ঢাকা   মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ২ আশ্বিন ১৪৩১

বাংলাদেশের প্রথিতযশা হাদীস বিজ্ঞানী শায়খুল হাদীস আল্লামা ফখরুদ্দীন রহ:

Daily Inqilab অধ্যক্ষ মুহাম্মদ আমিনুর রহমান

১৬ আগস্ট ২০২৩, ০৮:৪৪ পিএম | আপডেট: ১৭ আগস্ট ২০২৩, ১২:০১ এএম

বিংশ শতাব্দীর শেষ পাদলগ্নে ও একবিংশ শতাব্দীর সূচনাপর্বে বাংলাদেশের হাদীস চর্চা, গবেষণা ও অধ্যয়নের ইতিহাসে দেশবরেণ্য যে কয়জন গবেষক  ও শিক্ষাবিদ ইলমে হাদীসের শিক্ষার প্রচার ও প্রসারে কীর্তিমান অবদান রেখে উজ্জ্বল প্রতিভার স্বাক্ষর রেখে গেছেন,তাদের মধ্যে বিশিষ্ট হাদীস সেবক,তাফসীর কারক ও ফিকাহবিদ,জ্ঞানের অত্যুজ্জ্বল শিখা,ইলমের অমূল্য ভান্ডার প্রফেসর অধ্যক্ষ আল্লামা ফখরুদ্দীন (রহ) ছিলেন শীর্ষস্থানীয়। আমার শিক্ষা জীবনে যার অবদান সবচেয়ে বেশি উল্লেখযোগ্য, তিনি আমার শুধু আমার উস্তাদ নয়, আমার চাচা এবং শ্বশুরও বঠে। তিনি প্রতি বৎসর পবিত্র রমজানুল মুবারক মাসের অবকাশকালে উপমহাদেশের আধ্যাত্মিক শরাফতের অধিকারী, সুনামধন্য বুজুর্গ ও অলীয়ে কামেল মাওলানা আমিনুল্লাহ শাহ (রাহ) দরগাহ সংলগ্ন জামে মসজিদে এতেকাফ নিতেন। এসুবাদে আমি ফাজিল ক্লাসে অধ্যয়নকালে ১৯৮০-৮১ সালে তাঁর নিকট হতে হাদীস শাস্ত্রে মিশকাত শরীফ ও ফিকাহ শাস্ত্রে হেদায়া প্রভৃতি গ্রন্থাবলী অধ্যয়ন করার সুযোগ লাভ করি। মাদরাসা-ই-আলিয়া ঢাকায় অধ্যয়নকালে আমি তাঁর নিকট বুখারী শরীফ,মুসলিম শরীফ,নাসায়ী শরীফ ও অন্যান্য সিহাহ গ্রন্থাবলীর নিয়মিত পাঠ গ্রহণ করি।


