গরমে বাড়ছে লোডশেডিং
০৯ মার্চ ২০২৩, ১১:১১ পিএম | আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২৩, ১১:৫৯ পিএম
গরমের তীব্রতা বাড়তেই বন্দরনগরীসহ বৃহত্তর চট্টগ্রামে বাড়ছে বিদ্যুৎ সঙ্কট। তাতে একদিকে শিল্পকারখানায় উৎপাদন বিঘিœত হচ্ছে। অন্যদিকে বাড়ছে জনদুর্ভোগ। গ্যাস ও জ্বালানির অভাবে বেশ কয়েকটি বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ রাখা হয়েছে। এতে বিদ্যুৎ উৎপাদন অর্ধেকের নিচে নেমে এসেছে। তাতে স্থায়ী রূপ নিয়েছে সংকট। চাহিদার চেয়ে উৎপাদন কম হওয়ায় রাতে দিনে দফায় দফায় লোডশেডিং দিতে হচ্ছে। সামনে গরমের তীব্রতা বাড়লে বাড়বে বিদ্যুতের চাহিদা। বিশেষ করে পবিত্র রমজান মাসে চাহিদার বিপরীতে সরবরাহ বাড়াতে না পারলে রোজাদারদের দুর্ভোগের মুখোমুখি হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শতভাগ বিদ্যুতের দেশে এখন এই বিদ্যুৎ জনদুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণের জন্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে একাধিক বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা হয়েছে। কিন্তু গ্যাস, বিদ্যুতের ক্রমবর্ধমান সংকট বিনিয়োগ সম্ভাবনার পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এসব অর্থনৈতিক অঞ্চলে অনেক কারখানা প্রস্তুত হলেও গ্যাস-বিদ্যুৎ সংকটের কারণে উৎপাদনে যেতে পারছে না। সংকুচিত হচ্ছে কর্মসংস্থানের সুযোগ।
দেশের বাণিজ্যিক রাজধানী হিসাবে পরিচিত চট্টগ্রাম নগরীতে গড়ে উঠেছে অসংখ্য কল-কারখানা। দেশের সবচেয়ে বড় ইপিজেড চট্টগ্রামে। দেশের প্রথম বেসরকারি ইপিজেড কোরিয়ান ইপিজেডসহ এই অঞ্চলের তিনটি ইপিজেডে রয়েছে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগে কয়েক হাজার শিল্প কারখানা। চট্টগ্রামের বিভিন্ন শিল্পাঞ্চলে আছে অংসখ্য রি-রোলিং মিল, শতভাগ তৈরী পোশাক কারখানা, ইস্পাত কারখানাসহ নানা রকমের ভারী শিল্প। কিন্তু বিদ্যুতের অভাবে এসব শিল্প কারখানায় উৎপাদনের চাকা থমকে গেছে।
বৈশি^ক অর্থনৈতিক মন্দা এবং দেশে ডলার সংকটে এমনিতেই আমদানি-রফতানি স্থবির হয়ে পড়েছে। দেশের সার্বিক অর্থনীতিতে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। ডলারের মূল্যবৃদ্ধিতে আমদানিকৃত কাঁচামালের দাম বেড়েছে। তার উপর বিদ্যুতের অভাবে উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় ক্ষতির পরিমাণ বাড়ছে। বিকল্প উপায়ে কারখানার চাকা সচল রাখতে গিয়ে বাড়ছে উৎপাদন ব্যয়। তাতে লোকসানের মুখে শিল্প কারখানার মালিকেরা। তাদের ব্যাংক ঋণের দায়-দেনা বেড়েই চলছে। বড় কারখানাগুলো কোনমতে টিকে থাকলেও অস্তিত্বের সংকটে পড়েছে ছোট ও মাঝারি শিল্প কারখানা। সবচেয়ে বেশি ধুকছে শতভাগ তৈরী পোশাক কারখানা। পোশাক মালিকরা বলছেন, অর্থনৈতিক মন্দায় বিদেশের বাজারে বাংলাদেশী পোশাকের দাম কমে গেছে। কিন্তু দেশে বাড়ছে পোশাকের উৎপাদন ব্যয়। তাতে লোকশান দিতে হচ্ছে। অনেক কারখানায় নামে মাত্র উৎপাদন হচ্ছে। শ্রমিকদের বেতন-ভাতা বকেয়া পড়ায় শ্রমিক ছাঁটাই করা হচ্ছে। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে আর্থ-সামাজিক অবস্থায়।
বিদ্যুতের অভাবে সার্বিক ব্যবসা-বাণিজ্য স্থবির হয়ে পড়ছে। নগরীর অভিজাত বিপণি কেন্দ্র থেকে শুরু করে শপিংমল ও মার্কেটগুলোতে বেচাকেনায় মন্দা অবস্থা বিরাজ করছে। সরকার দফায় দফায় বিদ্যুতের দাম বাড়িয়েছে। অথচ গ্রাহকেরা নিয়মিত এবং চাহিদা মতো বিদ্যুৎ পাচ্ছে না। এতে সাধারণ মানুষের মাঝে ক্ষোভ-অসন্তোষ বাড়ছে। দ্রব্যমূল্যের সীমাহীন ঊর্ধ্বগতির মধ্যে বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির ফলে মানুষের সার্বিক জীবন যাত্রার ব্যয় বেড়ে গেছে। বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি অন্যান্য খাতেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। মূল্যস্ফীতি বেড়েই চলছে। তাতে স্বল্প ও সীমিত আয়ের মানুষ সংসার চালাতে রীতিমত হিমশিম খাচ্ছে। কবে নাগাদ বিদ্যুৎ সরবরাহ পরিস্থিতির উন্নতি হবে তা বলা যাচ্ছে না।
