দুপুর পর্যন্ত ঘন কুয়াশায় দিন ও রাতের তাপমাত্রার ব্যবধান কমে গেছে : দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা কমে গিয়ে বগুড়ায় ১৪.৬, ঢাকায় ১৬ ডিগ্রি! : আগামী সপ্তাহে বৃষ্টির পরই বাড়বে শীতের দাপট

ঠাণ্ডা তীব্র তিন কারণে

Daily Inqilab শফিউল আলম

০৩ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০৯ এএম | আপডেট: ০৩ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০৯ এএম


গেল ডিসেম্বরে পৌষ মাসের অর্ধেকটা পর্যন্ত শীতের প্রকোপ কম থাকলেও তৃতীয় সপ্তাহে এসেই ঠা-া ও কুয়াশার তীব্রতা হঠাৎ বেড়ে গেছে। ভারতের বিহারসহ বিভিন্ন অঞ্চল অতিক্রম করে একটি ‘শীতল বলয় আকারে’ উপ-মহাদেশীয় উচ্চচাপ বলয় বর্তমানে বাংলাদেশের পশ্চিমাঞ্চল ও এর কাছাকাছি এলাকা পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। অব্যাহত ঠা-ায় উত্তরাঞ্চলসহ দেশের অধিকাংশ স্থানে জীবনযাত্রা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।

আবহাওয়া বিশেষজ্ঞ সূত্র মতে, মূলত তিন কারণে ঠা-ার এই তীব্রতা। এক. মধ্যরাত থেকে সকাল পেরিয়ে এমনকি দুপুর পর্যন্ত সারা দেশে মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়ছে। ঘন কুয়াশা ভেদ করে সূর্যের তেজ মাটিতে আসা পর্যন্ত মøান ও দুর্বল হয়ে পড়ছে। এর ফলে দিন ও রাতের তাপমাত্রার ব্যবধান কমে গেছে। দুই. হিমালয় পর্বতমালা ছুঁয়ে আসা উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ৮ থেকে ১২ কি.মি. বেগে হিমেল হাওয়ায় ঠা-ার তীব্রতা বেড়ে গেছে। তিন. ঊর্ধ্বকাশের শীতল জেটবায়ু প্রবল বেগে ক্রমাগত নিচের দিকে অর্থাৎ স্থলভাগে নামছে এবং শীত বা ঠা-ার তীব্রতাকে আরো বাড়িয়ে তুলছে।

গতকাল বৃহস্পতিবারও সারা দেশে মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়েছে। অনেক জায়গায় সকাল পেরিয়ে দুপুর পর্যন্ত বৃষ্টির মতো ঝিরিঝিরি কুয়াশা পড়ছে। অব্যাহত ঠা-া ও কুয়াশায় মানুষের কষ্ট-দুর্ভোগ বেড়েই চলেছে। দিনের অধিকাংশ সময়ই মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা সূর্যের তেজ ঢেকে দেয়ার ফলে দিন ও রাতের তাপমাত্রার ব্যবধান কমে গেছে। গতকাল সিরাজগঞ্জে দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ১৪.৫ এবং সর্বনিম্ন ১১ ডিগ্রি সেলসিয়াস, বগুড়ায় তাপমাত্রা ছিল সর্বোচ্চ ১৪.৬ এবং সর্বনিম্ন ১১ ডিগ্রি সে.।

এমনকি রাজধানী ঢাকায়ও গতকাল দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রার পারদ নেমে আসে ১৬ ডিগ্রিতে এবং সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ১৩.৮ ডিগ্রি সে.। গতকাল দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের চুয়াডাঙ্গায় ৯ দশমিক ৮ ডিগ্রি সে.। ঠা-া ও কুয়াশায় হতদরিদ্র শ্রমজীবী কর্মজীবী মানুষের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছে গেছে। অনেক জায়গায় কুয়াশা ও ঠা-াজনিত বিভিন্ন রোগব্যাধির প্রকোপ দেখা দিয়েছে। হাসপাতাল-ক্লিনিক, ডাক্তারদের চেম্বারে রোগীর ভিড় বাড়ছেই।