অধ্যাপক আল্লামা ফখরুদ্দীন (রহ) ছিলেন বাহরুল উলুম, গভীর জ্ঞানের অধিকারী,অগাধ জ্ঞান ভান্ডারের ধারক বাহক। তাঁর মধ্যে রয়েছে অসাধারণ ইলমী দক্ষতা ও যোগ্যতা মাদরাসা-ই-আলিয়া ঢাকায় অধ্যয়নকালে শিক্ষকমন্ডলীর মধ্যে তাঁর দরসের ঢং,বর্ণনাভঙ্গি, বক্তৃতা পদ্ধতি অনন্য ব্যতিক্রমধর্মী  রূপে আমি পেয়েছি। তাঁর প্রদত্ত  লেকচার গুলি ছিল গবেষণাধর্মী। তিনি নিজেই প্রচুর লেখাপড়া করতেন।হাদীসের বিভিন্ন শরুহাত (ব্যাখ্যাগ্রন্থাবলী) অধ্যয়ন করে তার সারসংক্ষেপ সংগ্রহ করে নিতেন।বিভিন্ন মাযহাব থেকে হানাফী মাযহাবের প্রতিষ্ঠা ও প্রাধান্য প্রূানের প্রমাণ্য আলোচনার অবতারণা করতেন। তাঁর প্রদত্ত লেকচারগুলি শুনার জন্য শিক্ষার্থীগণ  অধির আগ্রহের সহিত অপেক্ষণ করতেন। সে সময়ে মাদরাসা-ই-আলিয়া ঢাকা এর বহু সংখ্যক ছাত্র কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় সমূহের বিভিন্ন বিভাগে অধ্যয়নরত ছিল।কিন্তু যখন আল্লামা ফখরুদ্দীন (রহ) এর ক্লাস আরম্ভ হতো তখন ছাত্রগণ  কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের চলাকালীন ক্লাস ছেড়ে তাঁর ক্লাসে উপস্থিত হতো। তাঁর জ্ঞান গবেষণসুলভ বক্তব্য শুনে শিক্ষার্থীগণ পরিতৃপ্ত হতো।তাঁর পাঠদানের স্টাইল ছিল অসাধারণ। আলামা আব্দুর রহমান কাশগড়ি (রাহ) এর পাঠদানের  রীতি তাঁর জীবনে গভীরভাবে রেখাপাত করে। আল্লামা কাশগড়ি (রহ) যেভাবে, যে উপায়ে, যে পদ্ধতিতে দরস পেশ করতেন। হাদীস বিশারদ আল্লামা ফখরুদ্দীন (রহ)  এর লেকচারের আরো অন্যতম একটি গুন ও বৈশিষ্ট্য ছিল তাঁর তাঁর বক্তব্যের মধ্যে ছিল মুফতি সৈয়্যদ আমীমুল ইহছান মুজাদ্দেদী বরকতী (রহ) এর ইলমী পান্ডিত্য, ফেকহী ও ইজতেহাদী প্রতিভা বিনয়-উদারতা ও লিল্লাহিয়াতের ছাপ।তিনি তাঁর শিক্ষক মন্ডলীর মধ্যে মুফতি সাহেব ও আল্লামা কাশগড়ি সাহেবের অবদানের কথা আজীবন অকপটে স্বীকার করতেন। কৃতজ্ঞতাভরে তাদের উভয়ের ইহছানের কথা বারবার স্মরণ করতেন। তিনি তাদের শিষ্যত্বের কথা তাঁর শিষ্যদের কে সগর্ভে নিঃসংকোচচিত্তে ব্যক্ত করতেন।