চট্টগ্রামে সরকারি-বেসরকারি মিলে ২২টি বিদ্যুৎকেন্দ্র ও ইউনিট রয়েছে। এসব কেন্দ্রের উৎপাদন ক্ষমতা দুই হাজার ৪৪২ মেগাওয়াট। তবে এসব কেন্দ্র পুরোদমে সচল থাকলে সর্বোচ্চ দুই হাজার ৩৮২ মেগাওয়াট সরবরাহ পাওয়া যায়। কিন্তু গ্যাস ও জ্বালানি তেল নির্ভর বেশ কয়েকটি বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ করে রাখায় উৎপাদন কমে গেছে। হ্রদের পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় কাপ্তাই মহাবিদ্যুৎ প্রকল্পের উৎপাদন অস্বাভাবিকভাবে কমে গেছে। ২৩০ মেগাওয়াট ক্ষমতার চালু চারটি ইউনিট থেকে নামমাত্র ৩০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ মিলছে।
গ্যাসের অভাবে দীর্ঘদিন বন্ধ রাউজান তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রের ৪২০ মেগাওয়াট ক্ষমতার দুটি ইউনিট। বন্ধ শিকলবাহা ১৫০ মেগাওয়াট পিকিং পাওয়ার প্ল্যান্টও। খরচ বাঁচাতে ফার্নেস অয়েল নির্ভর কয়েকটি বিদ্যুৎকেন্দ্রও বন্ধ রাখা হচ্ছে। আবার এসব বিদ্যুৎকেন্দ্র সারাদিন বন্ধ রেখে সন্ধ্যায় পিকআওয়ারে কিছু সময়ের জন্য সচল রাখা হচ্ছে। কিছু বিদ্যুৎকেন্দ্র সংস্কারের অভাবে জরাজীর্ণ হয়ে যাওয়ায় উৎপাদন কমে গেছে। পিডিবির হিসাবে, চট্টগ্রামে চালু বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো থেকে দিনের বেলায় ৮০০ থেকে সাড়ে ৮০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। আর সন্ধ্যায় পিকআওয়ারে উৎপাদন হচ্ছে এক হাজার ১৭৮ মেগাওয়াট। চট্টগ্রামের চাহিদা আরো বেশি। চাহিদার চেয়ে উৎপাদন কমে যাওয়ায় বিদ্যুৎ ঘাটতি চরম আকার ধারণ করছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার নগরীর বিভিন্ন এলাকায় দফায় দফায় বিদ্যুৎ চলে যায়। কোথাও এক ঘণ্টা কোথাও আবার দেড় ঘণ্টা পর্যন্ত লোডশেডিং দেয়া হয়। মহানগরীর চেয়ে গ্রামে বিদ্যুৎ পরিস্থিতি বেশি শোচনীয়। এখন চলছে বোরো আবাদ। সেচনির্ভর এ ফসলের উৎপাদন স্বাভাবিক রাখতে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ জরুরি। অথচ বিদ্যুতের অভাবে অচল থাকছে সেচযন্ত্রগুলো। এর ফলে ফসলের উৎপাদন বিঘিœত হওয়ার আশঙ্কা করছেন চাষিরা।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
ঈশ্বরগঞ্জ পৌরসভার পাওনা টাকা পরিশোধ না করলে মামলা- পৌর প্রশাসক
পূর্বাচলে বুয়েট ছাত্রের মৃত্যু : তিন আসামি ২ দিনের রিমান্ডে
লক্ষ্মীপুরে সরকারি রাস্তা কেটে যুবলীগ নেতার চাষাবাদ, প্রতিবাদে মানববন্ধন
কলাপাড়ায় গরু চুরি করে পালানোর সময় জনতার হাতে আটক চোর
এবার পানামা খাল নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার হুমকি ট্রাম্পের
মাগুরায় গ্রামবাসির সংঘর্ষে নিহত যুবদল নেতা শরিফুলের বাড়িতে বিএনপি নেতারা
সিমকার্ডের আড়ালে সীমান্তে বেড়েছে চোরাচালান
কিশোরগঞ্জের আব্দুল কাহার আকন্দ কোথায়? কেউ জানে না!
হাসিনাকে গ্রেপ্তারে ইন্টারপোলে রেড নোটিশ জারি
যুক্তরাষ্ট্র ও লন্ডনে ৩শ’ কোটি টাকা পাচারের অভিযোগে হাসিনা-জয়ের বিরুদ্ধে দুদকের অনুসন্ধান শুরু
রাজশাহী মহানগরীতে ঘন কুয়াশা
আবারও ভানুয়াতুতে দ্বীপপুঞ্জে ৬.২ মাত্রার ভূমিকম্প
হাজীগঞ্জে ভরাট মিঠানিয়া খালের মুখ, হুমকিতে ফসলি জমি
রাহাতের সুরের মুর্ছনায় বিমোহিত দর্শক, বাংলায় বললেন 'আমরা তোমাদের ভালোবাসি'
‘প্রশাসন ক্যাডার নিয়ে ষড়যন্ত্র চলছে’
যুক্তরাজ্যে ট্রাম্পের বিশেষ দূত হিসেবে মার্ক বার্নেট নিযুক্ত
ফাইনালে ভারতের কাছে বাংলাদেশের হার
ফ্রেন্ডলি ফায়ার দুর্ঘটনায় লোহিত সাগরে মার্কিন যুদ্ধবিমান ধ্বংস
ইরানে যাত্রীবাহী বাস খাদে পড়ে নিহত ১০
বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী নারী কে, জানেন?