রাজনৈতিক তর্ক-বিতর্কে আ.লীগের দুর্বৃত্তায়ন নিচে চাপা পড়ে যাচ্ছে :মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর
০৩ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০৯ এএম | আপডেট: ০৩ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০৯ এএম
রাজনৈতিক তর্ক-বিতর্কে আওয়ামী লীগের দুর্বৃত্তায়ন নিচে পড়ে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, রাজনৈতিক তর্ক-বিতর্কের কারণে এরা (আওয়ামী লীগ) এক ধরনের সুবিধা পেয়ে যাচ্ছে। এ কথাগুলো আমাদের বারবার বলা দরকার। কারণ এটা না বললে আওয়ামী লীগ যে দুর্বৃত্তায়ন করেছে, সেটা মানুষ ভুলে যাবে।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিদ্যুৎ খাতের ব্যাপক দুর্নীতি নিয়ে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এ বিষয়ে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু।
পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনার সরকারের আমলে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে সম্পাদিত সকল চুক্তি জনসমক্ষে প্রকাশের দাবি জানিয়ে ইকবাল হাসান মাহমুদ বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার বিদ্যুৎ খাতে যে ম্যাজিক দেখাতে চেয়েছিলো, সেই ম্যাজিক করতে গিয়ে দেশেল মানুষের পকেট কেটে নিয়ে গেছে। আসলে তারা বুঝতে পেরেছিল এই খাত (বিদ্যুৎ) থেকে কোন হিসেব না দিয়ে কুইক মানি বানানো যায়। কারণ বিদ্যুৎ তো ‘হাওয়া’ এটি দেখা যায় না। বিদ্যুৎখাতে শুধু ক্যাপাসিটি চার্জের নামেই লুটপাট হয়েছে প্রায় এক লাখ কোটি টাকা। বিদ্যুৎখাতের প্রত্যেকটা চুক্তিতে মানা হয়নি কোন পাবলিক প্রকিউরমেন্ট রুল, আইন করে নিয়মনীতি বন্ধ করে ইচ্ছামতো ক্লোজ টেন্ডারে এসব চুক্তি করেছে। জনগণের অধিকার আছে এসব বিষয় জানার। তাই এসব চুক্তি প্রকাশের দাবি জানিয়েছেন টুকু। তিনি বলেন, উই মাস্ট সি দ্যা কন্ট্রাক্ট। তারা কিভাবে কন্ট্রাক্টগুলো করেছে? এটা পাবলিক হওয়া উচিত। অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রথম কাজ হলো জনগণের কাছে এই কন্ট্রাক্টগুলো উন্মুত্ত করে দেয়া, জনসমক্ষে প্রকাশ করা।
গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে গত ১৫ বছরের আওয়ামী লীগ আমলে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে অর্থ লুটপাট ও পাচার’ শীর্ষক বিশ্লেষন তুলে ধরতেই এই সংবাদ সম্মেলন ডাকেন বিএনপি মহাসচিব। বিগত সরকারের আমলে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে দুর্নীতি-অনিয়মের চিত্র তুলে ধরেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুক। যিনি চার দলীয় জোট সরকারের বিদ্যুও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী ছিলেন।
দুর্নীতির পরিসংখ্যান চিত্র তুলে ধরে টুকু বলেন, ২০০৮-০৯ অর্থবছরে হয়েছে ১ হাজার ৫০৭ কোটি টাকা, ২০১১-১২ অর্থ বছরে হয়েছে ৫ হাজার কোটি টাকা, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে হয়েছে ৮ হাজার ৯শ কোটি টাকা এবং ২০২২-২৩ এ হয়েছে ১৭ হাজার ১৫৫ কোটি টাকা। তার অর্থ হলো এই যে, প্রাইভেট সেক্টারে পাওয়া প্ল্যাটগুলো দিয়েছে সেগুলো চলেনি এবং এই টাকাগুলো তাদেরকে(কোম্পানি) প্রেমেন্ট করেছে, এভাবে দেশের মানুষের কাছ থেকে জাস্ট লুট করে দিয়ে গেছে আরকি। ক্যাপাসিটি চার্জ পাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর বেশিরভাগের মেসিনগুলো খারাপ। খারাপ মেসিন এসে টাকা কামাই করে চলে গেছে।
সাবেক বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী বলেন, এই লুটপাটের অংশ কারা কারা ছিলো? ক্যাপাসিটি চার্জের শীর্ষ পাঁচ কোম্পানির কথা আমি বলছি। এরা হলো, সামিট নিয়েছে ১০ হাজার ৬৩০ কোটি টাকা, এ্যাগ্ররো ইন্টারন্যাশনাল নিয়েছে ৭ হাজার ৯৩২ কোটি টাকা, আল্ট্রা পাওয়ার হোল্ডিংস নিয়েছে ৭ হাজার ৫২৩ কোটি টাকা, ইউনাইটেড গ্রুপ নিয়েছে ৬ হাজার ৫৭৫ কোটি টাকা, আরপিসিএল নিয়েছে ৫ হাজার ১১৭ কোটি টাকা।”
