ঢাকা   রোববার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ২৪ ভাদ্র ১৪৩১

ঈমান রক্ষার কুরআনী উপায়-১

Daily Inqilab মাওলানা মুহাম্মাদ আব্দুল মালেক

১৫ জুলাই ২০২৪, ১২:১২ এএম | আপডেট: ১৫ জুলাই ২০২৪, ১২:১২ এএম

আমাদের পরম সৌভাগ্য, আমরা মুসলিম। আমাদের রব আল্লাহ। তিনি ছাড়া আমাদের কোনো রব নেই, আর কোনো রবের প্রয়োজনও নেই। আমাদের নবী হযরত মুহাম্মাদ মুস্তফা (সা.)। তিনিই শেষ নবী, তাঁর পরে কোনো নবী নেই, কোনো নবুওয়তের আর প্রয়োজনও নেই। আমাদের দ্বীন ইসলাম। ইসলাম ছাড়া আমাদের আর কোনো দ্বীন নেই। আর কোনো দ্বীনের প্রয়োজনও নেই। এই আমাদের বিশ্বাস, আমাদের পরিচয়। এ ছাড়া আর কোনো পরিচয়ের আমাদের প্রয়োজন নেই।

আমাদের মাঝে আছে আল্লাহর সর্বশেষ ওহী- কুরআন ও সুন্নাহ, যা কিয়ামত পর্যন্ত সকল মুমিনের পথের দিশারী। সমস্যায়-সংকটে বান্দা যখন আল্লাহর বিধান অন্বেষণ করবে, সর্বাবস্থায় যা তার প্রথম কর্তব্য, অবশ্যই কুরআন ও সুন্নাহয় সে তা খুঁজে পাবে। আল্লাহ তাঁর পাক কালাম নাযিলই করেছেন বান্দাকে সরল পথ দেখাবার জন্য এবং অন্ধকার থেকে আলোতে আনবার জন্য। আলো ও আঁধার পৃথিবীতে ছিল, আছে এবং থাকবে। মানুষ যখন আলোর প্রত্যাশী হয় এবং আল্লাহর সামনে সমর্পিত হয়, তিনি তাকে আলো দান করেন।

পক্ষান্তরে কেউ যখন আঁধার অন্বেষণ করে আর আসমানী আলোর প্রতি বিমুখতা প্রদর্শন করে তখন আল্লাহ তাকে অন্ধকারে নিক্ষেপ করেন। এ-ই তাঁর সুন্নত, এই তাঁর শাশ্বত নিয়ম। এই আলোকিত ও আঁধারজীবী মানুষের বৈশিষ্ট্য ব্যাখ্যা করে খলীফায়ে রাশেদ হযরত আলী ইবনে আবী তালেব (রা.) বলেন, মানুষ তিন প্রকারের : এক. আলিমে রাব্বানী, যিনি প্রজ্ঞার সাথে মানুষের মাঝে ইলম বিতরণ করেন। দুই. মুতাআল্লিম, যিনি কুরআন ও সুন্নাহর ইলম অন্বেষণ করেন। এই দুই শ্রেণিই হচ্ছে মুক্তির পথের পথিক। পক্ষান্তরে তৃতীয় দলটি হচ্ছে ঐ নির্বোধ ও হীন মানুষের, যাদের কাছে গ্রহণ-বর্জনের কোনো মানদণ্ড নেই- না জ্ঞানের আলো, না জ্ঞানীর অনুসরণ। ফলে সকল ভ্রষ্ট-আহ্বানে এরা সাড়া দেয় এবং অজ্ঞতা ও ভ্রষ্টতায় নিপতিত হয়।

মুসলিম সমাজে এ শ্রেণির মানুষের উপস্থিতি খুবই দুর্ভাগ্যজনক। এ তো হতে পারে অমুসলিম-সমাজে, যাদের কাছে নেই ওহীর আলো। মুসলিম সমাজের কোনো ক্ষুদ্র অংশেরই তো গড্ডলিকা প্রবাহে ভেসে যাওয়ার কথা নয়। তবুও কিছু মানুষ ভেসে যায় এবং ভেসে যাবে, যারা মুসলিম সমাজে জন্মগ্রহণ করেও ইসলামকে হৃদয়ে ধারণ করে না, কিংবা কুরআন-সুন্নাহর আলো দ্বারা উপকৃত হয় না। কিছু মানুষ তো শিরক ও কুফরের স্রোতেও ভেসে যায় এবং ভেসে যাবে। যারা মুশরিক-মুনাফিকের অন্ধ অনুসারী, কুরআন-সুন্নাহয় যা কঠিনভাবে নিষিদ্ধ।

