প্রশ্ন: সাদাকায়ে ফিতর আদায়ের কারণ ও পদ্ধতি কি?
৩০ আগস্ট ২০২৩, ০৮:৪৯ পিএম | আপডেট: ৩১ আগস্ট ২০২৩, ১২:০২ এএম
‘নিশ্চয় সাফল্য লাভ করবে সে, যে পরিশুদ্ধ হয়।’ (সুরা আলা : আয়াত ১৪)
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাজিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাদাকাতুল ফিতরকে অপরিহার্য করেছেন, অনর্থক অশালীন কথা ও কাজে রোজার যে ক্ষতি হয়েছে তা পূরণের জন্য এবং নিঃস্ব লোকের আহার যোগানোর জন্য।’ (আবু দাউদ)
রহমত-বরকত, মাগফিরাত ও নাযাতের একমাস রোযা শেষে আল্লাহ তাঁর পক্ষ থেকে মুমিনদের দাওয়াত দেন, সেইদিন হচ্ছে ঈদুল ফিতর। এইদিন রোজা রাখা হারাম। আল্লাহ এইদিন প্রত্যেক মুসলমান মুমিনদের দাওয়াত করেন। এটা যেহেতু আল্লাহর তরফ থেকে দাওয়াত, তাই এইদিন ধনী-গরীব, বাদশা-ফকির সবাই ভেদাভেদ ভুলে খুশিতে মত্ত থাকে, ঘরে ঘরে নানান প্রজাতির সুস্বাদু খাবারের ঘ্রাণে মৌ মৌ করে। সবাই ফিরনি, পায়েস, লাচ্ছি, খোরমা পোলাও, সন্দেশসহ বাহারী রকমের খাবার খেয়ে থাকে। ধনীদের পাশাপাশি সমাজের সুবিধাবঞ্চিত মানুষেরাও যেনো এই খুশী থেকে বিরত না থাকে, তাই ইসলাম সাদাকাতুল ফিতরের সুযোগ করে দিয়েছে।
হাদীসের ভাষ্য অনুযায়ী সাদাকাতুল ফিতর হচ্ছে ‹তুমাতুল্লিলমাসাকিন› অর্থাৎ সমাজের অসহায়, দুস্থ-দরিদ্র, রিক্তহস্ত জনগোষ্ঠি যাতে বছরান্তে একটি দিন অন্তত খেয়ে-পরে আনন্দ উদযাপন করতে পারে। সাদকায়ে ফিতর আদায় করা মুমিনের জন্য আল্লাহ কর্তৃক অত্যাবশ্যকীয় বিধান। সাদাকাতুল ফিতরের আরেক কারণ হচ্ছে রমজান মাসের সিয়াম সাধনায় রোজা পালনের ত্রুটি-বিচ্যুতিগুলো থেকে মুক্ত হতে ফিতরা আদায় করা জরুরি। হাদিসের ভাষ্য অনুযায়ী এটাকে বলা হয়- তুহরাতুল্লিস সায়িম› অর্থাৎ একমাস সিয়াম সাধনায় মুমিনের অনাকাঙ্খি ত্রুটি-বিচ্যুতির কাফফারা হলো সাদকায়ে ফিতর।
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাজিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাদাকাতুল ফিতরকে অপরিহার্য করেছেন, অনর্থক অশালীন কথা ও কাজে রোজার যে ক্ষতি হয়েছে তা পূরণের জন্য এবং নিঃস্ব লোকের আহার যোগানোর জন্য।” (আবু দাউদ)
ফিতরা আদায়ের পদ্ধতি: ঈদের নামাজ পড়ার আগেই ফিতরা আদায় করার নির্দেশনা রয়েছে। ফিতরা সম্পর্কিত অনেক বিষয়, তা আদায়ে এসব বিষয়গুলো জানা জরুরি।
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রাজিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, গোলাম, স্বাধীন, পুরুষ, নারী, ছোট, বড় সব মুসলিমের ওপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এক ‘সা’ খেজুর, অথবা অর্ধ ‘সা’ গম জাকাতুল ফিতর ফরজ করেছেন এবং (ঈদের) নামাজের আগে তা আদায়ের নির্দেশ দিয়েছেন।গ্ধ (বুখারি, মুসলিম)
