খানাখন্দে ভরা ৩০ কিমি সড়ক, চরম ভোগান্তি
০৩ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০৯ এএম | আপডেট: ০৩ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০৯ এএম
ফরিদপুর-বরিশাল মহাসড়কের জেলা শহর থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত প্রায় ৩০ কিলোমিটার সড়কটি এখন খানাখন্দের সড়কে পরিণত হয়েছে। ফরিদপুর থেকে বরিশাল পর্যন্ত প্রায় ১৩০ কিলোমিটার সড়ককে চার লেনে উন্নতি করার কাজ অগ্রগামী হলেও সেই কাজ এখন নিথর হয়ে পড়ছে।
এই অবস্থায় ফরিদপুর থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত প্রায় ৩০ থেকে ৪০ কিলোমিটার সড়ক প্রশস্ত করার কাজ শুরু হলেও কাজ নিয়ে উঠছে ভয়াবহ অভিযোগ। এত অনিয়ম-দুর্নীতির মধ্যে ফরিদপুরবাসীর চোখের সামনে পানির দামে বিক্রি হয়েছে শতশত কোটি টাকার গাছ। ঐ গাছগুলো সড়কের দুই পাশে থাকায় সড়ক যানবাহন চললে একটি নিরাপত্তা বেষ্টনি থাকলেও সড়ক হয়েছে সম্পূর্ণ অরক্ষিত। পদ্মা সেতু চালু হবার পর থেকেই উত্তরবঙ্গের যানবাহনের চাপ বেড়েছে এ সড়কে। তবুও সড়ক বিভাগের টনক নড়ছে না।
গত মার্চ-এপ্রিল জুড়ে টানা বৃষ্টিতে নতুন করে সৃষ্টি হয়েছে কয়েক লাখ ছোট বড় খন্দ। জেলা শহরের মুন্সিবাজার থেকে ভাঙ্গা ইন্টারচেঞ্জ সড়কের সংযোগ পর্যন্ত সড়কটি এখন মরণফাঁদ হয়ে দাঁড়িয়েছে চালক ও যাত্রীদের কাছে। প্রতিনিয়ত ছোটখাটো দুর্ঘটনা ঘটছে। খানাখন্দের কারণে ধীরগতির যান চলাচলের ফলে বড় দুর্ঘটনা না ঘটলেও দূরপাল্লার যাত্রীবাহী যান ও পণ্যবাহী যানের সময় লাগছে দ্বিগুণ। ঢাকা থেকে ভাঙ্গা গোলচত্বর পর্যন্ত আসতে সময় লাগে ১ ঘণ্টা ২০ মিনিট আর ভাঙ্গা থেকে ফরিদপুর শহরে আসতে সময় লাগে ১ ঘণ্টারও বেশি । অথচ পূর্ব ছিল মাত্র ৫০ মিনিটের পথ।
এদিকে, পদ্মা সেতুর কারণে যান চলাচল দ্বিগুণ হলেও রাস্তার কোনো উন্নয়ন বা প্রশস্তকরণ কোনো কিছু করা হয়নি এ পর্যন্ত। এক প্রকার জোড়াতালি দিয়েই চলছে এ মহাসড়কটি। ফলে ব্যস্ততাপূর্ণ এ মহাসড়ক যান চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। চরম দুর্ভোগে পড়েছে যাত্রী ও যান চালকরা। বিভিন্ন যানবাহনের চালকরা জানান তাদের অসহায়ত্বের কথা। সড়কে যত্রতত্র ছোট-বড় ক্ষত থাকায় সৃষ্টি হচ্ছে যানজট। দুর্ঘটনার কবলে পড়ছে অনেক যানবাহন। তবে সড়কের এই দশায় দেখা মেলেনি সড়ক বিভাগের কোনো তৎপরতা।
আঞ্চলিক মহাসড়কে যাতায়াতে চরম দুর্ভোগে সাধারণ জনগণ। বৃষ্টি হলেই সন্ধ্যার পরে মনে হয় এক ভুতূড়ে মহাসড়ক। কাদামাটি ও খালখন্দ দিয়ে যাতায়াতে চরম ভোগান্তিতে পড়ে রোগীবাহী অ্যাম্বুলেন্স। এতে ক্ষুব্ধ স্থানীয় জনগণ ও যান চালকরা।
কবির হাওলাদার নামে এক পরিবহন চালক ইনকিলাবকে বলেন, রাস্তায় গাড়ি চালাবার কায়দা নেই। কয়েকদিনের বৃষ্টিতে যে বড় বড় গর্ত সৃষ্টি হয়েছে, তাতে দুর্ঘটনার ভয় রয়েছে আবার গভীর রাতে ছিনতাইয়ের ভয়ও বেড়েছে। দ্রুত এ রাস্তা সংস্কার করা হোক।
মহিলা রোড থেকে দাওয়াত খেয়ে মাহিন্দ্রযোগে ফরিদপুর শহরের ফিরছেন আয়শা বেগম ও মনি আক্তার। তারা ইনকিলাবকে বলেন, এ মহাসড়কে চড়ে মনে হচ্ছে, ২০ বছর পেছনে ফিরে গেছি। যখন গ্রামগঞ্জে খানাখন্দ আর কাঁদার রাস্তা দেখতে পেতাম। বাংলাদেশ আজ পিছিয়ে গেছে।
ফরিদপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী খালিদ সাইফুল্লাহ্ সরদার ইনকিলাবকে বলেন, এখানে চার লেনের প্রকল্পের কাজ শুরু হবে। জমি অধিগ্রহণের কাজ চলছে। টানা কয়েকদিনের বৃষ্টির কারণে সংস্কার কাজ শুরু করতে পারিনি। আপাতত কিছু সংস্কার করে যান চলাচলের উপযোগী করা হচ্ছে। তবে এই ৩০ কিলোমিটার সড়ক পাশে বসবাসরত বাসিন্দারা ইনকিলাবকে অভিযোগ করে বলেন, এই সড়কে মাত্র ৫ থেকে ৬ মাস আগে লোক দেখানে কাজ করা হয়েছে। সরকার খরচ হয়েছে কোটি টাকার উপরে অথচ কাজের মান এমন।
জেলা সড়ক বিভাগের পালিত কতিপয় লোক দিয়ে সড়ক বিভাগ তারা যাথাস্থানে কংক্রিটের পাথর এবং সম্পূর্ণ কালো স্টোন পাথর দিয়ে কাজ করার কথা থাকলে সেই স্থানে দেয়া হয়েছে বিভিন্ন স্থানের ব্রিজের পাইল ভাঙ্গা পাথর ও পুরাতন পাথরের ডাস্ট। এই নিম্নমানের মালমাল দিয়ে সিলেকশন লাল বালুর স্থলে সাদা বালু মিশ্রিত করে রাস্তায় সংস্কার কাজ করার কারণে আজকের এই বেহাল দশা।
তালমার কৃষ্ণপদ পাল, শংঙ্কর পাশার হরিমন বৈরাগী, পুকুরির রিপোন, ইনকিলাবকে বলেন, সবই লুটপাট। যার ফলে আজকের এই ভোগান্তি।
সড়কের এই দৃশ্যে মানুষ হতবাক সবার মুখে একটাই কথা সড়কের এই অবস্থার উন্নতি হবে কবে? এই খানাখন্দের ও বড় বড় গর্তের দৃশ্য সকলের চোখে দৃশ্যমান কিন্ত সড়ক জনপদের মানুষের কষ্টের দিক তাকালে মহাসড়কটির এমন অবস্থা থাকার কথা নয়। এমনটাই ভুক্তভোগীরা মনে করেন।
একটি বিশেষ মহল নাম প্রকাশ না করে ইনকিলাবকে বলেন, দীর্ঘদিন যাবৎ শুনো আসছি ফরিদপুর থেকে বরিশাল পর্যন্ত প্রায় ১৩০ কিলোমিটার সড়ক ফোর লেন হওয়ার কাজ চলমান আছে। সেই অনুসারে ফরিদপুর থেকে ভাঙ্গার প্রায় ৩০ থেকে ৪০ কিলোমিটার সড়কের দুই পাশের কয়েক হাজার বিভিন্ন প্রজাতির মুল্যবান শতকোটি টাকার গাছ রাতারাতি নাই হয়ে গেছে ৫ আগস্টের আগেই।
তদ্রুপ ফরিদপুর থেকে কামারখালি ব্রিজ পর্যন্ত ৪০ কিলোমিটার সড়কের কয়েক কোটি টাকার গাছও নাই হয়ে গেছে। ফরিদপুর পুকুরিয়ার রায়হান, শঙ্কর পাশার আকবর, বাখুন্ডার নেয়াত আলী ইনকিলাবকে বলেন, বিগত আওয়ামী লীগ সরকার ফরিদপুর থেকে বরিশাল এবং ফরিদপুর থেকে কামারখালি পর্যন্ত রাস্ত প্রস্থ ও ফোর লেন করার বিপরীতে সরকারি গাছগুলো লুট করা হলেও রাস্তার উন্নয়ন তো হয়নি উপরন্ত সড়ক প্রস্থের নামে হয়েছে আরো কয়েক কোটি টাকার রাজস্ব লুট।
অভিযোগ উঠছে নিম্নমানের সামগ্রিক দিয়ে লোক দেখানো কাজ করা হলেও কাজের নামে হয়েছে ফাঁকিবাজি। এমনকি উল্লেখিত এলাকার সড়ক প্রশস্তকরণের কাজ এখনও শেষ হয়নি।
অপরদিকে, ফরিদপুর, কামারখালি, মধুখালী একাধিক ব্যবসায়ী ইনকিলাবকে জানান, যেখানে সড়কটি ফোর লেন হবে কাজের অগ্রগামী ও হলো সেখানে রাস্তার দুই পাশের প্রশস্তকরণের নামে সরকারের কোটি কোটি টাকা খরচের হেতুবাদ কি?
এই বিষয় ফরিদপুর সড়ক জনপদের সংশ্লিষ্ট সকলের সাথে কথা বললে তারা ইনকিলাবকে বলেন, আসলে জনভোগান্তি দুর হোক আমরাও চাই। গত ৫ আগস্টের আগে সকল কাজের শুরু হয়। কিন্তু সরকারের অবস্থান শেষ হওয়ার পর আমরা নিজেরাই সমস্যায় আছি। কোনো কাজেই কোনো অনিয়ম হয়নি। ভাল কাজ করতে গেলে তাতে দুই একটা ভুল ভ্রান্তি দৃশ্যমান হয়। এটাই মানুষ সমালোচনা করেন। আসলে আমরা সবসময় জনতার বন্ধু হয়ে নিবেদিত প্রাণ হয়ে কাজ করছি।
এই বিষয় ফরিদপুর হাজী শরীতুল্লাহ বাজার ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি হাজী মো. নুর ইসলাম ইনকিলাবকে বলেন, উল্লেখিত সড়ক দুটির ফোর লেনের কাজ সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত এই অঞ্চলের সড়কের মৃত্যুর মিছিল কখনোই কমনোর সম্ভাবনা নাই বলে আমার মনে হয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন প্রভাবশালী বিএনপি নেতা ইনকিলাবকে বলেন, ফরিদপুর-বরিশাল মহাসড়কে ৩০ কিলোমিটার পথে যান চলাচলে চরম ভোগান্তি, ফোর লেন করার বিপরীতে কোটি কোটি টাকার গাছ লুট! রাস্তা প্রশস্তকরণের নামে রাজস্ব গায়েবের তদারকি করবে কে? ফরিদপুরবাসী জানতে চান ফরিদপুর থেকে বরিশাল এবং ফরিদপুর থেকে কামারখালি পর্যন্ত ফোর লেনে কাজ শুরু হতে আর কতদিন বাকি?
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
ব্রাইটনের বিপক্ষে আর্সেনালের হোঁচট
টানা দ্বিতীয় জয়ে ছন্দে ফেরার ইঙ্গিত সিটির
রিকেলটনের মহাকাব্যিক ইনিংস,রান পাহাড়ের চাপে পাকিস্তান
রহমতের লড়াকু সেঞ্চুরিতে জয়ের স্বপ্ন দেখছে আফগানিস্তান
আশুলিয়ায় ছাত্র হত্যা মামলার আসামি গ্রেফতার
আটঘরিয়ায় প্রভাষকের বাড়িতে দুর্ধর্ষ চুরি
আরব বসন্ত থেকে বাংলাদেশ: স্বৈরাচার মুক্ত নতুন ব্যবস্থার সন্ধানে
৫০০ হজ কোটা বহাল রাখতে প্রধান উপদেষ্টার সহায়তা কামনা
ফেব্রুয়ারিতে আয়ারল্যান্ড-জিম্বাবুয়ে পূর্ণাঙ্গ সিরিজ
পাওনা টাকা ফেরত দিতে বিলম্ব যাওয়ায় পাওনাদার টাকা ফেরত নিতে না চাওয়া প্রসঙ্গে।
‘রাষ্ট্র সংস্কার শেষ করে সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতির নির্বাচন দিতে হবে’
শীতে পশু-পাখিদের যত্ন
মানব পাচার রোধ করতে হবে
মজলুমের বিজয় ও জালেমের পরাজয় অবধারিত
বিনিয়োগ বাড়ানোর কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে
১১৬ বছর বয়সে বিশ্বের সবচেয়ে বয়স্ক ব্যক্তির মৃত্যু
লাদাখে দুই প্রশাসনিক অঞ্চল তৈরী চীনের
চিনির নিম্নমুখী বাজারে বিশ্বে কমেছে খাদ্যপণ্যের দাম
মার্কিন শপিং সেন্টারে প্রাণ গেল ৫ শতাধিক প্রাণীর
জাতীয় ঐক্য এখন আমাদের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন: মির্জা ফখরুল