৭১-এ আপনারা কোন সেক্টরে যুদ্ধ করেছেন জাতি জানতে চায়? জামায়াতকে রিজভী

Daily Inqilab স্টাফ রিপোর্টার

০২ জানুয়ারি ২০২৫, ০৪:১৯ পিএম | আপডেট: ০২ জানুয়ারি ২০২৫, ০৪:১৯ পিএম

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে জামায়াতে ইসলামীর রাজনৈতিক ভূমিকা কী ছিলো, কোন সেক্টরে যুদ্ধ করেছেন তা জাতি জানতে চায়। আপনারা কোন সেক্টর কমান্ডারের অধীনে যুদ্ধ করেছেন?’ প্রশ্ন করেন তিনি।

 

সম্প্রতি জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমানের বক্তব্য ‘দেশে পরীক্ষিত দেশপ্রেমিক শক্তি দুটি, একটি সেনাবাহিনী আরেকটি জামায়াত’ এর প্রেক্ষিতে তিনি এ মন্তব্য করেন।

 

রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘একটি রাজনৈতিক দল বলেছে দেশপ্রেমিক তারা এবং সেনাবাহিনী। সেনাবাহিনী দেশপ্রেমিক নিসন্দেহে, কারণ তাদের পূর্বসূরিরা এই বাংলাদেশ নির্মাণে জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করেছেন, তার অন্যতম মেজর জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন। ২৪ এর গণঅভ্যুত্থানেও সেনাবাহিনী উজ্জ্বল ভূমিকা রেখেছে।’

 

তিনি বলেন, ‘আমি ইসলামপন্থী সেই রাজনৈতিক দলকে বলতে চাই, ৭১ এ আপনাদের রাজনৈতিক ভূমিকা কী ছিলো? কোন সেক্টরে যুদ্ধ করেছেন, কোন সেক্টর কমান্ডারের আন্ডারে যুদ্ধ করেছেন? বাংলাদেশে কেউ দেশপ্রেমিক নেই, শুধু একটি রাজনৈতিক দল দেশপ্রেমিক– এই ধরণের বিভ্রান্তি তৈরি করলে মানুষ হাসবে, মানুষ হাসি ছাড়া আর কিছু দেবে না।’

 

আজ বৃহস্পতিবার (২ জানুয়ারি) দুপুরে আমরা বিএনপি পরিবারের পক্ষ থেকে যুব এশিয়া কাপ বিজয়ী ক্রিকেটার ইকবাল হোসেন ইমনের পরিবারকে শুভেচ্ছা উপহার প্রদানকালে তিনি এ বক্তব্য দেন।

 

রিজভী বলেন, ‘এই জাতির ঘাড়ে একটি জগদ্দল পাথর চেপে বসেছিলো। এই পাথর এত ভারি যে গোটা জাতিকে রুদ্ধশ্বাস অবস্থায় রেখেছিলো। মানুষ নিশ্বাস নিতে পারতো না। মানুষ স্বচ্ছন্দ চলাফেরা করতে পারতো না। রাজনৈতিক দল ও তার কন্ঠের স্বাধীনতা ছিল না। মিছিল করতে পারতো না, মিটিং করতে পারতো না। পুলিশ অনুমতি দেয়ার পর যুবলীগ-ছাত্রলীগকে লেলিয়ে দেয়া হতো।’

 

তিনি বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলাবাহিনী পুলিশ র‌্যাব বিনা কারণে বিনা ওয়ারেন্টে রাত্রে বাসায় গেলে পরিবারের নারীদের সাথে খারাপ ব্যবহার করতো। যাতে খুঁজতে গিয়েছে তাকে না পেলে পরিবারের মেয়েদের পর্যন্ত গ্রেপ্তার করে নিয়ে এসেছে।’

 

‘শেখ হাসিনা নিজের ক্ষমতাকে নিরাপদ করার জন্য, কন্টকমুক্ত থাকার জন্য, যে বাংলাদেশে ৩০ লক্ষ মানুষ অকাতরে জীবন দিয়েছে, দুই লক্ষ নারী নির্যাতিত হয়েছে, এই যে স্বাধীনতা, এই স্বাধীনতা কলঙ্কিত করেছে শেখ হাসিনা। এই সিলেটের কৃতি সন্তান ইলিয়াস আলী আজ নেই কেনো? শেখ হাসিনার জন্য। কারণ তিনি দেশের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন, তিনি টিপাইমুখ বাঁধ অভিমুখে লংমার্চ করেছিলেন। মানুষ বলে এইজন্য তাকে নিরুদ্ধেশ করে দেয়া হয়েছে। কত যুবদল ছাত্রদলের ছেলে ক্রসফায়ারের শিকার হয়েছেন, গুমের শিকার হয়েছেন তার ইয়ত্তা নেই। এই ভয়ংকার মানবতাহীন কাজ করেছেন সাড়ে ১৫ বছর শেখ হাসিনা।’