মুফতি সাহেব কলকাতা আলিয়া মাদরাসার কামিল হাদীস বিভাগের পাঠদানকালে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে হাদীসের প্রারম্ভিক প্রাসঙ্গিক অতীব প্রয়োজনীয় বিষয়সমূহের উপর পাঠ সূচনার ভূমিকা  স্মরণ বহু মূল্যবান ভাষণ পেশ করতেন। মাদরাসা-ই-আলিয়া ঢাকায় স্থানান্তরিত হওয়ার পর মুফতি সাহেব ঢাকায় চলে আসেন এবং তিনি ঢাকায়ও সেই একই পদ্ধতি অনুসরণ করতেন। এতে হাদীস শিক্ষার্থীদের প্রচুর উপকার হতো। এ আলোচনার ধারা কয়েক সপ্তাহ ধরে অব্যাহত থাকত। আল্লামা ফখরুদ্দীন (রহ) তার স্বীয় উস্তাদ মুফতি সাহেবের উক্ত রীতি ও পদ্ধতি অবলম্বনে সিদ্ধহস্ত ছিলেন।তিনি তাঁর লিখিত ডায়েরি ও পান্ডুলিপি নিয়ে ক্লাসে আসন গ্রহণ করে অনর্গল মূল্যবান লেকচার ও বক্তৃতাসম্ভার পেশ করতেন। মনে হতো যেন তাঁর পবিত্র যবান থেকে অমূল্য রতœ ও মুক্তা ঝরছে। ছাত্ররা গভীর উৎসুকের সহিত তাঁর প্রদত্ত লেকচারগুলি শুনতো,আহরণ করে নিতো অমূল্য ধনজ্ঞান ভান্ডার,সমৃদ্ধচিত্তে জ্ঞান পিপাসা নিবারণ করতো। প্রখ্যাত আলেমে দ্বীন শায়খুল হাদীস আল্লামা ফখরুদ্দীন (রহ) আমাদেরকে ক্লাসে বর্ণনা করেছেন যে,আমার উস্তাদ মুফতি সাহেব তাঁর প্রদত্ত উপস্থাপিত হাদীস বিজ্ঞানের সেই সব প্রারম্ভিক ভাষণ ও লেকচারগুলি সম্পাদিত করে উর্দু ভাষায় “ইলমে হাদীসকে মুবাদিয়াত” শীর্ষক শিরোনামে একটি সংকলন লিপিবদ্ধ করেছেন। এ সংকলনের একটি কপি আমার কাছে সংরক্ষিত রয়েছে। এ অধমও মুফতি সাহেবের পাঠাগারে এ পান্ডুলিপিখানা দেখার সুযোগ হয়েছে। আলহামদুলিল্লাহ।  
অধ্যাপক আল্লামা ফখরুদ্দীন (রহ) ছাত্রজীবন হতে তাঁর কলম ও লেখার ধার ছিল প্রবল ও শক্তিশালী। তবে তিনি কিতাবের শরাহ কিংবা গ্রন্থ লেখার কাজে তেমন মনযোগ দেননি। তিনি সারাক্ষণ গ্রন্থপাঠে নিমগ্ন ও নিয়োজিত থাকতেন। পাঠশেষে গ্রন্থের মূল্যবান মাল-মসল্লা ও উপাদানগুলো সংগ্রহ করে নিতেন। একদা আমি তাঁকে জিজ্ঞেসা করেছিলাম মাননীয় চাচা মহোদয়!  আপনি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য কিছু লেখনী রেখে যান। উত্তরে তিনি আমাকে বলেছেন, আমাদের আকাবিরগণ পূর্বসূরী জ্ঞানীরা পৃথিবীতে যে অমূল্য জ্ঞান ভান্ডার রেখে গেছেন, সেইগুলি অধ্যয়ন করার লোক নেই।সেগুলি আমরা শেষ করতে পারিনি। নতুনভাবে লেখার কি প্রয়োজন রয়েছে? সৌভাগ্যের কথা তাঁর লেখা দুইটি গ্রন্থের অস্তিত্ব পাওয়া যায়। ১টি তাঁর লেকচার সমগ্রের একটি সংকলন। তিনি নিজেই এই সংকলনের নামকরণ করেছেন “মাখযানুল উলুম”। এটি আরবী,ফার্সি ও উর্দু ভাষায় রচিত। মাদরাসা-ই-আলিয়া ঢাকা ও সিলেট  সরকারী আলিয়া মাদরাসা এর অধ্যাপনাকালে বিভিন্ন সময়ে প্রদত্ত বক্তব্যগুলির একক সংকলন। এতে ইলমে হাদীসের অমূল্য রতœরাজি, বহু মূল্যবান দুর্লভ তাত্ত্বিক আলোচনা ও গবেষনা সমৃদ্ধ জ্ঞান ভান্ডারের অপূর্ব সমাহার রয়েছে। পা-ুলিপিখানা কয়েক ভলিয়মে বিন্যস্ত হবে।  এটি তার পারিবারিক পাঠাগার ও গবেষণালয়ে সংরক্ষিত রয়েছে। ভারত ও পাকিস্তানের সহৃদয়বান প্রকাশকগণ এগিয়ে আসলে এ গ্রন্থটির প্রকাশনার কাজ সহজ হতো। পাক-বাংলা-ভারত উপমহাদেশের জ্ঞান পিপাসু পাঠকমহল এতে প্রচুর উপকৃত হতো। উল্লেখ্য সম্প্রতি এ অধম তাঁর লেখা কয়েকটি প্রবন্ধ বাংলায় ভাষান্তর করার সুযোগ হয়েছে। এমনকি কয়েকটি তা প্রকাশিত হয়েছে। সেগুলির মধ্যে একটি “সিহাহ সিত্তা: একটি গবেষনাধর্মী পর্য্যালোচনা” এটি আমি অধমের সম্পাদিত সাহিত্য সাময়িকী “শাফায়াত” পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে।  প্রকাশক- ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার, চন্দনাইশ,মাওলানা মঞ্জিল,চট্টগ্রাম। ১৯৮৭ সাল।


