নারীর মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় মহানবী (সা.)-এর অতুলনীয় আদর্শ
০৭ অক্টোবর ২০২৩, ১২:০২ এএম | আপডেট: ০৭ অক্টোবর ২০২৩, ১২:২১ এএম
(গত দিনের পর) নবী করীম (সা.)-এর সময় নারীরাও পুরুষদের পাশাপাশি আরবের ব্যবসাক্ষেত্রে অবদান রেখেছেন। তাদের মধ্যে আরবের তৎকালীন মহিলা ব্যবসায়ী খাদিজা (রা.)-র নাম উল্লেখযোগ্য। হযরত খাদিজা (রা.) আরবের একজন সম্রান্ত ব্যবসায়ী ছিলেন। তার মাধ্যমেই হযরত মুহাম্মদ (সা.) ব্যবসায় শিক্ষা লাভ করেন। মুহাম্মদ (সা.)-র সততায় অভিভূত হয়ে খাদিজা (রা.) নিজেই তাঁকে ব্যবসায় নিয়োগ দিয়েছিলেন এবং পরবর্তীতে স্বামী হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন। সুতরাং, খাদিজা (রা.)-র ব্যবসার বিষয়টি থেকে বুঝা যায় ইসলাম ধর্মে কখনোই নারী ও কন্যা শিশুদেরকে অসম্মান বা অমর্যাদা করা হয়নি। বরং, যখনই নারী ও কন্যা শিশুদের প্রতি অন্যায়, অবিচার হয়েছে মুহাম্মদ (সা.) তারর কঠোর প্রতিবাদ করেছেন। তিনি কন্যা সন্তানদেরকে একেকটি বেহেশতের সাথে তুলনা করেছেন।
মুসলিম উম্মাহ মনে করে- কন্যা সন্তান প্রতিপালনের তিনটি ফযিলত রয়েছে। সকল ফযীলতের সারমর্ম হল তিনটি জিনিস। এক. আল্লাহ তাআলা জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিবেন। দুই. জান্নাত দান করবেন। তিন. আল্লাহ তাআলা তাকে জান্নাতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গী হওয়ার সৌভাগ্য দান করবেন। যা সফলতার সর্বোচ্চ চূড়া বলে মনে করেন যেকোনো মুসলিম মাত্রই। কন্যা সন্তানের জন্মে বেশি আনন্দ প্রকাশ করা ইসলামের শিক্ষা। কন্যা সন্তান জন্ম নিলে আনন্দ প্রকাশ করা এবং এটিকে একটি সুসংবাদ মনে করার সুনির্দিষ্ট নির্দেশ ইসলামে বিদ্যমান। তাইতো কন্যা সন্তান জন্মের সংবাদকে ‘সুসংবাদ’ বলে অভিহিত করা হয়েছে। অনেক ইসলামিক স্কলার লেখেন, যেহেতু কন্যা সন্তান জন্মানোর কারণে নিজেকে ছোট মনে করা, একে অপমান ও অসম্মানের কারণ মনে করা কাফিরদের কাজ, তাই মুসলমানগণের উচিত, কন্যা সন্তানের জন্মের কারণে অধিক খুশি ও আনন্দ প্রকাশ করা।
আল্লাহ তায়ালা বলেন, যখন তাদের কাউকে কন্যা সন্তানের সুসংবাদ দেওয়া হয়, তখন তাদের মুখ কাল হয়ে যায় এবং অসহ্য মনস্তাপে ক্লিষ্ট হতে থাকে। তাকে শোনানো সুসংবাদের দুঃখে সে লোকদের কাছ থেকে মুখ লুকিয়ে থাকে। সে ভাবে, অপমান সহ্য করে তাকে থাকতে দেবে, না তাকে মাটির নীচে পুতে ফেলবে। শুনে রাখো, তাদের ফয়সালা খুবই নিকৃষ্ট। (সূরা নাহল, আয়াত: ৫৮, ৫৯)। নারীদের আবেগ-অনুভূতির প্রতিও তিনি (সা.) যথেষ্ট খেয়াল রাখতেন। ‘একবার নামাজ পড়াবার সময় তিনি (সা.) একটি বাচ্চার কান্না শুনতে পেলেন। এ জন্য তিনি তাড়াতাড়ি নামাজ পড়ানো শেষ করলেন। পরে বললেন, একটি বাচ্চা কাঁদছিল, আমার মনে হলো, ওর মায়ের মনে নিশ্চয় কষ্ট হচ্ছে। কাজেই, আমি তাড়াতাড়ি নামাজ শেষ করলাম, যাতে বাচ্চাটার মা তার বাচ্চার খবর নিতে পারে।’ (সহিহ বুখারী, হাদিস নং: ৭০৭ - ৭১০)।
বিধবাদের সাহায্যকারীদের সম্পর্কে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, বিধবা ও মিসকীনের জন্য (খাদ্য যোগাতে) সচেষ্ট ব্যক্তি আল্লাহ্র পথে জিহাদরত ব্যক্তি সমতুল্য এবং যারা রাতে (নফল) ইবাদত করে ও দিনে সিয়াম রাখে তাদেরও সমতুল্য। (সহিহ বুখারী- ৫৩৫৩; সহিহ মুসলিম- ২৯৮২; নাসায়ী- ২৫৭৭; তিরমিজি ১৯৬৯; ইবনে মাজাহ- ২১৪০)। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে সে ব্যক্তিই সর্বোত্তম যে তার স্ত্রীর নিকট উত্তম, আর আমি তোমাদের মধ্যে আমার স্ত্রীদের নিকট সর্বোত্তম ব্যক্তি। (ইবনে মাজাহ, হাদিস নং- ১৯৭৭, তিরমিজি, হাদিস নং- ৩৮৯৫)। এ হাদীস দ্বারা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উম্মতকে এ শিক্ষা দিয়েছেন যে, স্ত্রীদের সাথে ভালো ব্যবহার করতে হবে, তাদের সাথে ঔদ্ধত্য আচরণ করা যাবে না। স্ত্রীর প্রতি সদাচরণের ইঙ্গিত দিয়ে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা তাদের (নারীর) সঙ্গে উত্তম আচরণ করো এবং উত্তম আচরণ করার শিক্ষা দাও। (সূরা নিসা, আয়াত: ১৯)।
পবিত্র কোরআনে অন্যত্র বলা হয়েছে, ‘আত্মসমর্পণকারী পুরুষ ও নারী, বিশ্বাসী পুরুষ ও নারী, অনুগত পুরুষ ও নারী, সত্যবাদী পুরুষ ও নারী, ধৈর্যশীল পুরুষ ও নারী, নম্র পুরুষ ও নারী, দানশীল পুরুষ ও নারী, রোজা পালনকারী পুরুষ ও নারী, সম্ভ্রম হেফাজতকারী পুরুষ ও নারী এবং আল্লাহকে অধিক সম্মানকারী পুরুষ ও নারীর জন্য আল্লাহ ক্ষমা ও প্রতিদান রেখেছেন।’ (সূরা আহজাব, আয়াত: ৩৫)। হাকীম ইবনু মু’আবিয়াহ আল-কুশাইরী (রহ.) হতে তার পিতা থেকে বর্ণিত: তিনি বলেন, একদা আমি বলি, হে আল্লাহ্র রাসূল! আমাদের কারো উপর তার স্ত্রীর কি হক রয়েছে? তিনি বললেন : ‘তুমি যখন আহার করবে তাকেও আহার করাবে। তুমি পোশাক পরিধান করলে তাকেও পোশাক দিবে। তার মুখম-লে মারবে না, তাকে গালমন্দ করবে না এবং পৃথক রাখতে হলে ঘরের মধ্যেই রাখবে। (আবু দাউদ, হাদিস নং- ২১৪২ - ২১৪৪)।
