ঢাকা   রোববার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ২৪ ভাদ্র ১৪৩১

প্রকৃত শান্তি শুধু ইসলামেই

Daily Inqilab এ. কে. এম. ফজলুর রহমান মুন্শী

২৬ জুলাই ২০২৪, ১২:০৬ এএম | আপডেট: ২৬ জুলাই ২০২৪, ১২:০৬ এএম

একটি সমীক্ষা অনুসারে জানা যায় যে, বর্তমান বিশে^ প্রায় আড়াই হাজারের মতো ক্ষুদ্র-বৃহৎ ধর্মমত প্রচলিত আছে। তন্মধ্যে ইসলামই একমাত্র সত্য ও পরিপূূর্ণ জীবন বিধান। যা আল্লাহপাকের মনোনীত। হযরত আদম (আ.)-এর মাধ্যমে ইসলামের অগ্রযাত্রা শুরু হয়েছে এবং তা পরিপূর্ণতা লাভ করেছে বিশ^নবী হযরত মোহাম্মাদ মোস্তাফা আহমাদ মুজতাবা (সা.)-এর মাধ্যমে। তাঁর উপর অবতীর্ণ হয়েছে সর্বশেষ আসমানী কিতাব আল কুরআন। ইসলামের সামগ্রিক পরিপূর্ণতার রূপ রেখা আল কুরআনে বিধৃত আছে।

তাই, ইহকাল ও পরকালের শান্তি ও সমৃদ্ধি কেবলমাত্র ইসলামেই খুঁজে পাওয়া সম্ভব। অন্য কোন ধর্মমত-এর সন্ধান দিতে পারেনি বলে সেগুলোর অপূর্ণতা বিশ^বাসীর নিকট সুস্পষ্ট হয়ে ফুটে উঠেছে। ইসলাম শান্তির ধর্ম, নিরাপত্তার ধর্ম। প্রকৃত সমৃদ্ধি, উন্নতি, অগ্রগতি ও উৎকর্ষ লাভের পথ ইসলাম সহজতর করে তুলেছে। ইসলামে শান্তি ও শাস্তি লাভের জীবন পরিক্রমা দুটি ধারার সম্মিলনে ফুলে-ফলে সুশোভিত হয়ে উঠেছে। একটি ধারা হলো বিশ^াসগত শান্তি এবং অপর ধারাটি হলো কর্মগত শান্তি। আজ আমরা সহৃদয় পাঠক ও পাঠিকাদের সামনে বিশ^াসগত শান্তির দিকটি উপস্থাপন করতে প্রয়াস পাব। আসুন, এবার সে দিকে লক্ষ্য করা হোক।

আরবি ভাষায় শব্দ মূল অথবা ক্রিয়া মূল অর্থাৎ মূল ধাতুকে অবলম্বন করেই শব্দ ও ক্রিয়ার পরিসর সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে চলে। এরই ধারাবাহিকতায় আলিফ, মীম, নুন অর্থাৎ ‘আমনুন’ হতেই ইসলামের বিশ^াসগত ধারাটির বিস্তৃতি ঘটেছে। আরবি আমনুন মূল ধাতুর বাংলা প্রতিশব্দ হলো শান্তি, স্বস্তি, নিরাপত্তা, উদ্বেগহীনতা ইত্যাদি। আমনুন মূল ধাতুর শব্দ মূল ‘আল আমনু’ শব্দটি আল কুরআনে তিন বার ব্যবহৃত হয়েছে।

যথা : (ক) ইরশাদ হয়েছে : আর যখন তাদের কাছে পৌঁছে কোন সংবাদ শান্তি সংক্রান্ত অথবা ভয়ের, তখন তারা সেগুলোকে রটিয়ে দেয়। আর যদি সেগুলো পৌঁছে দিত রাসূল পর্যন্ত অথবা তাদের শাসকদের পর্যন্ত, তখন সেসব বিষয় অনুসন্ধান করে দেখা যেত, যা তাতে অনুসন্ধান করার মত আছে। বস্তুত, আল্লাহর অনুগ্রহ ও করুণা যদি তোমাদের উপর বিদ্যমান না থাকত তবে তোমাদের অল্প কতিপয় লোক ছাড়া সবাই শয়তানের অনুসরণ করতে শুরু করত। (সূরা নিসা : ৮৩)।