হাদীস বিজ্ঞানী আল্লামা ফখরুদ্দীন (রহ) এর অন্য আরো একটি কীর্তি আরবী ভাষায় রচিত হাদীসের সনদের গ্রন্থ যা গ্রন্থকারে প্রকাশিত হয়েছে। গ্রন্থটির নাম “আদ-দুরারুস সানীয়্যাহ ফী বায়ানে আসানীদিশ শুয়ুখিল আজিল্লাতে ইলা মুত্তয়াল্লি ফিস সিহাহিস সিত্তাতে” দারুল উলুম কামিল মাদরাসা,চট্টগ্রাম ও মাদরাসা-ই-আলিয়া ঢাকায় কামিল হাদীস অধ্যয়নকালে তাঁর শায়খ ও উস্তাদগণের যে সনদগুলি সিহসহ সিত্তার রচিয়তাগণ পর্যন্ত তথা রাসূলে পাক সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পর্যন্ত পৌঁছেছে,সেই সব সনদগুলির ধারাবাহিক বর্ণনা এখানে উল্লেখ করেছেন। এ সনদ গ্রন্থটি মাদরাসা-ই-আলিয়া ঢাকা ও  সিলেট সরকারি আলিয়া মাদরাসায় অধ্যাপনাকালে রচনা করেছেন। তবে সিলেট সরকারি আলিয়া মাদরাসায় উপাধ্যক্ষ থাকাকালীন  সময়ে এটি গ্রন্থাকারে প্রকাশ করেন। এ সনদগ্রন্থটির অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো তাঁর অন্যান্য শায়খ ও উস্তাদ গণের মধ্যে হতে বিশেষ করে তাঁর প্রিয় শিক্ষক  বিশ্ববরেণ্য হাদীস বিজ্ঞানী মুফতি সৈয়দ আমীমুল ইহছান মুজাদ্দেদী (রহ) এর নিকট অর্জিত সহীহ বুখারী,সহীহ মুসলিম,সুনানে আবু দাউদ,সুনানে তিরমিজি, সুনানে নাসায়ী,সুনানে ইবনে মাজাহ গ্রন্থাবলীর হাদীসের সনদগুলি রাবীদের  বিশেষ পরিচিতি সহ চমৎকার আলোচনার অবতারণা করেছেন তিনি এতে। কামিল হাদীস শিক্ষার্থীদের চূড়ান্ত ডিগ্রীধারীদেরকে তথা সনদ প্রত্যাশীদেরকে তিনি স্বীয়  হস্তে স্বাক্ষর সম্বলিত ইযাযতনামা লিপিবদ্ধ করে এ সনদগ্রন্থটি প্রদান করতেন। বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে প্রতিষ্ঠিত বিভিন্ন কামিল মাদরাস সমূহে এবং বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স ও  মাস্টার্স ক্লাসের শিক্ষার্থীদের মাঝে এ সনদগ্রন্থটির চর্চা ও বিতরণ হয়ে আসছে।