রোজা রেখে কী ইনসুলিন রেসিস্টেন্স নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব?
১৮ মার্চ ২০২৫, ১০:৩৪ এএম | আপডেট: ১৮ মার্চ ২০২৫, ১০:৫০ এএম

ইনসুলিন রেসিস্টেন্স শব্দটি সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বেশ পরিচিত হয়ে উঠেছে। এটি ঘটে যখন শরীরের কোষ ইনসুলিন ব্যবহার করতে পারে না। বরং শরীর ইনসুলিনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। এই অবস্থায় শরীরে গ্লুকোজ বা ব্লাড সুগার বেড়ে যায়, যা টাইপ টু ডায়াবেটিস, স্থূলতা এবং উচ্চ রক্তচাপের মতো জটিলতার কারণ হতে পারে। ইনসুলিন রেসিস্টেন্স এবং এটা রোজা রেখে নিয়ন্ত্রণ করা যায় কিনা সে সংক্রান্ত বিষয় উঠে এসেছে বিবিসির প্রতিবেদনে।
ইনসুলিন কী: ইনসুলিন হল মানবদেহে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হরমোন, যা আমাদের শরীরে রক্তের শর্করা বা গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। গ্লুকোজ শরীরের শক্তির প্রধান উৎস, এবং যখন শরীরে গ্লুকোজের মাত্রা বেড়ে যায়, তখন অগ্নাশয় থেকে ইনসুলিন নিঃসৃত হয়। এটি গ্লুকোজকে শরীরের কোষে প্রবাহিত হতে সাহায্য করে, যেখানে তা শক্তির উৎস হিসেবে ব্যবহার হয় অথবা ভবিষ্যতে ব্যবহারের জন্য সংরক্ষণ করা হয়।
ইনসুলিন রেসিস্টেন্স: ইনসুলিন রেসিস্টেন্স তখন ঘটে যখন শরীরের কোষ ইনসুলিন ব্যবহার করার পরিবর্তে এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ তৈরি করে। ফলে, অগ্নাশয় অতিরিক্ত ইনসুলিন তৈরি করতে থাকে, যার ফলে রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ বাড়তে থাকে। এটি টাইপ টু ডায়াবেটিস এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। ইনসুলিন রেসিস্টেন্সের কারণ ইনসুলিন রেসিস্টেন্সের পেছনে বেশ কয়েকটি কারণ রয়েছে, যেমন:
স্থূলতা: পেটে অতিরিক্ত চর্বি শরীরে ইনসুলিন রেসিস্টেন্স বাড়াতে পারে।
শারীরিক পরিশ্রমের অভাব: জীবনযাপনে শারীরিক কার্যকলাপের অভাব এই অবস্থার সৃষ্টি করতে পারে।
খারাপ খাদ্যাভ্যাস: প্রক্রিয়াজাত খাবার, চিনিযুক্ত খাবার ইত্যাদি রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়িয়ে ইনসুলিন রেসিস্টেন্স সৃষ্টি করতে পারে।
ঘুমের সমস্যা: ঘুমের অভাব বা ঘুমের মান খারাপ হলে আমাদের শরীরের ইনসুলিন সংবেদনশীলতাকে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
জেনেটিক্স: কিছু মানুষ জিনগতভাবে এই সমস্যা হতে পারে।
দীর্ঘমেয়াদি মানসিক চাপ: আমাদের শরীরের স্ট্রেস হরমোন (যেমন করটিসল) রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে ইনসুলিনের ক্ষমতাকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে।
স্বাস্থ্যগত জটিলতা: পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম এবং ফ্যাটি লিভারের মতো রোগগুলো ইনসুলিন রেসিস্টেন্সের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
বয়স: বয়স যতো বাড়ে, আমাদের অঙ্গ এবং তাদের কোষ ইনসুলিনের প্রতি সাড়া দেওয়ার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। এর ফলে ধীরে ধীরে ইনসুলিন রেসিস্টেন্স তৈরি হয়।
রোজায় কী ইনসুলিন রেসিস্টেন্স সম্ভব: রমজান মাসে মুসলমান সম্প্রদায়ের অনেকে এই মাসে নিয়মিত রোজা রাখেন। তবে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ হলো যে, যারা কোনো অসুস্থতা বা রোগে ভুগছেন, তাদের রোজা রাখার আগে চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করা উচিত। ইউনিভার্সিটি হাসপাতাল বার্মিংহামের সাথে যুক্ত ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ওয়াসিম হানিফ বলেন, বিশেষ করে যারা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত, তাদের রোজা রাখার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করা উচিত। তিনি বলেন, যদি আপনার ডায়াবেটিস থাকে, তবে রোজা রাখা আপনার জন্য বিপজ্জনক হতে পারে এবং এটি অন্যান্য স্বাস্থ্যগত জটিলতাও সৃষ্টি হতে পারে।
তার মতে, কিছু চিকিৎসা গবেষণায় দেখা গেছে যে রোজা রাখা ইনসুলিন সংবেদনশীলতা (ইনসুলিনের প্রতি শরীরের প্রতিক্রিয়া) বাড়িয়ে দিতে পারে, বিশেষ করে যারা টাইপ টু ডায়াবেটিস বা ইনসুলিন রেসিস্টেন্সে আক্রান্ত। এছাড়া রমজান মাসে অনেকের ওজন হ্রাস হতে পারে বা শরীরের অতিরিক্ত চর্বি কমে যেতে পারে। এই পরিবর্তন ইনসুলিনের প্রতি আমাদের শরীরের সংবেদনশীলতা এবং মেটাবলিজম অর্থাৎ হজমশক্তিতে প্রভাব ফেলতে পারে, বিশেষত যারা স্থূলকায় (মোটা) তাদের ক্ষেত্রে।
তিনি আরও বলেন, রমজান মাসে রোজা রাখার ফলে ইনসুলিন রেসিস্টেন্সে প্রভাব একেকজন ব্যক্তির ক্ষেত্রে একেকরকম হতে পারে। এটি নির্ভর করে ব্যক্তির বয়স, লিঙ্গ, স্বাস্থ্যগত সমস্যা, খাদ্যাভ্যাস এবং শারীরিক কার্যকলাপের উপর। অন্যদিকে ওমানের পুষ্টিবিদ রীম আল-আবদুল্লাহ বলেন, আপনি যদি রমজান মাসে মাঝে মাঝে রোজা রাখেন অথবা নিয়মিত রোজা রাখেন, তাহলে স্বাস্থ্য ভালো রাখতে স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস অনুসরণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ইনসুলিন রেসিস্টেন্সের লক্ষণ: ইনসুলিন রেসিস্টেন্সের লক্ষণ ইনসুলিন রেসিস্টেন্সের প্রাথমিক লক্ষণগুলো ততটা স্পষ্টভাবে বোঝা যায় না, তবে কিছু সাধারণ লক্ষণ যেমন ক্ষুধা বেড়ে যাওয়া, ক্লান্তি অনুভব করা, ত্বকে কালো দাগ পড়া, উচ্চ রক্তচাপ, ওজন কমানো কঠিন হয়ে পড়া ইত্যাদি দেখা দিতে পারে।
ইনসুলিন রেসিস্টেন্স মোকাবিলায় করণীয়: ইনসুলিন রেসিস্টেন্সের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে জীবনযাত্রায় কিছু পরিবর্তন আনা প্রয়োজন। পুষ্টিবিদরা পরামর্শ দেন যে, খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন, বিশেষ করে মিষ্টি এড়িয়ে চলা এবং কম স্টার্চযুক্ত খাবার খাওয়া উচিত। এছাড়া, নিয়মিত ব্যায়াম, মানসিক চাপ কমানো, পর্যাপ্ত ঘুম এবং ওজন কমানো ইনসুলিন সংবেদনশীলতা বাড়াতে সাহায্য করতে পারে।
যদি ইনসুলিন রেসিস্টেন্সের লক্ষণ দেখা দেয়, তবে চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করা উচিত। চিকিৎসা পরামর্শ গ্রহণ করে, সঠিকভাবে এই পরিস্থিতি মোকাবিলা করা সম্ভব।
বিভাগ : লাইফস্টাইল
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন

ইউএসএআইডি বন্ধ করে দেয়া ‘সম্ভবত অসাংবিধানিক’

বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী পাসপোর্ট কোন দেশের?

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জরুরি হস্তক্ষেপ চায় সউদী, নিন্দা রাশিয়ার

বিচার প্রক্রিয়ায় ধীরগতি

ঈদের ছুটিতে শুল্ক স্টেশনে চালু থাকবে আমদানি-রপ্তানি সেবা

নারী সাংবাদিককে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ: এক জনের দোষ স্বীকার, অপরজন কারাগারে

পরিবেশগত ছাড়পত্র না থাকলেই ইটভাটা অবৈধ

অস্ত্র মামলায় ১৭ বছরের দ- থেকে খালাস লুৎফুজ্জামান বাবর

সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক-ইনুসহ সাত জন বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ডে

তারেক রহমানসহ সব আসামির খালাস আদেশের বিরুদ্ধে আপিল

রাজধানির বিলাসি ব্র্যান্ডের আউটলেটে ভিড় বাড়ছে ক্রেতাদের

ধামরাইয়ে ব্রিজের নিচ থেকে মাটি কেটে নিল দুর্বৃত্তরা

রিমান্ড শেষে কারাগারে পলক, প্রতিমন্ত্রী এনাম ফের রিমান্ডে

হায়রানিমূলক ধর্ষণ মামলায় গ্রেফতারের প্রতিবাদে নেত্রকোনায় বিক্ষোভ মিছিল

ইফায় ফ্যাসিস্টের সহচরদের পদোন্নতি দেয়ার পাঁয়তারা

নারীর প্রতি সহিংসতা ভয়াবহতায় রূপ নিয়েছে মহিলা পরিষদ

পাঁচ পণ্য নিয়ে ঢাকায় ‘জনতার বাজার’ উদ্বোধন

ড. ইউনূসের আপিলের রায় ২৩ এপ্রিল

ঈদ নিরাপত্তায় ডিএমপি ১৪ নির্দেশনা

জাগপা’র নিবন্ধন ফেরত দিতে ইসিকে নির্দেশ