চিন্ময়ের জামিন নামঞ্জুর

Daily Inqilab চট্টগ্রাম ব্যুরো

০৩ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০৯ এএম | আপডেট: ০৩ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০৯ এএম

রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলার আসামি বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর জামিন নামঞ্জুর করেছেন আদালত।
গতকাল বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ সাইফুল ইসলামের আদালত এ আদেশ দেন। মহানগর দায়রা জজ আদালতে গতকাল চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর জামিন শুনানির দিন ধার্য ছিল। তার পক্ষে শুনানি করতে সুপ্রিম কোর্ট থেকে ১১ জনের একটি দল শুনানিতে অংশ নেন। শুনানি শেষে আদালত তার জামিন নামঞ্জুর করেছেন।

চিম্ময়ের পক্ষে দাঁড়ানো সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী অপূর্ব কুমার ভট্টাচার্য সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর জামিনের জন্য তারা উচ্চ আদালতে আপিল করবেন।

মামলার শুনানিকে কেন্দ্র করে সকাল থেকেই আদালত প্রাঙ্গণ ও আশপাশের এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। আদালতের প্রবেশ মুখে গুরুত্বপূর্ণ গাড়ি ছাড়া সকল যান প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা ছিল। ব্যক্তিগত গাড়িও ঢুকতে দেয়া হচ্ছিল না। আদালতে প্রবেশ মুখেই পুলিশ, সেনাবাহিনী ও র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ন (র‌্যাব) সদস্যদের সতর্ক অবস্থানে দেখা গেছে। সাড়ে ১০টায় চিম্ময় কৃষ্ণ দাসের পক্ষে শুনানির জন্য আদালতে আসেন সুপ্রীম কোর্টের ১১ আইনজীবী। সকাল সাড়ে ১১টায় শুনানি শুরু হয়। শুনানি শেষে আদালত চিম্ময়ের জামিন নামঞ্জুর করেন। এরপরই আদালতে আইনজীবী সমিতির সদস্য ও সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর সাইফুল ইসলাম আলিফের খুনিদের বিচারের দাবিতে আইনজীবীদের মিছিল করতে দেখা যায়।

চট্টগ্রামের কোতোয়ালী থানায় দায়ের হওয়া রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় ২৫ নভেম্বর ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ইসকনের বহিষ্কৃত সংগঠক ও সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে গ্রেফতার করে ডিএমপির গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। পরদিন তাকে চট্টগ্রাম আদালতে হাজির করা হয়। শুনানি শেষে তার জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে তাকে আদালতে পাঠানোর নির্দেশ দেন আদালত। এরপর তাকে কারাগারে পাঠানোর জন্য প্রিজন ভ্যানে তোলা হলে বিক্ষোভ শুরু করেন তার অনুসারী ইসকনের উগ্রবাদীরা। প্রায় তিন ঘণ্টা আটকে থাকার পর এক পর্যায়ে পুলিশ, বিজিবি লাঠিপেটা ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। তখনই আদালত এলাকায় নৈরাজ্য শুরু করে ইসকনের সদস্যরা। তারা আদালত এলাকায় রাখা আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থী লোকজনের যানবাহন, এলাকার দোকান পাট এমনকি কোর্ট হিল মসজিদে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে। এতে সাধারণ মুসল্লিদের মাঝে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। তারা ইসকনের উগ্রবাদীদের প্রতিরোধে এগিয়ে আসেন। পরবর্তীতে নগরীর লালদিঘীর পাড় থেকে কোতোয়ালী এলাকায় সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। সংঘর্ষের মধ্যে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে খুন ইসকনের দুর্বত্তরা। এছাড়া সংঘর্ষে পুলিশের ১০ সদস্যসহ আহত হন অন্তত ৩৭ জন।

আলিফ হত্যার বিচারের দাবিতে মানববন্ধন : রাষ্ট্রদ্রোহী মামলায় সম্মিলিত সনাতনি নাগরিক জোটের মুখপাত্র চিন্ময় দাশের শাস্তি ও শহীদ অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম আলিফের হত্যাকারীদের অবিলম্বে গ্রেফতার ও বিচার নিশ্চিত করা এবং আলিফ হত্যাকা-ের মামলা দ্রুত বিচার ট্রাইবুনালে স্থানান্তরের দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। গতকাল শহীদ অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম আলিফ স্মৃতি পরিষদ চট্টগ্রামের উদ্যােগে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব প্রাঙ্গণে এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। অ্যাডভোকেট মো. আনিসুল ইসলামের সভাপতিত্বে ও অ্যাডভোকেট মো. নওশাদ আলীর সঞ্চালনায় উক্ত মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন অ্যাডভোকেট মো. জমির উদ্দীন, অ্যাডভোকেট জিয়াউর রহমান, এস.এম মামুন, রমিজ উদ্দিন আনসারী, মো. ইউনুস, আব্দুল মজিদ, মুজিবুর রহমান, কামরুল ইসলাম, আমজাদ হোসেন, মো. শহিদ উল্লাহ তালুকদার, মাওলানা মো. ফারুক, নজরুল ইসলাম প্রমুখ।

মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, অ্যাডভোকেট শহীদ সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যাকা-ে চিন্ময় দাশের উসকানি ছিল। চিন্ময় দাশকে আদালত প্রাঙ্গণ থেকে কারাগারে নেওয়ার পথে পুলিশের প্রিজন ভ্যান থেকে বক্তব্য দেয় চিন্ময়। সেই বক্তব্যে তার সমর্থকদের উসকানি দিয়ে বক্তব্য রাখে চিন্ময় দাশ। ফলে সন্ত্রাসীরা অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম আলিফকে ধরে নিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে। এই সন্ত্রাসীরা ঐদিন কোর্টহিল জামে মসজিদে হামলা, গাড়ি ভাঙচুর ও অনেক মানুষকে আহত করে। আদালত প্রতিষ্ঠার দীর্ঘ ১৩১ বছরের মধ্যে এরকম জঘণ্যতম ঘটনা আর কখনো ঘটেনি।

বক্তারা আরো বলেন, চিন্ময় দাশকে আদালতে তোলা ও কারাগারে প্রেরণের সময় ইসকনের সন্ত্রাসীরা নৃশংস হত্যাকা-ের ঘটনা ঘটিয়েছে। কিন্তু এখনো এই সন্ত্রাসীরা প্রকাশে ঘুরে বেড়াচ্ছে। শহীদ অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম আলিফের খুনিদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির না দেয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে। আলিফ হত্যাকা-ের বিচারের কার্যক্রম ধীরগতিতে চলছে। বাংলাদেশের হাজার হাজার আইনজীবীর দাবি আলিফ হত্যা মামলা দ্রুত বিচার আইনের মাধ্যমে করতে হবে। #

 


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

আরব বসন্ত থেকে বাংলাদেশ: স্বৈরাচার মুক্ত নতুন ব্যবস্থার সন্ধানে
সিন্ডিকেটের প্রভাবে কুষ্টিয়ায় পেঁয়াজচাষীদের মাথায় হাত
বছরজুড়ে সড়কে অনিয়ম-বিশৃঙ্খলা
বর্ষপণ্য আসবাবপত্রের মূল্য আকাশচুম্বি
চাঁদাবাজ-দখলদারমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে চাই :কুষ্টিয়ায় জামায়াতের আমির
আরও

আরও পড়ুন

ব্রাইটনের বিপক্ষে আর্সেনালের হোঁচট

ব্রাইটনের বিপক্ষে আর্সেনালের হোঁচট

টানা দ্বিতীয় জয়ে ছন্দে ফেরার ইঙ্গিত সিটির

টানা দ্বিতীয় জয়ে ছন্দে ফেরার ইঙ্গিত সিটির

রিকেলটনের মহাকাব্যিক ইনিংস,রান পাহাড়ের চাপে পাকিস্তান

রিকেলটনের মহাকাব্যিক ইনিংস,রান পাহাড়ের চাপে পাকিস্তান

রহমতের লড়াকু সেঞ্চুরিতে জয়ের স্বপ্ন দেখছে আফগানিস্তান

রহমতের লড়াকু সেঞ্চুরিতে জয়ের স্বপ্ন দেখছে আফগানিস্তান

আশুলিয়ায় ছাত্র হত্যা মামলার আসামি গ্রেফতার

আশুলিয়ায় ছাত্র হত্যা মামলার আসামি গ্রেফতার

আটঘরিয়ায় প্রভাষকের বাড়িতে দুর্ধর্ষ চুরি

আটঘরিয়ায় প্রভাষকের বাড়িতে দুর্ধর্ষ চুরি

আরব বসন্ত থেকে বাংলাদেশ: স্বৈরাচার মুক্ত নতুন ব্যবস্থার সন্ধানে

আরব বসন্ত থেকে বাংলাদেশ: স্বৈরাচার মুক্ত নতুন ব্যবস্থার সন্ধানে

৫০০ হজ কোটা বহাল রাখতে প্রধান উপদেষ্টার সহায়তা কামনা

৫০০ হজ কোটা বহাল রাখতে প্রধান উপদেষ্টার সহায়তা কামনা

ফেব্রুয়ারিতে আয়ারল্যান্ড-জিম্বাবুয়ে পূর্ণাঙ্গ সিরিজ

ফেব্রুয়ারিতে আয়ারল্যান্ড-জিম্বাবুয়ে পূর্ণাঙ্গ সিরিজ

পাওনা টাকা ফেরত দিতে বিলম্ব যাওয়ায় পাওনাদার টাকা ফেরত নিতে না চাওয়া প্রসঙ্গে।

পাওনা টাকা ফেরত দিতে বিলম্ব যাওয়ায় পাওনাদার টাকা ফেরত নিতে না চাওয়া প্রসঙ্গে।

‘রাষ্ট্র সংস্কার শেষ করে সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতির নির্বাচন দিতে হবে’

‘রাষ্ট্র সংস্কার শেষ করে সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতির নির্বাচন দিতে হবে’

শীতে পশু-পাখিদের যত্ন

শীতে পশু-পাখিদের যত্ন

মানব পাচার রোধ করতে হবে

মানব পাচার রোধ করতে হবে

মজলুমের বিজয় ও জালেমের পরাজয় অবধারিত

মজলুমের বিজয় ও জালেমের পরাজয় অবধারিত

বিনিয়োগ বাড়ানোর কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে

বিনিয়োগ বাড়ানোর কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে

১১৬ বছর বয়সে বিশ্বের সবচেয়ে বয়স্ক ব্যক্তির মৃত্যু

১১৬ বছর বয়সে বিশ্বের সবচেয়ে বয়স্ক ব্যক্তির মৃত্যু

লাদাখে দুই প্রশাসনিক অঞ্চল তৈরী চীনের

লাদাখে দুই প্রশাসনিক অঞ্চল তৈরী চীনের

চিনির নিম্নমুখী বাজারে বিশ্বে কমেছে খাদ্যপণ্যের দাম

চিনির নিম্নমুখী বাজারে বিশ্বে কমেছে খাদ্যপণ্যের দাম

মার্কিন শপিং সেন্টারে প্রাণ গেল ৫ শতাধিক প্রাণীর

মার্কিন শপিং সেন্টারে প্রাণ গেল ৫ শতাধিক প্রাণীর

জাতীয় ঐক্য এখন আমাদের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন: মির্জা ফখরুল

জাতীয় ঐক্য এখন আমাদের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন: মির্জা ফখরুল