সনদ গ্রন্থটির সিংহভাগ সনদগুলি মুফতি সৈয়দ আমীমুল ইহছান মুজাদ্দেদী (রহ) এর লিখিত “মিন্নাতুল বারী” হতে সংগৃহিত ও সংকলিত। মুফতি সাহেবের সনদ গ্রন্থটির অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো-তাঁর প্রিয় শায়খ বাহরুল উলুম আল্লামা মোশতাক আহমদ কানপুরী (রহ) এর মাধ্যমে বর্ণিত সনদগুলি একদিকে শায়খে মুহাক্কিক আব্দুল হক মুহাদ্দিস দেহলভী (রহ) এর সহিত সম্পৃক্ত।  আরো একদিকে দিল্লীর বিখ্যাত কুতুব শাহ ওলী উল্লাহ মুহাদ্দিস দেহলভী (রহ) ও তাঁর খান্দানের সহিত সম্পৃক্তত লক্ষ্য করা যায়। অন্যদিকে তাঁর বর্ণিত সনদগুলি হারামাইন শরীফাইন (মক্কা মুকাররমা ও মদীনা মুনাওয়ারা) ওলামাদের সহিত মিলিত হয়েছে। আবার অন্যদিকে তাঁর বর্ণিত সনদগুলি আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের ওলামাদের সহিত সম্পৃক্ত রয়েছে। মূলত তার অর্জিত সনদগুলি আরব-আজমের ওলামা ও ওলামায়ে হিন্দ এর সহিত সম্পৃক্ত রয়েছে। উল্লেখ্য আল্লামা ফখরুদ্দীন (রহ) এর সনদগুলির মধ্যে দুইটি ধারা বিদ্যমান রয়েছে।  দেউবন্দী ধারা ও বেরেলভী ধারা। তাঁর অধিকাংশ সনদগুলি তাঁর প্রিয় শ্রদ্ধাভাজন শায়খ সৈয়দ মুফতি আমীমুল ইহছান মুজাদ্দেদী (রহ) এর নিকট হতে অর্জন করেছেন। মুফতি সাহেবের স্বীয় প্রিয় শায়খ বাহরুল উলুম আল্লামা মোশতাক আহমদ কানপুরী (রহ) এর নিকট হতে অধিকাংশ সনদ গ্রহণ করেছেন।আল্লামা মোশতাক আহমদ কানপুরী (রহ) ছিলেন ইমামে আহলে সুন্নাত আলা হযরত মুফতি আহমদ রেযা খান বেরেলভী (রহ) এর অন্যতম খলিফা। এইখানে উল্লেখ্য যে, আলা হযরত ইমাম আহমদ রেযা খান বেরেলভী (রহ:) স্বীয় হাদীসের সনদগ্রন্থ “আল-ইযাযাতুল মতীনাহ লে ওলামায়ে বাক্কাতাহ মদীনাহ” স্বীয় শিষ্য ও খলীফা,আলেমকুল সম্রাট আল্লামা যুফর উদ্দীন বিহারী (রহ:) কে ইযাযাত দান করেন। তিনি ঢাকা আলিয়া মাদ্রাসার হেড মুহাদ্দিস মুফতি সৈয়দ আমীমুল ইহছান মুজাদ্দেদী (রহ:) কে উক্ত সনদগ্রন্থটি ইযাযাত দান করেন। তিনি স্বীয় শিষ্য ও খলীফা  আল্লামা ফখর উদ্দীন (রহ:) কে মাদরাসা-ই-আলিয়া ঢাকায় অধ্যয়নকালে এ সনদগ্রন্থটি ইযাযাত দান করেন। আল্লামা ফখরুদ্দীন (রহ) স্বীয় শিষ্য,ছাত্র,ভাতিজা ও জামাতা আমি অধম মুহাম্মদ আমিনুর রহমান কে মাদরাসা-ই-আলিয়া ঢাকায় অধ্যয়নকালে এ সনদগ্রন্থটি ইযাযাত দানে ধন্য করেন।


