তাকওয়া : দুনিয়ার লাভ
১৬ আগস্ট ২০২৩, ০৮:৪৫ পিএম | আপডেট: ১৭ আগস্ট ২০২৩, ১২:০১ এএম
তাকওয়া মুমিনের শ্রেষ্ঠ গুন। ইমান এবং তাকওয়া অঙ্গাঅঙ্গি জড়িত। ইমান আনা থেকে তাকওয়ার পদচারনা শুরু হয়। মহান রবের মহান বন্ধুত্বে তার পূর্ণতা প্রাপ্ত হয়। এই পূর্ণতাই তৃপ্তি। এই পূর্ণতাই লক্ষ্য। এই পূর্ণতাই চুড়ান্ত সফলতা। মুমিন বলতেই তাকওয়াবান। এই তাকওয়ার অনেক স্তর বিদ্যমান। কোরআন সুন্নাহর আলোকে জীবন সাজানোর অবিরত প্রচেষ্টা তাকওয়ায় মজবুতি আনয়ন করে। এই নিরন্তর চেষ্টার মাধ্যমে মহান রবের সন্তুষ্টি সাধিত হয়। এই বন্ধুত্বের ঘনিষ্ঠতায় তার দুনিয়া ও আখেরাতের জীবন হয়, সুন্দর, সাবলিল, সুখময়। আমাদের অনেক ক্ষেত্রে ধারনা তাকওয়াবানগন দুনিয়ায় শুধু কষ্ট আর কষ্ট করতে হয়। আসলে আমরা কাকে প্রকৃত কষ্ট আর কাকে প্রকৃত সুখ বলে তাও চেনার চেষ্টা করি না। অনেক ক্ষেত্রে আমরা তাকওয়ার জীবনকে দরবেশী জীবন বলি। ইসলামের ইতিহাসে আমরা অনেক দৃষ্টান্ত পাব যে বাদশাহী ছেড়ে আরামের জীবন ছেরেড় দরবেশ হয়ে গেছেন। কিন্ত দরবেশ জীবন ছেড়ে বাদশাহী জীবন গ্রহন করেছেন, এমন একটি উদাহরনও কি পাব? কারন দরবেশী জীবনের আত্ম প্রশান্তি বাদশাহী জীবনে পাওয়া যায় না। তাইতো ইবরাহিম ইবনে আদহাম রাহঃ বলেন, আমি বাদশাহী ছেড়ে দববেশী জীবন গ্রহন করেছি। এই জীবনে যে শান্তিতে আছি, বাদশাহরা যদি জানত তবে তা ছিনিয়ে নেওয়ার জন্য আমাদের সাথে যুদ্ধ করত।
তাকওয়াবান হয়ে গেলে দরবেশ হয়ে যেতে হয় না। তার জীবনটা কোরআন হাদিসের হিসাবে চালাতে হয়। মেপে মেপে চলতে হয়। মেপে মেপে বলতে হয়। মেপে মেপে ভোগ করতে হয়। দুনিয়া নিয়ে তাকে বেপরোয়া হওয়ার কোন সুযোগ নেই। তার জন্য রয়েছে দুনিয়া ও আখেরাতে শুধু সফলতা আর সফলতা। এই সফলতাগুলো থেকে কিছু সফলতা কোরআনের আলোকে তুলে ধরা হয়েছে:
১. অবারিত রহমত লাভ: মুমিন মাত্রই রহমতের প্রত্যাশি। রহমত কে না চায়! মুমিন বান্দা মহান রবের নির্দেশ মেনে চলে তারপরও তারমধ্যে মাওলার ভয় কাজ করে সাথে রহমতেরও আশা করে। এই ভয় এবং আশা তারমধ্যে এক অনাবিল শান্তি এনে দেয়। সে মহান মালিকের আশ্রয়ে চলে যায়। অপর দিকে পাপী সে পাপ করে সাথে নিজেকে নিরাপদ মনে করে। এই ভাবনা তাকে সব সময় অস্থিরতার মধ্যে ফেলে রাখে। মহান রব কত সুন্দর করে আমাদের সুরা আরাফের ৯৬ তম আয়াতে জানিয়ে দিয়েছেন, আর যদি গ্রামবাসীরা ইমান আনত এবং তাকওয়া অবলম্বন করত তাহলে অবশ্যই আমি তাদের জন্য আসমান ও জমিনের সকল বরকত উন্মোচন করে দিতাম। কিন্তু তারা মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে ফলে আমি তাদের কৃতকর্মের জন্য তাদেরকে পাকড়াও করেছি।
