বিশ্বনবী (সা.) সমগ্র সৃষ্টির জন্য রহমত

Daily Inqilab হাফিজ মাছুম আহমদ দুধরচকী

১০ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০৫ এএম | আপডেট: ১০ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০৫ এএম

(পূর্বে প্রকাশিতের পর)
বিশ্বের সব মানুষের কাছে দ্বীনে মুহাম্মদীর প্রকৃত দিকনির্দেশনা পৌঁছে দেওয়ার প্রক্রিয়া ও কার্যক্রমই পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.)। বর্তমান মুসলিম উম্মাহর এই সংকটময় অবস্থা থেকে উত্তরণ ও ইসলামের হারানো গৌরব পুনরুদ্ধারের প্রধান উপায় হচ্ছে প্রিয় নবীকে ভালোবাসা ও অনুসরণ করা।

যেহেতু রাসুলের প্রতি ভালোবাসাকে আল্লাহ তাঁর প্রতি ভালোবাসার মাপকাঠি হিসেবে ঘোষণা করেছেন, সেহেতু রাসুলপ্রেমই আল্লাহপ্রাপ্তির পূর্বশর্ত! যার ভেতর রাসুলের প্রতি ভালোবাসা নেই, সে মুমিন হতে পারে না। শুধু বাহ্যিক সুন্নাত পালন রাসুলপ্রেম নয়। বাহ্যিক সুন্নাহর সঙ্গে আন্তরিক ও আত্মিক সম্পর্ক থাকতে হবে এবং এ আত্মিক সম্পর্কের ফলে প্রেমিকের দৃষ্টিতে শুধু প্রেমাস্পদই বিরাজ করে।

আল্লাহপাক বান্দার কল্যাণার্থে অসংখ্য ‘নিয়ামত ও রহমত’ প্রদান করেছেন। তার মধ্যে সর্বোত্তম ও সর্বশ্রেষ্ঠ ‘নিয়ামত ও রহমত’ হচ্ছে আমাদের প্রিয় নবীজির ইহধামে শুভাগমন! আর এই নিয়ামত ও রহমত পেয়ে কৃতজ্ঞতা প্রকাশেই আছে ইহকালীন শান্তি ও পরকালীন মুক্তির উপায়। যেহেতু প্রিয় নবীর শুভাগমন জগদ্বাসীর প্রতি আল্লাহর বিশেষ রহমত, তাঁর পদাঙ্ক অনুসরণে বিভ্রান্ত মানবজাতি আলোর পথের সন্ধান পেয়েছেন, গোমরাহীর অতলগহ্বরে নিমজ্জিত দিকভ্রম বনি আদম তাঁরই অসিলায় আশরাফুল মাখলুকাত তথা সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জাতি হিসেবে মর্যাদাপ্রাপ্ত। নির্যাতিত, নিষ্পেষিত, লাঞ্ছিত, মানব গোষ্ঠীকে তিনি চিরকল্যাণকর আদর্শের পথে আহ্বান করেছেন এবং সম্মান ও মর্যাদার উচ্চাসনে তাদের প্রতিষ্ঠিত করেছেন। সুতরাং তাঁর আবির্ভাব উম্মতের জন্য কত বড় রহমত ও সর্বশ্রেষ্ঠ নিয়ামত, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী উদ্যাপন করে সেই মহান রবের নিয়ামত প্রিয় নবীকে স্মরণ করে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার মধ্যেই রয়েছে দুনিয়া ও আখিরাতের মুক্তির পথ ও পাথেয়। তাই মহানবী (সা:) এর জীবনের সুমহান আদর্শের ওপর গভীর আলোকপাত করে মানব জীবনে তা বাস্তাবায়ন করার প্রত্যয়দীপ্ত শপথ নিতে হবে আজ। তাহলে তার জীবন দর্শনের সঠিক মূল্যায়ন হবে।

রাসুলুল্লাহ(সা.) গোত্রীয় শাসনের স্বৈরাচারে দগ্ধ, মুষ্টিমেয় বিত্তশালীর শোষণে নিঃস্ব, সামাজিক দূরাচারে অতিষ্ঠ মানুষের মুক্তির স্বপ্ন দেখেয়েছেন। তিনি বঞ্চিত মানুষের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে তাওহিদের বাণী প্রচারের দায়ে স্বজাতির নির্যাতনে নিরুপায় হয়ে জন্মভূমি ছেড়ে মদিনায় হিজরতে বাধ্য হয়েছিলেন।

অতঃপর ঐতিহাসিক মদিনা সনদ প্রণয়নের মাধ্যমে ইহুদি, পৌত্তলিক, খ্রিস্টান ও মুসলমানদের নিয়ে মদিনাতে একটি স্বাধীন-স্বতন্ত্র জাতি ও সার্বভৌম প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। অল্প সময়ের ব্যবধানে রাসুলের আদর্শিক জাগরণ সমগ্র আরবকে আয়ত্ত্ব করে নিয়েছিলেন। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, সামাজিক সুশাসন, অর্থনৈতিক স্বাবলম্বন একটি সুদৃঢ় ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। আজ যখন দেশের বিপুল মানুষ দারিদ্র্য সীমার নিচে বসবাস করছে, যখন অন্য-বস্ত্র-বাসস্থান-শিক্ষা-চিকিৎসার অভাব জনজীবনে প্রকট হয়ে উঠছে, যখন মানুষ একে অপরের দ্বারা নির্যাতিত ও অধিকার বঞ্চিত হচ্ছে- তখন ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.)-এর শিক্ষা হোক ও শপথ হোক রাসুল (সা.)’র ভালোবাসার দাবিতে সংঘাত নয়, চাই রাসুল (সা.)’র আদর্শের ভিত্তিতে ঐক্যবদ্ধ একটি শান্তিপূর্ণ সমাজ। আমরা রাসূল (সা.)’র সাথে যত বেশি মহব্বতের সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারব, যত বেশি দরুদ ও সালাম পাঠাব ততই বাতিল, তাগুত আমাদের কাছ থেকে দূরে সরে যাবে। ঈদে মিলাদুন্নবী সবার জন্য হোক মুবারক এটাই আমাদের প্রত্যাশা। (সমাপ্ত)