আল্লামা ফখরুদ্দীন (রহঃ) মুফতী সৈয়দ আমীমুল ইহছান মুজাদ্দেদী বরকতী (রহঃ) এর নিকট মুজাদ্দেদীয়া নকশবন্দীয়া তরীকতের ইযাযত গ্রহণ করেছেন। এ ছাড়া তিনি কাদেরীয়া রেজভীয়া তরীকতের ইযাযতপ্রাপ্ত ছিলেন। কেননা মুফতী সাহেব ইমাম আহমদ রেযা খান বেরেলভী (রহঃ) এর সন্তানতুল্য ও শীর্ষস্থানীয়নীয় খলীফা মালাকুল উলামা যুফর উদ্দীন বিহারী (রহঃ) এবং আলা হযরত ইমাম আহমদ রেযা খান (রহঃ) এর অন্যতম খলীফা বাহরুল উলুম আল্লামা মোশতাক আহমদ কানপুরী (রহঃ) এর নিকট হতেও কাদেরীয়া রেজভীয়া তরীকতের ইযাযত ও খিলাফত লাভ করেছিলেন মুফতী সাথে এ দুজনের নাম “মিন্নাতুল বারী” গ্রন্হে উল্লেখ করেছেন। এ ছাড়া মুফতী সাহেব দিল্লীর আধ্যাত্মিক শরীয়তের অধিকারী, ইমামে রাব্বানী, মুহাদ্দিদে আমাকে সানী শায়খ আহমদ ফারুকী সারহিন্দী (রহঃ) এর অন্যতম বংশীয় উত্তরাধিকার, আস্-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ ডিগ্রীধারী শাহ আবুল হাসান যায়দ আজহারী মুহাদ্দেদী ফারুকী  দেহলভী ইবনে শাহ আবুল খায়র মহিউদ্দিন আব্দুল্লাহ মুজাদ্দেদী ফারুকী দেহলভী (রহঃ) এর নিকট হতেও মুজাদ্দেদীয়া নকশবন্দীয়া তরীকতের ইযাযতপ্রাপ্ত ছিলেন কিন্তু মুফতী সাহেব নিজেই তাঁর স্বীয় অজিফায় তাঁর উস্তাদ, পীর ও শ্বশুর আবু মুহাম্মদ বরকত আলী শাহ সাহেবের শাজরা,  মুফতী সাহেবের দ্বিতীয় পীর শাহ আবু সা’দ আহমদ (রহঃ) এর শাজরা ও মুফতী সাহেবের তৃতীয় পীর,চাচা ও উস্তাদ সৈয়দ আবদুদ দায়্যান বরকতী (রহঃ) এর শাজরা শরীফা ধারাবাহিকভাবে আলোচনার অবতারনা করেছেন। 
একটি চমকপ্রদ ঘটনা হলো আমার উস্তাদ, চাচা শ্বশুর অধ্যক্ষ আল্লামা আলহাজ্ব মাওলানা মুহাম্মদ ফখরুদ্দীন (রহঃ) স্বভাবত স্বীয় প্রিয় শিক্ষক আল্লামা আব্দুর রহমান কাশগড়ি (রহঃ) এর রীতিনীতি, আদর্শাচার ও জীবনধারার প্রতি প্রগাঢ় ভক্ত ছিলেন।  