তিনি বলেন, কুইক রেন্টাল পাওয়ার প্ল্যান্ট আসে সাধারণত আপদকালীন বিদ্যুৎ সংকট নিরসনের জন্য। এই প্ল্যান্ট দ্ইু বছরের সেটা ১৫ বছর পর্যন্ত চালাচ্ছে এবং এসব কুইক রেন্টালে ৭৫% বিনিয়োগ করেছে উইথ আউট রিটার্ণ। বুঝেন কি অবস্থা। ভারত থেকে বিদ্যু আমদানির নামে ৯ বছরে ক্যাপাসিটি চার্জ দিয়েছে ১১ হাজার ১৫ কোটি টাকা।’
সাবেক বিদ্যু প্রতিমন্ত্রীর দাবি, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিদ্যুতে যেসব উন্নয়ন করা হয়েছে এই বিদ্যুৎ উন্নয়ন টেকসই না, সাসটেইনেবল না। যেকোনো সময়ে মুখ থুবড়ে পড়বে। বিদ্যুখাতে দুর্নীতির ধরণ দেখার পর বুঝা যায় যে তারা বিদ্যুৎ খাতকে ফোকলা করে দিয়েছে, কিছু নাই আরকি।
রুপপুর প্রকল্পের দুর্নীতির বিষয়ে টুকু বলেন, রুপপুরে পারমানবিক প্রকল্পের ৫‘শ বিলিয়ন ডলার তারা (শেখ হাসিনাসহ তার পরিবার) নিয়ে গেছে, সেটা নিয়ে লন্ডনে টিউলিপের (বৃটিশ এমপি টিউলিপ সিদ্দিকী -শেখ রেহানার মেয়ে) আরও তদন্ত হচ্ছে।
প্রিপেইড মিটার বাণিজ্যে সিন্ডিকেট অভিযোগ করে বিএনপি নেতা বলেন, ৭১ লাখ ২০ হাজার গ্রাহকের কাছে তারা মিটার পৌঁছাবে এবং সেখানে বিরাট অংকের একটা দুর্নীতি প্রায় ৩৬ কোটি টাকা পাচার করেছে, ১ হাজার ২৩৫ কোটি অতিরিক্ত খরচ করেছে এর মধ্যে দুর্নীতি করেছে ৬১৭ কোটি টাকা, মিটার সরবারহ ও স্থাপন, বাস্তবায়নে ছিলো ৪ হাজার ৫‘শ কোটি টাকা সেটা ১২ হাজার কোটি টাকা করেছে। স্মার্ট প্রিডেইড মিটার প্রকল্প.. এটার যে নেটওয়ার্ক তৈরি করছে, এই নেটওয়ার্কটা হচ্ছে কিছু ব্যক্তির নেটওয়ার্ক। যেখানে পতিত সরকারের প্রধানমন্ত্রীর আত্মীয়-স্বজনরা আছে। তাতে তারা কোটি কোটি টাকা লাভবান হবে এই প্রকল্পে।
এলএনজি প্রকল্পের নামে কোটি কোটি টাকা দুর্নীতি করেছে সাবেক বিদ্যু প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপুর কোম্পানিসহ ‘একটি চক্র’ লুটপাট করেছে বলে অভিযোগ করেন ইকবাল হাসান মাহমুদ টুক। বিদ্যুৎখাতে দুর্নীতি ও অনিয়ম প্রতিরোধে এই খাতে স্বচ্ছতা-জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা, প্রকল্পের বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া জনগণের অংশগ্রহন বাড়ানো, দুর্নীতি রোধে কঠোর আইন প্রণয়ন, বিদ্যুৎ খাতের দুর্নীতির সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন, নিয়মিত বিদ্যুৎ পরীক্ষা-নিরীক্ষা পর্যবেক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহন করা জরুরী বলে মনে করেন সাবেক প্রতিমন্ত্রী।
সব কিছু রিভিউ করা হবে জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমরা পুরো বিষয়গুলো রিভিউ করব। এগুলো করে যেটা প্রয়োজনীয় সেটা আমরা করব। সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান উপস্থিত ছিলেন।###
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
ব্রাইটনের বিপক্ষে আর্সেনালের হোঁচট
টানা দ্বিতীয় জয়ে ছন্দে ফেরার ইঙ্গিত সিটির
রিকেলটনের মহাকাব্যিক ইনিংস,রান পাহাড়ের চাপে পাকিস্তান
রহমতের লড়াকু সেঞ্চুরিতে জয়ের স্বপ্ন দেখছে আফগানিস্তান
আশুলিয়ায় ছাত্র হত্যা মামলার আসামি গ্রেফতার
আটঘরিয়ায় প্রভাষকের বাড়িতে দুর্ধর্ষ চুরি
আরব বসন্ত থেকে বাংলাদেশ: স্বৈরাচার মুক্ত নতুন ব্যবস্থার সন্ধানে
৫০০ হজ কোটা বহাল রাখতে প্রধান উপদেষ্টার সহায়তা কামনা
ফেব্রুয়ারিতে আয়ারল্যান্ড-জিম্বাবুয়ে পূর্ণাঙ্গ সিরিজ
পাওনা টাকা ফেরত দিতে বিলম্ব যাওয়ায় পাওনাদার টাকা ফেরত নিতে না চাওয়া প্রসঙ্গে।
‘রাষ্ট্র সংস্কার শেষ করে সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতির নির্বাচন দিতে হবে’
শীতে পশু-পাখিদের যত্ন
মানব পাচার রোধ করতে হবে
মজলুমের বিজয় ও জালেমের পরাজয় অবধারিত
বিনিয়োগ বাড়ানোর কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে
১১৬ বছর বয়সে বিশ্বের সবচেয়ে বয়স্ক ব্যক্তির মৃত্যু
লাদাখে দুই প্রশাসনিক অঞ্চল তৈরী চীনের
চিনির নিম্নমুখী বাজারে বিশ্বে কমেছে খাদ্যপণ্যের দাম
মার্কিন শপিং সেন্টারে প্রাণ গেল ৫ শতাধিক প্রাণীর
জাতীয় ঐক্য এখন আমাদের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন: মির্জা ফখরুল