২. সহজেই হক বালিত বুঝতে পাওে এবং গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়: দুনিয়ায় চলতে গেলে প্রতিটি মানুষের সামনে সত্য মিথ্যা, ন্যায় অন্যায়, সফলতা ব্যর্থতা, কল্যাণ অকল্যাণ, লাভ ক্ষতি, পুরস্কার তিরস্কার ইত্যাদির মুখোমুখি হতেই হবে। একজন মুত্তাকিকে মহান রব অনায়াসে সত্য ন্যায় কল্যাণ সফলতা বেছে নেওয়ার তৌফিক দান করবেন তার সকল অপরাধ মার্জনা করে দেবেন। এর চেয়ে আর বড় সফলতা আর কী থাকতে পারে। মহান রব সুরা আনফালের ২৯ তম আয়াতে বলেন, হে ইমানদারগন তোমরা যদি তাকওয়ার জীবন অবলম্বন কর, তাহলে মহান রব তোমাদেরকে হক ও বাতিলের করার মানদন্ড দান করবেন। তোমাদের সকল দোষ ত্রুটি তোমাদের থেকে দূর করে দেবেন। তোমাদের যাবতীয় গুনাহ ক্ষমা করে দেবেন। প্রকৃতপক্ষে মহান রবই বড় অনুগ্রহশীল।
৩. মুমিন দুনিয়া আখেরাতে সব সময় ভয় দুঃখ পেরেশানী মুক্ত: ভয় পেরেশানী দুঃখ শান্তির অন্তরায়। একজন মুমিন সব সময় নিরুদ্বেগ ও শান্তিতে থাকে তাকে কখনো ভয় কাবু করতে পারে না। বিপদেও সে ঘাবড়িয়ে যায় না। বিপদকে সে সফলতার মঞ্জিল মনে করে। মহান রব তার বন্ধু, সাহায্যকারী জানে। সবকাজে সবখানে তাদের সফলতা আর সুসংবাদ। মহান রব সুরা ইউনুসের ৬২-৬৪ আয়াতে বলেন, আল্লাহর প্রিয় বান্দাদের কোনো ভয় নেই এবং দুঃখিতও হবে না। যারা ইমান এনেছে এবং তাকওয়া অবলম্বন করেছে। তাদের জন্য পৃথিবীর জীবন ও পরকালে সুসংবাদ রয়েছে। আল্লাহর কথায় কোন নড়চড় হয় না। এটাই মহা সাফল্য।
৪. রিজিকের পেরেশানী দূর: দুনিয়ার আমরা রিজিকের জন্যই বেশি পেরেশানী করে থাকি। সকাল থেকে রাত কর্মে ব্যস্ত থাকি। এমনকি অনেক রাত পর্যন্ত কাজ করে থাকি শুধু এই রিজিকের জন্য। মহান রব তাকওয়াবানকে অবারিত রিজিকের ব্যবস্থা করে দেবেন। তার কোন সংকটই থাকবে না। মহান রব সুরা তালাকের ২-৩ আয়াতে বলেন, যে ব্যক্তি মহান আল্লাহ ভয় করে চলে (তাকওয়া অবলম্বন করে) তিনি তার জন্য সংকট থেকে বের হওয়ার পথ করে দিবেন। আর আল্লাহ তায়ালা এমন জায়গা থেকে রিজিকের ব্যবস্থা করে দিবেন যার ধারনাও সে করে না।
৫. শত্রুর শত্রুতা থেকে হেফাজত: দুনিয়ায় চলতে গিয়ে দ্বীনি ও দুনিয়ার অনেক কারনে অন্যের সাথে শত্রুতা তৈরী হতে পারে। অনেক সময় আপনার উন্নতি দেখে কেউ কেউ শত্রুতা শুরু করে। এই শত্রুর শত্রুতা বা ক্ষতি থেকে রক্ষার জন্য গ্যারান্টিও তাকওয়া। মহান রব বলেন, তোমাদের সুদিনে তাদের খারাপ লাগে। তোমাদের দুর্দিনে তারা বেজায় খুশি। কিন্তু যদি তোমাদের সবর ও তাকওয়া থাকে তাহলে তাদের কোন ফন্দিবাজি (শত্রুতা) তোমাদের কোন ক্ষতি করতে পারবে না। তাদের সকল কাজকর্ম মহান আল্লাহর আয়ত্বে। সুরা আলে ইমরান আয়াত ১২০।