(খ) ইরশাদ হয়েছে : যাদেরকে তোমরা আল্লাহর সাথে শরীক করে রেখেছ, তাদেরকে কিরূপ ভয় কর? অথচ তোমরা ভয় করো না যে, তোমরা আল্লাহর সাথে এমন বস্তুকে শরীক করছ, যাদের সম্পর্কে আল্লাহপাক তোমাদের প্রতি কোন প্রমাণ অবতীর্ণ করেননি। অতএব, উভয় সম্প্রদায়ের মধ্যে শান্তি লাভের অধিক যোগ্য কে? যদি তোমরা জ্ঞানী হয়ে থাক। (সূরা-আনয়াম : আয়াত-৮১)।

(গ) ইরশাদ হয়েছে : যারা ঈমান আনে এবং স্বীয় বিশ^াসকে শেরেকীর সাথে মিশ্রিত করে না, তাদের জন্যই শান্তি ও এবং তারাই সুপথগামী। (সূরা আনয়াম : ৮৩)। লক্ষ্য করলে দেখা যায় যে, উল্লিখিত তিনটি আয়াতে ‘আল আমনু’ শব্দের মাধ্যমে শান্তি ও নিরাপত্তাকেই বুঝানো হয়েছে।

আর আমনুন মূল ধাতু হতে উৎসারিত আমনান্ শব্দটি আল কুরআনে তিন বার ব্যবহৃত হয়েছে। যথা : (ক) ইরশাদ হয়েছে : যখন আমি কাবা গৃহকে মানুষের জন্য সম্মিলন স্থল ও শান্তির আলয় করলাম, আর তোমরা ইবরাহীমের দাঁড়ানোর স্থানকে নামাযের জায়গা বানাও এবং আমি ইবরাহীম ও ইসমাঈলকে আদেশ করলাম, তোমরা আমার গৃহকে তাওবাহকারী, অবস্থানকারী ও রুকু সেজদাহকারীদের জন্য পবিত্র রাখ। (সূরা বাকারাহ : আয়াত ১২৫)।

(খ) ইরশাদ হয়েছে : যখন ইবরাহীম বললেন, হে পরওয়ার দিগার। এ স্থানকে তুমি শান্তিধাম করো এবং এর অধিবাসীদের মধ্যে যারা আল্লাহ ও কিয়ামতে বিশ^াস করে, তাদেরকে ফলের দ্বারা রিজিক দান করো। (সূরা বাকারাহ : ১২৩)।

(গ) ইরশাদ হয়েছে : এবং তাদের ভয়-ভীতির পরিবর্তে অবশ্যই তাদেরকে শান্তি দান করবেন। তারা আমার ইবাদত করবে এবং আমার সাথে কাউকে শরীক করবে না। (সূরা নূর : ৫৫)। এই তিনটি আয়াতেও আমনান, শব্দের অর্থ শান্তি এবং স্বস্তি ও উদ্বেগহীনতা ইত্যাদি।

আর আমনুন, মূল ধাতু হতে উৎপাদিত আমানাতান্ শব্দটির ব্যবহার আল কুরআনে দু’বার হয়েছে। যথা- (ক) ইরশাদ হয়েছে : অতঃপর তোমাদের উপর শোক ও দুশ্চিন্তার পর শান্তি অবতীর্ণ করলেন, যা ছিল তন্দ্রার মতো। (সূরা আলে ইমরান : ১৫৪)।

(খ) ইরশাদ হয়েছে : যখন তিনি নিজের পক্ষ হতে তোমাদের উপর তন্দ্রাচ্ছন্নতা আরোপ করেন তোমাদের প্রশান্তির জন্য এবং তোমাদের উপর আকাশ হতে পানি অবতরণ করেন। (সূরা আনফাল : ১১)। এই দুটি আয়াতেও আমানাতান শব্দের দ্বারা শান্তি এবং নিরাপত্তাকেই বুঝানো হয়েছে।

