ভালোবাসার মাপকাঠি

Daily Inqilab ফারুক আহম্মেদ জীবন

২১ মার্চ ২০২৫, ১২:৫১ এএম | আপডেট: ২১ মার্চ ২০২৫, ১২:৫১ এএম

আল্লার এক পাগল প্রেমিক দরবেশ। আল্লাহুর প্রেমেতে বিভোর হয়ে, এক মনে ধ্যানে মগ্ন হয়ে, প্রভুর নাম জপে চলেছে গহীন জঙ্গলে। হঠাৎ! করেই কালো মেঘে ভরে গেল সারাটা আকাশ।

মাঝে মধ্যে বিকট আওয়াজে গর্জন করে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে। তবুও এক মনে ধ্যান করে চলেছে সেই আল্লার দরবেশটি। দক্ষিন হস্তে তসবিহ লয়ে। কিছুক্ষণের মধ্যেই শুরু হলো তুমুল ভাবে ঝড় বৃষ্টি। তবু দরবেশ ধ্যান ভঙ্গ করার পাত্র নয়। এভাবে বেশ কিছুক্ষণ ধরে চলতে থাকলো তুমুল ঝড় বৃষ্টি। এক সময় বজ্রের ধ্বনীর বিকট শব্দ ধীরে ধীরে কমে গেল। ঝড়ও থেমে গেল। কিন্তু তখনও হাল্কা ফোটা ফোটা পানি পড়ছে ধরণীর বুকে।

দরবেশ যেখানে ধ্যান করছিলো। সেটা ছিল একটা আম বৃক্ষের বাগান। আর সেই বনের পাশেই ছিল মানুষের জনবসতি। আর তাই ঝড় থেমে যেতেই। বনের পাশ্ববর্তী এলাকার গাঁয়ের এক ঝাঁক ছোট

ছোট কচিকাঁচা ছেলে মেয়েরা এলো সেই বাগানে আম কুড়াতে।

তাদের মধ্যে একটা কিশোর আর একটা কিশোরী ও ছিল। প্রচুর পরিমাণ আম পড়েছে বাগানে, আম দেখে তো বাচ্চারা মহা খুশী। সকলেই হৈ হুল্লোড় করে আম কুড়াতে শুরু করল।

তাদের হৈ চৈ করা শুনে, ঐ দরবেশের ধ্যান গেল ভেঙ্গে। প্রথমে কিছুটা ক্রুদ্ধ হলেও।ঐভাবে আনন্দ করে বাচ্চাদের আম কুড়াতে দেখে দরবেশও বেশ আনন্দ পেলো।

তাই দরবেশ কাউকে কিছু বললো না। কিশোরটা সবাইকে বললো, আম কুড়িয়ে সব এক জায়গায় রাখতে। সব বাচ্চারা তাই করল। গাছের তলার সব আম কুড়ানো শেষ হলে। ঐ কিশোর ছেলেটা সকল বাচ্চাদের মাঝে গুনে গুনে সব আম ভাগ করে দিলো।

কিন্তু কিশোরীকে আম দেওয়ার সময় আম আর গুনে দিলো না। না গুনেই অনেক আম দিলো ঐ কিশোরী মেয়েটিকে। দরবেশ সে বিষয়টা খেয়াল করলো। আর মনেমনে ভাবল কিশোরটা অন্যায় করেছে অন্য বাচ্চাদের প্রতি। তাই আম ভাগবাটোয়ারা শেষ হওয়ার পর ঐ কিশোরটাকে তার কাছে আসতে বললো দরবেশ। কিশোরটা তখন খুবি জড়সড় অবস্থায় আল্লার দরবেশের সামনে সালাম দিয়ে এসে দাড়ালো।

দরবেশ বললঃআচ্ছা বাবা,আমি খেয়াল করলাম তুমি সকল বাচ্চাকে আম গুনে সমান করে ভাগ করে দিলে।সেটা খুব ভালো বিষয়, আমিও দেখে খুশী হয়েছি। কিন্তু আমি লক্ষ্য করলাম ঐ কিশোরী মেয়েটিকে আম দেওয়ার সময় না গুনেই অনেক গুলো আম দিলে। বিষয়টা আমি ঠিক বুঝতে পারলামনা।তাই জানার জন্য তোমাকে ডাকলাম। তুমি কি বলবে এর কারণটা কি বাবা?

