‘খুলুকে আজিম’ মহান চরিতের কাছে ফিরে আসুন
১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০৫ এএম | আপডেট: ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০৫ এএম
ক্লান্ত পাখিরা দিন শেষে ফিরে আসে আপন নীড়ে, নদীর পানি কল কল রবে বয়ে যায় সমুদ্রের পানে, দিন ঢুকে পড়ে রাতের অন্ধকারে, রাত দূরীভূত হয় দিনের আলোয়- এভাবে সকলেই ফিরে যায় ফিরে আসে তার আসল ঠিকানায়। পৃথিবীও ঘুরে ফিরে বার বার আশ্রয় নেয় মহান এক চরিতের কাছে, তিনি হলেন মানবতার মহান বন্ধু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। তিনি খুলুকে আজিম বা বিশাল চরিত্রের অধিকারী মুুহাম্মদ সা:। তাঁর চরিতই মানুষের আসল ঠিকানা। সুতরাং তাঁর চরিতের কাছে প্রত্যেককে ফিরে আসতেই হবে। কারণ এ যে এক মহান চরিত। অন্য কোথায়ও কারো মধ্যে এমন চরিত পাবেন না। পেলেও পেতে পারেন তবে তা একান্তই আংশিক বা অপূর্ণাঙ্গ।
“ওয়া ইন্নাকা লা‘আলা খুলুকিন আজিম” অর্থাৎ এবং নিশ্চয় আপনি মহান চরিত্রের অধিকারী (সুরা কলম-৪)। বলেছেন স্বয়ং মহান রাব্বুল আলামীন যিনি নিজে ‘রাব্বিয়াল আজিম’। আয়াতে ব্যবহৃত “আজিম” শব্দটি আল্লাহর গুণবাচক নাম সমুহের একটি। অর্থ হচ্ছে, আল্লাহ তা’আলা এমন মহান বা বিশাল সত্ত্বা যার মহানত্ব ও বিশালতার সীমা পরিসীমা আমাদের কল্পনা, চিন্তা ও ইন্দ্রিয়ানুভূতির অনেক উর্ধে। অর্থাৎ তিনি সীমা বা আয়ত্বের দূর্বলতা থেকে পবিত্র। এমন কি কেউ তার বড়ত্বের একটা আন্দাজ করেছেন তিনি সেই আন্দাজ-অনুমান থেকেও পবিত্র। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নৈতিক চরিত্রের মহানত্ব প্রকাশ করার জন্য আল্লাহ তা’আলা ‘আজিম’ শব্দটি ব্যবহার করেছেন। এর দ্বারা এই কথাই বুঝানো হয়েছে যে, তাঁর চরিত্রের বিশালতাও সীমাহীন। আমাদের কল্পনা, চিন্তা ও ইন্দ্রিয়ানুভূতিরও বাইরে।
‘আজিম’ শব্দটি সম্পর্কে শুরুতেই বলা হয়েছে যে, এটি এমন বিশালতার প্রকাশ ঘটায় যার সীমা পরিসীমা আমাদের কল্পনা, চিন্তা ও ইন্দ্রিয়ানুভূতির বাইরে। যার বিশালতাকে কোন পরিমাপক যন্ত্রও আয়ত্ব করতে পারে না। যার দৈর্ঘ, প্রস্ত ও উচ্চতা আয়ত্ব করা মানুষের সাধ্যের বাইরে। মানুষ গ্রহ-নক্ষত্র, চাঁদ-সুর্য ও সৌরজগত সম্পর্কে আনুমানিক বা মোটামুটি একটি ধারণা আয়ত্ব করতে পেরেছে। বিশাল সৌরজগতে বা বিশাল সৃষ্টি জগতে সুর্য হলো, আল্লাহর একটি বৃহৎ ও শক্তিশালী সৃষ্টি। আধুনিক আকাশ বিজ্ঞানীরা সুর্য সম্পর্কে সঠিক হোক আর বেঠিক হোক একটি পরিমাপ তারা করতে পেরেছে যে, সুর্য সমগ্র সৌরজগত নিয়ে প্রতি সেকেন্টে ২০ কিলোমিটার গতিতে এগিয়ে চলছে। পৃথিবী থেকে সুর্যের দুরত্ব ১৫ কোটি ৬৬ লক্ষ মাইল। কিন্তু ‘আজিম’ এর পরিমাপ করা কোন বিশেষজ্ঞের পক্ষে আদৌ সম্ভব হয়নি আর হবেও না।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নৈতিক চরিত্রের সর্বোত্তম সংগা দিয়েছেন উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা রা:। তিনি বলেছেন, কুরআনই ছিলো তাঁর চরিত্র। কুরআন সম্পর্কে আল্লাহ তা’আলা বলেছেন,“ওয়ালাকাদ আতাইনা সাবয়াম মিনাল মাসানি ওয়াল কুরআনিল আজিম” অর্থাৎ “আমি তোমাকে এমন সাতটি আয়াত দিয়ে রেখেছি যা বার বার আবৃত্তি করার মতো এবং তোমাকে দান করেছি মহান কুরআন”(সুরা হিজর:৮৭) কুরআনের বেলায়ও এ ‘আজিম’ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। যার অর্থ এ এক মহান বা বিশাল কিতাব, যার মহত্ব ও বিশালতার কোন সীমা পরিসীমা নেই। এটি সকল কালের জন্য প্রযোজ্য, যা কখনো সেকেলে বা পুরাতন হয় না। সকল কালের জন্য এটি নতুনভাবে আবির্ভুত হয়। কুরআনের মহত্ব সম্পর্কে আল্লাহ তা’আলা বলেন, ”আমি যদি এ কুরআন কোন পাহাড়ের উপড়ও অবতীর্ণ করে দিতাম তাহলে হে নবী! আপনি লক্ষ্য করতেন যে, আল্লাহর ভয়ে ধসে যাচ্ছে, দীর্ণ-বিদীর্ণ হচ্ছে।”(সুরা হাশর-২১) ”আমি আকাশ পৃথিবী ও পর্বতমালার সামনে এ আমানত (আল-কুরআন) পেশ করলাম। কিন্তু তারা তা গ্রহন করতে প্রস্তুত হল না, তারা ভয় পেয়ে গেল।কিন্তু মানুষ তার স্কন্ধে তুলে নিল।”(সুরা আহযাব-৭২)”অচিরেই আমি তোমার উপড় একটি ভারী কিছু রাখতে যাচ্ছি।” (সুরা মুয্যাম্মেল-৫)