এদিকে আবহাওয়া বিভাগ (বিএমডি) এবং বৈশি^ক আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ সংস্থাগুলোর পূর্বাভাসে জানা গেছে, আজ শুক্রবার থেকে রোববার পর্যন্ত রাত ও দিনের তাপমাত্রা ক্রমেই বৃদ্ধি পেতে পারে। এরপর আগামী সোমবার নাগাদ দেশের উত্তরাঞ্চলে হালকা থেকে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিপাত হতে পারে। এই ‘শীত নামানো বৃষ্টি’র পর সারা দেশে শীতের দাপট আরো বেড়ে যেতে পারে। শীতল বলয়ের বিস্তারের ফলে আগামী সপ্তাহের শেষে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। সেই সাথে দেশে চলতি জানুয়ারি (পৌষ-মাঘ) মাসে একাধিক তীব্র শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে।

আজ শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে আবহাওয়াবিদ মো. ওমর ফারুক জানান, অস্থায়ীভাবে আকাশ আংশিক মেঘলাসহ সারা দেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। মধ্যরাত থেকে দুপুর পর্যন্ত সারাদেশে মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে। ঘন কুয়াশার কারণে বিমান চলাচল, অভ্যন্তরীণ নদী পরিবহন এবং সড়ক যোগাযোগ সাময়িকভাবে ব্যাহত হতে পারে। সারাদেশে রাতের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি এবং দিনের তাপমাত্রা ১ থেকে ৩ ডিগ্রি সে. পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে। ঘন কুয়াশার কারণে সারাদেশের কোথাও কোথাও দিনের বেলায় শীতের অনুভূতি বিরাজমান থাকতে পারে।

আগামীকাল শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে জানা গেছে, অস্থায়ীভাবে আকাশ আংশিক মেঘলাসহ সারা দেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। মধ্যরাত থেকে দুপুর পর্যন্ত সারাদেশে মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে। ঘন কুয়াশার কারণে বিমান চলাচল, অভ্যন্তরীণ নদী পরিবহন এবং সড়ক যোগাযোগ সাময়িকভাবে ব্যাহত হতে পারে। সারাদেশে রাত এবং দিনের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে। ঘন কুয়াশার কারণে সারাদেশের কোথাও কোথাও দিনের বেলায়ও শীতের অনুভূতি বিরাজমান থাকতে পারে।

আগামী রোববার সন্ধ্যা পর্যন্ত পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে জানা গেছে, অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারাদেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। মধ্যরাত থেকে দুপুর পর্যন্ত সারাদেশে মাঝারী থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে। ঘন কুয়াশার কারণে বিমান চলাচল, অভ্যন্তরীণ নদী পরিবহন এবং সড়ক যোগাযোগ সাময়িকভাবে ব্যাহত হতে পারে। সারাদেশে রাত ও দিনের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে। ঘন কুয়াশার কারণে সারাদেশের কোথাও কোথাও দিবাভাগে শীতের অনুভূতি বিরাজমান থাকতে পারে।

এরপরের ৫ দিনে দেশের উত্তরাঞ্চলে হালকা থেকে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিপাত হতে পারে। এরপর ক্রমেই তাপমাত্রা হ্রাস পেয়ে শীতের প্রকোপ বৃদ্ধি পেতে পারে। #


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

আরব বসন্ত থেকে বাংলাদেশ: স্বৈরাচার মুক্ত নতুন ব্যবস্থার সন্ধানে
সিন্ডিকেটের প্রভাবে কুষ্টিয়ায় পেঁয়াজচাষীদের মাথায় হাত
বছরজুড়ে সড়কে অনিয়ম-বিশৃঙ্খলা
বর্ষপণ্য আসবাবপত্রের মূল্য আকাশচুম্বি
চাঁদাবাজ-দখলদারমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে চাই :কুষ্টিয়ায় জামায়াতের আমির
আরও