কিশোরঃ মাথাটা নিচু করে লজ্জায় জড়সড় হয়ে

দাড়িয়ে রইল। কি বলবে দরবেশকে কিছুই ভেবে পাচ্ছে না।

দরবেশঃ আবার বললো বাবা আমার দৃষ্টিতে তুমি অন্য বাচ্চাদের প্রতি অবিচার করেছ। তাই আমি
জানতে চাইছি, তুমি এটা কেনো করলে..?

 কিশোরঃ তখন লজ্জা লজ্জা ভাবে বলল,আমি ঐ মেয়েটাকে অনেক ভালোবাসি জনাব। তাই ওকে গুনে দিতে পারিনি, না গুনেই আম দিয়েছি।

দরবেশঃ কিশোরটির, কিশোরীর প্রতি ভালবাসার গভীরতা দেখে আশ্চার্ম্বিত হলো। মনে মনে একটু
লজ্জাও পেল।দরবেশ তখন কিশোরটাকে বললো আচ্ছা বাবা এবার তুমি যাও..আমি আমার প্রশ্নের উত্তর পেয়ে গেছি।

তারপর...কিশোর আর কিশোরী আম আর অন্য বাচ্চাদেরকে সাথে নিয়ে বনের আম্র বাগান থেকে চলে আসলো।

দরবেশঃ নিজে মনে মনে ভাবলো এত যাবৎকাল তাহলে সে কি ভুল করে এসেছ..?, আল্লাহুর নাম জপার সময় তসবিহ গুনে..?

ঐ কিশোরটা কিশোরী মেয়েটিকে ভালোবাসে বলে সে তাকে কতোটা আম দিল,তার হিসাব যদি সে না করে। একটা মানব মানবির ভালোবাসা যদি এমন হয়। তাহলে সৃষ্টিকর্তা আর তার বান্দার ভালোবাসা কেমন হওয়া উচিৎ?

তারপর থেকে বাকি জীবনে ঐ দরবেশ লোকটি আর কখনো তসবিহ নিয়ে গুণে গুণে আল্লার নামের জিকির করে ধ্যান করেনি। সে সৃষ্টিকর্তাকে গভীর ভাবে ভালোবেসে দমে-দমে তার জপ করতে লাগলো। ধ্যানে জ্ঞানে একাকি বসে প্রভুর প্রেমে দিওয়ানা হয়ে নির্জনে।


বিভাগ : সাহিত্য


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

থেমে যাক কান্না
এর চেয়ে ভালো থাকা দায়
বৈশাখের রোদ
সময়েয় জিজ্ঞাসা !!
সত্যের আলো যায় না নিভে
আরও
X

আরও পড়ুন

সার্বজনীন না করে সেকুলার নারীদের দিয়ে কমিশন গঠন করায় একটা ক্যাচাল তৈরি হয়েছে  : রাশেদ খান

সার্বজনীন না করে সেকুলার নারীদের দিয়ে কমিশন গঠন করায় একটা ক্যাচাল তৈরি হয়েছে : রাশেদ খান

আশুলিয়ার শীর্ষ সন্ত্রাসী জিয়া দেওয়ান পিস্তলসহ গ্রেফতার

আশুলিয়ার শীর্ষ সন্ত্রাসী জিয়া দেওয়ান পিস্তলসহ গ্রেফতার

ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে ফের বৈঠকে বিএনপি

ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে ফের বৈঠকে বিএনপি

বিতর্কিত ওয়াকফ আইনের বিরুদ্ধে ভারতে মুসলিমদের ব্যাপক বিক্ষোভ

বিতর্কিত ওয়াকফ আইনের বিরুদ্ধে ভারতে মুসলিমদের ব্যাপক বিক্ষোভ

আশুলিয়ায় নারী পোশাক শ্রমিককে হত্যার পর ঘরে আগুন, স্বামী পলাতক

আশুলিয়ায় নারী পোশাক শ্রমিককে হত্যার পর ঘরে আগুন, স্বামী পলাতক

রাজধানীতে যুবদল নেতাকে গুলি, অবস্থা আশঙ্কাজনক

রাজধানীতে যুবদল নেতাকে গুলি, অবস্থা আশঙ্কাজনক

আজ সন্ধ্যায় স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন পেশ

আজ সন্ধ্যায় স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন পেশ

লালপুরে ফসলের মাঠ থেকে কবিরাজের মরদেহ উদ্ধার

লালপুরে ফসলের মাঠ থেকে কবিরাজের মরদেহ উদ্ধার

বিচার ব্যবস্থাকে আরও সহজ করতে হবে: আসিফ নজরুল

বিচার ব্যবস্থাকে আরও সহজ করতে হবে: আসিফ নজরুল

‘ইস্টার যুদ্ধবিরতি’ ঘোষণার পরও রুশ হামলা চলছে: জেলেনস্কি

‘ইস্টার যুদ্ধবিরতি’ ঘোষণার পরও রুশ হামলা চলছে: জেলেনস্কি

সবাই চায় স্বৈরাচার মুক্ত একটি বাংলাদেশ–বাঁধন

সবাই চায় স্বৈরাচার মুক্ত একটি বাংলাদেশ–বাঁধন

মিয়ানমারের দুই শতাধিক নাগরিক পালিয়ে থাইল্যান্ডে এসেছে, দাবি থাই কর্তৃপক্ষের

মিয়ানমারের দুই শতাধিক নাগরিক পালিয়ে থাইল্যান্ডে এসেছে, দাবি থাই কর্তৃপক্ষের

কোটচাঁদপুরের প্রত্যন্ত অঞ্চল ছয়লাব পার্থেনিয়ামে এই গাছ হতে পারে মৃত্যুর কারণ

কোটচাঁদপুরের প্রত্যন্ত অঞ্চল ছয়লাব পার্থেনিয়ামে এই গাছ হতে পারে মৃত্যুর কারণ

টিটিপি দমনে যৌথ উদ্যোগে একমত পাকিস্তান-আফগানিস্তান, বাড়ছে আঞ্চলিক সহযোগিতা

টিটিপি দমনে যৌথ উদ্যোগে একমত পাকিস্তান-আফগানিস্তান, বাড়ছে আঞ্চলিক সহযোগিতা

বরিশালে ক্যান্সার হৃদরোগ ও কিডনি হাসপাতাল ভবন নির্মাণ, কাজের অগ্রগতি বর্ধিত সময়ের ১ বছর পরেও মাত্র ৬৫ ভাগ

বরিশালে ক্যান্সার হৃদরোগ ও কিডনি হাসপাতাল ভবন নির্মাণ, কাজের অগ্রগতি বর্ধিত সময়ের ১ বছর পরেও মাত্র ৬৫ ভাগ

ভারত সফরে আসছেন ইলন মাস্ক, প্রযুক্তি বিনিয়োগে নতুন সম্ভাবনা

ভারত সফরে আসছেন ইলন মাস্ক, প্রযুক্তি বিনিয়োগে নতুন সম্ভাবনা

মেঘনায় অবৈধ বালু উত্তোলনের প্রতিবাদে বিএনপির বিক্ষোভ

মেঘনায় অবৈধ বালু উত্তোলনের প্রতিবাদে বিএনপির বিক্ষোভ

মার্কিন নাগরিকদের বাংলাদেশ ভ্রমণে সতর্কতা জারি

মার্কিন নাগরিকদের বাংলাদেশ ভ্রমণে সতর্কতা জারি

যতই তথ্যসন্ত্রাস করেন আমি ভারত আর র-এর বিরুদ্ধে কথা বলা থামাব না: প্রথম আলোকে হাসনাত

যতই তথ্যসন্ত্রাস করেন আমি ভারত আর র-এর বিরুদ্ধে কথা বলা থামাব না: প্রথম আলোকে হাসনাত

জকিগঞ্জে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মামলায় আওয়ামীলীগ নেতা এমএজি বাবর গ্রেফতার

জকিগঞ্জে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মামলায় আওয়ামীলীগ নেতা এমএজি বাবর গ্রেফতার