যেহেতু রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছিলেন জীবন্ত কুরআন সেহেতু তাঁর চরিত্রও ছিল মহান। তাঁর চরিত্র বা সুন্নাহ সকল কালের জন্য প্রযোজ্য। তাঁর চরিত্র বা সুন্নাহ কখনো সেকেলে বা পুরাতন হয় না। বরং সকল যুগে সকল কালে রাসুলের চরিত্র ও সুন্নাহ নতুনভাবে কার্যকরী প্রতিষেধক। তাই তাঁর মহান চরিত্র চীর আধুনিক এবং যে কোন যুগ বা কালের সংকীর্ণতার উর্ধ্বে। আর এটিই ‘খুলুকে আজিম’ এর প্রধান বৈশিষ্ট্য। অর্থাৎ পৃথিবী যখন যেই সমস্যার সম্মুখীন হবে, রাসুলের চরিত্র ও সুন্নাহ তখন কার্যকরী প্রতিষেধক হিসাবে কাজ করবে। কুরআনই যেহেতু তাঁর চরিত্র আর কুরআনই যেহেতু স্বয়ংক্রিয়ভাবে হালনাগাদ (অঁঃড় টঢ়ফধঃবফ) সেহেতু রাসুললুল্লাহ সা: এর চরিত্রও স্বয়ংক্রিয়ভাবে হালনাগাদ (অঁঃড় টঢ়ফধঃবফ) ।
আপনি যদি আমাকে প্রশ্ন করেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের চরিত্র কেমন ছিল? তাহলে আমি আপনাকে পাল্টা প্রশ্ন করবো যে, আচ্ছা আপনি! পৃথিবীর দ্রব্য সামগ্রী সম্পর্কে একটা বর্ণনা পেশ করুন তো? আপনি বলবেন, তা কি আদৌ সম্ভব হতে পারে? তাহলে আমি আপনাকে বলবো, তাহলে আমি আপনাকে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের চরিত্র সম্পর্কে কিভাবে অবহিত করবো? কারণ আল কুরআনে বলছে, “ দুনিয়ার দ্রব্য সামগ্রী ‘কালীলা’ বা স্বল্প আর সেই কুরআনেই বলছে রাসুলের চরিত্র সম্পর্কে ‘খুলুকে আজিম’। অর্থাৎ তিনি বিশাল বা মহান চরিত্রের অধিকারী। দুনিয়ার সমস্ত দ্রব্য-সামগ্রীকে বলা হয়েছে “কালীলা” বা যতসামান্য স্বল্প আর রাসুলের চরিত্রকে বলছেন “আজিম” বা মহান। তাহলে আমি আপনাকে সেই মহান চরিত্রে বর্ণনা কিভাবে দিবো? আপনি যদি স্বল্পের উত্তর না দিতে পারেন তবে আমি কি করে আজিম এর উত্তর দিবো? (চলবে)
লেখক: প্রাবন্ধিক, গবেষক।
বিভাগ : ধর্ম দর্শন
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
রোমাঞ্চকর ম্যাচে বার্সাকে হারিয়ে শীর্ষে আতলেটিকো
জেসুসের জোড়া গোলের রাতে আর্সেনালের বড় জয়
বিলুপ্তির পথে মাটির ঘর
চোর সন্দেহে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ
প্রতিবন্ধী স্কুল শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের অভিযোগ
কেরু চিনিকলে আখ মাড়াই মৌসুমের উদ্বোধন
বিহারিরা কেমন আছে
লক্ষ্মীপুরে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি
আসাদ সরকারের পতন : নতুন সিরিয়ায় ইসরাইলি আগ্রাসন
মেটলাইফ বাংলাদেশের গ্রাহকরা ডিসকাউন্ট পাবেন ওশান প্যারাডাইস হোটেলস ও রিসোর্টে
১৫ নারী ও শিশুকে হস্তান্তর
আবাসন ও গার্মেন্ট খাতের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে
মেহেরপুরে বেড়েছে গরম কাপড় বিক্রি
কাশিয়ানীর হাট-বাজার নিষিদ্ধ পলিথিনে সয়লাব
অ্যানুয়াল বিজনেস কন্টিনিউয়িটি প্ল্যান ড্রিল ২০২৪ আয়োজন করলো ব্র্যাক ব্যাংক
সমস্যায় জর্জরিত আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স
সবুজ গালিচায় হলুদের সমারোহ
আখাউড়ায় ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের মেধা বৃত্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত
নিউ ইয়র্কের আদালতে অভিযুক্ত লুইজি
কিউবায় সমাবেশ