আরও পড়ুন

ব্রাইটনের বিপক্ষে আর্সেনালের হোঁচট

ব্রাইটনের বিপক্ষে আর্সেনালের হোঁচট

টানা দ্বিতীয় জয়ে ছন্দে ফেরার ইঙ্গিত সিটির

টানা দ্বিতীয় জয়ে ছন্দে ফেরার ইঙ্গিত সিটির

রিকেলটনের মহাকাব্যিক ইনিংস,রান পাহাড়ের চাপে পাকিস্তান

রিকেলটনের মহাকাব্যিক ইনিংস,রান পাহাড়ের চাপে পাকিস্তান

রহমতের লড়াকু সেঞ্চুরিতে জয়ের স্বপ্ন দেখছে আফগানিস্তান

রহমতের লড়াকু সেঞ্চুরিতে জয়ের স্বপ্ন দেখছে আফগানিস্তান

আশুলিয়ায় ছাত্র হত্যা মামলার আসামি গ্রেফতার

আশুলিয়ায় ছাত্র হত্যা মামলার আসামি গ্রেফতার

আটঘরিয়ায় প্রভাষকের বাড়িতে দুর্ধর্ষ চুরি

আটঘরিয়ায় প্রভাষকের বাড়িতে দুর্ধর্ষ চুরি

আরব বসন্ত থেকে বাংলাদেশ: স্বৈরাচার মুক্ত নতুন ব্যবস্থার সন্ধানে

আরব বসন্ত থেকে বাংলাদেশ: স্বৈরাচার মুক্ত নতুন ব্যবস্থার সন্ধানে

৫০০ হজ কোটা বহাল রাখতে প্রধান উপদেষ্টার সহায়তা কামনা

৫০০ হজ কোটা বহাল রাখতে প্রধান উপদেষ্টার সহায়তা কামনা

ফেব্রুয়ারিতে আয়ারল্যান্ড-জিম্বাবুয়ে পূর্ণাঙ্গ সিরিজ

ফেব্রুয়ারিতে আয়ারল্যান্ড-জিম্বাবুয়ে পূর্ণাঙ্গ সিরিজ

পাওনা টাকা ফেরত দিতে বিলম্ব যাওয়ায় পাওনাদার টাকা ফেরত নিতে না চাওয়া প্রসঙ্গে।

পাওনা টাকা ফেরত দিতে বিলম্ব যাওয়ায় পাওনাদার টাকা ফেরত নিতে না চাওয়া প্রসঙ্গে।

‘রাষ্ট্র সংস্কার শেষ করে সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতির নির্বাচন দিতে হবে’

‘রাষ্ট্র সংস্কার শেষ করে সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতির নির্বাচন দিতে হবে’

শীতে পশু-পাখিদের যত্ন

শীতে পশু-পাখিদের যত্ন

মানব পাচার রোধ করতে হবে

মানব পাচার রোধ করতে হবে

মজলুমের বিজয় ও জালেমের পরাজয় অবধারিত

মজলুমের বিজয় ও জালেমের পরাজয় অবধারিত

বিনিয়োগ বাড়ানোর কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে

বিনিয়োগ বাড়ানোর কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে

১১৬ বছর বয়সে বিশ্বের সবচেয়ে বয়স্ক ব্যক্তির মৃত্যু

১১৬ বছর বয়সে বিশ্বের সবচেয়ে বয়স্ক ব্যক্তির মৃত্যু

লাদাখে দুই প্রশাসনিক অঞ্চল তৈরী চীনের

লাদাখে দুই প্রশাসনিক অঞ্চল তৈরী চীনের

চিনির নিম্নমুখী বাজারে বিশ্বে কমেছে খাদ্যপণ্যের দাম

চিনির নিম্নমুখী বাজারে বিশ্বে কমেছে খাদ্যপণ্যের দাম

মার্কিন শপিং সেন্টারে প্রাণ গেল ৫ শতাধিক প্রাণীর

মার্কিন শপিং সেন্টারে প্রাণ গেল ৫ শতাধিক প্রাণীর

জাতীয় ঐক্য এখন আমাদের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন: মির্জা ফখরুল

জাতীয় ঐক্য এখন আমাদের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন: মির্জা ফখরুল