আল্লামা কাশগড়ি (রহঃ) স্বাধীনচেতা, উদার সাহিত্যিক চিন্তাধারার বিশ্বাসী ছিলেন। তাই তিনি মুফতী সাহেবের সূফী প্রাবল্যের প্রতি তেমন বেশী ধার করতেন না। আল্লামা ফখরুদ্দীন (রহঃ) স্বীয় প্রাথমিক জীবনে উভয় উস্তাদদ্বয়ের মধ্যে আল্লামা কাশগড়ি (রহঃ) এর আদর্শ ও জীবনধারার প্রতি অধিক প্রভাবে প্রভাবিত হন। এ ছাড়া আল্লামা ফখরুদ্দীন (রহঃ) আল্লামা কাশগড়ি (রহঃ) এর তত্ত্বাবধানে দীর্ঘসময় স্বীয় রিসার্চ কাজ চালীয়ে যাওয়ার সুযোগ পান। এ সময়ে তিনি আল্লামা কাশগড়ি (রহঃ)কে খুব কাছে থেকে দেখার সুযোগ পান। তাই আল্লামা ফখরুদ্দীন (রহঃ) তার আদর্শ ও চিন্তাধারার প্রতি ব্যাপকভাবে ঝুঁকে পড়েন।  আল্লামা ফখরুদ্দীন (রহঃ) কোন একসময়  মুফতী সৈয়দ আমীমুল ইহছান মুজাদ্দেদী বরকতী (রহঃ) এর ঢাকাস্থ কলুটৌলা খনকায়  যান এবং মুফতী সাহেবের বিশেষ রুহানী ফুয়ুজাত ও তাওয়াজুত্ত কামনা করেন।  আল্লামা ফখরুদ্দীন (রহঃ)  মুজাদ্দেদীয়া নকশবন্দীয়া তরীকতের উজ্জ্বল নক্ষত্র মুফতী সৈয়দ আমীমুল ইহছান মুজাদ্দেদী (রহঃ) এর পূণ্যময় হস্তে বায়আাত হন। মুফতী সাহেব তাঁকে স্বীয় লিখিত তাসাউফ বিষয়ক গ্রন্থ “আৎ-তাশাররুফ লে আদাচিত তাসাউফ “ গ্রন্হটি প্রদান করেন এবং উক্ত গ্রন্থে বর্ণিত তরীকায়ে নকশবন্দীয়া মুজাদ্দেদীয়া, তরীকায়ে মুজাদ্দেদীয়া কাদেরীয়া, মুজাদ্দেদীয়া চিশতীয়া,মুজাদ্দেদীয়া সোহরাওয়ার্দী তথা সূফী তরীকতের বিভিন্ন সনদগুলির ইযাযত দান করেন। মুফতী সাহেব নিঃসন্তান ছিলেন। কেবলমাত্র তাঁর একটি কন্যা ছিল।  মুফতী সাহেব আল্লামা ফখরুদ্দীন (রহঃ) কে সন্তানতুল্য ভালবাসতেন মুফতী সাহেবের বাসায় ও খানকায় তাঁর নিয়মিত যাতায়াত ছিল। এভাবে তিনি মুফতী সাহেবের সুযোগ্য ইলমী ওয়ারেছ ও রুহানী উত্তরসূরীর মর্যাদায় অভিষিক্ত হন। আলহামদুলিল্লাহ!  আমার শ্রদ্ধেয় পিতা অধ্যক্ষ মাওলানা মাহমুদুর রহমান  ও  আমার শ্রদ্ধেয় উস্তাদ, চাচা ও শ্বশুর আল্লামা ফখরুদ্দীন (রহঃ)  উভয়েই মুফতী সাহেবের রুহানী ফুয়ুজাত দ্বারা সমৃদ্ধ।  তাঁদের আধ্যাত্মিক অমীয় সুধা ধারা যুগ যুগ ধরে বহমান থাকুক। প্রখ্যাত হাদীস বিশারদ ও বিশিষ্ট আলেমে দ্বীন আল্লামা ফখরুদ্দীন (রহ) এর শিষ্য ও ছাত্রগণের সুদীর্ঘ তালিকা রয়েছে। (চলবে)
লেখক: কলামিস্ট ও গবেষক। অধ্যক্ষ, জোয়ারা ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসা। 


