মইনের প্রাণ
১২ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:১২ এএম | আপডেট: ১২ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:১২ এএম
সবাই বলে ভোর-রাতের স্বপ্ন নাকি সত্যি হয়। এমন স্বপ্নের আশা করেনি মইন। বুকের মধ্যে ধুপধুপ শুরু করেলো। ছোটকালে মইনের মা মইনকে বলতো দুঃস্বপ্ন দেখলে কাউকে বলতে না পারলে, পুকুরে গিয়ে পানিকে বলে আসবি। তা হলে স্বপ্ন আর সত্যি হবে না। বালিশের নিচ থেকে মোবাইল নিয়ে দেখে মাত্র তিনটা চল্লিশ। পাশে থাকা মানুষটা নাক ডেকে ঘুমের ঘোরে আছন্ন। ঘুমন্ত মানুষটির গায়ে হাত দিয়ে একবার ঝাঁকুনি দেয়া হয়েছে। কোন সাড়া মেলেনি। আবার নিজ থেকে ওর হাতটা মইনের বুকের উপরে নিয়ে জড়িয়ে নিল। ভয়ে মইনের কপালে বিন্দু বিন্দু ঘামের সৃষ্টি হয়েছে। অনেক চেষ্টার পরও মইনের আর ঘুম আসে না। বারে বারে মৌসুমীকে দেখতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু বিদ্যুৎ না থাকায় ভয়ে মৌসুমীর ঘরে আর যেতে পারছেনা।
মইন স্বপ্নে দেখল উঠোনে চারজন লোক এসেছে। চারজনের মুখ কালো কাপড়ে আচ্ছাদিত। দুইজন লোক উঠোনের একটু দূরে নিমগাছের নিচের গিয়ে বিশাল একটা গর্ত খুঁড়ছে। উনারা বলছেন মৌসুমীকে এই জায়গায় মাটি দেওয়া হবে। মৌসুমীর পাশে বসে আছে স্ত্রী সুমাইয়া। সে চোখ মুছতে মুছতে মৌসুমির মুখের লালা গুলো মুছে দিচ্ছে। মৌসুমিকে জড়িয়ে ধরে মইন দু’চোখ দিয়ে জল ফেলছে। মৌসুমীর মায়াবী চোখের ভাষায় মইনকে না কাঁদতে অনুরোধ করছে। আর ওর বাচ্চার দিকে তাকিয়ে বলে ওর জন্য তুমি আছো।
মৌসুমীকে পাগলা কুকুরে কামড় দিয়েছে তিন দিন হয়েছে। সদরের থেকে বড় ডাক্তারকে নিয়ে আসেন মইন উদ্দিন। ডাক্তার বললেন বাচ্চাকে দুধ খাওয়ানো যাবে না। ওর ঘর আলাদা। ওর আশেপাশে কেউ থাকতে পারবে না। কারো গায়ে ওর আচঁড় পড়লে বা এর খাবার অন্য কাউকে খাওয়ালে বিষ লেগে মারা যাবে। বাচ্চাকেও মায়ের দুধ খাওয়ানো বারণ।
বেশী দিন হয়নি মৌসুমীর বাচ্চা হয়েছে। বাচ্চাটি দেখতে খুব আদুরে এবং সুন্দর হয়েছে। যেন বিদেশি নিউজিল্যান্ডের বংশধর।
মৌসুমীকে বেশ আদর করত মইন। মৌসুমীর রোজগারে মইনের পরিবারের স্বচ্ছলতা ফিরে এসেছে। মৌসুমীর কাজ থেকে ওর বোন ডেইজি এবং সোহাগীকে আলাদা করে ফেলেছে মইন। মৌসুমীর দিন দিন অবস্থায় অবনতি হচ্ছে। সে হাঁটতে এবং বেরুতে পারছে না। বসে থাকে সারাক্ষন।
মৌসুমীকে এক ব্যাপারী আসছে নিতে। কোরবানির ঈদের বাকি আর মাত্র পাঁচদিন। বিক্রি করলে অনেক টাকা পাওয়া যাবে। দিনের আলোয় মৌসুমীকে কোন দিন ঘর থেকে বের করতো না মইন। মানুষের নজর লেগে যাবে বলে। মৌসুমী দেখতে এমন সুন্দর মনে হবে নিউজিল্যান্ড থেকে কয়েক দিন আগে বাংলাদেশে এসেছে। মইন চিন্তা করলো মৌসুমী মরলে নিজের হাতে মরবে। ও তো অনেক দিয়েছে আমাকে। এইবার আমার দেবার পালা। সারারাত ধরে মৌসুমির সেবা করে মইন।