৬. সকল কাজ সহজ হয়ে যায়: আমরা যতদিন দুনিয়াতে থাকি আমাদের বিভিন্ন কাজ করতেই হবে। সব কাজ যদি করতে গিয়ে দেখি খুবই সহজ এবং অল্প সময়ের মধ্যেই কাজটি শেষ করে ফেলা যায় তবে কতই না মধুর হয়। মহান রব সুরা তালাকের ৪ তম আয়াতে বলেন, যে আল্লাহকে ভয় করে (তাকওয়া অবলম্বন) করে, আল্লাহ তায়ালা তার কাজ সহজ করে দেন ।
৭. শয়তানের আক্রমনে কান খাড়া হয়ে যায়: আমরা চলতি পথে কোন বিপদ সংকেত পেলে সাথে সাথে সতর্ক হয়ে যাই। শয়তান আমাদের প্রকাশ্য দুশমন। সে বিভিন্নভাবে আমাদের কুমন্ত্রণ্ াদেয়। যারা মুক্তাকি শয়তান যে পথেই তাদের আক্রমন করুক না কেন তারা খুব সহজেই বুঝতে পারে। সতর্ক হয়ে যায়। হামলা প্রতিহত করে। মহান রব সুরা আরাফের ২০১ তম আয়াতে বলেন, মুত্তাকিদের কাছে শয়তানের পক্ষ থেকে যখন কোন কুমন্ত্রণা আসে তখন তারা আল্লাহকে স্মরণ করে তখন তারা সত্য দেখতে পায়।
৮. সকল কাজে আল্লাহর সাহায্য প্রাপ্ত হয়: মহান রবের দয়া ছাড়া কারো পক্ষেই বেঁচে থাকা সম্ভব নয়। সৃষ্টি হিসেবে সকলকেই মহান আল্লাহ দয়া করেন। অন্যদিকে মুমিন মাত্রই আল্লাহর সাহায্য প্রত্যাশী। প্রতিদিন অনেক বার মাওলার সাহায্য কামনা করে একজন মুমিন, মুত্তাকি। মহান রব সুরা নাহলের ১২৮তম আয়াতে বলেন, আল্লাহ তাদের সাথে আছেন যারা তাকওয়া অবলম্বন করে এবং যারা সৎ কর্ম সম্মাদনকারী।
৯. আল্লাহর নিকট সম্মান মর্যাদার মাপকাঠি তাকওয়া: দুনিয়ার মানুষের কাছে সম্মানের মাপকাঠি অর্থ সম্পদ, ক্ষমতা, সৌন্দর্য, শিক্ষা, পদবী। কিন্তু আল্লাহ তায়ালার নিকট সম্মানের, সম্মান বৃদ্ধির একমাত্র মাপকাঠি তাকওয়া। মহান রব বলেন, তোমাদের মধ্যে আল্লাহর নিকট সর্বাধিক মর্যাদাবান ঐ ব্যক্তি যে ব্যক্তি তোমাদের মধ্যে তাকওয়াবান। সুরা হুজরাত আয়াত ১৩।
১০. তাকওয়ায় পাপ মুক্ত হয়ে যায়: সকল মুমিন চায় তার পাপ না থাকুক। মহান রব যেন তার সকল পাপ মাফ করে দেন। হ্যা তাকওয়া এমন গুন যা অর্জন করতে পারলে মহান রব গুনাহগুলো ক্ষমা করে দেন। আল্লাহ তায়ালা সুরা তালাকের ৫তম আয়াতে বলেন, যে আল্লাহ তায়ালাকে ভয় (তাকওয়া অবলম্বন) করে। আল্লাহ তায়ালা তার পাপসমূহ পরিবর্তন করে দেবেন এবং (শুধু তাই নয়) তাকে বড় পুরস্কার দেবেন।
১১. তাকওয়া অবলম্বনকারীর জ্ঞান বৃদ্ধি পায়: জ্ঞান মুমিনের হারানো সম্পদ। যেখানে পায় সেখান থেকে কুড়িয়ে নেয়। তাকওয়াবানকে মহান রব তার রহমতেই জ্ঞান বাড়িয়ে দেন। তিনি বলেন, আল্লাহকে ভয় কর। তিনি তোমাদের শিক্ষা দেন। এবং তিনি সবকিছু ভালভাবেই জানেন। সুরা বাকারা ২৮২।
