রাখাইনে বাজারে জান্তার গোলায় নিহত ১২
০৩ মার্চ ২০২৪, ১২:০৭ এএম | আপডেট: ০৩ মার্চ ২০২৪, ১২:০৭ এএম
মিয়ানমারের পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশ রাখাইনের একটি ব্যস্ত বাজারে সামরিক বাহিনীর গোলাবর্ষণে অন্তত ১২ জন নিহত হয়েছেন। সেই সঙ্গে আহত হয়েছেন ৮০ জনেরও বেশি মানুষ। শুক্রবার এই ঘটনা ঘটেছে বলে রয়টার্সকে নিশ্চিত করেছে জান্তা-বিরোধী সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মি (এএ)। সীমান্তবর্তী রাখাইনের বেশ কিছু এলাকা বর্তমানে নিয়ন্ত্রণ করছে এই গোষ্ঠীটি। আরাকান আর্মির হাইকমান্ড জানিয়েছে, রাখাইনের রাজধানী ও বন্দরনগরী সিত্তের কাছে একটি যুদ্ধজাহাজ মোতায়েন করেছে সামরিক বাহিনী। শুক্রবার সেই জাহাজ থেকে সিত্তের নিকটবর্তী মিওমা বাজারকে লক্ষ্য করে একের পর এক গোলা নিক্ষেপ করা হয়। তার জেরেই ঘটেছে এসব হতাহতের ঘটনা। ক্ষমতাসীন জান্তা অবশ্য উল্টো তথ্য দিয়েছে। মিয়ানমারের রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিভিশন চ্যানেল মায়াবতীতে একটি বিবৃতি প্রদান করেছে সামরিক সরকার। সেখানে বলা হয়েছে, মিওমা বাজারে গোলাবর্ষণ করেছে আরকান আর্মি এবং এই হামলায় নিহত ও আহতের সংখ্যা সম্পর্কে এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। দু’পক্ষের দাবি স্বাধীনভাবে যাচাই করতে পারেনি রয়টার্স। এর একটি বড় কারণ, গত কয়েক দিন ধরে সিত্তে এবং রাখাইনের অন্যান্য শহরে ইন্টারনেট এবং মোবাইল ডেটা প্রবাহ সীমিত করেছে জান্তা। ফলে রাখাইনের বর্তমান পরিস্থিতি সংক্রান্ত হালনাগাদ অধিকাংশ তথ্যই জানা যাচ্ছে না। মিয়ানমারে সংঘাত-সহিংসতার চক্র শুরু হয়েছে ২০২১ সালে। ২০২০ সালের নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ তুলে ২০২১ সালের ০১ ফেব্রুয়ারি গণতান্ত্রিক সরকারকে হটিয়ে জাতীয় ক্ষমতা দখল করে দেশটির সামরিক বাহিনী। সেনাপ্রধান জেনারেল মিন অং হ্লেইং এই অভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দেন। সামরিক বাহিনী ক্ষমতা দখল করার পরপরই ফুঁসে উঠেছিল মিয়ানমারের গণতন্ত্র-পন্থী জনতা। গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনার দাবিতে দেশজুড়ে আন্দোলন শুরু করেন তারা। কিন্তু মিয়ানমারের পুলিশ ও নিরাপত্তাবাহিনীর সদস্যরা বিক্ষোভ দমনে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করা শুরু করার পর ২০২২ সালের দিকে গণতন্ত্র-পন্থীদের একাংশ জান্তা-বিরোধী বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোতে যোগ দেওয়া শুরু করে। ২০২৩ সালের অক্টোবরের শেষ দিক থেকে মিয়ানমারের বিভিন্ন প্রদেশে সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে সমন্বিত আক্রমণ শুরু করে মিয়ানমারের জান্তা-বিরোধী সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর জোট পিপলস ডেমোক্রেটিক ফোর্স (পিডিএফ)। পিডিএমভুক্ত তিন গোষ্ঠী ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স আর্মি (এমএনডিএ), আরাকান আর্মি (এএ) এবং তা’আং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মির (টিএনএলএ) এই সংঘাতে নেতৃত্ব দিচ্ছে। এই তিন গোষ্ঠী একত্রে থ্রি ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্স নামেও পরিচিত। গত প্রায় চার মাসের সংঘাতে মিয়ানমারের অন্তত ৪০টি শহর এবং গুরুত্বপূর্ণ শান প্রদেশসহ অন্তত ৫টি প্রদেশ দখল করে নিয়েছে পিডিএফ। অতি সম্প্রতি বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী রাখাইন প্রদেশ দখলের দ্বারপ্রান্তে রয়েছে আরাকান আর্মি। রাখাইনের রাজধানী সিত্তের শহরে এবং গ্রামাঞ্চল থেকে হাজার হাজার মানুষ পালিয়ে যাচ্ছেন। সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মি (এএ) যে কোনো সময় সিত্তেতে হামলা চালাতে পারে এমন আশঙ্কা থেকে সাধারণ মানুষ বিভিন্ন জায়গায় পালিয়ে যাচ্ছেন। শুক্রবার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে রাখাইন-ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম নারিনজারা নিউজ। স্থানীয় এক বাসিন্দা সংবাদমাধ্যমটিকে বলেছেন, “আরাকান আর্মি সিত্তে দখল করতে পারে এমন খবর শোনার পর মানুষ পালিয়ে যাচ্ছে। এখন তারা স্বাধীন অঞ্চলগুলোতে যাচ্ছেন।” ইয়াঙ্গুন-সিত্তে মহাসড়কে অবস্থিত আহ মিয়ান্ট কায়ুন মিন চং সেতুটি মাইন দিয়ে উড়িয়ে দিয়েছে মিয়ানমারের সামরিক জান্তা। মূলত আরাকান আর্মির যোদ্ধারা যেন সিত্তেতে প্রবেশ করতে না পারে সেটি নিশ্চিতে সেতুটি ধ্বংস করে দিয়েছে তারা। এতে করে সাধারণ মানুষের মনে আতঙ্ক বৃদ্ধি পেয়েছে। “গুরুত্বপূর্ণ ওই সেতুটি উড়িয়ে দেওয়ার মাধ্যমে কার্যত এখানকার বাসিন্দাদের আটকে ফেলা হয়েছে। যদি যুদ্ধ শুরু হয় তাহলে যুদ্ধ থেকে কিভাবে পালাবেন এ নিয়ে মানুষ শঙ্কিত। এ কারণে মানুষ এখন পালিয়ে যাচ্ছেন। তারা নিজেরাই সময়টি ব্যবহার করছেন।” যোগ করেন ওই বাসিন্দা। নারিনজারা নিউজ জানিয়েছে, সাধারণ মানুষের পাশাপাশি সেনাবাহিনীর পরিবারের সদস্যরাও সিত্তে ছেড়েছেন। বর্তমানে সিত্তের মোট বাসিন্দার এক তৃতীয়াংশ সেখানে অবস্থান করছেন। যারা রয়ে গেছেন তাদের মধ্যে কেউ আর্থিকভাবে স্বচ্ছল নন, কেউ বৃদ্ধ আবার কেউ কেউ নিজেদের মালপত্র চুরি নিয়ে চিন্তিত। যারা পালিয়েছেন তাদের বেশিরভাগ নৌকা ব্যবহার করে অন্যত্র সরে গেছেন। সিত্তেতে নদীর এক পাশ থেকে অপর পাশে যেতে এখন জনপ্রতি ৫০ হাজার কিয়েট খরচ করা লাগছে। তবে জান্তা বাহিনী সাধারণ মানুষকে পালানোর ক্ষেত্রেও বাধা দিচ্ছে বলে জানিয়েছেন অপর এক বাসিন্দা। কারণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেছেন, যদি আরাকান আর্মি হামলা চালায় তাহলে যেন বেসামরিকদের মানব-ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে সেনারা পালাতে পারেন সেজন্য সাধারণ মানুষকে পালাতে দেওয়া হচ্ছে না। একজন সামাজিককর্মী পালিয়ে যাওয়া মানুষদের পরামর্শ দিয়েছেন যেন তারা পর্যাপ্ত খাবার ও প্রয়োজনীয় সামগ্রী নিয়ে প্রস্তুত থাকেন। রয়টার্স, নারিনজারা নিউজ।
বিভাগ : আন্তর্জাতিক
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
দুর্নীতিবাজ অর্থ আত্মসাতকারীর বিরুদ্ধে বিজয়নগরে সংবাদ সম্মেলন
পিলখানার বিডিআর বিদ্রোহে হত্যা মামলায় মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামী র্যাবের হাতে গ্রেফতার
দিনাজপুরে ফ্যাসিষ্ট সরকারের ডিলারদের নামেই মাল বিক্রি করছে বর্তমান সুবিধাভোগীরা
তাবিথ আউয়াল বাফুফের নতুন সভাপতি
নির্মাতা রেদওয়ান রনির প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে সাদিয়া আয়মান
জলবায়ু পরিবর্তন রোধে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমাতে হবে
সিলটি আওয়াজ ও ক্যাম্পেইন কমিটির ইউকে’র সংবাদ সম্মেলন ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নামে মাত্র আন্তর্জাতিক !
২৮ অক্টোবরে লগি-বৈঠার হত্যাযজ্ঞের 'মাষ্টার মাইন্ড' শেখ হাসিনা-কক্সবাজারে জামায়াত নেতা মুহাম্মদ শাহজাহান
সমৃদ্ধ কল্যাণ রাষ্ট্র গঠনে জাতীয় ঐক্যের বিকল্প নেই-পীর সাহেব চরমোনাই
প্রেসিডেন্ট ফ্যাসিবাদের প্রোডাক্ট হলেও সাংবিধানিক শূন্যতা সৃষ্টি করা যাবে না: রিজভী
আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের দাবি মামুনুল হকের
রাজবাড়ীতে বিএনপির দুই নেতাকে আটকে মারধর করায় ১২জনের বিরুদ্ধে মামলা
তরুণ প্রজন্ম আগামী পঞ্চাশ বছর পর্যন্ত আওয়ামী লীগকে প্রতিহত করবে: মান্না
ঝিকরগাছায় বিএনপির নেতা নির্বাচন: সভাপতি সাবিরা মুন্নী, সম্পাদক নিপুণ
বিরামপুর থানা পুলিশের অভিযানে হত্যা মামলার- ৩ আসামি গ্রেফতার!
তারেক রহমানের ৩১ দফার দেয়াল লিখন
ঐক্যভঙ্গ হলে আ'লীগ সুযোগ পাবে - রাশেদ প্রধান
রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকে এমডি নিয়োগ নিয়ে নানামুখী ষড়যন্ত্র
হাবের কর্তৃত্ব দখলে মাঠে নামছে দু’টি গ্রুপ
জামায়াত মদিনার নয় মওদুদীর ইসলাম প্রতিষ্ঠা করতে চায়-আল্লামা মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী