জনবল সংকটে ব্যাহত হচ্ছে স্বাস্থ্যসেবা
০৬ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০১ এএম | আপডেট: ০৬ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০১ এএম
ডাক্তার, নার্স, টেকনিশিয়ান, জনবল সংকট, প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির অভাব, যা আছে তারও সঠিক ব্যাবহার না থাকাসহ নানা সমস্যায় জর্জরিত লালমোহন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে চিকিৎসা সেবা। ২০০১ সাল হাসপাতালে আনার পর থেকে ১ দিনের জন্যও ব্যবহার হয়নি এক্স-রে মেশিনটি। টেকনিশিয়ান ও জনবল না থাকায় নস্ট হয়ে যাচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকার যন্ত্রপাতি। ভোলা জেলার লালমোহন হাসপাতালটি ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হলেও সেবারমান বাড়েনি।
সরেজমিনে ও ভুক্তভোগী, সাধারণ জনগন ও উপজেলা স্বাস্থ্য ও প.প. কর্মকর্তা ডা. তৈয়বুর রহমান এসব তথ্য জানান।
জানা যায়, ২০০১ সালে এক্সরে মেশিন হাসপাতালে আনা হলে শুধু টেকনিশিয়ান সংকটের কারণে এক দিনের জন্যও ব্যাবহার করা হয়নি। যার কারণে অকেজো হয়ে পরেছে এক্স-রে মেশিনটি। ইসিজি মেশিনেরও একই অবস্থা তাও কিছু দিন চালু করা গেলেও প্রায়শই নস্ট থাকে। যার জন্য রোগীরা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন বলে জানালেন ইউএইচএফপিও ডাক্তার তৈয়বুর রহমান। হাসপাতালে এক্স-রে ও ইসিজি মেশিন থাকলেও টেকনিশিয়ানের অভাবে তা চালু করা হয়নি। এতে রোগীদের বাধ্য হয়েই পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হচ্ছে বাইরের ডায়াগনস্টিক বা ক্লিনিক থেকে। এতে গুনতে হচ্ছে বাড়তি অর্থ। যে এক্সরে পরীক্ষা হাসপাতালে খরচ যেত ১০০ টাকা বাইরে করতে হচ্ছে ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা, ইসিজির খরচ মাত্র ৬০ টাকা সেটা বাহিরে করতে লাগে ৩০০ টাকা এভাবে কয়েক গুন বেশী টাকা দিয়ে বাহিরে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে চিকিৎসা সেবা নিতে হয় রোগীদের।
কনসালন্টেট অপারেশন থিয়েটার চালু করার সকল সরঞ্জাম থাকলেও কনসালটেন্ট না থাকার কারনে তা চালু করা যাচ্ছে না। অনেক সময় কর্তৃপক্ষের কর্মস্থলে অনুপস্থিতি থাকার কারনে অধঃনস্তরা সঠিক ভাবে দ্বায়িত্ব পালন করছে না বলেই ধারনা অনেকের। নাম প্রকাশ না করে জনৈক বলেন এখানের ইউএইচএফপিও স্যার নিয়মিত থাকেনা যাও আসেন তাও হাজিরা দিয়েই তড়িঘড়ি করেরচলে যান।তিনি থাকলেও যদি নিয়মিত সকাল বিকাল কিছুটা মনিটরিং করত তবুও রোগীরা স্বাস্থ্যসেবা কিছুটা ভালো পেত।
তাছাড়া হাসপাতালে ডায়াগনস্টিক এর দালালের উৎপাত রয়েছে বেশ এবং তা প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা না গ্রহণ করাও লক্ষ্য করা গেছে। বিভিন্ন ডায়াগনস্টিক সেন্টার এর দালালরা গুর গুর করছে হাসপাতালে। পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার অভাবে জলাবদ্ধতার কারনে পানি বাহিত,ও ডেঙ্গু রোগের কারন যথেষ্ট। হাসপাতালে সামনে পাশে জলাবদ্ধতা পচা দূর্ঘন্ধে নাক চেপে আসা যাওয়া করতে হচ্ছে রোগী সহ সাধারন জনগনের। এ নিয়ে জানতে চাইলে যথেষ্ট ড্রেনেজ ব্যাবস্থা না থাকার কারন বলছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।পরিস্কার পরিছন্নতার বাজেট আসে তাও অপ্রতুল।
