যানজটে স্থবির ঢাকা। এতে রোজাদাররা দুর্বিষহ যন্ত্রণায় পড়েন। রমজানের প্রথম কর্মদিবসে রাজধানীজুড়ে তীব্র যানজট দেখা গেছে। সকাল থেকে বিভিন্ন সড়কে যানবাহনের চাপ বাড়তে থাকে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যানবাহন ও যাত্রী পথচারীদের চলাচলে বাড়তে শুরু করেছে ফলে বিভিন্ন সড়কে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়েছে। তীব্র যানজটে গন্তব্যে যেতে ভোগান্তিতে পড়েন নগরবাসী। একই জায়গায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় পার করতে হচ্ছে। এতে যাত্রী ও পথচারীরা ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। রোজা রেখে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে অফিসগামী ও অফিস ফেরত মানুষদের। বেলা বাড়ার সঙ্গে শহরে যানজটের পরিমাণও বাড়ছে। ফলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা রাস্তায় গাড়ি আটকে রয়েছে।

গত শুক্রবার থেকে রমজানের প্রথম রোজা শুরু হয়। এরমধ্যে শনিবার সাপ্তাহিক ছুটি ও রোববার সরকারি ছুটি ছিল। তাই রমজানের প্রথম তিন রোজায় রাজধানীর সড়কগুলো ছিল অনেকটাই ফাঁকা। তবে সোমবার রমজানের প্রথম কর্মদিবস হওয়ায় সরকারি-বেসরকারি অফিস, আদালত, স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় একসঙ্গে খোলায় সড়কে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়।

ভুক্তভোগীরা বলছেন, ঢাকা শহরের যানজট প্রতিনিয়তই বাড়ছে। এখন রাস্তায় আর সময় বলে কোনো কথা নেই। কারণ ছাড়াই সড়কে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। প্রতিবছরই রমজানের সময় এলে একইভাবে রাস্তায় তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়। এই তীব্র যানজট নিয়ন্ত্রণে ট্রফিক পুলিশের নেই কোনো দায়িত্বশীল পদক্ষেপ। সকাল থেকে বিভিন্ন সড়কে ট্রফিক পুলিশ কাজ করলেও যানজট নিরসনে দৃশ্যমান কোনো উপকার হচ্ছে না। যাত্রী-পথচারী, চালকেরা ও পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ সবাই মিলে পদক্ষেপ নিলে ও ট্রাফিক আইন মেনে চললে সড়কের এ যানজট অনেকটা কমে আসতো।

সরেজমিন দেখা গেছে, রাজধানীর বিমানবন্দর, কুড়িল, বনানী, বাড্ডা, মহাখালী, হাতিরঝিল, রামপুরা, কারওয়ান বাজার, পান্থপথ, ধানমন্ডি, যাত্রাবাড়ী ও কালশী এলাকায় যানজট রয়েছে। কুড়িল বিশ্বরোড থেকে বাড্ডা পার হয়ে রামপুরা পর্যন্ত সড়কেও রয়েছে যানজট ও গাড়ির চাপ। যার প্রভাব পড়ছে হাতিরঝিল এলাকায়ও। সাধারণত রাজধানীর অন্য সব এলাকায় যানজট থাকলেও এই এলাকা যানজটমুক্ত থাকে। তবে হাতিরঝিলেও যানজট। এই যানজট সোনারগাঁও হোটেল সিগন্যাল পর্যন্ত পৌঁছেছে। বেলা বাড়ার সঙ্গে রাস্তায় গাড়ির চাপও বাড়ছে বলে জানা গেছে। তবে এর মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ অবস্থা চলছে বিমানবন্দর থেকে মহাখালী পর্যন্ত সড়কে। রাজধানীজুড়ে যানজটের বিষয়ে ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগ বলছে, তিন দিন ছুটি থাকার পর রমজানের প্রথম কর্মদিবসে একসঙ্গে সবাই কর্মস্থলে যাচ্ছেন। ফলে রাস্তায় গাড়ির চাপ বেড়েছে।