বিখ্যাত ফকীহ সাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেছেন, ‘তোমরা কেউ কারো এমন অন্ধ অনুসারী হয়ো না যে, সে ঈমানে থাকলে তুমিও ঈমানে, সে কুফরে গেলে তুমিও কুফরে!’ ভক্তি-শ্রদ্ধা, অনুসরণ-অনুকরণ সব কিছুরই নীতি ও বিধান আছে, মাত্রা ও ক্ষেত্র আছে। এই নীতিজ্ঞান ও মাত্রাজ্ঞানের অভাব মানুষকে জাহিল ও অজ্ঞ করে এবং এই নীতি ও বিধান লঙ্ঘনই মানুষকে অনাচারে লিপ্ত করে। শিরক ও কুফরের ক্ষেত্রে তো পিতামাতার অনুসরণও বৈধ নয়। কারণ, সন্তানের উপর পিতামাতার যে হক্ব তার চেয়েও বেশি হক্ব বান্দার উপর আল্লাহর। পিতামাতা সন্তানের পৃথিবীতে আগমন ও বেঁচে থাকার উপায়। পক্ষান্তরে আল্লাহ তার স্রষ্টা ও পালনকর্তা।

একই কথা উস্তাদ-শিক্ষক, মুরশিদ-মুরব্বি, নেতা-পরিচালক, গোত্র-সমাজ, ভাষা ও ভূখণ্ড সকল ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। এরা সবাই শ্রদ্ধা ও ভালবাসার পাত্র, কিন্তু দ্বীন ও ঈমানের অধিক নয়। বিরুদ্ধে তো নয়ই; বরং এই সকল শ্রদ্ধা নিয়ন্ত্রিত দ্বীনেরই নীতি ও বিধান দ্বারা। সুতরাং কারো দ্বারা যদি দ্বীনের অবমাননা হয়, সে যে-ই হোক, তার সাথে কোনো মুমিনের বন্ধুত্ব থাকতে পারে না। কারণ দ্বীনের অবমাননা ব্যক্তির কুফর ও মুনাফেকী প্রকাশ করে। কাফির ও মুনাফিক কি কখনো কোনো মুমিনের বন্ধু হতে পারে? কোথাও যদি আল্লাহর আয়াত ও বিধানের অবমাননা হতে থাকে তখন তো ঐ জায়গায় শারীরিক উপস্থিতিও বৈধ নয়।

মুশরিক-মুনাফিকের এহেন অপকর্মের সময় মুমিনদের করণীয় সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন : তোমাদের উপর তো কিতাবে এই বিধান নাযিল হয়েছিল যে, যখন তোমরা শুনবে আল্লাহর আয়াতসমূহ অস্বীকার করা হচ্ছে এবং সেগুলোর সাথে বিদ্রƒপ করা হচ্ছে তখন ওইসব লোকের সাথে বসবে না, যে পর্যন্ত না তারা অন্য কথায় লিপ্ত হয়। নতুবা তোমরাও তাদেরই মতো (মুনাফিক গণ্য) হবে। আর নিশ্চয়ই আল্লাহ মুনাফিক ও কাফিরদের জাহান্নামে একত্র করবেন। (সূরা নিসা : ১৪০)।

সূরা নিসার এই আয়াতটি মাদানী। অর্থাৎ হিজরতের পরে নাযিল হয়েছে। এ আয়াতে পূর্বের যে আয়াতের উদ্ধৃতি দেওয়া হয়েছে, মুফাসসিরগণ বলেন, তা হচ্ছে সূরা আনআমের আয়াত, যা নাযিল হয়েছিল হিজরতের আগে : আর যখন আপনি ওইসকল লোককে দেখবেন যারা আমার আয়াতসমূহে লিপ্ত হয় (অর্থাৎ অস্বীকার ও বিদ্রƒপ করে) তখন তাদের সঙ্গ ত্যাগ করুন, যে পর্যন্ত না তারা অন্য প্রসঙ্গে লিপ্ত হয়। আর শয়তান যদি আপনাকে ভুলিয়ে দেয় তাহলে স্মরণ হওয়ার পর ওই জালিমদের সাথে আর বসবেন না। (সূরা আনআম : ৬৭)।


