টিপু-প্রীতি হত্যার চার্জশিট গ্রহণ

বিদেশে পলাতক দুই শীর্ষ সন্ত্রাসীসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা

Daily Inqilab স্টাফ রিপোর্টার

২০ জুন ২০২৩, ১১:০৩ পিএম | আপডেট: ২১ জুন ২০২৩, ১২:০১ এএম

রাজধানীর শাহজাহানপুরে আওয়ামী লীগের নেতা জাহিদুল ইসলাম ওরফে টিপু হত্যা মামলায় বিদেশে পলাতক দুই শীর্ষ সন্ত্রাসীসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত। আলোচিত এই হত্যা মামলায় পুলিশের দেয়া অভিযোগপত্র আমলে নিয়ে সিএমএম আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট রাজেশ চৌধুরী গতকাল মঙ্গলবার এই আদেশ দেন। মামলায় পলাতক ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত সাংগঠনিক সম্পাদক আশরাফ তালুকদারও রয়েছেন।

যাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে, তারা হলেন-জিসান ওরফে জিসান আহাম্মেদ ওরফে মন্টু ওরফে এমদাদুল হক (৫০), জাফর আহমেদ মানিক ওরফে ফ্রিডম মানিক (৪৫), গোলাম আশরাফ তালুকদার (৬৮), মারুফ আহমেদ মনসুর (৫৭), রিফতি হোসেন (৩৮), সোহেল ওরফে রানা মোল্লা (৪৫), আমিনুল ইসলাম (৩৫), সামসুল হায়দার (৪১) ও কামরুজ্জামান (৬২)। তাদের মধ্যে জিসান ও মানিক পুলিশের তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী। তারা বিদেশে পালিয়ে থেকে এই হত্যাকা-ের পরিকল্পনায় যুক্ত ছিলেন বলে অভিযোগপত্রে উল্লেখ করেছে পুলিশ।

পলাতক এই ৯ আসামিকে গ্রেফতার করা গেল কি না, সে বিষয়ে প্রতিবেদন জমা দিতে আগামী ১৭ আগস্ট দিন রেখেছেন আদালত।
গত বছরের ২৪ মার্চ রাতে রাজধানীর শাহজাহানপুরে মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহিদুলকে গুলি করে হত্যা করা হয়। সে সময় ঘটনাস্থলে রিকশায় বসে থাকা কলেজছাত্রী সামিয়া আফনান ওরফে প্রীতিও (২২) গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। এ ঘটনায় জাহিদুলের স্ত্রী ফারহানা ইসলাম শাহজাহানপুর থানায় হত্যা মামলা করেন। এক বছরের বেশি সময় পর ৫ জুন ঢাকার সিএমএম আদালতে এ মামলায় দুই শীর্ষ সন্ত্রাসীসহ ৩৩ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র জমা দেয় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।

অভিযোগপত্রভুক্ত আসামিদের মধ্যে কারাগারে আছেন সুমন সিকদার ওরফে মুসা (৪৩), মাসুম মোহাম্মদ ওরফে আকাশ (৩৭), শামীম হোসাইন ওরফে মোল্লা শামীম (৩৫), মারুফ রেজা সাগর ওরফে সাগর (৪০), আরিফুর রহমান সোহেল ওরফে ঘাতক সোহেল (৪৫), জুবের আলম খান ওরফে রবিন ওরফে রেলওয়ে রবিন (৫১), তৌফিক হাসান ওরফে বাবু ওরফে বিডি বাবু (৩৬), মারুফ রেজা সাগর (৪০), মাহবুবুর রহমান ওরফে টিটু (৪০), নাসির উদ্দিন ওরফে মানিক (৪৭), মশিউর রহমান ওরফে ইকরাম (৩৬), ইয়াসির আরাফাত সৈকত (৩৩), আবুল হোসেন মোহাম্মদ আরফান উল্লাহ ইমাম খান ওরফে দামাল (৪৯), সেকান্দার সিকদার ওরফে আকাশ (২৬), খাইরুল ইসলাম মাতব্বর ওরফে খোকা (৮৮), আবু সালেহ শিকদার ওরফে শুটার সালেহ (৩৮), নাসির উদ্দিন ওরফে কিলার নাসির (৩৮), ওমর ফারুক (৫২), মোহাম্মদ মারুফ খান (২৮), ইসতিয়াক আহম্মেদ জিতু (৩৯) ও ইমরান হোসেন ওরফে জিতু (৩২)। আর জামিনে আছেন তিন আসামি। তঁরা হলেন হাফিজুল ইসলাম ওরফে হাফিজ (৫০), মোরশেদুল আলম পলাশ (৫১) ও রাকিবুর রহমান (৩১)।