তিনি আরো বলেন, ‘সাড়ে ১৫ বছর গণতান্ত্রিক শক্তির আন্দোলনের পটভূমিতে জুলাই এবং আগস্টে ছাত্রজনতারা নেমে এসেছে। শেখ হাসিনা পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছেন। এখন আমরা খবরের কাগজে দেখতে পারছি জুলাই-আগস্টের হত্যার বিচার এক বছরের মধ্যে সম্পন্ন হবে। ড. ইউনুসের প্রতি আমাদের সবার শ্রদ্ধা আছে, কিন্তু এই সরকার তো সর্বজনীন, গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলের পক্ষের সরকার।’

তিনি বলেন, ‘শুধু জুলাই আগস্টে যারা নিহত হয়েছেন, নির্যাতিত হয়েছেন, শুধু সেইসব অপরাধের বিচার হবে, ইলিয়াস আলীর বিচার হবে না? চৌধুরী আলমের বিচার হবে না? সাড়ে ১৫ বছর যারা ক্রসফায়ারের শিকার হয়েছেন তাদের বিচার করবেন না? যারা ক্রসফায়ার দিয়েছেন, শীতলক্ষা নদীতে সাতটি লাশ ভাসিয়ে দিয়েছেন, সেই সমস্ত দুর্বৃত্ত র‌্যাবের অফিসারদের বিচার হবে না? যে অপরাধ করেছে শেখ হাসিনা, যে কসাইয়ের ভূমিকা পালন করেছে, তার বিচার হবে না?’

জুলাই-আগস্টে আত্মদানকারী ছাত্র-জনতার আত্মদানকে শ্রদ্ধা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘তাদের যেমন বিচার হবে, তেমনি গণতন্ত্রকে উদ্ধারের জন্য যারা অকাতরে জীবন দিয়েছেন, নিরুদ্দেশ হয়ে গেছেন, তাদের কেনো বিচার হবে না? হওয়া উচিত। এইভাবে বিভাজন রেখা টানলে তা দুঃখজনক।’

তিনি বলেন, ‘স্কুলে পাঠ্যবই সম্পূর্ণ সরবরাহ করা যায়নি, সেটা ভিন্ন ব্যাপার। কিন্তু সেখানে ইতিহাসের বইয়ে তারা কিছু কাজ করেছেন প্রকৃত ইতিহাস তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন। এখানে এই জাতির বিবেকবানদের জন্য যে অধ্যায় করা হয়েছে, তাতে আমরা দ্বিমত করছি না। সেখানে শেরে বাংলা একে ফজলুল হক, মজলুম জননেতা মাওলানা ভাসানী, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, স্বাধীনতার ঘোষক জিয়াউর রহমানের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু স্বাধীনতার ঘোষণা থেকে মুক্তিযুদ্ধের অধ্যায় রাখা হলো না কেনো?’

রিজভী আরো বলেন, ‘জিয়াউর রহমান তো শুধু স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে শেষ হয় যাননি, যুদ্ধ করেছেন। মুক্তিযুদ্ধের অধ্যায় থাকবে না কেনো? যারা প্রবাসী সরকার হয়েছিলো, সেটা থাকবে, সেটার সাথে মুক্তিযুদ্ধের একটা অধ্যায় থাকতে হবে। যতটুকু হয়েছে তার জন্য ধন্যবাদ জানাই, কিন্তু অসম্পুর্ণ থাকবে কেনো?’

তিনি বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধ একটি বড় ধরণের ঘটনা, শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীকারের আন্দোলন করেছেন, সেটি স্বাধীনতার জন্য একটি মাঠ প্রস্তুত হয়েছে, কিন্তু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতাযুদ্ধে কোন বিশেষ ঘোষণা বা প্রস্তুতির কথা বলেননি। সেই আহবান তার নেই। প্রকৃত সত্য হচ্ছে যুদ্ধের ঘোষণা দিয়েছেন জিয়াউর রহমান এবং যুদ্ধ হয়েছে ৯ মাস। সেই অধ্যায়টি রাখা হয়নি। আমি সরকারকে অনুরোধ করবো, ইতিহাস স্বাধীনতা সংগ্রাম নিয়ে পূর্ণাঙ্গ ইতিহাস হওয়া উচিত।’

আমরা বিএনপি পরিবারের আহ্বায়ক আতিকুর রহমান রুমনের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য অধ্যাপক এ জেড এম জাহিদ হোসেন। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক জি কে গউছ, সহসাংগঠনিক সম্পাদক মিফতাহ সিদ্দিকী, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মিজানুর রহমান চৌধুরী প্রমুখ।