১২. মুত্তাকিরাই আল্লাহর ভালবাসা পায়, আল্লাহই তাদের অভিভাবক, বন্ধু: আল্লাহর ভালবাসার চেয়ে মূল্যবান আর কোন কিছু নেই। মহান রবের ভালবাসার কাছে সবকিছু তুচ্ছ। মহান বরের ভালবাসা পেয়ে গেলে আর কোন কিছুর প্রয়োজন নেই। আল্লাহ তায়ালা বলেন, আল্লাহ অবশ্যই তাকওয়া অবলম্বনকারীদের ভালবাসেন। সুরা তাওবা আয়াত ৭।
১৩. তাকওয়া ছাড়া ইবাদাত কবুল হয় না: বান্দা যতই ইবাদাত করুক। যদি তাকে তাকওয়া না থাকে সবই ব্যর্থ, নিষ্ফল। ইবাদাত কম বা বেশি হোক যদি তাকওয়া না থাকে তা কবুল হয় না। মহান রব সুরা মায়িদার ২৭তম আয়াতে বলেন, আল্লাহ তায়ালা কেবলমাত্র মুত্তাকিদের পক্ষ থেকেই কোরবানী কবুল করে থাকেন।
১৪. সফলতার মূল চাবিকাঠি তাকওয়া: প্রত্যেক মানুষ সফলতা চায়। অন্যদের সফলতা ক্ষনিকের। মুমিন চায় সর্বোচ্চ এবং চির সফলতা। এই সফলতার চাবিকাঠি হল তাকওয়া। মহান রব সুরা আলে ইমরানের ১৩০তম আয়াতে বলেন, তোমরা আল্লাহকে ভয় যেন তোমরা সফলকাম হতে পারো। সুরা তোয়াহার ১৩২ তম আয়াতে বলেন, শুভ পরিনাম কেবলমাত্র মোক্তাকিদের জন্য। সুরা আরাফের ১২৮তম আয়াতে বলেন, শুভ পরিনাম তাকওয়া অবলম্বনকারীদের জন্য।
লেখক: গবেষক, শিক্ষাবিদ।
বিভাগ : ধর্ম দর্শন
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
আমরা আল্লাহর উপরে ভরসা করি আর হাসিনার ভরসা ভারতে -দুলু
বাংলাদেশের গুমের ঘটনায় ভারতের সম্পৃক্ততা খুঁজে পেয়েছে কমিশন
২০২৫ সালের মধ্যে নির্বাচনের পক্ষে মত বিএনপির যুগপৎ সঙ্গীদের
ঢাকায় ‘হযরত ফাতিমা জাহরা (সা.আ.) বিশ্বের নারীদের আদর্শ’ শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত
চার ভাগে ফিরবেন ক্রিকেটাররা
চাঁদাবাজদের ক্ষমতায় আসতে দেবেন না: হাসনাত
এমএ আজিজ স্টেডিয়ামের বরাদ্দ পেল বাফুফে
ইজতেমা মাঠকে যারা খুনের মাঠে পরিণত করেছে তারা সন্ত্রাসী
আসছে ভিভোর এক্স সিরিজের নতুন ফ্ল্যাগশিপ
বেনাপোল চেকপোস্ট দিয়ে ২ ভারতীয় নাগরিককে স্বদেশে ফেরত
মুন্সীগঞ্জে বিএনপি’র দু পক্ষে সংঘর্ষ,৩ জন গুলিবিদ্ব সহ আহত ১০
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে সাকিব-তামিমকে পাওয়া যাবে: ফারুক
ইজতেমা মাঠে হত্যাযজ্ঞে জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার করুন
কলাপাড়ায় অটোরিকশা উল্টে শিশুর মৃত্যু
আগামীকাল পঞ্চগড়ে বিএনপির জনসমাবেশ
ব্যাক্তিস্বার্থ পরিহার করে, দেশ ও দলের স্বার্থে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে: ইলিয়াস পাটোয়ারী
সখিপুরে বিদ্যুৎষ্পৃষ্টে ডিস ব্যবসায়ীর মৃত্যু
যারাই সুযোগ পেয়েছে তারাই দেশের সাথে বেঈমানী করেছে: ডা. মু. তাহের
পঞ্চমবারের মতো অনুষ্ঠিত হলো মৌমাছি ও মধু সম্মেলন
শীতের দিনে ঝিরঝিরে বৃষ্টি স্থবির খুলনা শহুরে জীবন