মামলার অভিযোগপত্রের তথ্য ও ডিবি কর্মকর্তারা বলছেন, মতিঝিলকেন্দ্রিক চাঁদাবাজি ও রাজনৈতিক আধিপত্য এ দুই কারণে জাহিদুল ইসলামকে হত্যা করা হয়। হত্যার পরিকল্পনায় বিদেশে পলাতক দুই শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান আহমেদ ও জাফর আহমেদ ওরফে মানিকসহ ৩০ জনের নাম এসেছে। আর হত্যাকা-ে সরাসরি অংশ নিয়েছিলেন তিনজন। সুমন শিকদার ওরফে মুসা পুরো বিষয়টি সমন্বয় করেন। ডিবি বলছে, দীর্ঘ ১৪ মাস ধরে তদন্ত করে গুলি করে হত্যার ঘটনায় কয়েকজন অংশ নিয়েছিলেন, পরিকল্পনায় কারা ছিলেন, হত্যাকা-ে কার কী ভূমিকা ছিল—সেসব তথ্যপ্রমাণ জোগাড় করা হয়েছে। অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, হত্যার পরিকল্পনা থেকে বাস্তবায়নে একেকজনের একেক ধরনের ভূমিকা ছিল। এ হত্যায় সরাসরি অংশ নিয়েছিলেন ‘শুটার’ মাসুম মোহাম্মদ ওরফে আকাশ, তাঁর বন্ধু মোল্লা শামীম ও পলাশ ওরফে কাল্লা পলাশ। বাকিরা সবাই ছিলেন এ হত্যার পরিকল্পনাকারী।
মামলার তদন্ত ও অভিযোগপত্র নিয়ে জাহিদুলের স্ত্রী ফারহানা ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, আওয়ামী লীগ, যুবলীগ এবং ছাত্রলীগের সাবেক ও বর্তমান নেতা-কর্মীরা এ হত্যার সঙ্গে জড়িত। অভিযোগপত্রে যাদের নাম এসেছে, তাদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানাই তিনি।

২০২২ সালের ২৪ মার্চ রাত সোয়া ১০টার দিকে শাহজাহানপুরে ইসলামী ব্যাংকের পাশে বাটার শোরুমের সামনে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপুকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এ সময় গাড়ির পাশে রিকশায় থাকা সামিয়া আফরান প্রীতি (১৯) নামে এক কলেজছাত্রীও নিহত হন। এছাড়া টিপুর গাড়িচালক মুন্না গুলিবিদ্ধ হন। চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকা-ের পর ওইদিন রাতেই শাহজাহানপুর থানায় নিহত টিপুর স্ত্রী ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) সংরক্ষিত কাউন্সিলর ফারহানা ইসলাম ডলি বাদী হয়ে হত্যা মামলা করেন। এতে অজ্ঞাতদের আসামি করা হয়।


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

আরব বসন্ত থেকে বাংলাদেশ: স্বৈরাচার মুক্ত নতুন ব্যবস্থার সন্ধানে
সিন্ডিকেটের প্রভাবে কুষ্টিয়ায় পেঁয়াজচাষীদের মাথায় হাত
বছরজুড়ে সড়কে অনিয়ম-বিশৃঙ্খলা
বর্ষপণ্য আসবাবপত্রের মূল্য আকাশচুম্বি
চাঁদাবাজ-দখলদারমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে চাই :কুষ্টিয়ায় জামায়াতের আমির
আরও

আরও পড়ুন

ব্রাইটনের বিপক্ষে আর্সেনালের হোঁচট

ব্রাইটনের বিপক্ষে আর্সেনালের হোঁচট

টানা দ্বিতীয় জয়ে ছন্দে ফেরার ইঙ্গিত সিটির

টানা দ্বিতীয় জয়ে ছন্দে ফেরার ইঙ্গিত সিটির

রিকেলটনের মহাকাব্যিক ইনিংস,রান পাহাড়ের চাপে পাকিস্তান

রিকেলটনের মহাকাব্যিক ইনিংস,রান পাহাড়ের চাপে পাকিস্তান

রহমতের লড়াকু সেঞ্চুরিতে জয়ের স্বপ্ন দেখছে আফগানিস্তান

রহমতের লড়াকু সেঞ্চুরিতে জয়ের স্বপ্ন দেখছে আফগানিস্তান

আশুলিয়ায় ছাত্র হত্যা মামলার আসামি গ্রেফতার

আশুলিয়ায় ছাত্র হত্যা মামলার আসামি গ্রেফতার

আটঘরিয়ায় প্রভাষকের বাড়িতে দুর্ধর্ষ চুরি

আটঘরিয়ায় প্রভাষকের বাড়িতে দুর্ধর্ষ চুরি

আরব বসন্ত থেকে বাংলাদেশ: স্বৈরাচার মুক্ত নতুন ব্যবস্থার সন্ধানে

আরব বসন্ত থেকে বাংলাদেশ: স্বৈরাচার মুক্ত নতুন ব্যবস্থার সন্ধানে

৫০০ হজ কোটা বহাল রাখতে প্রধান উপদেষ্টার সহায়তা কামনা

৫০০ হজ কোটা বহাল রাখতে প্রধান উপদেষ্টার সহায়তা কামনা

ফেব্রুয়ারিতে আয়ারল্যান্ড-জিম্বাবুয়ে পূর্ণাঙ্গ সিরিজ

ফেব্রুয়ারিতে আয়ারল্যান্ড-জিম্বাবুয়ে পূর্ণাঙ্গ সিরিজ

পাওনা টাকা ফেরত দিতে বিলম্ব যাওয়ায় পাওনাদার টাকা ফেরত নিতে না চাওয়া প্রসঙ্গে।

পাওনা টাকা ফেরত দিতে বিলম্ব যাওয়ায় পাওনাদার টাকা ফেরত নিতে না চাওয়া প্রসঙ্গে।

‘রাষ্ট্র সংস্কার শেষ করে সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতির নির্বাচন দিতে হবে’

‘রাষ্ট্র সংস্কার শেষ করে সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতির নির্বাচন দিতে হবে’

শীতে পশু-পাখিদের যত্ন

শীতে পশু-পাখিদের যত্ন

মানব পাচার রোধ করতে হবে

মানব পাচার রোধ করতে হবে

মজলুমের বিজয় ও জালেমের পরাজয় অবধারিত

মজলুমের বিজয় ও জালেমের পরাজয় অবধারিত

বিনিয়োগ বাড়ানোর কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে

বিনিয়োগ বাড়ানোর কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে

১১৬ বছর বয়সে বিশ্বের সবচেয়ে বয়স্ক ব্যক্তির মৃত্যু

১১৬ বছর বয়সে বিশ্বের সবচেয়ে বয়স্ক ব্যক্তির মৃত্যু

লাদাখে দুই প্রশাসনিক অঞ্চল তৈরী চীনের

লাদাখে দুই প্রশাসনিক অঞ্চল তৈরী চীনের

চিনির নিম্নমুখী বাজারে বিশ্বে কমেছে খাদ্যপণ্যের দাম

চিনির নিম্নমুখী বাজারে বিশ্বে কমেছে খাদ্যপণ্যের দাম

মার্কিন শপিং সেন্টারে প্রাণ গেল ৫ শতাধিক প্রাণীর

মার্কিন শপিং সেন্টারে প্রাণ গেল ৫ শতাধিক প্রাণীর

জাতীয় ঐক্য এখন আমাদের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন: মির্জা ফখরুল

জাতীয় ঐক্য এখন আমাদের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন: মির্জা ফখরুল