হাদিসের বর্ণনা অনুযায়ী ২ পরিমাপে ৫ জিনিস দিয়ে ফিতরা আদায় করা যায়। আর তাহলো যব, কিসমিস, খেজুর, পনির ও গম। এসব গুলোর মধ্যে গমের পরিমাপ হলো অর্ধ সা আর বাকিগুলোর পরিমাপ এক সা। যার যার সামর্থ্য অনুযায়ী যে কোনো একটি দিয়ে এ ফিতরা আদায় করতে পারবেন। (এক সা সমান ৩ কেজি ৩›শ গ্রাম, অর্ধ সা সমান ১ কেজি ৬৫০গ্রাম)
বর্তমান বাজারমূল্য হিসেবে উম্মুল মাদারিস মুঈনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদ্রাসার ফতোয়া বিভাগ থেকে সাদাকাতুল ফিতরের একটি চাট প্রকাশ করে। সর্বনিম্ন ১০০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ২৩০০ টাকা পর্যন্ত জনপ্রতি ফিতরা আদায় করা যাবে।
ফিতরা যারা দেবেন: সামর্থ্যবান মুমিন নারী-পুরুষের ওপর ফিতরা আদায় করা ওয়াজিব। সামর্থ্যবানদের অধীনস্ত পরিবারের সব সদস্যদের ফিতরাও দায়িত্বশীল ব্যক্তি আদায় করবেন। এক কথায় সামর্থ্যবান নারী-পুরুষ, শিশু, কিশোর, যুবক, বৃদ্ধ সব স্বাধীন, পরাধীন এমনকি হিজড়া সম্প্রদারে ওপরই ফিতরা আদায় করা আবশ্যক। বালেগ সন্তান যদি পাগল হয় তবে পিতার পক্ষ থেকে তা আদায় করা ওয়াজিব।
ফিতরা ওয়াজিব হওয়ার শর্ত: ঈদুল ফিতরের দিন কোনো স্বাধীন মুসলমানের কাছে জাকাতের নিসাব তথা সাড়ে ৭ ভরি স্বর্ণ কিংবা সাড়ে ৫২ তোলা রুপা অথবা তার সমমুল্যের নগদ অর্থ কারো কাছে থাকলেই ওই ব্যক্তির জন্য ফিতরা ওয়াজিব। এ সম্পদ ঋণ এবং মৌলিক প্রয়োজনের অতিরিক্ত হতে হবে। তবে ব্যতিক্রম হলো- জাকাতের জন্য এ সম্পদ পূর্ণ এক বছর মালিকানায় থাকতে হবে, আর ফিতরার ক্ষেত্রে এক বছর থাকা শর্ত নয়। আর এসব ব্যক্তির জন্য ফিতরা গ্রহণ করাও হারাম।
আবার বাড়ি-ঘর, আসবাবপত্র, স্থাবর সম্পদের মূল্য (যদি ব্যবসার জন্য না হয়) জাকাতের নিসাবের অন্তর্ভূক্ত নয়। কিন্তু ফিতরার ক্ষেত্রে প্রয়োজনের অতিরিক্ত আসবাবপত্র,ঘর-বাড়ি ও স্থাবর সম্পদ, ভাডা বাড়ি, মেশিনারীজ, কৃষিযন্ত্র ইত্যাদি (উপার্জনের জন্য না হলেও) এসবের মূল্যের হিসাবও ফিতরার নেসাবে অন্তর্ভূক্ত হবে। ঈদের দিন সুবহে সাদিকের পর সব সামর্থ্যবান মুমিনের ওপর ফিতরা আদায় করা আবশ্যক। এ সময়ের ঠিক আগ মুহূর্তে যদি কারো বাচ্চা ভূমিষ্ঠ হয় তবে ওই বাচ্চার জন্যও ফিতরা আদায় করতে হবে।