লেখক: বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ লেখক ও কলামিস্ট


বিভাগ : ধর্ম দর্শন


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

রোহিঙ্গাসংকট: সমাধানের পথ খুলুক দ্রুত
মাইজভা-ার শরিফ : ঐশ প্রেক্ষিত
রমজানে খাদ্য গ্রহণে সচেতন হোন
রমজানের রহমত-মাগফিরাত-নাজাতের বানে ভেসে যাক পাপ
আল্লাহ ছাড়া কোন আশ্রয়স্থল নাই
আরও
X

আরও পড়ুন

বিতর্কিত ওয়াকফ বিল নিয়ে উত্তাল ভারতের মুর্শিদাবাদ

বিতর্কিত ওয়াকফ বিল নিয়ে উত্তাল ভারতের মুর্শিদাবাদ

এশিয়ার তিন দেশ সফর করবেন শি জিনপিং

এশিয়ার তিন দেশ সফর করবেন শি জিনপিং

জুলাই গণঅভ্যুত্থান উজ্জীবিত আশার প্রতীক: মেক্সিকোতে স্বাধীনতা দিবসের বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রদূত মুশফিক

জুলাই গণঅভ্যুত্থান উজ্জীবিত আশার প্রতীক: মেক্সিকোতে স্বাধীনতা দিবসের বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রদূত মুশফিক

গাজা ‘পৃথিবীর দোযখে’ পরিণত হয়েছে, সংকট চরমে

গাজা ‘পৃথিবীর দোযখে’ পরিণত হয়েছে, সংকট চরমে

উত্তাল কলকাতা, মোদি-অমিত শাহের কুশপুত্তলিকা দাহ

উত্তাল কলকাতা, মোদি-অমিত শাহের কুশপুত্তলিকা দাহ

হার দিয়ে পিএসএল শুরু রিশাদের দলের

হার দিয়ে পিএসএল শুরু রিশাদের দলের

শেরাটন ভবনের মালিকানা বিতর্কের অবসান, হিস্যা বুঝে নিল ডিএনসিসি

শেরাটন ভবনের মালিকানা বিতর্কের অবসান, হিস্যা বুঝে নিল ডিএনসিসি

দেশের সাংবিধানিক নামে ‘জনকল্যাণ’ শব্দ চায় ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ

দেশের সাংবিধানিক নামে ‘জনকল্যাণ’ শব্দ চায় ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ

ছাগলনাইয়ায় অবৈধভাবে মাটি কাটার অভিযোগে সাতটি পিক-আপ জব্দ ও দুইটি এস্কেভেটর অকেজো

ছাগলনাইয়ায় অবৈধভাবে মাটি কাটার অভিযোগে সাতটি পিক-আপ জব্দ ও দুইটি এস্কেভেটর অকেজো

ভারতের বিতর্কিত ওয়াকফ বিলের বিরুদ্ধে  রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রতিবাদ জানাতে হবে : মাওলানা আহমদ হাসান ফুলতলী

ভারতের বিতর্কিত ওয়াকফ বিলের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রতিবাদ জানাতে হবে : মাওলানা আহমদ হাসান ফুলতলী

ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় গাজায়  এক দিনে নিহত ২৬ ফিলিস্তিনি

ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় গাজায় এক দিনে নিহত ২৬ ফিলিস্তিনি

সম্প্রীতির দেশে আগুন লাগাতে চায় এরা কারা

সম্প্রীতির দেশে আগুন লাগাতে চায় এরা কারা

অর্থনীতিতে আমরা স্বস্তির জায়গায় রয়েছি : গভর্ণর

অর্থনীতিতে আমরা স্বস্তির জায়গায় রয়েছি : গভর্ণর

উৎসবের নামে মুসলিমদের শিরকের পথে ঠেলে দিচ্ছে সরকার

উৎসবের নামে মুসলিমদের শিরকের পথে ঠেলে দিচ্ছে সরকার

নির্বাচন নইলে আন্দোলন

নির্বাচন নইলে আন্দোলন

প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্ব বাংলাদেশের জন্য সমৃদ্ধি বয়ে আনবে : আমিরাতের প্রেসিডেন্ট

প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্ব বাংলাদেশের জন্য সমৃদ্ধি বয়ে আনবে : আমিরাতের প্রেসিডেন্ট

জুলাই ফাউন্ডেশনের অর্থ আত্মসাৎ, নাগরিক কমিটির নেত্রী কারাগারে

জুলাই ফাউন্ডেশনের অর্থ আত্মসাৎ, নাগরিক কমিটির নেত্রী কারাগারে

কালুরঘাট সেতুসহ ভিত্তি প্রস্তর স্থাপনের জায়গা পরিদর্শন রেল সচিবের

কালুরঘাট সেতুসহ ভিত্তি প্রস্তর স্থাপনের জায়গা পরিদর্শন রেল সচিবের

মডেল মেঘনা কারাগারে

মডেল মেঘনা কারাগারে

ফিলিস্তিনের জনগণের পক্ষে ঐক্য গড়ে তোলার আহবান গণসংহতি আন্দোলনের

ফিলিস্তিনের জনগণের পক্ষে ঐক্য গড়ে তোলার আহবান গণসংহতি আন্দোলনের