজিস্টার জেনারেলের কার্যালয় থেকে বন্ধ রাখার কারণে জন্ম ও মৃত্যু সনদ দেয়া যাচ্ছে না। জন্ম ও মৃত্যু সনদের কার্যক্রম পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করে জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধকের কার্যালয় ঢাকার দুই সিটি করপোরশেন ইউজার মাত্র। তারা নাগরিকদের জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন সেবা দিয়ে থাকে। রেজিস্টার জেনারেলের কার্যালয়ের গাফিলতির কারণে জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

জানা যায়, সরকারি নানা কাজে যে ডিজিটাল সনদটির ব্যাপক ব্যবহার সেই সনদ এখন পাওয়া যাচ্ছে না। দিনের পর দিন ঘুরেও সংগ্রহ করা যাচ্ছে না জন্মনিবন্ধন সনদ। নাগরিকের এই জরুরি সনদ সঠিক সময়ে না পাওয়ার কারণে প্রয়োজনীয় কাজ সারতে পারছেন না লোকজন। আর এক সনদের পিছনে দিনের পর দিন ঘুরে সময় ও অর্থ নষ্ট করছেন সাধারণ মানুষ। প্রয়োজনের সময় জন্মনিবন্ধন সনদ না পাওয়ার কারণে তাদের যেন অভিযোগের অন্ত নেই। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে প্রায় তিন মাস ধরে জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন সংক্রান্ত সব কার্যক্রম বন্ধ। ফলে স্কুলে ভর্তি, চাকরি, পাসপোর্ট আবেদনসহ ১৯ ধরনের কাজ করতে পারছে না নাগরিকরা। জন্ম নিবন্ধন ফি হিসেবে নাগরিকের দেয়া অর্থ কে পাবে-সিটি করপোরেশন নাকি রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয়- এই দ্বন্দ্বেই বন্ধ নাগরিক সেবা। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি, পাসপোর্ট, জাতীয় পরিচয়পত্র, ভিসা আবেদনসহ ১৯টি ধরনের কাজের জন্য জন্মনিবন্ধন সনদ বাধ্যতামূলক করেছে সরকার। কিন্তু রাজস্ব ভাগাভাগি নিয়ে দ্বন্দ্বে জন্মবিন্ধন কার্যক্রম বন্ধ রেখেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। গত প্রায় তিন মাস ধরে এই কাজ বন্ধ থাকায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলকার বাসিন্দারা। সিটি করপোরেশনের আঞ্চলিক কার্যালয়ে দিনের পর দিন ঘুরেও কোনো সুরাহা পাচ্ছেন না তারা।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ বলছে, জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন কাজ সিটি করপোরেশন করলেও এর অর্থ জমা হয় রেজিস্ট্রার জেনারেলে দফতর। জনবল ও যন্ত্রপাতি, সনদ প্রিন্ট করানোসহ ব্যবস্থাপনার যাবতীয় খরচ হচ্ছে সিটি করপোরেশনের তহবিল থেকে, কিন্তু তারা কোন টাকা পাচ্ছে না। আইন অনুযায়ী এই টাকা সিটি করপোরেশনের পাওয়ার কথা বলে দাবি করেন জনপ্রতিনিধিরা। সরকারি তহবিলের অর্থ ভাগাভাগি নিয়ে সাধারণ মানুষের যে ভোগান্তি হচ্ছে তা নিয়ে কর্তৃপক্ষের কারও কোন মাথা নেই।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) জনসংযোগ কর্মকর্তা আবু নাছের ইনকিলাবকে বলেন, এখনো জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধ কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।

তবে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. মকবুল হোসাইন ইনকিলাবকে বলেন, এখন জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন কার্যক্রম ওয়ার্ড পর্যায়ে কাউন্সিলরের দায়িত্বে দেয়া হয়েছে। তারা এখন থেকে জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন সনদের কাজ করবেন। কোন কোনো স্থানে সমস্যা থাকতে পারে।

ভুক্তভোগীরা বলেন, আগে জন্মনিবন্ধন ফরম দোকানে বসে পূরণ করা যেত এখন সার্ভার বন্ধ থাকার কারণে তাও করা যাচ্ছে না। এটা যদি আমরা বাসা থেকে কিংবা বাইরে থেকে করতে পারতাম তাহলে সব থেকে বেশি ভালো হতো। কিন্তু আমরা এখানে এসে হয়রানি হচ্ছি। বাইরে আবেদন করা যাচ্ছে না। বাচ্চাদের স্কুল-কলেজে যে একটা অনলাইন সিস্টেমে যাচাই-বাচাই করার ব্যাপার আছে ওটাও করতে পারছি না। ওটার জন্য আমাদের অনেক কর্মকা- স্থগিত হয়ে রয়েছে।

জরুরি প্রয়োজনে মেয়ের জন্মনিবন্ধন করতে আসা গোপীবাগের বাসিন্দা মিলন ইনকিলাবকে বলেন, সিটি করপোরেশনের কার্যালয়ে এসে জানতে পারলাম জন্মনিবন্ধন সেবা বন্ধ। কী কারণে বন্ধ বা কবে থেকে চালু হবে তা কেউই বলতে পারছে না।
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে রেজিস্ট্রার জেনারেল (অতিরিক্ত সচিব) মো. রাশেদুল হাসানের মোবাইল ফোনে কল করা হলে তিনি তা রিসিভ না করার কারণে তার বক্তব্য জানা যায়নি।