সুতরাং স্পষ্টতই সকলের অনুধাবনযোগ্য যে ইসলাম এমনই এক জীবন ব্যবস্থা, যা নারী-পুরুষ প্রত্যেকের অধিকার খুব সুন্দরভাবে সংরক্ষণ করে এবং একটি সুন্দর সমাজ গঠনে নারী-পুরষ উভয়ের অবদান রাখার বিষয়টি ঘোষণা করে। পরিশেষে, স্বীকার করতেই হবে যে রাসুল (সা.) নারীর যে মর্যাদা, অধিকার ও সম্মান প্রতিষ্ঠা করে দেখিয়েছেন তা বিরল। পৃথিবীর বুকে এর চেয়ে বড় ইনসাফ কোনোদিনও অন্য কোনো ধর্ম বা পা-িত্যের মাঝে আসতে পারে না। মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে সেই মহান ব্যক্তিত্ব রাসূল (সা.)-এর প্রতি আনুগত্যে অটল থাকার এবং তাঁর প্রতিষ্ঠিত নারীর মর্যাদা উপলব্ধি করার এবং সে অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করার তাওফিক দান করুন, আমীন।
বিভাগ : ইসলামী জীবন
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
বায়ুদূষণে শীর্ষে ঢাকা
ফতুল্লায় হত্যা মামলার আসামি কেরানিগঞ্জে গ্রেপ্তার
যৌথ বাহিনীর অভিযানে বান্দরবানে কেএনএফের ৩ সদস্য নিহত
রাজশাহীতে মোটরসাইকেলের কাগজপত্র দেখতে চাওয়ায় পুলিশকে মারপিট, যুবক আটক
স্বাচিপ রাজশাহী জেলা শাখার সভাপতি ডা. জাহিদ, সম্পাদক ডা. অর্ণা জামান
স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রগঠনের দাবিতে সারাদেশে জেলা ও মহানগরীতে ইসলামী
খালেকুজ্জামানের বাড়ী সরকারিভাবে পুননির্মাণের দাবি - ইসলামী মুক্তিযোদ্ধা পরিষদ
কাশ্মীরে সন্ত্রাসী হামলায় নিহত সাবেক বিজেপি নেতা
সঠিক ওজন ও পরিমাপ নিশ্চিতকরণে বিএসটিআই নিরলস কাজ করে যাচ্ছে : প্রধানমন্ত্রী
মানসম্মত পণ্য উৎপাদনে সরকার নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে: প্রেসিডেন্ট
বিক্ষোভ, গাড়ি ভাঙচুর, অটোরিকশাচালকদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া
কিরগিজস্তানে আহত বাংলাদেশি ছাত্রদের দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনুন
শিরোপার রুদ্ধশ্বাস অপেক্ষা : শেষ ম্যাচে মাঠে নামছে সিটি-আর্সেনাল
কোরবানির গোস্ত দিয়ে কোন অনুষ্ঠান করে টেবিল বসিয়ে টাকা বা উপহার নেওয়া প্রসঙ্গে।
মানিকগঞ্জ-ঢাকা রেললাইন প্রসঙ্গে
কমিউনিটি ক্লিনিক দাঁড়িয়ে আছে দোরগোড়ায়
ব্যাংক ও আর্থিক খাতে বেপরোয়া লুটপাট
বেগম সুফিয়া কামাল এবং কবি ও সাহিত্য সমালোচক আবদুল কাদির নানাভাবে দেশের শিল্প-সাহিত্যকে ঋদ্ধ করেছেন : সেলিনা হোসেন
নগরমুখী জনস্রোত রোধ করতে হবে
২৪ ঘন্টা থেকে সাত দিনের মধ্যে মৃত বীমা দাবি পরিশোধ করবে এনআরবি ইসলামিক লাইফ ইনসুরেন্স কোম্পানি