হাসপাতালে যথেষ্ট সিসিটিভি ক্যামেরা না থাকা,ভঙ্গুর বাউন্ডারি, পরিত্যক্ত ভবন-যা অপরাধীদের অভয়ারণ্য এবং তীব্র নিরাপত্তার অভাব বলে জানান তারা।রাতের বেলা বহিরাগত লোকের আড্ডা জমে।তবে জনবলের সংকটে চিকিৎসাসেবা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। উপজেলার প্রায় ৩ লাখ লোকের চিকিৎসার জন্য প্রতিষ্ঠিত এই প্রতিষ্ঠান থেকে প্রয়োজনীয় সেবা পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছে রোগীরা। এতে এই উপজেলার রোগীদের বাধ্য হয়ে ভোলা-বরিশাল ঢাকা যেতে হচ্ছে। যার ফলে রোগীদের গুনতে হচ্ছে হাজার হাজার টাকা ও পোহাতে হচ্ছে নানাবিধ সমস্যা।
বিশেষ করে গাইনি ও শিশু বিশেষজ্ঞ না থাকায় দুর্ভোগ বেশি হচ্ছে। শিশু বা নারীদের জটিল কোনো সমস্যা দেখা দিলেই চিকিৎসার জন্য জেলা সদরে বা বরিশালে যেতে পরামর্শ দিচ্ছে ডাক্তাররা।তাদের একটাই অজুহাত এখানে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেয়ার জন্য কাক্সিক্ষত ড ডাক্তার ও জনবল নেই। এতে সবচেয়ে বেশি বিড়ম্বনার মধ্যে পড়ে হৃতদরিদ্র রোগীরা।
হাসপাতালের সূত্র জানায়, ৫০ শয্যার লালমোহন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসকের ৩০টি পদের মধ্যে কর্মরত আছেন ৮ জন। ৩২ জন নার্স শূন্য পদ রয়েছে ২২টি। এর মধ্যে মেডিসিন, গাইনি, শিশু, অর্থোপেডিকস, কার্ডিওলজি, চক্ষু ও অ্যানেসথেসিয়ার মতো গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসকের পদ শূন্য। এ ছাড়া নার্সের পদ শূন্য রয়েছে। হাসপাতালে সিনিয়র স্টাফ নার্সদের ৩২টি পদ থাকলেও কর্মরত আছেন মাত্র ২০ জন। শুধু তাই নয়, শূন্য রয়েছে চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের বেশ কয়েকটি পদও। এর মধ্যে ওয়ার্ড বয়, অফিস সহায়ক, একটি মালি ও পরিচ্ছন্নতাকর্মীর পদ শূন্য আছে। রয়েছে টেকনিশিয়ানের সংকটও। ২০০১ সালে এক্সরে মেশিন হাসপাতালে আনা হলে শুধু টেকনিশিয়ান সংকটের কারনে এক দিনের জন্যও ব্যাবহার করা হয়নি। যার কারনে অকেজো হয়ে পরেছে এক্স-রে মেশিনটি। ইসিজি মেশিনের ও একই অবস্থা জানালেন ইউএইচএফপিও ডাক্তার তৈয়বুর রহমান। হাসপাতালে এক্স-রে ও ইসিজি মেশিন থাকলেও টেকনিশিয়ানের অভাবে তা চালু করা যায়নি। এতে রোগীদের চিকিৎসার স্বার্থে বাধ্য হয়েই পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হচ্ছে ডায়াগনস্টিক বা ক্লিনিক থেকে। এতে গুনতে হচ্ছে বাড়তি অর্থ। টাকার অভাবে গরীব অসহায়রা চিকিৎসা নিতে পারছেনা।জনগনের প্রশ্ন দেশে কোটি কোটি টাকা খরচ করে চিকিৎসার যন্ত্রপাতি কিনে হাসপাতালে রাখলে কি লাভ টেকনিশিয়ানের অভাবে চিকিৎসা সেবা পাচ্ছে না রোগীরা।
হাসপাতাল সূত্রে জানা জায়, গত পাঁচ বছর ধরে হাসপাতালে কোনো অপারেশন হচ্ছে না। সামান্য কাটাছেঁড়ার চিকিৎসা হলেও জটিল রোগীদের কোনো সেবা নেই হাসপাতালে।পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে ভোলা, বরিশাল ঢাকা। অ্যানেসথেসিয়া না থাকায় অপারেশন বন্ধ আছে।
হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে আউটডোরে কয়েকশ রোগী চিকিৎসা নিচ্ছে এবং ইনডোরে ৩০ থেকে ৩৫ জন ভর্তি হচ্ছে। এসব রোগীর চিকিৎসা দিতে হিমশিম খেতে হয় কর্মরত চিকিৎসক-নার্সদের।
হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীর বলেন, টেম্পু এক্সিডেন্ট করে তার ভাইয়ের পা ভেঙে গেছে। হাসপাতালে এলে কর্তব্যরত ডাক্তার পায়ের এক্স-রে করাতে বললেন। সরকারি হাসপাতালে এক্স-রে না থাকার কারন
বেশি খরচ দিয়ে প্রাইভেট ডায়াগনস্টিক থেকে এক্স-রে করাতে হয়েছে। এমন অভিযোগ আরও অনেকের।