অনুরূপভাবে আমনুন মূল ধাতু হতে উৎসারিত আরবি ভাষার যাবতীয় শব্দাবলি যেমন : ঈমান আমনান, আল আমীন, আমানাত, মু’মিন, মুমিনাত ইত্যাদির মাঝে ও শান্তি ও স্বস্তির ফাল্গুধারা প্রবাহিত আছে। তাই, ইসলামে বিশ^াস গত শান্তিকে অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে এবং যেখানে এই শান্তির রেশ অবশিষ্ট নেই, তাকে ইসলাম বহির্ভূত বলে সাব্যস্ত করা হয়েছে।


বিভাগ : শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

গোল উৎসবে নেশন্স কাপে উড়ন্ত সূচনা জার্মানির

গোল উৎসবে নেশন্স কাপে উড়ন্ত সূচনা জার্মানির

জয়ে ইংল্যান্ডের সাউথগেট-পরবর্তী অধ্যায় শুরু

জয়ে ইংল্যান্ডের সাউথগেট-পরবর্তী অধ্যায় শুরু

পোপের ১৫৪ রানের পরেও ইংল্যান্ডের ৩২৫,কামিন্দু-সিলভায় লংকানদের লড়াই

পোপের ১৫৪ রানের পরেও ইংল্যান্ডের ৩২৫,কামিন্দু-সিলভায় লংকানদের লড়াই

স্কটল্যান্ডকে হোয়াইটওয়াশ করলো অস্ট্রেলিয়া

স্কটল্যান্ডকে হোয়াইটওয়াশ করলো অস্ট্রেলিয়া

মানিকগঞ্জে ইছামতী নদীতে থেকে মরদেহ উদ্ধার

মানিকগঞ্জে ইছামতী নদীতে থেকে মরদেহ উদ্ধার

‌'শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের কঠাগড়ায় দাঁড় করাতে হবে'

‌'শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের কঠাগড়ায় দাঁড় করাতে হবে'

শেষ ম্যাচও জিততে চায় বাংলাদেশ

শেষ ম্যাচও জিততে চায় বাংলাদেশ

সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় জামায়াতকে পাহারাদারের ভূমিকা পালন করতে হবে

সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় জামায়াতকে পাহারাদারের ভূমিকা পালন করতে হবে

আইওসির কোচিং কোর্সে বাংলাদেশের মাহফিজুল

আইওসির কোচিং কোর্সে বাংলাদেশের মাহফিজুল

নাটোরে পৌরসভার পরিচ্ছন্নতা সপ্তাহ শুরু

নাটোরে পৌরসভার পরিচ্ছন্নতা সপ্তাহ শুরু

পটিয়ায় জশনে জুলুসে ঈদে মিলাদ্ন্নুবী অনুষ্ঠিত

পটিয়ায় জশনে জুলুসে ঈদে মিলাদ্ন্নুবী অনুষ্ঠিত

মীরসরাইয়ে কমছে পানি তীব্র হচ্ছে নদীভাঙন

মীরসরাইয়ে কমছে পানি তীব্র হচ্ছে নদীভাঙন

বিএনপিতে কোনো সন্ত্রাসী চাঁদাবাজের ঠাঁই হবে না

বিএনপিতে কোনো সন্ত্রাসী চাঁদাবাজের ঠাঁই হবে না

নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দেয়াই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব

নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দেয়াই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব

নেমে গেছে বানের পানি স্পষ্ট হচ্ছে ক্ষতচিহ্ন

নেমে গেছে বানের পানি স্পষ্ট হচ্ছে ক্ষতচিহ্ন

সভাপতি শওকত সম্পাদক মানিক

সভাপতি শওকত সম্পাদক মানিক

সংযোগ সড়ক ভেঙে দুর্ভোগে ৬ গ্রামবাসী

সংযোগ সড়ক ভেঙে দুর্ভোগে ৬ গ্রামবাসী

বাড়িভিটা হারিয়ে দিশেহারা তিস্তা পাড়ের মানুষ

বাড়িভিটা হারিয়ে দিশেহারা তিস্তা পাড়ের মানুষ

ভয়াবহ বন্যায় কৃষি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদের সর্বনাশ

ভয়াবহ বন্যায় কৃষি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদের সর্বনাশ

মাদরাসা শিক্ষার সংস্কার : একটি পর্যালোচনা

মাদরাসা শিক্ষার সংস্কার : একটি পর্যালোচনা