বিভাগ : রাজনীতি


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

জাতীয় ঐক্য এখন আমাদের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন: মির্জা ফখরুল
নির্বাচন দিতে যত দেরি করা হবে, জনমনে তত আশঙ্কা বাড়বে: গয়েশ্বর রায়
ফ্যাসিস্ট হাসিনার আমলে বেশি নির্যাতনের শিকার হয়েছে জিয়া পরিবার ও আলেম-ওলামা
সুড়ঙ্গের ভেতর থেকে হঠাৎ আরাফাতের হুক্কা হুয়া
ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকার ভারতের স্বার্থ রক্ষায় বেশি ব্যস্ত ছিলো: পীর সাহেব চরমোনাই
আরও

আরও পড়ুন

আশুলিয়ায় ছাত্র হত্যা মামলার আসামি গ্রেফতার

আশুলিয়ায় ছাত্র হত্যা মামলার আসামি গ্রেফতার

আটঘরিয়ায় প্রভাষকের বাড়িতে দুর্ধর্ষ চুরি

আটঘরিয়ায় প্রভাষকের বাড়িতে দুর্ধর্ষ চুরি

আরব বসন্ত থেকে বাংলাদেশ: স্বৈরাচার মুক্ত নতুন ব্যবস্থার সন্ধানে

আরব বসন্ত থেকে বাংলাদেশ: স্বৈরাচার মুক্ত নতুন ব্যবস্থার সন্ধানে

৫০০ হজ কোটা বহাল রাখতে প্রধান উপদেষ্টার সহায়তা কামনা

৫০০ হজ কোটা বহাল রাখতে প্রধান উপদেষ্টার সহায়তা কামনা

ফেব্রুয়ারিতে আয়ারল্যান্ড-জিম্বাবুয়ে পূর্ণাঙ্গ সিরিজ

ফেব্রুয়ারিতে আয়ারল্যান্ড-জিম্বাবুয়ে পূর্ণাঙ্গ সিরিজ

পাওনা টাকা ফেরত দিতে বিলম্ব যাওয়ায় পাওনাদার টাকা ফেরত নিতে না চাওয়া প্রসঙ্গে।

পাওনা টাকা ফেরত দিতে বিলম্ব যাওয়ায় পাওনাদার টাকা ফেরত নিতে না চাওয়া প্রসঙ্গে।

‘রাষ্ট্র সংস্কার শেষ করে সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতির নির্বাচন দিতে হবে’

‘রাষ্ট্র সংস্কার শেষ করে সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতির নির্বাচন দিতে হবে’

শীতে পশু-পাখিদের যত্ন

শীতে পশু-পাখিদের যত্ন

মানব পাচার রোধ করতে হবে

মানব পাচার রোধ করতে হবে

মজলুমের বিজয় ও জালেমের পরাজয় অবধারিত

মজলুমের বিজয় ও জালেমের পরাজয় অবধারিত

বিনিয়োগ বাড়ানোর কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে

বিনিয়োগ বাড়ানোর কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে

১১৬ বছর বয়সে বিশ্বের সবচেয়ে বয়স্ক ব্যক্তির মৃত্যু

১১৬ বছর বয়সে বিশ্বের সবচেয়ে বয়স্ক ব্যক্তির মৃত্যু

লাদাখে দুই প্রশাসনিক অঞ্চল তৈরী চীনের

লাদাখে দুই প্রশাসনিক অঞ্চল তৈরী চীনের

চিনির নিম্নমুখী বাজারে বিশ্বে কমেছে খাদ্যপণ্যের দাম

চিনির নিম্নমুখী বাজারে বিশ্বে কমেছে খাদ্যপণ্যের দাম

মার্কিন শপিং সেন্টারে প্রাণ গেল ৫ শতাধিক প্রাণীর

মার্কিন শপিং সেন্টারে প্রাণ গেল ৫ শতাধিক প্রাণীর

জাতীয় ঐক্য এখন আমাদের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন: মির্জা ফখরুল

জাতীয় ঐক্য এখন আমাদের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন: মির্জা ফখরুল

গাজায় ইসরাইলি বিমান হামলায় দুইদিনে নিহত ১৫০

গাজায় ইসরাইলি বিমান হামলায় দুইদিনে নিহত ১৫০

কালো টাকায় ভাসছে শীর্ষস্থানীয় মার্কিন ৩৬% থিংক ট্যাংক

কালো টাকায় ভাসছে শীর্ষস্থানীয় মার্কিন ৩৬% থিংক ট্যাংক

পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে অনেক হতাহত, ফের উত্তপ্ত মণিপুর

পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে অনেক হতাহত, ফের উত্তপ্ত মণিপুর

মাছের লড়াইয়ে শ্রীলঙ্কার সীমায় বন্দি হচ্ছেন ভারতীয় জেলেরা

মাছের লড়াইয়ে শ্রীলঙ্কার সীমায় বন্দি হচ্ছেন ভারতীয় জেলেরা