ফিতরা কখন আদায় করতে হয়: ঈদের নামাজে যাওয়ার আগেই ফিতরা আদায় করা সর্বোত্তম। তবে আগে থেকে ফিতরা আদায়ে কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই। আর যদি কেউ কোনো কারণে ঈদের নামাজের আগে আদায় করতে না পারে তবে ঈদের পরেও তা আদায় করা যাবে। তবে প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঈদগাহে যাওয়ার আগেই ফিতরা আদায় করতেন। কেননা গরিব-অসহায় এ টাকায় কেনাকাটা করে ধনীদের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করবে। আল্লাহ আমাদেরকে সঠিকভাবে সাদাকাতুল ফিতর আদায় করার তৌফিক দিক। মুসলিম উম্মাহর এই ক্রান্তিলগ্নে সাদাকাতুল ফিতরের মাধ্যমে একে অপরের পাশে দাঁড়ানোর সৌভাগ্য করে দিক। ভেদাভেদ ভুলে এক কাতারে এসে দ্বীনের ফরজ-ওয়াজিব বিধানগুলো যথাযথভাবে আদায় করার তৌফিক দিক। আ-মীন।
উত্তর দিচ্ছেন: আবু তালহা তোফায়েল, তরুণ আলেম, সাংবাদিক ও সংগঠক।
বিভাগ : ধর্ম দর্শন
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
ভারতের কাছে হারানো ২০০ একর জমি ফেরত পাচ্ছে বাংলাদেশ
সাবেক রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন গ্রেপ্তার
যৌথ বাহিনীর অভিযানে ১৩দিনে ১৫৫ অস্ত্র উদ্ধার, গ্রেপ্তার ৭২
ইলিয়াস আলীকে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবীতে বালাগঞ্জে স্বেচ্ছাসেবক দলের মিছিল
সাংবাদিক মুশফিকুল ফজল আনসারীর সাথে সিলেট অনলাইন প্রেসক্লাবের সৌজন্য সাক্ষাৎ
গুলশানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠক
যশোরে ৪ দিনের বৃষ্টিপাতে নিম্নাঞ্চলে জলাবদ্ধতা, বিপর্যস্ত জনজীবন
যাত্রাবাড়ী থানার সাবেক ওসি আবুল হাসান টেকনাফ থেকে গ্রেপ্তার
৪ ধরনের জ্বালানি তেলের দাম কমালো পাকিস্তান
তারাকান্দায় সাবেক এমপি শরীফসহ ৫৯ আ’লীগ নেতাকর্মীর নামে মামলা
শার্শায় বাবার কোদালের আঘাতে ছেলে নিহত
গোলাপগঞ্জে ইয়াবাসহ মাদক ব্যবসায়ী আটক
কিশোরগঞ্জে ঈদে মিলাদুন্নবীর র্যালিকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ, মসজিদ-মাজার ভাঙচুর, নিহত- ১
রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে চাঞ্চল্যকর তথ্য হাবিব-বিপ্লব গংদের নির্দেশে পুলিশ নেতা সেজে বিভ্রান্ত করেছিলেন কনস্টেবল জয়
ইসলামের বিধি-বিধান প্রতিষ্ঠা হলে ইসলামের প্রকৃত সৌন্দর্য জগতবাসী দেখতে পাবে -মাওলানা আহমদ আবদুল কাইয়ূম
যানজটের সমাধান খুঁজতে প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশ
মহানবী (সঃ) এর আদর্শ অনুসরণ করা হলে কোন রাষ্ট্র প্রধানকে পালাতে হবেনা-মিলাদুন্নবী (সঃ) এর আলোচনা সভায় বক্তারা
মসজিদ-মাদরাসা কমিটি থেকে ফ্যাসিবাদের সুবিধাভোগীদের বিতাড়িত করতে হবে: আজিজুল হক ইসলামাবাদী
প্রশাসক হতে চান শিক্ষকরা, ঠেকাতে একাট্টা ৪ সংগঠন
বাংলাদেশের এই দলকে সেরা বললেন হার্শা