হাসপাতালের পরিস্থিতি সম্পর্কে আবাসিক মেডিকেল চিকিৎসক (আরএমও) ডা. মো. মহসীন খানও বলেন একই কথা ্রচিকিৎসক ও নার্সের টেকনিশিয়ান সংকট চলছে দীর্ঘদিন থেকে। আমরা বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি, কিন্তু এখনো কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। অন্যদিকে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীর পদ শূন্য থাকায় আমাদের অনেক সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে ভোলা সিভিল সার্জন ডা. শফিকুজ্জামান ইনকিলাবকে জানান, ভোলায় ডাক্তার সমস্যা অনেক, ভোলায় কোন ডাক্তার নার্স থাকতে চায় না। কি অদ্ভুত ব্যাপার আমরা কোন ফরওয়ার্ডিং না দিলে কিভাবে তারা ট্রান্সপার হয়ে যায় তাও জানি না। এক্স-রে মেশিনটি ২০০১ সাল থেকে এক দিনের জন্যও ব্যাবহার হচ্ছে না, তা নিয়ে তিনি ইউএইচএফপিওর সাথে বলে জানতে পারেন। যে তা ইনস্টল করা হয়েছে কিন্তু ১ দিনও ব্যাবহার হয়নি, যা কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে অনেক বার। কিন্ত কোন সুফল পাওয়া যায়নি। তা ছাড়া লালমোহনের এইচএন্ডএফপিও ডাঃ তৈয়বুর রহমান হাসপাতালে থাকেনা। যার জন্যও অনেক সমস্যা হচ্ছে। এ বিষয়ে তাকে ও বরিশাল বিভাগীয় কর্মকর্তাকে চিঠির মাধ্যমে জানো হয়েছে। কিন্তু তারপরও তিনি নিয়মিত না গেলেও যেদিন যায় সেদিন দুপুর ১ টার পরেই চলে আসে ভোলায় তার বাড়িতে। হাসপাতালের সমস্যা নিয়ে লালমোহন ইউএইচএফপিও তাকে চিঠি মাধ্যমে জানালে তিনি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করে প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা গ্রহনের চেস্টা করব।
লালমোহন উপজেলা ৩ লাখ মানুষের বসবাস। তাদের স্বাস্থ্যসেবার একমাত্র ভরসা হচ্ছে এ হাসপাতাল। আর সেই হাসপাতালের যদি হয় এ অবস্থা তাহলে মানুষ চিকিৎসা সেবা পাবে কি করে? এ প্রশ্ন লালমোহন স্বাস্থসেবা বঞ্চিত ৩ লক্ষ মানুষের। তাই যত দ্রত সম্ভব হাসপাতালের ডাক্তার, নার্স, টেকনিশিয়ানসহ জনবল সংকট সমাধানের মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবার নিশ্চিত করবেন কর্তৃপক্ষ সে প্রত্যাশাই করছেন লালমোহনবাসীর।
বিভাগ : অভ্যন্তরীণ
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
শেষ বিকেলে লুইস-অ্যাথানেজের 'আক্ষেপে' ম্যাচে ফিরল বাংলাদেশে
রানআউট হজ,লুইসের ব্যাটে এগোচ্ছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ
জমকালো 'কনটেনন্ডার সিরিজ',কে কার বিপক্ষে লড়বেন?
তারেক রহমানের আর্থিক সহায়তা নিয়ে সিয়ামের বাড়িতে মীর হেলাল
অবশেষে ২৬ মামলার আসামি কুমিল্লার শীর্ষ সন্ত্রাসী আল-আমিন গ্রেফতার
'জুলাই অনির্বাণ’ এ রক্তপিপাসু হাসিনার নির্মমতা দেখে কাঁদছেন নেটিজেনরা
দেশনেত্রীর প্রতি অপরিসীম শ্রদ্ধা ও সম্মান
বিচার, সংস্কার ও নির্বাচনসহ সরকারের কাজের পরিধি বিশাল
অদক্ষ ফার্মাসিস্ট দ্বারাই চলছে ফার্মেসি
নির্বাচন কমিশন গঠন : গণতন্ত্রের পথে যাত্রা শুরু
বেনাপোল দিয়ে যাত্রী পারাপার কমেছে অর্ধেক, রাজস্ব আয় ও ব্যবসা বাণিজ্যে ধস
দৈনন্দিন জীবনে ইসলাম
মসজিদে পরে এসে ঘাড় ডিঙিয়ে সামনের কাতারে যাওয়া জায়েজ নেই
দুনিয়া ও আখেরাতের জন্য সুন্দর জীবন এবং কৃতজ্ঞতাবোধ
যুগে যুগে জুলুম ও জালিমের পরিণতি
সালাম ইসলামী সম্ভাষণ রীতির এক উৎকৃষ্ট উদাহরণ
করিমগঞ্জের নাম কি আদৌ শ্রীভূমি দিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ?
বিশাল স্বর্ণখনির সন্ধান পেলো চীন
মাছ ধরার নৌকার সঙ্গে ভারতীয় সাবমেরিনের সংঘর্ষ
যৌন পর্যটনের নতুন কেন্দ্র হয়ে উঠছে টোকিও : বাড়ছে ভিড়