সকালে মইন স্ত্রী সুমাইয়াকে বলে।
ও সুমাইয়া, মনে হয় আমার জ্বর আসবে। দুইটা তালের পিঠা বানাবে। জ্বরের মধ্যে পিটে খেতে খুব ইচ্ছে করছে। তালের আটিগুলো ফেলার দরকার নেই। ওইগুলো মৌসুমীর জন্য গামলায় ভিজেয়ে রেখো। ও তালের রস খুব পচন্দ করে।
সুমাইয়ার মনে মইনের জন্যও দুশ্চিন্তা হচ্ছে। সে কুলার উপর আতপ চালগুলো বের করে আঙ্গুল বুলিয়ে ধান বেছে নিচ্ছে। মইন মুখে বিড়ি ধরিয়ে আবার মৌসুমীকে ওষুধ খাওয়াতে যায়।
মইন মৌসুমীর বাচ্চার নাম রাখলেন পাগলা বাবু। সে অবুঝ হতে পারে কিন্তু মালিককে ভালো চেনে।
খিদে পেলে মাকে দেখে না। তখন মইনের কাছে চলে আসে। মইন ওর জন্য পাশের বাড়ি থেকে তিন কেজি করে দুধ কিনে আনে। ফিডার দিয়ে প্রতিদিন তিনবেলা করে দুধ খাওয়ায়। একদিন মইন সকালে উঠে দেখে মৌসুমী আর নেই। ফাঁকি দিয়ে চলে গেছে। গুমড়ে কেঁদে ওঠে মইন আর সুমাইয়া।
বছর চারেক পর অনেক দূর দূরান্ত থেকে পাগলা বাবুকে দেখতে আসা অনেক লোকের ভিড় জমে। কয়েকটি টিভি থেকে বার বার দেখাচ্ছে পাগলা বাবুর ছবি। পাগলা বাবুর দাম উঠেছে ১০ লক্ষ টাকা। চোরের নজরে পড়ে যায় পাগলা বাবু। দিন রাত না খেয়ে পাগলা বাবুকে পাহাড়া দেয়। গ্রামের কিছু দুষ্ট লোকজন মইনকে বুদ্ধি দেয় বাজারে নিতে। বাজারে নিলে ডাবল দাম পাবে। মইন পাশের গ্রামের একজন পরিচিত লোককে নিয়ে পাগলা বাবুকে বাজারে নিয়ে যায়। যাবার আগে হৃদয় বিদারক দৃশ্য দেখতে পায় গ্রামের লোকজন। পাগলা বাবু কোন ভাবে যাবে না। সুমাইয়াকে দেখলে আরো চিৎকার করে ডাকে। দুই বার ছুটে চলে আসে নিজের ঘরে। মইনের স্ত্রীর কান্নায় পাগলা বাবু যাবার সময় পেছন পেছন ফিরে তাকায়।
মইন সকালে যে গিয়েছে রাতে আর ফিরেনি। পরের দিন সকালে খবর আসে, মইন অচেতন হয়ে বাজারের স্কুল ঘরে পড়ে আছে। সাথে যে লোকটা ছিল তিনিও। দুজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। দুই দিন পর হুঁশ ফিরে। মইনের কান্না মেডিকেলের লোকজনও কেঁদে ওঠে।
বাজারে সন্ধ্যা বেলায় দুজন লোক এসে পাগলা বাবুকে নেবার জন্য পনের লক্ষ টাকায় কথা হয়। একজন বলেন, আপনারা দুইজন কোন এক চায়ের দোকানে বসে টাকাটা গুনে নেন। বাজারে কেউ কিছু বললে বলবেন আপনি বিক্রি করবেন না। আপনাকে না হলে এইখানে অনেক টাকা দিতে হবে। বাজারের এক পাশে বসে টাকা গুনতে গুনতে তিন জনেই চা খায়। এর পরে আর কিছু মনে নেই মইনের।
মইনের স্ত্রী সুমাইয়া সৃষ্টিকর্তাকে বিচার দেয়। মেডিকেল থেকে এসে মইন পাগলা বাবুর ঘরে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়ে।
