মানুষের কল্যাণ কামনা করুন
৩১ মে ২০২৩, ০৮:৩১ পিএম | আপডেট: ০১ জুন ২০২৩, ১২:০০ এএম

মানুষকে কষ্ট দিবেন না। বরং মানবতার কষ্ট লাঘব করুন। আপনার দুনিয়া ও আখিরাত জীবন সুন্দর ও সাবলিল হবে। মানুষের ভালবাসায় আপনার হৃদয় সিক্ত হবে। আল্লাহ তা’আলা বলেন, ”তোমরাই পৃথিবীর শ্রেষ্ট জাতি, মানবতার কল্যাণের জন্য তোমাদের প্রেরণ করা হয়েছে।”(সুরা আলে ইমরান:১১০) অর্থাৎ নৈতিক চরিত্র ও কার্যকলাপের দিক দিয়ে এখন তোমরাই দুনিয়ার সর্বোত্তম মানব গোষ্ঠী। তোমাদের মধ্যে ন্যায় ও সৎবৃত্তির প্রতিষ্ঠা এবং অন্যায় ও অসৎবৃত্তির মুলোৎপাটন করার মনোভাব ও কর্মস্পৃহা সৃষ্টি হয়ে গেছে। কাজেই মানবতার কল্যাণের দায়ভার তোমাদের মাথায় চাপিয়ে দেয়া হয়েছে। তোমরা পৃথিবীতে যা-ই করবে তাতে মানুষের কল্যাণের দিকটি সর্বপ্রথম বিবেচনায় আনতে হবে। এমন কোন আচরণ এমন কোন কাজ করা যাবে না যার দ্বারা মানুষের জীবন দূর্বিসহ হয়ে উঠে। এটি ব্যক্তিগত পর্যায় থেকে নিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে প্রযোজ্য। প্রত্যেকে যার তার আঙিনা থেকে অবশ্যই মানুষের কল্যাণের নিমিত্তে কাজ করতে হবে। এ দায়ভার এড়াবার সুযোগ কারো নেই। এমন কথাও বলা যাবে না যার দ্বারা মানুষ বিভ্রান্তিতে পড়ে পথ হারিয়ে হয়রানির স্বীকার হয়। এমন কাজ করা যাবে না যার জন্য মানুষ ভোগান্তিতে পড়ে।
কল্যাণ কামনা গুণীদের ভাষায় মানুষের মৌলিক চরিত্রের অন্তর্ভূক্ত। ‘কল্যাণ কামনা’ মু’মিনের এমন এক মহত ও দূর্লভ গুণ, এটি যার চরিত্রে বিরাজ করে তার চারিত্রিক সৌন্দর্য ফুলে-ফলে সুশোভিত হয় এবং দুনিয়া ও আখিরাতে তার মর্যাদা বহুগুণে বৃদ্ধি পায়। যিনি অন্যের কল্যাণ কামনা করেন তিনি অপ্রত্যাশিতভাবে কতগুলো অসৎ গুণ থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারেন। যেমন, যিনি অন্যের কল্যাণ কামনা করেন তিনি সাধারণত নির্লোভী, নিরহংকারী ও নি:স্বার্থবাদী স্বভাবের হন, কারণ লোভী, অহংকারী ও স্বার্থবাদী ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গ কখনো অন্যের কল্যাণ কামনা করতে পারে না। অন্য ভাইয়ের কল্যাণ কামনা মানে অন্যকে ভালবাসা। অন্যকে ভালবাসা কোন ছেলে খেলা নয়, অবশ্যই এটি একটি কঠিণ বিষয়। কিন্তু কল্যাণকামী মু’মিনের জন্য এটি খুবই সহজ একটি বিষয়। কারণ তাদের ওপর আল্লাহর অবারিত রহমত বর্ষিত হতে থাকে। আল্লাহ তা’আলা বলেন,“ঈমানদার পুরুষ এবং ঈমানদার স্ত্রীলোকেরাই প্রকৃতপক্ষে পরস্পর পরস্পরের দায়িত্বশীল বা সাহায্যকারী বন্ধু। এদের পরিচয় এবং বৈশিষ্ট্য এই যে, এরা নেক কাজের আদেশ দেয়, অন্যায় কাজ থেকে বিরত রাখে, নামায কায়েম করে এবং যাকাত আদায় করে, আল্লাহ ও রাসুলের বিধান মেনে চলে। প্রকৃতপক্ষে এদের প্রতিই আল্লাহ রহমত বর্ষণ করেন।” (তাওবা-৭১)
ইসলাম কল্যাণধর্মী জীবন ব্যবস্থা। ইসলামের অনুসারী হিসাবে মানুষ কল্যাণকামী জীব। এ জীবন ব্যবস্থা বিশ্বজাহান ও মানব প্রকৃতির সাথে অধিকতর সামঞ্জশীল বিধায় এর পরতে পরতে মানুষের জন্য কল্যাণ আর কল্যাণ নিহিত রয়েছে, কোথাও অশান্তি নেই, নেই অকল্যাণ। কিন্তু মানুষ শুধু শুধুই মস্তিস্ক প্রসূত জীবন ব্যবস্থার অন্ধকার গলিতে শান্তি ও কল্যাণের খোঁজে সমুদ্রসম পথ পাড়ি দিয়েছে, শান্তির দেখা তো মিলেই-নি, বরং উল্টো মানবতাকে শুধু যন্ত্রনাই পোহাতে হয়েছে, পৃথিবী বার বার প্রতারিত হয়েছে। ইসলাম ছাড়া অন্যান্য জীবন ব্যবস্থা তার অনুসারীদেরকে লোভ-লালসা, স্বার্থবাদী ও হিংসা-বিদ্বেষপূর্ণ জীবের দীক্ষা দিয়েছে। তারা পূঁজিবাদী মতবাদের সুদ দ্বারা স্বার্থান্ধ, লোভী ও অন্যকে শোষণের মন্ত্র শিখিয়ে মানুষে মানুষে বিভেদের পাহাড় দাঁড় করিয়েছে। ফলে পারস্পরিক কল্যাণ কামনা তো দুরের কথা, বরং সামাজিক সহমর্মিতা ও সহাবস্থানের কলাণকামী প্রতিষ্ঠানটিকে ভেঙ্গে তছনছ করে দিয়েছে। পূঁজিবাদের বিপরিতধর্মী অন্য এক আজিব মতবাদ হলো সমাজতন্ত্র। এ মতবাদ মানুষকে মানুষের শোষণ থেকে উদ্ধারের চটক দেখিয়ে এবং সমাজের উঁচু-নীচু সমান করার ব্যর্থ মানসে স্বাধীন মানুষকে সামাজিক বা রাষ্ট্রীয় খোয়ারে আবদ্ব করলো। মানুষের সকল মানবীয় যোগ্যতা ও বৃত্তিকে অস্বীকার ও দমন করা হলো। সকলকে একই ডান্ডাভেরী লাগিয়ে গরুর খোয়াড়ের ন্যায় একই খাদ্য পরিবেশন করা হলো। ফলে ভাঙ্গলো পরিবার, ভাঙ্গলো সমাজ সভ্যতা ও মানুষের সামাজিক সম্পর্ক। কল্যাণ কামনার গুণটি এখানে সম্পূর্ণভাবে অকার্যকর হয়ে পড়লো। ইসলাম এতদূভয়ের মাঝে এমন এক সুষম জীবন ব্যবস্থা পেশ করলো যেটি পূঁজিবাদ ও সমাজবাদের চরমপন্থা ও প্রান্তিকতার পথকে এড়িয়ে মধ্যমপন্থার নীতি অনুসরণ করলো। একদিকে ব্যক্তিকে নৈতিকতার অধীনে থেকে ধন-দৌলত উপার্জনে অবাধ স্বাধীনতা দান করলো, অন্যদিকে ব্যক্তির ধন-দৌলতে সমাজের অধিকার কায়েম করলো।
মু’মিনের পরিচয় হলো তারা একে অপরের প্রতি সহানুভূতিশীল। তাদের অবস্থা এই যে, তারা একে অপরের দু:খে দু:খিত হয় এবং একে অপরকে দু:খে-বিপদে সাহায্য করে। নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, একজন মু’মিন অন্য মু’মিনের সাথে সম্পর্ক হচ্ছে-অট্রালিকার একটি ইটের সাথে অন্য ইটের সম্পর্কের ন্যায়। এই বলে তিনি তাঁর এক হাতের অঙ্গুলীগুলো অন্য হাতের অঙ্গলীর ভেতর প্রবিষ্ট করে দেখিয়েছেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেছেন, মু’মিনগণ পারস্পরিক স্নেহ-মমতা ও মায়া-মহব্বতের দিক দিয়ে একটি দেহের সমতুল্য। (চলবে)
লেখক: ইসলামী চিন্তাবিদ, কলামিষ্ট।
বিভাগ : ধর্ম দর্শন
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন

ভারতে আবাসিক ভবনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড, যেভাবে নাটকীয়ভাবে বেঁচে গেল একটি পরিবার

অবশেষে পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ পেলেন উখিয়ার ১৩ এসএসসি পরীক্ষার্থী

পবিপ্রবি শিক্ষার্থী পানিতে পড়ে আহত হওয়ার পরে চিকিৎসা অবহেলার মৃত্যুর অভিযোগ

শেরপুর জেলা উপজেলায় নানা আয়োজনে বাংলা নববর্ষ উদযাপন

নববর্ষ উদযাপনে মনোহরগঞ্জ উপজেলা বিএনপির আনন্দ শোভাযাত্রা

মাজারের বার্ষিক ওরসের মেলায় অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে জবাই করে হত্যা করল স্বামী

কুমিল্লার রাজগঞ্জ বাজারে অগ্নিকাণ্ডে পৌনে দুই কোটি টাকার মালামাল ভস্মীভূত

সরকার নয়, আমরা একটি দেশ হিসেবে কাজ করছি: জ্বালানি উপদেষ্টা

মতলবে উপজেলা বিএনপির বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা

ফিলিস্তিনবাসীদের শান্তি কামনায় বিশেষ দোয়া মাহফিল

বর্ণাঢ্য ‘ড্রোন শো’ দেখে মুগ্ধ লাখো মানুষ

নতুন বছরে সংস্কার ও নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা দূর হোক : মঞ্জু

বুধবার ঢাকায় আসছেন যুক্তরাষ্ট্রের দুই উপসহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী

পুরোনো পদে ফিরলেন গাঙ্গুলি

আসছে দক্ষিণ আফ্রিকা ইমার্জিং নারী ক্রিকেট দল

রূপায়ণ সিটিতে শতকন্ঠে বর্ষবরণ

বর্ষবরণকে স্বাগত জানিয়ে গাজীপুরে জেলা বিএনপির শোভাযাত্রা

আমরা নতুন বাংলাদেশে প্রবেশ করেছি: ফারুকী

ভারতীয়দের হজ কোটা ৮০ শতাংশ কমাল সৌদি

চীনা দূতাবাসের সৌজন্যে ঢাকার আকাশে ব্যতিক্রমী ড্রোন শো