বিভাগ : শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

গোল উৎসবে নেশন্স কাপে উড়ন্ত সূচনা জার্মানির

গোল উৎসবে নেশন্স কাপে উড়ন্ত সূচনা জার্মানির

জয়ে ইংল্যান্ডের সাউথগেট-পরবর্তী অধ্যায় শুরু

জয়ে ইংল্যান্ডের সাউথগেট-পরবর্তী অধ্যায় শুরু

পোপের ১৫৪ রানের পরেও ইংল্যান্ডের ৩২৫,কামিন্দু-সিলভায় লংকানদের লড়াই

পোপের ১৫৪ রানের পরেও ইংল্যান্ডের ৩২৫,কামিন্দু-সিলভায় লংকানদের লড়াই

স্কটল্যান্ডকে হোয়াইটওয়াশ করলো অস্ট্রেলিয়া

স্কটল্যান্ডকে হোয়াইটওয়াশ করলো অস্ট্রেলিয়া

মানিকগঞ্জে ইছামতী নদীতে থেকে মরদেহ উদ্ধার

মানিকগঞ্জে ইছামতী নদীতে থেকে মরদেহ উদ্ধার

‌'শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের কঠাগড়ায় দাঁড় করাতে হবে'

‌'শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের কঠাগড়ায় দাঁড় করাতে হবে'

শেষ ম্যাচও জিততে চায় বাংলাদেশ

শেষ ম্যাচও জিততে চায় বাংলাদেশ

সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় জামায়াতকে পাহারাদারের ভূমিকা পালন করতে হবে

সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় জামায়াতকে পাহারাদারের ভূমিকা পালন করতে হবে

আইওসির কোচিং কোর্সে বাংলাদেশের মাহফিজুল

আইওসির কোচিং কোর্সে বাংলাদেশের মাহফিজুল

নাটোরে পৌরসভার পরিচ্ছন্নতা সপ্তাহ শুরু

নাটোরে পৌরসভার পরিচ্ছন্নতা সপ্তাহ শুরু

পটিয়ায় জশনে জুলুসে ঈদে মিলাদ্ন্নুবী অনুষ্ঠিত

পটিয়ায় জশনে জুলুসে ঈদে মিলাদ্ন্নুবী অনুষ্ঠিত

মীরসরাইয়ে কমছে পানি তীব্র হচ্ছে নদীভাঙন

মীরসরাইয়ে কমছে পানি তীব্র হচ্ছে নদীভাঙন

বিএনপিতে কোনো সন্ত্রাসী চাঁদাবাজের ঠাঁই হবে না

বিএনপিতে কোনো সন্ত্রাসী চাঁদাবাজের ঠাঁই হবে না

নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দেয়াই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব

নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দেয়াই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব

নেমে গেছে বানের পানি স্পষ্ট হচ্ছে ক্ষতচিহ্ন

নেমে গেছে বানের পানি স্পষ্ট হচ্ছে ক্ষতচিহ্ন

সভাপতি শওকত সম্পাদক মানিক

সভাপতি শওকত সম্পাদক মানিক

সংযোগ সড়ক ভেঙে দুর্ভোগে ৬ গ্রামবাসী

সংযোগ সড়ক ভেঙে দুর্ভোগে ৬ গ্রামবাসী

বাড়িভিটা হারিয়ে দিশেহারা তিস্তা পাড়ের মানুষ

বাড়িভিটা হারিয়ে দিশেহারা তিস্তা পাড়ের মানুষ

ভয়াবহ বন্যায় কৃষি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদের সর্বনাশ

ভয়াবহ বন্যায় কৃষি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদের সর্বনাশ

মাদরাসা শিক্ষার সংস্কার : একটি পর্যালোচনা

মাদরাসা শিক্ষার সংস্কার : একটি পর্যালোচনা