সকালে রাজধানীর নিকুঞ্জ থেকে তেজগাঁওগামী এক চাকরিজীবী বলেন, বিমানবন্দর থেকে শেওড়া ওভারব্রিজ পর্যন্ত যানচলাচল স্থবির হয়ে রয়েছে। শেওড়া থেকে বনানী পর্যন্ত সড়কে ধীরগতিতে যানচলাচল করছে। আবার বনানী থেকে ধীরগতিতে যানচলাচলের কারণে মহাখালী পার হয়ে তেজগাঁও এলাকা পর্যন্ত সৃষ্টি হয়েছে যানজট।
কুড়িল বিশ্বরোড থেকে বাড্ডা পার হয়ে রামপুরা পর্যন্ত সড়কেও রয়েছে যানজট ও গাড়ির চাপ। অন্যদিকে সকাল থেকে চলমান যানজটের প্রভাব পড়ছে হাতিরঝিল এলাকায়ও। সাধারণত রাজধানীর অন্য সব এলাকায় যানজট থাকলেও এই এলাকা যানজটমুক্ত থাকে। তবে আজ হাতিরঝিলেও যানজট। এই যানজট সোনারগাঁও হোটেল সিগন্যাল পর্যন্ত পৌঁছেছে। যাত্রাবাড়ি এলাকায় যানজটে মেয়র হানিফ ফ্লাইওভার এর উপরেও গাড়ির সারি দেখা গেছে।

গতকাল সোমবার রাজধানীর উত্তরা, হাউজবিল্ডিং, বিমানবন্দর হয়ে খিলক্ষেত বিশ্বরোড হয়ে রেডিসনের সামনে দিয়ে বনানী মহাখালী পর্যন্ত সড়কে, অন্যদিকে, মহাখালী থেকে সাতরাস্তা, মগবাজার হয়ে রমনা, মৎসভবন এবং মহাখালী থেকে জাহাঙ্গীর গেট হয়ে ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার হয়ে বাংলামোটর-শাহবাগ হয়ে মৎসভবন- প্রেসক্লাব পর্যন্ত যানবাহনের প্রচ- চাপ দেখা গেছে। এছাড়া খিলক্ষেত থেকে কুড়িল হয়ে নতুনবাজার বাড্ডা, রামপুরা, মালিবাগ হয়ে গুলিস্তান পর্যন্ত সড়কেও যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। সড়কে তীব্র যানজটের কারণে ভোগান্তিতে পড়েছেন যাত্রী ও পথচারীরা। অনেকেই স্থবির হয়ে থাকা যানবাহন থেকে নেমে পায়ে হেঁটে রওয়ানা করেছেন কর্ম ও গন্তব্যস্থলে।

বাস যাত্রীরা জানান, রাজধানীতে প্রতিদিন এমন যানজট সৃষ্টি হওয়ার কারণ কি সেটা কেউ কি বের করতে পারেনি এখনও? রাজধানীর যানজটের সমস্যা সমাধানে প্রশাসনের কোনো কার্যকরী ভূমিকা বা পদক্ষেপ নেই। দুই ঘণ্টা আগে বের হয়েও উত্তরা থেকে নাবিস্কো পর্যন্ত যাওয়া যচ্ছে না। মহাখালী টার্মিনালের সামনে দুই লেন অবৈধ পার্কিং আর নাবিস্কোতে বাসগুলোর সেøা ইউটার্ন। এজন্য এই সড়কে যানজট দেখা দিয়েছে।

ডিএমপির যুগ্ম-কমিশনার (ট্রাফিক) মেহেদী হাসান ইনকিলাবকে বলেন, ধানমন্ডীসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় রাস্তার উন্নয়ন কাজ চলছে তাই যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। এছাড়া তিনদিন বন্ধ থাকার পর অফিসসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান খোলার কারণে রাস্তায় গাড়ির চাপ বেড়েছে। সকাল থেকে ট্রাফিক পুলিশ যানজট নিরসনে কাজ করছে। রাস্তার তুলনায় যানবাহন বেশি থাকায় ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ কষ্টকর হয়ে পড়েছে।