স্ত্রী সুমাইয়া বুঝিয়ে-সুঝিয়ে মইনকে ঘরে নিয়ে আসেন। রাতে স্বামী-স্ত্রী দুইজনেই না খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। ফজরের আজান দিতেই মইনের ঘুম ভেঙে যায়। মনে হচ্ছে দরজা ঠেলে কে যেন ডাকছে। আজকে সারারাত সুমাইয়া ঘুমায়নি। চোখ ফুলে লাল হয়ে গেছে। সারারাত যে কেঁদেছে চোখ দেখে তা বুঝা যায়। দুই জন আস্তে আস্তে করে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে কান পেতে রইলো। মনে হচ্ছে কে যেন পড়ে গিয়ে গোঙাছে। বড় বড় শ্বাস প্রশ্বাসের আওয়াজেই ভয় পেয়ে যায় দুইজনে। দরজা খুলে দু’জন একসাথে একটা চিৎকার। পাগলা বাবুরে বলে। পাগলা বাবুর সারা শরীর থেকে চুপ চুপ রক্ত ঝরছে। মনে হচ্ছে পাগলা বাবুকে অনেক মেরেছে। কাঁটাতারের বেড়া ছিঁড়ে পালিয়ে এসেছে সে ভালোবাসার ঘরে। ভোরের আলোয় অনেক লোক এসেছে একপলক দেখার জন্য পাগলা বাবুকে।
বিভাগ : সাহিত্য
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
ফায়ার সার্ভিস ও আবহাওয়া অধিদপ্তরকে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ে অন্তর্ভুক্তির সুপারিশ স্থায়ী কমিটির
বিএনপি তাদের শাসনামলে পাকিস্তানের দালাল হয়ে জনগণকে শোষন ও অত্যাচার করত-আইনমন্ত্রী
সোনালী আঁশ পাটের সুদিন ফিরিয়ে আনতে চাই : বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী
আখাউড়ায় শঙ্কায় থাকা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীর আকুতি
বসুন্ধরায় নান্দনিক বানিজ্যিক ভবন নির্মাণ করছে জেসিএক্স
প্রিমিয়ার লিগের মৌসুম সেরা খেলোয়াড় ফিল ফোডেন
স্মার্ট দেশ উপহার দিতে নিরন্তর কাজ করছে সরকার : পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী
যে কোন মূল্যে জীবন দিয়ে দেশ বিরোধী অপশক্তিকে মোকাবেলা করবো : নাছিম
দালালীকে পেশা হিসাবে নেওয়া প্রসঙ্গে।
ইসলামী আন্দোলনের নেতা অধ্যাপক বেলায়েত হোসেনের দাফন সম্পন্ন
সুনামগঞ্জে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলামের দাফন সম্পন্ন
যক্ষা রোগ প্রতিরোধে ওয়ার্ডভিত্তিক প্রচারণা
ভালুকার সেই শিশু দত্তক নিতে ৪ আবেদন, সিদ্ধান্ত রোববার
বিএনপি ভোট বর্জন করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও গণতন্ত্রের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে : শামসুজ্জামান দুদু
বড় পরিসরে আর. কে. মিশন রোডে ব্র্যাক ব্যাংকের শাখা উদ্বোধন
স্যানিটেশন কর্মীদের স্বাস্থ্য নিরাপত্তা দিতে হারপিক ও সাজেদা ফাউন্ডেশন সমঝোতা
প্রোটিন উদ্ভাবনে নতুন উদ্যোক্তাদের সুযোগ দিচ্ছে ইউএসএসইসি-এর পিচ-টু-ফর্ক
ইসরাইলি সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে
বর্তমান সরকার নাগরিক সুবিধা সম্পন্ন টেকসই নগরায়নে বদ্ধপরিকর : স্থানীয় সরকার মন্ত্রী
পরিবেশ নৈতিকতা চর্চা না হলে পরিবেশের মূল্যবান উপাদানগুলো হারিয়ে যাবে সেমিনারে বক্তারা