বিভাগ : ধর্ম দর্শন


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

ভারতের কাছে হারানো ২০০ একর জমি ফেরত পাচ্ছে বাংলাদেশ

ভারতের কাছে হারানো ২০০ একর জমি ফেরত পাচ্ছে বাংলাদেশ

সাবেক রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন গ্রেপ্তার

সাবেক রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন গ্রেপ্তার

যৌথ বাহিনীর অভিযানে ১৩দিনে ১৫৫ অস্ত্র উদ্ধার, গ্রেপ্তার ৭২

যৌথ বাহিনীর অভিযানে ১৩দিনে ১৫৫ অস্ত্র উদ্ধার, গ্রেপ্তার ৭২

ইলিয়াস আলীকে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবীতে বালাগঞ্জে স্বেচ্ছাসেবক দলের মিছিল

ইলিয়াস আলীকে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবীতে বালাগঞ্জে স্বেচ্ছাসেবক দলের মিছিল

সাংবাদিক মুশফিকুল ফজল আনসারীর সাথে সিলেট অনলাইন প্রেসক্লাবের সৌজন্য সাক্ষাৎ

সাংবাদিক মুশফিকুল ফজল আনসারীর সাথে সিলেট অনলাইন প্রেসক্লাবের সৌজন্য সাক্ষাৎ

গুলশানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠক

গুলশানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠক

যশোরে ৪ দিনের বৃষ্টিপাতে নিম্নাঞ্চলে জলাবদ্ধতা, বিপর্যস্ত জনজীবন

যশোরে ৪ দিনের বৃষ্টিপাতে নিম্নাঞ্চলে জলাবদ্ধতা, বিপর্যস্ত জনজীবন

যাত্রাবাড়ী থানার সাবেক ওসি আবুল হাসান টেকনাফ থেকে গ্রেপ্তার

যাত্রাবাড়ী থানার সাবেক ওসি আবুল হাসান টেকনাফ থেকে গ্রেপ্তার

৪ ধরনের জ্বালানি তেলের দাম কমালো পাকিস্তান

৪ ধরনের জ্বালানি তেলের দাম কমালো পাকিস্তান

তারাকান্দায় সাবেক এমপি শরীফসহ ৫৯ আ’লীগ নেতাকর্মীর নামে মামলা

তারাকান্দায় সাবেক এমপি শরীফসহ ৫৯ আ’লীগ নেতাকর্মীর নামে মামলা

শার্শায় বাবার কোদালের আঘাতে ছেলে নিহত

শার্শায় বাবার কোদালের আঘাতে ছেলে নিহত

গোলাপগঞ্জে ইয়াবাসহ মাদক ব্যবসায়ী আটক

গোলাপগঞ্জে ইয়াবাসহ মাদক ব্যবসায়ী আটক

কিশোরগঞ্জে ঈদে মিলাদুন্নবীর র‌্যালিকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ, মসজিদ-মাজার ভাঙচুর, নিহত- ১

কিশোরগঞ্জে ঈদে মিলাদুন্নবীর র‌্যালিকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ, মসজিদ-মাজার ভাঙচুর, নিহত- ১

রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে চাঞ্চল্যকর তথ্য হাবিব-বিপ্লব গংদের নির্দেশে পুলিশ নেতা সেজে বিভ্রান্ত করেছিলেন কনস্টেবল জয়

রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে চাঞ্চল্যকর তথ্য হাবিব-বিপ্লব গংদের নির্দেশে পুলিশ নেতা সেজে বিভ্রান্ত করেছিলেন কনস্টেবল জয়

ইসলামের বিধি-বিধান প্রতিষ্ঠা হলে ইসলামের প্রকৃত সৌন্দর্য জগতবাসী দেখতে পাবে -মাওলানা আহমদ আবদুল কাইয়ূম

ইসলামের বিধি-বিধান প্রতিষ্ঠা হলে ইসলামের প্রকৃত সৌন্দর্য জগতবাসী দেখতে পাবে -মাওলানা আহমদ আবদুল কাইয়ূম

যানজটের সমাধান খুঁজতে প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশ

যানজটের সমাধান খুঁজতে প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশ

মহানবী (সঃ) এর আদর্শ অনুসরণ করা হলে কোন রাষ্ট্র প্রধানকে পালাতে হবেনা-মিলাদুন্নবী (সঃ) এর আলোচনা সভায় বক্তারা

মহানবী (সঃ) এর আদর্শ অনুসরণ করা হলে কোন রাষ্ট্র প্রধানকে পালাতে হবেনা-মিলাদুন্নবী (সঃ) এর আলোচনা সভায় বক্তারা

মসজিদ-মাদরাসা কমিটি থেকে ফ্যাসিবাদের সুবিধাভোগীদের বিতাড়িত করতে হবে: আজিজুল হক ইসলামাবাদী

মসজিদ-মাদরাসা কমিটি থেকে ফ্যাসিবাদের সুবিধাভোগীদের বিতাড়িত করতে হবে: আজিজুল হক ইসলামাবাদী

প্রশাসক হতে চান শিক্ষকরা, ঠেকাতে একাট্টা ৪ সংগঠন

প্রশাসক হতে চান শিক্ষকরা, ঠেকাতে একাট্টা ৪ সংগঠন

বাংলাদেশের এই দলকে সেরা বললেন হার্শা

বাংলাদেশের এই দলকে সেরা বললেন হার্শা