ঢাকা   বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৪ আশ্বিন ১৪৩১
ভয়াবহ জলবায়ূ পরিবর্তন ২

বিশ্ব জুড়ে বাড়ছে পানি দখলের সঙ্ঘাত

Daily Inqilab দ্য নিউ ইয়র্ক টাইম্স

০২ আগস্ট ২০২৩, ১১:৩৩ পিএম | আপডেট: ০৩ আগস্ট ২০২৩, ১২:০১ এএম

ইরাকের পাশ্ববর্তী ইরানী প্রদেশ নিয়ে ইরানের আইনপ্রণেতারা বলেছেন যে, ২০ লাখ লোকের প্রদেশটিতে সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি নাগাদ পানি শেষ হয়ে যেতে পারে। ইরাক এবং এর প্রতিবেশীদের অংশসহ বাকি মধ্যপ্রাচ্য, মেক্সিকো, ভারত উপমহাদেশ বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলের জন্য এটি একটি বিপজ্জনক সতর্কতাবাণী। ‘ওয়ার্ল্ড রিসোর্স ইনস্টিটিউট’ এর পানি সুরক্ষার বিষয়ক গবেষণা পরিচালক চার্লস আইসল্যান্ড বলেন, ‘এই অঞ্চলের দুর্বলতার কারণে এটি গ্রহের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ, প্রথম স্থানগুলোর একটি, যা একরকম চরম পরিণতি দেখাতে চলেছে, আক্ষরিক অর্থেই জলবায়ু পরিবর্তনের কাছে আত্মসমর্পণ করার’। তিনি আরো বলেন, ‘কিন্তু, কোনো দেশ, এমনকি ধনী দেশগুলোও জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে তাদের প্রয়োজনীয় মাত্রায় প্রস্ততি নিচ্ছে না’।

ইউফ্রেতিসসহ বিশে^র ইতিহাস পানি দখলের যুদ্ধে পরিপূর্ণ। লেখকরা ৪ হাজার বছরেরও বেশি আগে ইউফ্রেতিসের অর্ধচন্দ্রাকার ঊর্বর অঞ্চলের সুমেরীয় রাজ্য শহরগুলোর মধ্যে পানি নিয়ে লড়াই নথিভুক্ত করেছেন। বর্তমানও এর ব্যতিক্রম নয়। অনেক আধুনিক রাষ্ট্র তাদের জনগণের পর্যাপ্ত পানি নিশ্চিত করার জন্য আক্রমণাত্মক পদক্ষেপ নিয়েছে। ইরাকের বেশির ভাগ পান ও সেচের পানি আসে দেশের বাইরে উৎপন্ন নদী থেকে, যা প্রতিবেশী তুরস্ক ও ইরানের সিদ্ধান্তের কাছে জিম্মি। যুক্তরাষ্ট্রের কলোরাডো নদী, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মেকং এবং উত্তর আফ্রিকার নীলনদ নিয়ে লড়াইয়ের মতো পানি নিয়ে টানাপড়েনও এ অঞ্চলজুড়ে বহু কোটি মানুষের জন্য পানির ঘাটতিকে তীব্র করে তুলেছে।

জাতিসংঘের মতে, বিশ্বব্যাপী দেশগুলো প্রায় ৯শ’ নদ-নদী, হ্রদ এবং জলাশয় ভাগ করে এবং যদিও তাদের পানি বন্টন নিয়ন্ত্রণ করার জন্য একটি সার্বজনীন চুক্তি বিদ্যমান, কিন্তু অর্ধেকেরও কম দেশ এটি অনুমোদন ও অনুসরণ করেছে। উজানে থাকা ইথিওপিয়া নীল নদের ওপর একটি বিশাল বাঁধ নির্মাণের জন্য বছরের পর বছর অতিবাহিত করেছে, যা মিসরের পানি হারানোর আশঙ্কা ও ক্রোধ উস্কে দিয়েছে। চীন মেকং এর সাথে একই কাজ করেছে। মধ্য এশীয় দেশগুলোর মধ্যে আমু দরিয়া এবং সির দরিয়া নদী নিয়ে দীর্ঘকাল ধরে চলমান বিরোধ রয়েছে, যেগুলো এতটাই নিষ্কাশিত হয়েছে যে, যখন অভ্যন্তরীণ আরাল সাগরে পৌঁছায়, তখন সেগুলোতে সামান্যই পানি অবশিষ্ট থাকে।

তুরস্ক ও ইরানের উজানে বাঁধগুলো ইরাকের দুটি প্রধান নদী থেকে পানি সরিয়ে নিয়েছে। ১৯৭৪ সাল থেকে তুরস্ক তাইগ্রিস এবং ইউফ্রেতিসে ২২টি বাঁধ, পানিবিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং সেচ প্রকল্প নির্মাণ করেছে, যা আংশিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রের টেনেসি ভ্যালি অথোরিটির আদলে তৈরি। ২০০০ সালের গোড়ার দিকে ইরান তাইগ্রিসের উপনদীতে এক ডজনেরও বেশি ছোট বাঁধ এবং টানেল নির্মাণ শুরু করে। এর ফলাফল হয়েছে তীব্র। এটি দিয়ালার মতো ইরাকি প্রদেশকে ধ্বংস করে দিয়েছে, যেটি মাত্র ১০ বছর আগেও পীচ, এপ্রিকট, কমলা ও খেজুরের জন্য সুপরিচিত ছিল।

তাইগ্রিস এবং ইউফ্রেতিস এর প্রধান উৎস তরাস পর্বতমালা থেকে শীতকালীন বৃষ্টি এবং তুষার গলা পানির অতিরিক্ত বার্ষিক প্রবাহ ধরে রাখার জন্য ১৯৭০ এবং ১৯৮০ এর দশকে ইরাকের পানি মন্ত্রণালয় কৃত্রিম হ্রদ এবং বাঁধ তৈরি করেছিল। কিন্তু এমনকি সেই প্রবাহগুলোও সাম্প্রতিক দশকগুলোতে সঙ্কুচিত হয়ে গেছে। এখন, ইরাকের পানির স্তর এতোটাই নিচে চলে গেছে যে, অনেক স্থানে পানির লবণাক্ততা বেড়ে মরে ভেসে উঠছে টনকে টন মাছ ও অন্যান্য জলজ প্রাণী। গ্রীষ্মে ইরাকের সেচের খালগুলো এতটাই শুকিয়ে যায় যে, ছোট সেতুগুলোর তেমন প্রয়োজন হয় না এবং শুষ্ক খালগুলোতে প্রবাহিত বাতাসে রুক্ষ বাদামি ঘাস এবং শুকনো তালপাতার কর্কশ শব্দ শোনা যায়। অনেক খেজুর গাছে পাতাই নেই, ফাটল ধরা মাটিতে তাদের শূন্য কা-গুলো স্তম্ভের মতো দাঁড়িয়ে থাকে। (চলবে)


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

ইত্তিহাদেই সিটিকে রুখে দিল ইন্টার

ইত্তিহাদেই সিটিকে রুখে দিল ইন্টার

রোনালদোদের নতুন কোচ পিওলি

রোনালদোদের নতুন কোচ পিওলি

দক্ষিণ আফ্রিকাকে গুড়িয়ে আফগানদের ঐতিহাসিক জয়

দক্ষিণ আফ্রিকাকে গুড়িয়ে আফগানদের ঐতিহাসিক জয়

যেই গৌরব কেবল শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামের

যেই গৌরব কেবল শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামের

রিট করে ‘খেলাপি ঋণ স্থগিত’ বন্ধ চান ব্যাংক-মালিকরা

রিট করে ‘খেলাপি ঋণ স্থগিত’ বন্ধ চান ব্যাংক-মালিকরা

বিদেশি ঋণ ফের ১০০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে

বিদেশি ঋণ ফের ১০০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে

টাকা উদ্ধারের নামে ‘ঘুষ’ চাওয়ার অভিযোগ জিএম শাহজাহান চৌধুরীর’র বিরুদ্ধে

টাকা উদ্ধারের নামে ‘ঘুষ’ চাওয়ার অভিযোগ জিএম শাহজাহান চৌধুরীর’র বিরুদ্ধে

জাতীয় ঐক্য বিনষ্টকারী কর্মকান্ড থেকে বিরত থাকতে হবে

জাতীয় ঐক্য বিনষ্টকারী কর্মকান্ড থেকে বিরত থাকতে হবে

৬০ হাজার টন ইউরিয়া সার কিনবে সরকার, ব্যয় ২৩৬ কোটি টাকা

৬০ হাজার টন ইউরিয়া সার কিনবে সরকার, ব্যয় ২৩৬ কোটি টাকা

আইকনিক লিডার তারেক রহমান ও বাংলাদেশের রাজনীতি

আইকনিক লিডার তারেক রহমান ও বাংলাদেশের রাজনীতি

পতিত স্বৈরাচার ও ভারতের চক্রান্ত চলছেই

পতিত স্বৈরাচার ও ভারতের চক্রান্ত চলছেই

তারেক রহমানের রাষ্ট্রনায়কোচিত বক্তব্য ও দিকনির্দেশনা

তারেক রহমানের রাষ্ট্রনায়কোচিত বক্তব্য ও দিকনির্দেশনা

ইসরাইলের দখলদারিত্ব বন্ধের প্রস্তাব বিবেচনা জাতিসংঘের

ইসরাইলের দখলদারিত্ব বন্ধের প্রস্তাব বিবেচনা জাতিসংঘের

উত্তপ্ত মণিপুরে অত্যাধুনিক অস্ত্র দিয়ে নতুন করে গোলাগুলি

উত্তপ্ত মণিপুরে অত্যাধুনিক অস্ত্র দিয়ে নতুন করে গোলাগুলি

২৭ দেশে ছড়িয়ে পড়েছে করোনার নতুন ভ্যারিয়্যান্ট

২৭ দেশে ছড়িয়ে পড়েছে করোনার নতুন ভ্যারিয়্যান্ট

২০০ হাতি নিধনের সিদ্ধান্ত জিম্বাবুয়ের

২০০ হাতি নিধনের সিদ্ধান্ত জিম্বাবুয়ের

কলেরাসহ মারাত্মক রোগের ঝুঁকিতে সুদানের ৩৪ লাখ শিশু

কলেরাসহ মারাত্মক রোগের ঝুঁকিতে সুদানের ৩৪ লাখ শিশু

১১ হাজার ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থীর প্রাণ গেছে

১১ হাজার ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থীর প্রাণ গেছে

বেলারুশে হামলা হলে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হবে : লুকাশেঙ্কো

বেলারুশে হামলা হলে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হবে : লুকাশেঙ্কো

তাইওয়ান প্রণালীতে চীনের যুদ্ধবিমান

তাইওয়ান প্রণালীতে চীনের যুদ্ধবিমান