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

এক মাসের মধ্যে সংস্কারের রোডম্যাপ দিবে সরকার: পরিবেশ উপদেষ্টা
রাষ্ট্রের কল্যাণে উপসচিব পদে কাকে প্রয়োজন: নীতি ও ন্যায্যতা কী
দেশের সাংবিধানিক নাম ‘জনগণতন্ত্রী বাংলাদেশ’ করার সুপারিশ
সাবেক প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ ও শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মামলা
দেশে ফিরেই ছিনতাইয়ের শিকার মালয়েশিয়া প্রবাসী ডালিম
আরও

আরও পড়ুন

বগুড়ায় কলেজ শিক্ষার্থী হত্যা মামলায় গ্রেফতার ৪

বগুড়ায় কলেজ শিক্ষার্থী হত্যা মামলায় গ্রেফতার ৪

মতিঝিলে শিক্ষার্থীদের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত ১৫

মতিঝিলে শিক্ষার্থীদের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত ১৫

সাভারে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে ২৫ লাখ টাকার তেলসহ পিকআপ ছিনতাই

সাভারে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে ২৫ লাখ টাকার তেলসহ পিকআপ ছিনতাই

ডাকসু নিয়ে ৩৭৭ সংস্কার প্রস্তাব ঢাবি ছাত্রদলের

ডাকসু নিয়ে ৩৭৭ সংস্কার প্রস্তাব ঢাবি ছাত্রদলের

গাজীপুরে থানায় ব্যবসায়ীকে আটক করে ২ লাখ টাকা ঘুষ নিলো ওসি

গাজীপুরে থানায় ব্যবসায়ীকে আটক করে ২ লাখ টাকা ঘুষ নিলো ওসি

রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র অফিস অবরোধের ঘোষণা চাকরি বঞ্চিতদের

রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র অফিস অবরোধের ঘোষণা চাকরি বঞ্চিতদের

শামীম ওসমান-নানক পরিবারের বিরুদ্ধে দুই মামলা

শামীম ওসমান-নানক পরিবারের বিরুদ্ধে দুই মামলা

বায়ু দূষণে আবারও শীর্ষে ঢাকা

বায়ু দূষণে আবারও শীর্ষে ঢাকা

এক মাসের মধ্যে সংস্কারের রোডম্যাপ দিবে সরকার: পরিবেশ উপদেষ্টা

এক মাসের মধ্যে সংস্কারের রোডম্যাপ দিবে সরকার: পরিবেশ উপদেষ্টা

দেশে ফিরেই ছিনতাইয়ের শিকার মালয়েশিয়া প্রবাসী ডালিম

দেশে ফিরেই ছিনতাইয়ের শিকার মালয়েশিয়া প্রবাসী ডালিম

বিপিএল শেষ কর্নওয়ালের

বিপিএল শেষ কর্নওয়ালের

ওয়াটসাপ, টেলিগ্রাম বা বিভিন্ন সোশ্যাল মাধ্যমে মেসেজ দিয়ে দেওয়া সালামের জওয়াব দেওয়া প্রসঙ্গে?

ওয়াটসাপ, টেলিগ্রাম বা বিভিন্ন সোশ্যাল মাধ্যমে মেসেজ দিয়ে দেওয়া সালামের জওয়াব দেওয়া প্রসঙ্গে?

আরচ্যারী ফেডারেশনের তারুণ্যের উৎসব কর্মসূচি শুরু

আরচ্যারী ফেডারেশনের তারুণ্যের উৎসব কর্মসূচি শুরু

বেনাপোলে আড়াই বছর পর কবর থেকে তোলা হলো বিএনপি নেতা আলিমের লাশ

বেনাপোলে আড়াই বছর পর কবর থেকে তোলা হলো বিএনপি নেতা আলিমের লাশ

রাষ্ট্রের কল্যাণে উপসচিব পদে কাকে প্রয়োজন: নীতি ও ন্যায্যতা কী

রাষ্ট্রের কল্যাণে উপসচিব পদে কাকে প্রয়োজন: নীতি ও ন্যায্যতা কী

ধূমপানকে না বলুন

ধূমপানকে না বলুন

জালিমের পরিণতি ভালো হয় না

জালিমের পরিণতি ভালো হয় না

অখণ্ড ভারতের নীলনকশা এবং মুখোশপরা গণশত্রুদের দাস্যবৃত্তি

অখণ্ড ভারতের নীলনকশা এবং মুখোশপরা গণশত্রুদের দাস্যবৃত্তি

মাজারে হামলা ও উগ্রপন্থা কাম্য নয়

মাজারে হামলা ও উগ্রপন্থা কাম্য নয়

১২ কোটি জনসংখ্যার ৭ কোটি আক্রান্ত

১২ কোটি জনসংখ্যার ৭ কোটি আক্রান্ত